শিক্ষা কর্মকর্তার অবহেলায় ফেরত গেল শিক্ষকদের অর্ধকোটি টাকা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে উপজেলা শিক্ষা অফিসের অবহেলায় ৪শ ৪৫ জন শিক্ষকের শ্রান্তি বিনোদন, ভ্রমণবিল ও বকেয়া পাওনার প্রায় অর্ধকোটি টাকা ফেরত যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। শিক্ষা অফিস বলছে, নিদিষ্ট সময়ের পূর্বেই সার্ভার বন্ধ হওয়ায় টাকা ফেরত গেছে। পরবর্তী অর্থ বছরের বাজেটের সঙ্গে এটি সমন্বয় করা হবে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন পাওনা বাবদ ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার ৮৩ টাকা ফেরত গেছে। এর মধ্যে ১শ ৫৯ জন শিক্ষকের শ্রান্তি বিনোদন বাবদ ২৮ লাখ ৬৭ হাজার ৭শ ১০ টাকা। ১শ ২৮ জন প্রধান শিক্ষকের ভ্রমনবিল বাবদ ২ লাখ ১৫ হাজার ৪০ টাকা ও ১শ ৫৮ জন শিক্ষকের উচ্চতর গ্রেডের ১৭ লাখ ৩শ ৩৩ টাকা ফেরত গেছে।

শিক্ষা অফিসের দাবী, উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে ৩০ জুন পর্যন্ত বিল দাখিল পূর্বক উত্তোলন করা যাবে। কিন্তু হিসাব রক্ষন অফিস থেকে জানানো হয় ২৮ জুনের মধ্যে সকল বিল জমা দিতে হবে। ওই দিন ১২ টার পূর্বেই সরকারি সার্ভার বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উক্ত অর্থ উপজেলা শিক্ষা অফিসের অনূকুলে বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ফেরত যাওয়া টাকা ২০২২-২০২৩ সালের অর্থ বছরের বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।

উপজেলার একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, আবু বক্কর সিদ্দিক, আবুল কালাম আজাদসহ অনেকেই জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাদিরউজ্জামান শিক্ষকদের সঙ্গে প্রায় সময় খারাপ আচরন করেন। উনার অবহেলার কারনে ইদের আগে শ্রান্তি বিনোদন ও ভ্রমনবিলসহ বকেয়া বেতন থেকে বঞ্চিত হলাম। আমাদের শ্রান্তিবিনোদনের টাকা এক বছর ল্যাপস হয়ে গেলো। এ ঘটনায় অর্থ বঞ্চিত শিক্ষকদের ভিতরে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

উপজেলা সারকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্যাহ হেল কাফী বলেন, আমার নিজের পাওনা ত্রিশ হাজার টাকা ল্যাপস হয়ে গেলো। অফিস ভুল করলে কিছু করার নেই, আমরা কিছু ভুল করলে কোন ছাড় নেই। উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিসার রিয়াজুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টাকা ফেরত যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, শিক্ষা অফিস ২৮ জুন যথাসময়ে বিল উপস্থাপন না করায় বিল প্রদান করা সম্ভব হয়নি। পুরো জুন মাসেই বিল প্রস্তুতের সময় ছিল। তারা তা না করে ওই দিন রাত ১১ টার পরে বিল নিয়ে অফিসে এলে যাচাই-বাচাই করতে সময় শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী অর্থ বছরের সঙ্গে বকেয়া বিল সমন্বয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তারাই ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাদিরউজ্জামান টাকা ফেরত যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এই টাকা রাজস্বের, সে কারনে টাকা ল্যাপস হবে না। হিসাব রক্ষন অফিসের সার্ভার নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই বন্ধ হওয়ায় এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আমি শিক্ষকদের আশ্বস্ত করেছি, তাদের পাওনা টাকা তারা পাবেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহীদুল ইসলাম জানান, শিক্ষকদের টাকা ফেরত যাওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। যথা সময়ে বিল দাখিল না করায় যা হবার তাই হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের অবহেলার কারনে এ ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবহেলা তো আছেই। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে অর্থ বছরের টাকা সেই অর্থ বছরেই ব্যয় হওয়ার কথা। পরবর্তী অর্থ বছরের বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় তখনি করা যাবে যদি উপর্যুক্ত কারনে যথা সময়ে বিল দাখিল করা সম্ভব না হয়। তবে এটি অনিশ্চিত।

