দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আগামীকাল ঈদ। ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে বরাবরের মতো নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে শহরবাসী। আর বাসা থেকে বের হয়ে পথে পথে ভোগান্তিতে পড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। নানা ভোগান্তির পরে কাক্সিক্ষত যানবাহনে উঠেও যানজট নামক ‘মারাত্মক’ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
গত কয়েকদিনের মতো গতকালও সকাল থেকে রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভিড় আরও বাড়তে থাকে। নির্ধারিত সময়ে বাস না ছাড়া, বাস না পাওয়া, বেশি ভাড়া আর যানজটের ভোগান্তি ছিল চরমে। অন্যদিকে ট্রেনে অতিরিক্ত চাপ আর শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। এদিকে যাত্রীদের চাপে চেনা রূপে ফিরেছে লঞ্চঘাট।
ঘরমুখো যাত্রীরা জানিয়েছেন, বাসা থেকে বের হয়ে স্টেশনে পৌঁছার আগেই যানজটে পড়তে হয়েছে। আবার বাসা থেকে বেরিয়ে গণপরিবন সংকটে ভুগেছেন। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তারা টার্মিনালে পৌঁছেন।
সকালে রাজধানীর খামারবাড়ী মোড়, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে যানবাহনের অপেক্ষায় মানুষের ভিড় দেখা গেছে। অনেকক্ষণ পরপর বাস এলে ব্যাগ নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন সবাই। তাদের অনেকই বাধ্য হয়ে হেঁটে টার্মিনালের উদ্দেশে রওনা হন। কেউ কেউ রিকশা, ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাস ও রেলস্টেশনে গেছেন।
রাজধানীর প্রবেশদ্বারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একদিকে যাত্রীবাহী গাড়িগুলো ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে অন্যদিকে গরুবাহী ট্রাকগুলো ঢাকায় প্রবেশ করছে। এর ফলে বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল সকালে গবতলী, মহাখালী ও যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা যায়। ব্যতিক্রম ছিল না গুলিস্তান ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালেও। সকাল থেকেই মানুষের ভিড় লেগে যায়। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে যানজটও দেখা দেয়।
এছাড়া গাড়িগুলো নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারেনি। এর কারণ হিসেবে পরিবহনের কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন সড়কের পাশে পশুর হাট বসেছে। সেখানে যানজটের কারণে গাড়িগুলো সময়মতো ঢাকায় ঢুকতে পারছে না। তাই নির্ধারিত সময়ে বাসগুলো ছেড়ে যেতে পারেনি।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ও আশপাশের এলাকায় ঘরমুখো যাত্রীদের প্রচ- চাপ রয়েছে। সকাল থেকেই শত শত মানুষকে বাসের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।
ঘরমুখো যাত্রীদের অভিযোগ, আগাম টিকেট কাটার পরও সময়মতো বাস পাচ্ছেন না তারা। বাস না পেয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। অন্যদিকে দীর্ঘ যানজট দেখা যায় সদরঘাটেও। তবে সকাল থেকে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভিড় থাকলেও দুপুরের দিকে তা কিছুটা কমে। সদরঘাট ঘুরে দেখা যায়, আগাম টিকেট কাটা যাত্রীরা বাসের অপেক্ষায় রয়েছেন। এখানকার দৃশ্যটা সায়েদাবাদের থেকে ভিন্ন দীর্ঘক্ষণ বাসের অপেক্ষায় থাকলেও বাস আসলেই যাত্রীরা চলে যেতে পারছেন।
এদিকে টিকেট না পেয়ে উৎকণ্ঠা দেখা যায় অনেক যাত্রীর মাঝে। ভালো পরিবহন না পেয়ে লোকাল বাসে করেই বাড়ি পৌঁছানোর সুযোগ খুঁজেন অনেকে। ভাড়া বেশি হলেও গন্তব্যের বাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হুড়োহুড়ি করে উঠে পড়ছেন তারা।
কাউন্টারের দায়িত্বরতরা জানান, সড়কে যানজটের কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তাছাড়া দুপুরের পর থেকে অনেক যাত্রী টিকেটও পাননি। বিকালে টিকেটপ্রত্যাশীদের লম্বা লাইন দেখা গেছে।
