পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বস্তির ঈদযাত্রা

এবার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। ভোগান্তি এড়াতে নাড়ির টানে পদ্মা সেতু হয়ে গন্তব্যে ছুটছেন তারা। যুগ যুগ ধরে চলা ভোগান্তির অবসানে হাসি ফুটেছে কোটি মানুষের মুখে। গতকাল সকাল থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া টোলপ্লাজা এলাকায় দেখা যায়, যাত্রী ও যানবাহন নির্বিঘেœ পাড়ি দিচ্ছে সেতু। যানবাহনের জট বা চাপ না থাকলেও স্বাভাবিক দিনের চেয়ে যাত্রী ও যানবাহনের উপস্থিতি বেড়েছে।

রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শত শত যাত্রীকে পদ্মা সেতু উত্তর থানা সংলগ্ন মোড় থেকে গণপরিবহনে উঠতে দেখা গেছে। সেতু হয়ে স্বাচ্ছন্দ্য আর নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি সাধারণ যাত্রীরা।

রুপালী বেগম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আমাদের তো এটাই স্বপ্ন ছিল সারাবছরে দু-একবার আনন্দ করতে বাড়ি যাবো, কোন কষ্ট যেন না হয়। এই যে বাসে উঠলাম। সহজেই এখন চলে যাবো, কোন কষ্ট নাই।’

আমিনুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘ঈদে আনন্দ করার জন্য বাড়িতে রওয়ানা হয়ে ফেরিঘাটে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হতো। পরিবার নিয়া এলে ছোট বাচ্চারা খুব কষ্ট করতো। ঢাকা থেকে বাসে উঠছি, বরিশাল যাবো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নদী পারাপার এখন তো কয়েক মিনিটের ব্যাপার।’

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাড়ি যাচ্ছেন কলেজছাত্র বাবুল আক্তার। তিনি বলেন, ‘গ্রামে বাবার সঙ্গে গিয়ে গরু কিনবো। তাই আগে আগে যাচ্ছি। গত ঈদে তো বাড়ির সবাই চিন্তায় ছিল কিভাবে নদী পার হবো, কিভাবে কী করবো। এখন আর ওই চিন্তা নেই।’

তবে যাত্রীদের উপস্থিতি বাড়ায় গণপরিবহনগুলোতে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন কয়েকজন। অন্যদিকে সেতুতে শৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনী-পুলিশ।

নিষেধাজ্ঞার কারণে সেতুতে বন্ধ রয়েছে মোটরসাইকেল চলাচল। যেসব মোটরসাইকেল আসছে তাদের উত্তর থানা মোড় থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে সকাল থেকে পিকআপে পণ্য হিসেবে সেতু পার হতে দেখা যায় শত শত মোটরসাইকেল। অনেকে আবার পাড়ি দিচ্ছেন ট্রলারযোগে। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ।

পিকআপে মোটরসাইকেলসহ পদ্মা সেতু পার হচ্ছিলেন আসমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা মধ্যবিত্ত। চার চাকার গাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই। যাবো খুলনা। ঢাকায় গাড়ির টিকেট নিয়ে তো যুদ্ধ চলে। মোটরসাইকেল রেখে যাবো? চুরি হয়ে যেতে পারে। তাই মোটরসাইকেলে যাচ্ছি। এখন তো যেতে দিচ্ছে না তাই পিকআপে যাচ্ছি। বেশি ভাড়া লাগছে।’

ট্রাকে করে মোটরসাইকেল নিয়ে সেতু পার হওয়া শুভ আক্তার বলেন, ‘আমাদের বাড়ি শরীয়তপুর। পদ্মা সেতু প্রকল্পে আমাদের জায়গাও গেছে। এখন ফেরি নেই, আবার সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে ট্রাকে মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছি।’

পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি আলমগীর হোসাইন বলেন, দিনভর নির্বিঘেœই যাত্রী-যানবাহন পারাপার হয়েছে। অনেক মোটরসাইকেল এসেছে, তাদের বিকল্প পথে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ট্রাকে করে মোটরসাইকেল ও যাত্রী পারাপার করায় তিনটি ট্রাক ও চালককে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও খবর
ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে
শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ষষ্ঠবর্ষে শহীদদের স্মরণ
এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মোটরসাইকেল চলবে ‘অতি জরুরি’ ক্ষেত্রে, তবে আগে অনুমতি নিতে হবে
সচিবালয়ে শেষ মুহূর্তের কর্মব্যস্ততা, দুপুরের আগেই ফাঁকা
রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তন ও যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষার্থীর অবস্থান
লোডশেডিংয়ের প্রভাবে কল কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত
নোয়াখালীতে ছাত্রলীগ নেতাকে জবাই করে হত্যা
কুষ্টিয়ায় নিখোঁজের ৫ দিন পর সাংবাদিকের লাশ উদ্ধার
সাভারে তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে ঘুরমুখো মানুষ
ডেলিভারি সিস্টেম হ্যাক করে পণ্য হাতিয়ে নিত চক্রটি