শনিবার, ০৯ জুলাই ২০২২ , ২৫ আষাড় ১৪২৮ ২৯ জিলহজ ১৪৪৩

শিক্ষা কর্মকর্তার অবহেলায় ফেরত গেল শিক্ষকদের অর্ধকোটি টাকা

প্রতিনিধি, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)

কুড়িগ্রামের উলিপুরে উপজেলা শিক্ষা অফিসের অবহেলায় ৪শ ৪৫ জন শিক্ষকের শ্রান্তি বিনোদন, ভ্রমণবিল ও বকেয়া পাওনার প্রায় অর্ধকোটি টাকা ফেরত যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। শিক্ষা অফিস বলছে, নিদিষ্ট সময়ের পূর্বেই সার্ভার বন্ধ হওয়ায় টাকা ফেরত গেছে। পরবর্তী অর্থ বছরের বাজেটের সঙ্গে এটি সমন্বয় করা হবে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন পাওনা বাবদ ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার ৮৩ টাকা ফেরত গেছে। এর মধ্যে ১শ ৫৯ জন শিক্ষকের শ্রান্তি বিনোদন বাবদ ২৮ লাখ ৬৭ হাজার ৭শ ১০ টাকা। ১শ ২৮ জন প্রধান শিক্ষকের ভ্রমনবিল বাবদ ২ লাখ ১৫ হাজার ৪০ টাকা ও ১শ ৫৮ জন শিক্ষকের উচ্চতর গ্রেডের ১৭ লাখ ৩শ ৩৩ টাকা ফেরত গেছে।

শিক্ষা অফিসের দাবী, উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে ৩০ জুন পর্যন্ত বিল দাখিল পূর্বক উত্তোলন করা যাবে। কিন্তু হিসাব রক্ষন অফিস থেকে জানানো হয় ২৮ জুনের মধ্যে সকল বিল জমা দিতে হবে। ওই দিন ১২ টার পূর্বেই সরকারি সার্ভার বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উক্ত অর্থ উপজেলা শিক্ষা অফিসের অনূকুলে বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ফেরত যাওয়া টাকা ২০২২-২০২৩ সালের অর্থ বছরের বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।

উপজেলার একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, আবু বক্কর সিদ্দিক, আবুল কালাম আজাদসহ অনেকেই জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাদিরউজ্জামান শিক্ষকদের সঙ্গে প্রায় সময় খারাপ আচরন করেন। উনার অবহেলার কারনে ইদের আগে শ্রান্তি বিনোদন ও ভ্রমনবিলসহ বকেয়া বেতন থেকে বঞ্চিত হলাম। আমাদের শ্রান্তিবিনোদনের টাকা এক বছর ল্যাপস হয়ে গেলো। এ ঘটনায় অর্থ বঞ্চিত শিক্ষকদের ভিতরে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

উপজেলা সারকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্যাহ হেল কাফী বলেন, আমার নিজের পাওনা ত্রিশ হাজার টাকা ল্যাপস হয়ে গেলো। অফিস ভুল করলে কিছু করার নেই, আমরা কিছু ভুল করলে কোন ছাড় নেই। উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিসার রিয়াজুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টাকা ফেরত যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, শিক্ষা অফিস ২৮ জুন যথাসময়ে বিল উপস্থাপন না করায় বিল প্রদান করা সম্ভব হয়নি। পুরো জুন মাসেই বিল প্রস্তুতের সময় ছিল। তারা তা না করে ওই দিন রাত ১১ টার পরে বিল নিয়ে অফিসে এলে যাচাই-বাচাই করতে সময় শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী অর্থ বছরের সঙ্গে বকেয়া বিল সমন্বয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তারাই ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাদিরউজ্জামান টাকা ফেরত যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এই টাকা রাজস্বের, সে কারনে টাকা ল্যাপস হবে না। হিসাব রক্ষন অফিসের সার্ভার নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই বন্ধ হওয়ায় এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আমি শিক্ষকদের আশ্বস্ত করেছি, তাদের পাওনা টাকা তারা পাবেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহীদুল ইসলাম জানান, শিক্ষকদের টাকা ফেরত যাওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। যথা সময়ে বিল দাখিল না করায় যা হবার তাই হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের অবহেলার কারনে এ ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবহেলা তো আছেই। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে অর্থ বছরের টাকা সেই অর্থ বছরেই ব্যয় হওয়ার কথা। পরবর্তী অর্থ বছরের বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় তখনি করা যাবে যদি উপর্যুক্ত কারনে যথা সময়ে বিল দাখিল করা সম্ভব না হয়। তবে এটি অনিশ্চিত।