মহাখালী টার্মিনালেও সকাল থেকেই যাত্রীদের চাপ বেশি ছিল। দুপুর আর বিকেলের দিকে টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় চরম আকার ধারণ করে। দীর্ঘক্ষণ টার্মিনালে অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেককে। আবার দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাসের দেখা পেলেও যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ঘরমুখো মানুষকে।
গাবতলী-আমিনবাজার সড়কে যানজট লেগে থাকতে দেখা যায়। যাত্রীবাহী বাস ও পশুবাহী ট্রাকের চাপে নবীনগর সাভার, আমিনবাজার ব্রিজ থেকে গাবতলী হাট পর্যন্ত রাস্তায় দুই পাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়।
গাড়ির বাড়তি চাপে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। গত বৃহস্পতিবর রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় কাটিয়ে ফের গতকালও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানজটে পড়েছে যাত্রীরা। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
এদিন সকালে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আশুলিয়া বিশমাইল থেকে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া কোন কোন স্থানে আবার ধীরগতিতে থেমে থেমে চলছে যানবাহন।
জানা গেছে, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল থেকে চন্দ্রা হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গোড়াই পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুরে যানজট সৃষ্ট হয়েছে।
এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আশুলিয়ার বিশমাইল থেকে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার গাড়ি থেমে থেমে চলছে। এছাড়া টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের ধৌড় থেকে আশুলিয়া বাজার পর্যন্ত গাড়ির জটলা রয়েছে।
উপচেপড়া যাত্রী নিয়ে কমলাপুর ছাড়ছে ট্রেন, সিডিউল বিপর্যয়
পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্?যাপন করতে রেলপথে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। ছুটির দিন গতকাল সকাল থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। উপচেপড়া যাত্রী নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন ছাড়ছে একের পর এক ট্রেন। আগেরদিনের মতো গতকালও উত্তরবঙ্গ ও দেশের দক্ষিণপশ্চিমাচলগামী ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের অভিযোগ যাত্রীদের। সকাল থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায় বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের ভিড়। ট্রেন এসে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন সবাই। যে যেভাবে পারেন ওঠেন ট্রেনে। অনেকে ছাদেও উঠে যান। এ সময় পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। সরেজমিন সকালে কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, ৯টা পর্যন্ত ছেড়ে যায়নি সকাল ৬টা ৪০ মিনিটের নীলসাগর এক্সপেস, সকাল ৭টার ধূমকেতু এক্সপেস এবং ৮টা ১৫ মিনিটের সুন্দরবন এক্সপেস। এছাড়া উত্তরবঙ্গগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসের বিপুল যাত্রী সকাল থেকে ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষা করছেন।
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ৯টায়ও তা স্টেশন ছাড়েনি। প্রায় চার ঘণ্টা পিছিয়ে সকাল ১০টার পর ট্রেনটি ছেড়ে যায় বলে স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সকালে কর্ণফুলী কমিউটার ও রংপুর এক্সপ্রেসসহ আরও বেশ কয়েকটি ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে। অনেকে আবার টিকেট পেলেও ভিড়ের মধ্যে উঠতে পারছেন না ট্রেনে। তবে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামগামী ট্রেনের যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘পোশাক কারখানা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ায় রেলপথে যাত্রী চাপ বেড়েছে। গতকাল থেকে আজ (শুক্রবার) পর্যন্ত প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ ট্রেনে রওনা করেছেন। যার প্রভাব কিছুটা পড়েছে। এত বেশি যাত্রীর চাপ এবং মানুষের যে স্রোত, সেটা ঠেকানো যাচ্ছে না।’
