পশুর হাটে বিক্রেতা বেশি ক্রেতা কম

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আবাসিক এলাকার ভেতর ৪০ ফিট রাস্তার দুই ধারে ফাঁকা উঁচু নিচু প্লটের ভেতরে বসেছে ‘মোহাম্মদপুর বসিলা পশুর হাট’। দেশে করোনা বৃদ্ধি পেলেও বসিলা পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা খামারি-বিক্রেতা ও ক্রেতারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু বেচা-কেনা করছেন।

হাটের মূল গেট দিয়ে ঢুকেই হাতের ডানপাশে বসিলা গার্ডেন- রোড নং-২ এ রাস্তায় বসেছে ছাগলের হাট। ছাগলের হাটে দেখা যায়, ছাগল বাঁধার জন্য বাশের খুঁটি পুঁতছেন বগুড়ার সোনাতোলার ছাগল বিক্রেতা চান মিয়া। কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘ইজারাদারের কাজ এখন আমরাই করছি। হাটে মশা প্রচুর, হাট কমিটি কোন জায়গা পরিষ্কার করেনি, এমন কি সিটি করপোরেশন থেকে কোন স্প্রেও করেনি।

কিশোরগঞ্জ থেকে শাহীয়াল জাতের ১১টি বড় গরু নিয়ে এসেছেন খামারি ফজলুর রহমান। তার ১১টি গরুর নামগুলো বেশ চমৎকার। এর মধ্যে নবাব বাহাদুর, লাল বাহাদুর, সুলতান, স¤্রাট ও ঈশাখাঁ নামগুলো হাটে বেশ সাড়া ফেলেছে। তিনি এক হাজার কেজি ওজনের নবাব বাহাদুরে দাম হাঁকিয়েছেন সাড়ে ৬ লাখ টাকা। তবে এই গরুটি কিনলে ক্রেতা একটি ছাগল ফ্রি পাবেন বলেও জানা গেছে। এছাড়া, ৯৫০ কেজি ওজনের লাল বাহাদুরের দাম ৬ লাখ টাকা, ওই গরুটির সঙ্গেও একটি ছাগল ফ্রি। তার অন্য গরুর দামও প্রায়ই একই রকম। তবে ক্রেতাকে সবচেয়ে ছোট গরুটি কিনতে সর্বনি¤œ ৪ লাখ টাকা গুনতে হবে।

বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে বজলুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ না ভাই, ভালো না, খুব খারাপ অবস্থা! এক লাখ টাকা লস দিয়ে এ পর্যন্ত একটি গরু বেচতে পেরেছি। বাকি ১০টি গরু কিভাবে বেচবো সেটাই চিন্তা।’

কম দামে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমিসহ ১২ জন মানুষ ও এতগুলা বড় বড় গরু নিয়ে হাটে এসেছি। প্রতিদিন সব মিলে ৭ হাজার টাকা খরচ হয় তাই খরচ চালানোর জন্য লসে একটি গরু বিক্রি করেছি। হাটের হাফ-ভাব ভালো দেখছি না। গরু ফেরতও নিয়ে যাওয়া যাবে না, ফেরত নিয়ে গেলে বেশির ভাগ গরু অসুস্থ হয়ে পড়বে। হাটের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে নানাবিধ উপসর্গ দেখা দিবে তাই আরও লস দিয়ে হলেও বাকি গরু বিক্রি করে যেতে হবে।’

হাটের এক জায়গায় দেখা গেল মানুষের জটলা। সেখানে ক্রেতারা টাকা শনাক্তকরণ মেশিনে টাকা দিয়ে জাল কিনা পরখ করছেন। আবার ক্রেতারা হাসিলের টাকাও পরিশোধ করছেন। সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক সিটি ব্যাংকের অফিসার মো. আতিক উল্লাহ জানান, ‘স্মাট বাংলাদেশ, স্মাট হাটে’ প্রকল্পের আওতায় বসিলা পশু হাটে পজ মেশিন, কিউ আর কোড ও কার্ডের মাধ্যমে হাসিল দিতে পারছেন। এখানে আমাদের ১২ জন অফিসার জাল নোট শনাক্ত করার কাজে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত ১৭ জন বিক্রেতা এসে জাল নোট চেক করেছেন, তবে কোন জাল নোট পাওয়া যায়নি।

মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভেটরিনারি মেডিকেল টিমের ডা. শাহজালাল মো. ইউসুফ বলেন, ‘হাটে আমরা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দিচ্ছি, ক্রেতাদের অনুরোধে ১১টি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দিয়েছি। এছাড়া বিনামূল্যে পশুর রুচিবৃদ্ধি, বদহজম, পেটফাপাসহ বিভিন্ন রোগের ৬৬টি গরু ও ১১টি ছাগলের ওষুধ দিয়েছি। হাটে কোন রোগা গরু পাওয়া যায়নি।’

বসিলা হাটে র‌্যাবের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা এসআই প্রীতেশ চন্দ্র তালুকদার বলেন, ‘আমাদের সিভিল টিম হাটে ক্রেতা সেজে টহল দিচ্ছে, পর্যাপ্ত ফোর্স নিয়ে আমরা প্রস্তুত আছি। যেকোন সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিব। হাটে বিশৃঙ্খলা করে কেউ পার পাবে না। হাটে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের পুলিশ সদস্য মাহাবুব হাসান বলেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝ থেকে কোন অভিযোগ আসেনি, আইনশৃঙ্খলা ভালো আছে।’

উত্তর সিটি কপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ জানান, হাটে কারো কোন সমস্যা বা অভিযোগের কথা জানা যায়নি।

