লালমনিরহাটে বানভাসিদের নেই ঈদের আনন্দ, কষ্টে যাচ্ছে দিন

‘পেটত ভাত দিবার পাং না, নয়া কাপড় কিনে দিম ক্যামন করি হামার আবার ঈদ! ছাওয়া পোওয়া কান্দাকাটি করছে, আল্লায় হামার কপালোত ঈদের আনন্দ নেকে নাই।’ চোখের পানি ফেলে এভাবেই কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় বাজারের উঁচু রাস্তার ওপর আশ্রয় নেয়া বানভাসি কছিমন বেওয়া।

একটু এগিয়ে গেলে কথা হয় ওই এলাকার শাপলা বেগমের (৪০) সঙ্গে। তিনি বলেন, স্বামী অসুস্থ, ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, একদিন কাজ করলে তিন দিন বসে থাকে। টাকার অভাবে না পারতেছি চিকিৎসা করতে, না পারতেছি বাড়ি-ঘর ঠিক করতে। ত্রাণ পেলে পেটে খাবার জুটে। এক বেলা খেলে অন্য দু’বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। ছেলে-মেয়েদের চোখেমুখে তাকাতে পারতেছি না। একদিন পর কোরবানির ঈদ, বাচ্চাদের মুখে এক টুকরা মাংস জুটবে কি না আল্লাই জানে। অবুঝ সন্তানরা আমার অসহায়ত্বের কথা বুঝাতে চাইছে না, বলে আঁচলে চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে যান তিনি।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের বাছির মিয়ার (৭৫) ৬ ছেলেমেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। হাড্ডিসার শরীরে অভাবের ছাপ স্পষ্ট। বন্যার সময় ঠিকমতো খেতে না পেয়ে শরীর ভেঙে পড়েছে বাছির মিয়ার। সাংবাদিকদের দেখে ত্রাণ দিবে ভেবে ছুটে আসেন। বলেন, বাবা আমি বুড়ো মানুষ, ঠেলাঠেলি করে ত্রাণ নিতে পারি না। আমার নামটা লেখেন। তবে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই চুপ হয়ে যান। ঈদ নিয়ে কথা বলতেই তিনি বলেন, ‘ছেলে-মেয়ে নাতির চিৎকারে থাকতে পারছি না। যেখানে খাইতে পারি না, সেখানে কোরবানি দিব কি দিয়া। আল্লায় কেন যে আমাদের গরিব বানাইল বুঝি না। তার মধ্যে এবারের বানে ঈদের আনন্দ মাটি করি দিছে।’

বন্যাদুর্গত এলাকায় সন্তানদের ঈদে নতুন জামা কাপড়ের বায়না মেটাতে না পেরে আক্ষেপ করে রসুল মিয়া, বলেন একটা বাচ্চারও জামা কাপড় কিনে দিবার পারি নাই কি করি ঈদের দিন যাবে তিনিই জানেন। তিস্তা নদীর তীরবর্তী ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার পরিবারগুলো পানিবন্দী। ইতিপূর্বে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হলেও এখন পানি নেমে গেছে। ঈদে নতুন কাপড়ের বায়নায় শিশুদের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে ঘর থেকে। ঈদ আনন্দের বদলে জীবন বাঁচাতে ত্রাণের সন্ধানে ছোটাছুটি আর মাথাগোজার ঠাঁই করে নিতে বাড়িঘর মেরামতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বন্যাদুর্গতরা।

মহিষখোচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, আমি বানভাসিদের জন্য যে পরিমাণ খাদ্য বরাদ্দ পেয়েছি তা অর্ধেক অসহায় মানুষকে দেয়া সম্ভব না । তারা খাইতে পারে না ঈদের আনন্দ করবে কিভাবে।

শনিবার, ০৯ জুলাই ২০২২ , ২৫ আষাড় ১৪২৮ ২৯ জিলহজ ১৪৪৩

লালমনিরহাটে বানভাসিদের নেই ঈদের আনন্দ, কষ্টে যাচ্ছে দিন

মনিরুজ্জামান সরকার, লালমনিরহাট

‘পেটত ভাত দিবার পাং না, নয়া কাপড় কিনে দিম ক্যামন করি হামার আবার ঈদ! ছাওয়া পোওয়া কান্দাকাটি করছে, আল্লায় হামার কপালোত ঈদের আনন্দ নেকে নাই।’ চোখের পানি ফেলে এভাবেই কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় বাজারের উঁচু রাস্তার ওপর আশ্রয় নেয়া বানভাসি কছিমন বেওয়া।

একটু এগিয়ে গেলে কথা হয় ওই এলাকার শাপলা বেগমের (৪০) সঙ্গে। তিনি বলেন, স্বামী অসুস্থ, ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, একদিন কাজ করলে তিন দিন বসে থাকে। টাকার অভাবে না পারতেছি চিকিৎসা করতে, না পারতেছি বাড়ি-ঘর ঠিক করতে। ত্রাণ পেলে পেটে খাবার জুটে। এক বেলা খেলে অন্য দু’বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। ছেলে-মেয়েদের চোখেমুখে তাকাতে পারতেছি না। একদিন পর কোরবানির ঈদ, বাচ্চাদের মুখে এক টুকরা মাংস জুটবে কি না আল্লাই জানে। অবুঝ সন্তানরা আমার অসহায়ত্বের কথা বুঝাতে চাইছে না, বলে আঁচলে চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে যান তিনি।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের বাছির মিয়ার (৭৫) ৬ ছেলেমেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। হাড্ডিসার শরীরে অভাবের ছাপ স্পষ্ট। বন্যার সময় ঠিকমতো খেতে না পেয়ে শরীর ভেঙে পড়েছে বাছির মিয়ার। সাংবাদিকদের দেখে ত্রাণ দিবে ভেবে ছুটে আসেন। বলেন, বাবা আমি বুড়ো মানুষ, ঠেলাঠেলি করে ত্রাণ নিতে পারি না। আমার নামটা লেখেন। তবে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই চুপ হয়ে যান। ঈদ নিয়ে কথা বলতেই তিনি বলেন, ‘ছেলে-মেয়ে নাতির চিৎকারে থাকতে পারছি না। যেখানে খাইতে পারি না, সেখানে কোরবানি দিব কি দিয়া। আল্লায় কেন যে আমাদের গরিব বানাইল বুঝি না। তার মধ্যে এবারের বানে ঈদের আনন্দ মাটি করি দিছে।’

বন্যাদুর্গত এলাকায় সন্তানদের ঈদে নতুন জামা কাপড়ের বায়না মেটাতে না পেরে আক্ষেপ করে রসুল মিয়া, বলেন একটা বাচ্চারও জামা কাপড় কিনে দিবার পারি নাই কি করি ঈদের দিন যাবে তিনিই জানেন। তিস্তা নদীর তীরবর্তী ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার পরিবারগুলো পানিবন্দী। ইতিপূর্বে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হলেও এখন পানি নেমে গেছে। ঈদে নতুন কাপড়ের বায়নায় শিশুদের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে ঘর থেকে। ঈদ আনন্দের বদলে জীবন বাঁচাতে ত্রাণের সন্ধানে ছোটাছুটি আর মাথাগোজার ঠাঁই করে নিতে বাড়িঘর মেরামতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বন্যাদুর্গতরা।

মহিষখোচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, আমি বানভাসিদের জন্য যে পরিমাণ খাদ্য বরাদ্দ পেয়েছি তা অর্ধেক অসহায় মানুষকে দেয়া সম্ভব না । তারা খাইতে পারে না ঈদের আনন্দ করবে কিভাবে।