যাত্রীদের চাপে চেনা রূপে লঞ্চঘাট
এদিকে ঘরমুখো যাত্রীদের লঞ্চঘাটে ছুটে আসা, তাদের তোলার জন্য লঞ্চকর্মীদের হাঁক-ডাক, টিকেট পেতে চলছে যাত্রীদের দৌড়ঝাঁপ-ধাক্কাধাক্কি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বদলে গেলেও ঈদযাত্রায় চিরচেনা রূপে ফিরেছে সদরঘাটের চিত্র। তবে ঈদ আসায় ফাঁকা লঞ্চগুলো ভরতে দেখে হাসি ফিরেছে কর্মীদের মুখে। এর আগে যাত্রীদের নানা সুবিধা দিয়েও যাত্রী পাচ্ছিল না লঞ্চগুলো। অবশেষে কেটেছে সেই খরা। গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে সদরঘাটে। দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে সদরঘাট ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চগুলো। আগামী কয়েকদিন ঈদ উপলক্ষে এমন যাত্রী চাপ থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, ডেকে ভিড় বেশি, মধ্যম আয়ের মানুষেরা ডেকে যাচ্ছেন। কেবিনগুলো পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছে। এখন আগের চেয়ে যাত্রীর চাপ বেশি।
যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে ঢাকা-বরিশাল রুটে থাকছে স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস। নির্ধারিত ট্রিপের অতিরিক্ত হিসেবে গতকাল ভোর ৬টায় ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে সুরভী-৮।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বরিশালে যাওয়ার জন্য পারাবাত-১৮, সুন্দরবন-১০, কীর্তনখোলা-১০, সুন্দরবন-১২, মানামীসহ বিলাসবহুল ১০টি বড় লঞ্চ অপেক্ষায় রয়েছে।
ঈদে ঘরমুখো মানুষ, গতকাল যাত্রীচাপ ছিল ট্রেনে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদেও ভরে গেল, দুর্ভোগের ঈদযাত্রা -সংবাদ
আরও খবরশনিবার, ০৯ জুলাই ২০২২ , ২৫ আষাড় ১৪২৮ ২৯ জিলহজ ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
ঈদে ঘরমুখো মানুষ, গতকাল যাত্রীচাপ ছিল ট্রেনে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদেও ভরে গেল, দুর্ভোগের ঈদযাত্রা -সংবাদ
দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আগামীকাল ঈদ। ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে বরাবরের মতো নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে শহরবাসী। আর বাসা থেকে বের হয়ে পথে পথে ভোগান্তিতে পড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। নানা ভোগান্তির পরে কাক্সিক্ষত যানবাহনে উঠেও যানজট নামক ‘মারাত্মক’ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
গত কয়েকদিনের মতো গতকালও সকাল থেকে রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভিড় আরও বাড়তে থাকে। নির্ধারিত সময়ে বাস না ছাড়া, বাস না পাওয়া, বেশি ভাড়া আর যানজটের ভোগান্তি ছিল চরমে। অন্যদিকে ট্রেনে অতিরিক্ত চাপ আর শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। এদিকে যাত্রীদের চাপে চেনা রূপে ফিরেছে লঞ্চঘাট।
ঘরমুখো যাত্রীরা জানিয়েছেন, বাসা থেকে বের হয়ে স্টেশনে পৌঁছার আগেই যানজটে পড়তে হয়েছে। আবার বাসা থেকে বেরিয়ে গণপরিবন সংকটে ভুগেছেন। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তারা টার্মিনালে পৌঁছেন।
সকালে রাজধানীর খামারবাড়ী মোড়, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে যানবাহনের অপেক্ষায় মানুষের ভিড় দেখা গেছে। অনেকক্ষণ পরপর বাস এলে ব্যাগ নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন সবাই। তাদের অনেকই বাধ্য হয়ে হেঁটে টার্মিনালের উদ্দেশে রওনা হন। কেউ কেউ রিকশা, ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাস ও রেলস্টেশনে গেছেন।