শুক্রবার, ০৮ জুলাই ২০২২ , ২৪ আষাড় ১৪২৮ ২৮ জিলহজ ১৪৪৩

পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বস্তির ঈদযাত্রা

প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ

এবার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। ভোগান্তি এড়াতে নাড়ির টানে পদ্মা সেতু হয়ে গন্তব্যে ছুটছেন তারা। যুগ যুগ ধরে চলা ভোগান্তির অবসানে হাসি ফুটেছে কোটি মানুষের মুখে। গতকাল সকাল থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া টোলপ্লাজা এলাকায় দেখা যায়, যাত্রী ও যানবাহন নির্বিঘেœ পাড়ি দিচ্ছে সেতু। যানবাহনের জট বা চাপ না থাকলেও স্বাভাবিক দিনের চেয়ে যাত্রী ও যানবাহনের উপস্থিতি বেড়েছে।

রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শত শত যাত্রীকে পদ্মা সেতু উত্তর থানা সংলগ্ন মোড় থেকে গণপরিবহনে উঠতে দেখা গেছে। সেতু হয়ে স্বাচ্ছন্দ্য আর নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি সাধারণ যাত্রীরা।

রুপালী বেগম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আমাদের তো এটাই স্বপ্ন ছিল সারাবছরে দু-একবার আনন্দ করতে বাড়ি যাবো, কোন কষ্ট যেন না হয়। এই যে বাসে উঠলাম। সহজেই এখন চলে যাবো, কোন কষ্ট নাই।’

আমিনুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘ঈদে আনন্দ করার জন্য বাড়িতে রওয়ানা হয়ে ফেরিঘাটে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হতো। পরিবার নিয়া এলে ছোট বাচ্চারা খুব কষ্ট করতো। ঢাকা থেকে বাসে উঠছি, বরিশাল যাবো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নদী পারাপার এখন তো কয়েক মিনিটের ব্যাপার।’

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাড়ি যাচ্ছেন কলেজছাত্র বাবুল আক্তার। তিনি বলেন, ‘গ্রামে বাবার সঙ্গে গিয়ে গরু কিনবো। তাই আগে আগে যাচ্ছি। গত ঈদে তো বাড়ির সবাই চিন্তায় ছিল কিভাবে নদী পার হবো, কিভাবে কী করবো। এখন আর ওই চিন্তা নেই।’

তবে যাত্রীদের উপস্থিতি বাড়ায় গণপরিবহনগুলোতে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন কয়েকজন। অন্যদিকে সেতুতে শৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনী-পুলিশ।

নিষেধাজ্ঞার কারণে সেতুতে বন্ধ রয়েছে মোটরসাইকেল চলাচল। যেসব মোটরসাইকেল আসছে তাদের উত্তর থানা মোড় থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে সকাল থেকে পিকআপে পণ্য হিসেবে সেতু পার হতে দেখা যায় শত শত মোটরসাইকেল। অনেকে আবার পাড়ি দিচ্ছেন ট্রলারযোগে। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ।

পিকআপে মোটরসাইকেলসহ পদ্মা সেতু পার হচ্ছিলেন আসমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা মধ্যবিত্ত। চার চাকার গাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই। যাবো খুলনা। ঢাকায় গাড়ির টিকেট নিয়ে তো যুদ্ধ চলে। মোটরসাইকেল রেখে যাবো? চুরি হয়ে যেতে পারে। তাই মোটরসাইকেলে যাচ্ছি। এখন তো যেতে দিচ্ছে না তাই পিকআপে যাচ্ছি। বেশি ভাড়া লাগছে।’

ট্রাকে করে মোটরসাইকেল নিয়ে সেতু পার হওয়া শুভ আক্তার বলেন, ‘আমাদের বাড়ি শরীয়তপুর। পদ্মা সেতু প্রকল্পে আমাদের জায়গাও গেছে। এখন ফেরি নেই, আবার সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে ট্রাকে মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছি।’

পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি আলমগীর হোসাইন বলেন, দিনভর নির্বিঘেœই যাত্রী-যানবাহন পারাপার হয়েছে। অনেক মোটরসাইকেল এসেছে, তাদের বিকল্প পথে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ট্রাকে করে মোটরসাইকেল ও যাত্রী পারাপার করায় তিনটি ট্রাক ও চালককে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।