বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশেও জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। গতকাল সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি প্রায় ৬-৭ মাস যাবত তেলের মূল্য ঊর্ধ্বগতি। যে তেল আমরা ৭০-৭১ ডলারে কিনতাম, সেই তেল এখন ১৭১ ডলার হয়ে গেছে। এবং সেটা সবসময় বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, আমরা তেলের মূল্য সমন্বয়ে যাব। আমরা নিজস্ব অর্থেই ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারপরেও মনে হয় একটা সময়ে আমাদের এই প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে হবে।’
জুন মাসের শুরুতে গ্যাসের দাম ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছিল সরকার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। সাত অর্থবছর মুনাফায় থাকা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) আবার লোকসানে পড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থাটি এখন প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকার ওপর লোকসান দিচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘সারাবিশ্বে এই তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিভিন্নভাবে তারা (বিভিন্ন দেশের সরকার) বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। তেলের মূল্য তারা সমন্বয় করেছেন।’
উচ্চমূল্যে তেল ও গ্যাস কিনে কমমূল্যে দেশের বাজারে বিক্রি করা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের ভর্তুকি দিয়েও সম্ভব হবে না এই পরিমাণ অর্থ জোগান দেয়া এবং আমরা যদি শুধু মূল্য বৃদ্ধিই করতে থাকি, তাহলে সাধারণ জনগণের ওপর প্রচন্ডভাবে চাপ সৃষ্টি হবে। আমি শুরু থেকেই বলে আসছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কিছু করবেন না যেটা সাধারণ জনগণের ওপর বোঝা হয়ে থাকে। যার কারণে গ্যাসের সামান্য মূল্যবৃদ্ধি করেছি, এখনও তেলের ওপর করি নাই।’
এদিকে স্পট মার্কেট (আন্তর্জাতিক খোলা বাজার) থেকে উচ্চমূল্যের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি বন্ধ রাখায় চলমান গ্যাস সংকট প্রকট হয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন। ব্যয় কমাতে লোডশেডিং করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
সম্প্রতি লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘আমাদের গ্যাস দিয়ে ৬৪ শতাংশ বিদ্যুৎ চলে। আমাদের নিজস্ব গ্যাস দিন দিন বাড়াচ্ছি, আবার দিন দিন কমছেও। যেটা বাড়াচ্ছি, যে খনিগুলো থেকে পাচ্ছি, সেটা স্বল্প পরিমাণে পাচ্ছি। কমছে কিন্তু অনেক দ্রুতগতিতে। যে ঘাটতি ছিল, সেটা আমরা ইমপোর্ট করে নিয়ে আসতাম। একটা লং টার্ম ধারা। সে প্রাইসটা ফিক্সড। সেটা তেলের সঙ্গে উঠানামা করে। আরেকটা স্পট মার্কেট। সারা বিশ্বে স্পট মার্কেটের ডিমান্ডটা বেড়ে গেছে প্রচন্ডভাবে। ৪ ডলারের গ্যাস ৩০ ডলার হয়েছে গেছে। সেটা আমাদের কিনতে গিয়ে কিন্তু হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি সবাই এ বিষয়টা বুঝতে পারবেন এবং ধৈর্য ধরবেন; এটা খুবই সাময়িক। এটা খুব দীর্ঘকালের জন্য না। আমাদের প্রচুর বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, কিন্তু গ্যাসের কারণে সেগুলোর উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছি।’
বার্তায় সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার এবং শেখ হাসিনার সরকারের ওপর ভরসা রাখার আহ্বান জানান নসরুল হামিদ।
শুক্রবার, ০৮ জুলাই ২০২২ , ২৪ আষাড় ১৪২৮ ২৮ জিলহজ ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশেও জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। গতকাল সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি প্রায় ৬-৭ মাস যাবত তেলের মূল্য ঊর্ধ্বগতি। যে তেল আমরা ৭০-৭১ ডলারে কিনতাম, সেই তেল এখন ১৭১ ডলার হয়ে গেছে। এবং সেটা সবসময় বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, আমরা তেলের মূল্য সমন্বয়ে যাব। আমরা নিজস্ব অর্থেই ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারপরেও মনে হয় একটা সময়ে আমাদের এই প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে হবে।’
জুন মাসের শুরুতে গ্যাসের দাম ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছিল সরকার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। সাত অর্থবছর মুনাফায় থাকা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) আবার লোকসানে পড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থাটি এখন প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকার ওপর লোকসান দিচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘সারাবিশ্বে এই তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিভিন্নভাবে তারা (বিভিন্ন দেশের সরকার) বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। তেলের মূল্য তারা সমন্বয় করেছেন।’
উচ্চমূল্যে তেল ও গ্যাস কিনে কমমূল্যে দেশের বাজারে বিক্রি করা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের ভর্তুকি দিয়েও সম্ভব হবে না এই পরিমাণ অর্থ জোগান দেয়া এবং আমরা যদি শুধু মূল্য বৃদ্ধিই করতে থাকি, তাহলে সাধারণ জনগণের ওপর প্রচন্ডভাবে চাপ সৃষ্টি হবে। আমি শুরু থেকেই বলে আসছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কিছু করবেন না যেটা সাধারণ জনগণের ওপর বোঝা হয়ে থাকে। যার কারণে গ্যাসের সামান্য মূল্যবৃদ্ধি করেছি, এখনও তেলের ওপর করি নাই।’
এদিকে স্পট মার্কেট (আন্তর্জাতিক খোলা বাজার) থেকে উচ্চমূল্যের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি বন্ধ রাখায় চলমান গ্যাস সংকট প্রকট হয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন। ব্যয় কমাতে লোডশেডিং করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
সম্প্রতি লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘আমাদের গ্যাস দিয়ে ৬৪ শতাংশ বিদ্যুৎ চলে। আমাদের নিজস্ব গ্যাস দিন দিন বাড়াচ্ছি, আবার দিন দিন কমছেও। যেটা বাড়াচ্ছি, যে খনিগুলো থেকে পাচ্ছি, সেটা স্বল্প পরিমাণে পাচ্ছি। কমছে কিন্তু অনেক দ্রুতগতিতে। যে ঘাটতি ছিল, সেটা আমরা ইমপোর্ট করে নিয়ে আসতাম। একটা লং টার্ম ধারা। সে প্রাইসটা ফিক্সড। সেটা তেলের সঙ্গে উঠানামা করে। আরেকটা স্পট মার্কেট। সারা বিশ্বে স্পট মার্কেটের ডিমান্ডটা বেড়ে গেছে প্রচন্ডভাবে। ৪ ডলারের গ্যাস ৩০ ডলার হয়েছে গেছে। সেটা আমাদের কিনতে গিয়ে কিন্তু হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি সবাই এ বিষয়টা বুঝতে পারবেন এবং ধৈর্য ধরবেন; এটা খুবই সাময়িক। এটা খুব দীর্ঘকালের জন্য না। আমাদের প্রচুর বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, কিন্তু গ্যাসের কারণে সেগুলোর উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছি।’
বার্তায় সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার এবং শেখ হাসিনার সরকারের ওপর ভরসা রাখার আহ্বান জানান নসরুল হামিদ।