রাজধানীর প্রবেশদ্বারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একদিকে যাত্রীবাহী গাড়িগুলো ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে অন্যদিকে গরুবাহী ট্রাকগুলো ঢাকায় প্রবেশ করছে। এর ফলে বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল সকালে গবতলী, মহাখালী ও যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা যায়। ব্যতিক্রম ছিল না গুলিস্তান ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালেও। সকাল থেকেই মানুষের ভিড় লেগে যায়। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে যানজটও দেখা দেয়।
এছাড়া গাড়িগুলো নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারেনি। এর কারণ হিসেবে পরিবহনের কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন সড়কের পাশে পশুর হাট বসেছে। সেখানে যানজটের কারণে গাড়িগুলো সময়মতো ঢাকায় ঢুকতে পারছে না। তাই নির্ধারিত সময়ে বাসগুলো ছেড়ে যেতে পারেনি।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ও আশপাশের এলাকায় ঘরমুখো যাত্রীদের প্রচ- চাপ রয়েছে। সকাল থেকেই শত শত মানুষকে বাসের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।
ঘরমুখো যাত্রীদের অভিযোগ, আগাম টিকেট কাটার পরও সময়মতো বাস পাচ্ছেন না তারা। বাস না পেয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। অন্যদিকে দীর্ঘ যানজট দেখা যায় সদরঘাটেও। তবে সকাল থেকে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভিড় থাকলেও দুপুরের দিকে তা কিছুটা কমে। সদরঘাট ঘুরে দেখা যায়, আগাম টিকেট কাটা যাত্রীরা বাসের অপেক্ষায় রয়েছেন। এখানকার দৃশ্যটা সায়েদাবাদের থেকে ভিন্ন দীর্ঘক্ষণ বাসের অপেক্ষায় থাকলেও বাস আসলেই যাত্রীরা চলে যেতে পারছেন।
এদিকে টিকেট না পেয়ে উৎকণ্ঠা দেখা যায় অনেক যাত্রীর মাঝে। ভালো পরিবহন না পেয়ে লোকাল বাসে করেই বাড়ি পৌঁছানোর সুযোগ খুঁজেন অনেকে। ভাড়া বেশি হলেও গন্তব্যের বাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হুড়োহুড়ি করে উঠে পড়ছেন তারা।
কাউন্টারের দায়িত্বরতরা জানান, সড়কে যানজটের কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তাছাড়া দুপুরের পর থেকে অনেক যাত্রী টিকেটও পাননি। বিকালে টিকেটপ্রত্যাশীদের লম্বা লাইন দেখা গেছে।
মহাখালী টার্মিনালেও সকাল থেকেই যাত্রীদের চাপ বেশি ছিল। দুপুর আর বিকেলের দিকে টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় চরম আকার ধারণ করে। দীর্ঘক্ষণ টার্মিনালে অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেককে। আবার দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাসের দেখা পেলেও যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ঘরমুখো মানুষকে।
গাবতলী-আমিনবাজার সড়কে যানজট লেগে থাকতে দেখা যায়। যাত্রীবাহী বাস ও পশুবাহী ট্রাকের চাপে নবীনগর সাভার, আমিনবাজার ব্রিজ থেকে গাবতলী হাট পর্যন্ত রাস্তায় দুই পাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়।
গাড়ির বাড়তি চাপে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। গত বৃহস্পতিবর রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় কাটিয়ে ফের গতকালও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানজটে পড়েছে যাত্রীরা। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
এদিন সকালে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আশুলিয়া বিশমাইল থেকে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া কোন কোন স্থানে আবার ধীরগতিতে থেমে থেমে চলছে যানবাহন।
জানা গেছে, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল থেকে চন্দ্রা হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গোড়াই পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুরে যানজট সৃষ্ট হয়েছে।
এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আশুলিয়ার বিশমাইল থেকে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার গাড়ি থেমে থেমে চলছে। এছাড়া টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের ধৌড় থেকে আশুলিয়া বাজার পর্যন্ত গাড়ির জটলা রয়েছে।