শনিবার, ০৯ জুলাই ২০২২ , ২৫ আষাড় ১৪২৮ ২৯ জিলহজ ১৪৪৩

পশুর হাটে বিক্রেতা বেশি ক্রেতা কম

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আবাসিক এলাকার ভেতর ৪০ ফিট রাস্তার দুই ধারে ফাঁকা উঁচু নিচু প্লটের ভেতরে বসেছে ‘মোহাম্মদপুর বসিলা পশুর হাট’। দেশে করোনা বৃদ্ধি পেলেও বসিলা পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা খামারি-বিক্রেতা ও ক্রেতারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু বেচা-কেনা করছেন।

হাটের মূল গেট দিয়ে ঢুকেই হাতের ডানপাশে বসিলা গার্ডেন- রোড নং-২ এ রাস্তায় বসেছে ছাগলের হাট। ছাগলের হাটে দেখা যায়, ছাগল বাঁধার জন্য বাশের খুঁটি পুঁতছেন বগুড়ার সোনাতোলার ছাগল বিক্রেতা চান মিয়া। কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘ইজারাদারের কাজ এখন আমরাই করছি। হাটে মশা প্রচুর, হাট কমিটি কোন জায়গা পরিষ্কার করেনি, এমন কি সিটি করপোরেশন থেকে কোন স্প্রেও করেনি।

কিশোরগঞ্জ থেকে শাহীয়াল জাতের ১১টি বড় গরু নিয়ে এসেছেন খামারি ফজলুর রহমান। তার ১১টি গরুর নামগুলো বেশ চমৎকার। এর মধ্যে নবাব বাহাদুর, লাল বাহাদুর, সুলতান, স¤্রাট ও ঈশাখাঁ নামগুলো হাটে বেশ সাড়া ফেলেছে। তিনি এক হাজার কেজি ওজনের নবাব বাহাদুরে দাম হাঁকিয়েছেন সাড়ে ৬ লাখ টাকা। তবে এই গরুটি কিনলে ক্রেতা একটি ছাগল ফ্রি পাবেন বলেও জানা গেছে। এছাড়া, ৯৫০ কেজি ওজনের লাল বাহাদুরের দাম ৬ লাখ টাকা, ওই গরুটির সঙ্গেও একটি ছাগল ফ্রি। তার অন্য গরুর দামও প্রায়ই একই রকম। তবে ক্রেতাকে সবচেয়ে ছোট গরুটি কিনতে সর্বনি¤œ ৪ লাখ টাকা গুনতে হবে।

বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে বজলুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ না ভাই, ভালো না, খুব খারাপ অবস্থা! এক লাখ টাকা লস দিয়ে এ পর্যন্ত একটি গরু বেচতে পেরেছি। বাকি ১০টি গরু কিভাবে বেচবো সেটাই চিন্তা।’

কম দামে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমিসহ ১২ জন মানুষ ও এতগুলা বড় বড় গরু নিয়ে হাটে এসেছি। প্রতিদিন সব মিলে ৭ হাজার টাকা খরচ হয় তাই খরচ চালানোর জন্য লসে একটি গরু বিক্রি করেছি। হাটের হাফ-ভাব ভালো দেখছি না। গরু ফেরতও নিয়ে যাওয়া যাবে না, ফেরত নিয়ে গেলে বেশির ভাগ গরু অসুস্থ হয়ে পড়বে। হাটের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে নানাবিধ উপসর্গ দেখা দিবে তাই আরও লস দিয়ে হলেও বাকি গরু বিক্রি করে যেতে হবে।’

হাটের এক জায়গায় দেখা গেল মানুষের জটলা। সেখানে ক্রেতারা টাকা শনাক্তকরণ মেশিনে টাকা দিয়ে জাল কিনা পরখ করছেন। আবার ক্রেতারা হাসিলের টাকাও পরিশোধ করছেন। সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক সিটি ব্যাংকের অফিসার মো. আতিক উল্লাহ জানান, ‘স্মাট বাংলাদেশ, স্মাট হাটে’ প্রকল্পের আওতায় বসিলা পশু হাটে পজ মেশিন, কিউ আর কোড ও কার্ডের মাধ্যমে হাসিল দিতে পারছেন। এখানে আমাদের ১২ জন অফিসার জাল নোট শনাক্ত করার কাজে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত ১৭ জন বিক্রেতা এসে জাল নোট চেক করেছেন, তবে কোন জাল নোট পাওয়া যায়নি।

মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভেটরিনারি মেডিকেল টিমের ডা. শাহজালাল মো. ইউসুফ বলেন, ‘হাটে আমরা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দিচ্ছি, ক্রেতাদের অনুরোধে ১১টি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দিয়েছি। এছাড়া বিনামূল্যে পশুর রুচিবৃদ্ধি, বদহজম, পেটফাপাসহ বিভিন্ন রোগের ৬৬টি গরু ও ১১টি ছাগলের ওষুধ দিয়েছি। হাটে কোন রোগা গরু পাওয়া যায়নি।’

বসিলা হাটে র‌্যাবের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা এসআই প্রীতেশ চন্দ্র তালুকদার বলেন, ‘আমাদের সিভিল টিম হাটে ক্রেতা সেজে টহল দিচ্ছে, পর্যাপ্ত ফোর্স নিয়ে আমরা প্রস্তুত আছি। যেকোন সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিব। হাটে বিশৃঙ্খলা করে কেউ পার পাবে না। হাটে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের পুলিশ সদস্য মাহাবুব হাসান বলেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝ থেকে কোন অভিযোগ আসেনি, আইনশৃঙ্খলা ভালো আছে।’

উত্তর সিটি কপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ জানান, হাটে কারো কোন সমস্যা বা অভিযোগের কথা জানা যায়নি।