উপচেপড়া যাত্রী নিয়ে কমলাপুর ছাড়ছে ট্রেন, সিডিউল বিপর্যয়
পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্?যাপন করতে রেলপথে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। ছুটির দিন গতকাল সকাল থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। উপচেপড়া যাত্রী নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন ছাড়ছে একের পর এক ট্রেন। আগেরদিনের মতো গতকালও উত্তরবঙ্গ ও দেশের দক্ষিণপশ্চিমাচলগামী ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের অভিযোগ যাত্রীদের। সকাল থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায় বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের ভিড়। ট্রেন এসে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন সবাই। যে যেভাবে পারেন ওঠেন ট্রেনে। অনেকে ছাদেও উঠে যান। এ সময় পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। সরেজমিন সকালে কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, ৯টা পর্যন্ত ছেড়ে যায়নি সকাল ৬টা ৪০ মিনিটের নীলসাগর এক্সপেস, সকাল ৭টার ধূমকেতু এক্সপেস এবং ৮টা ১৫ মিনিটের সুন্দরবন এক্সপেস। এছাড়া উত্তরবঙ্গগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসের বিপুল যাত্রী সকাল থেকে ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষা করছেন।
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ৯টায়ও তা স্টেশন ছাড়েনি। প্রায় চার ঘণ্টা পিছিয়ে সকাল ১০টার পর ট্রেনটি ছেড়ে যায় বলে স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সকালে কর্ণফুলী কমিউটার ও রংপুর এক্সপ্রেসসহ আরও বেশ কয়েকটি ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে। অনেকে আবার টিকেট পেলেও ভিড়ের মধ্যে উঠতে পারছেন না ট্রেনে। তবে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামগামী ট্রেনের যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘পোশাক কারখানা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ায় রেলপথে যাত্রী চাপ বেড়েছে। গতকাল থেকে আজ (শুক্রবার) পর্যন্ত প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ ট্রেনে রওনা করেছেন। যার প্রভাব কিছুটা পড়েছে। এত বেশি যাত্রীর চাপ এবং মানুষের যে স্রোত, সেটা ঠেকানো যাচ্ছে না।’
যাত্রীদের চাপে চেনা রূপে লঞ্চঘাট
এদিকে ঘরমুখো যাত্রীদের লঞ্চঘাটে ছুটে আসা, তাদের তোলার জন্য লঞ্চকর্মীদের হাঁক-ডাক, টিকেট পেতে চলছে যাত্রীদের দৌড়ঝাঁপ-ধাক্কাধাক্কি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বদলে গেলেও ঈদযাত্রায় চিরচেনা রূপে ফিরেছে সদরঘাটের চিত্র। তবে ঈদ আসায় ফাঁকা লঞ্চগুলো ভরতে দেখে হাসি ফিরেছে কর্মীদের মুখে। এর আগে যাত্রীদের নানা সুবিধা দিয়েও যাত্রী পাচ্ছিল না লঞ্চগুলো। অবশেষে কেটেছে সেই খরা। গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে সদরঘাটে। দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে সদরঘাট ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চগুলো। আগামী কয়েকদিন ঈদ উপলক্ষে এমন যাত্রী চাপ থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, ডেকে ভিড় বেশি, মধ্যম আয়ের মানুষেরা ডেকে যাচ্ছেন। কেবিনগুলো পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছে। এখন আগের চেয়ে যাত্রীর চাপ বেশি।
যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে ঢাকা-বরিশাল রুটে থাকছে স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস। নির্ধারিত ট্রিপের অতিরিক্ত হিসেবে গতকাল ভোর ৬টায় ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে সুরভী-৮।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বরিশালে যাওয়ার জন্য পারাবাত-১৮, সুন্দরবন-১০, কীর্তনখোলা-১০, সুন্দরবন-১২, মানামীসহ বিলাসবহুল ১০টি বড় লঞ্চ অপেক্ষায় রয়েছে।