আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের আদলে তৈরি এই হাসপাতালের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। এ হাসপাতালে সর্বক্ষণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে রোগীদের সেবা দেয়া হবে। এজন্য চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের অপেক্ষা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ সংবাদকে জানান, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ। এখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বিশেষায়িত হাসপাতালের উদ্বোধন করা হবে। সব প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত। হাসপাতালের বেড সংখ্যা ৭৫০।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শাহবাগে এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি চালু হলে রোগীদের আর বিদেশ যেতে হবে না। কিংবা বিদেশ যাওয়া কমবে। এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৫ হাজারেরও বেশি রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাবেন।
হাসপাতালের সেবার মান বিশ্বমানের করতে ইতোমধ্যে কয়েক দফায় হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও নার্সদের দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৬টি বিশেষায়িত সেন্টারের মাধ্যমে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম চলবে। হাসপাতালটিতে কার্যক্রম চালু হলে সেখানে প্রায় দুই বছরের জন্য ৫৬ জন কোরিয়ান কনসালটেন্ট থাকবে। দেশীয় জনবলকে প্রশিক্ষিত করতে তারা ভূমিকা রাখবেন। চিকিৎসা খাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা দেশীয় জনশক্তিকে দেশে ফিরিয়ে এনে এ হাসপাতালে দায়িত্ব দেয়া যায় কিনা তাও চিন্তা-ভাবনা আছে।
এ হাসপাতালে সাধারণ মানুষের সাশ্রয়ী মূল্যে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা দেয়া হবে। এ চিকিৎসা সেবা পেতে প্রথমে ৩০ টাকায় টিকেট সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য সর্বাধুনিক কেবিন থাকবে। থাকবে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাও। বিশেষায়িত সব ধরনের সেবা নিয়ে দেশে এই প্রথম সেন্টারভিত্তিক হাসপাতাল।
দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের অর্থায়নে এই হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছে। হাসপাতালটিতে ১০০ শয্যার আইসিইউ, ১০০ বেডের জরুরি বিভাগ, ১৪টি অপারেশন থিয়েটার, ৬টি ভিভিআইপি কেবিন, ভিআইপি কেবিন ২২টি, ডিলাক্স শয্যা থাকবে ২৫টি, সেন্টারভিত্তিক প্রতিটি ওয়ার্ডে ৮টি বেড থাকবে। আর হাসপাতালের গুণগত মান ধরে রাখতে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বেশিরভাগ আসবাবপত্র আনা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ হাসপাতালে প্রথম পর্যায়ে থাকবে, স্পেশালাইজড অটিজম সেন্টারসহ মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টোরোলজি সেন্টার, কার্ডিও ভাস্কুলার সেন্টার, কিডনি সেন্টার।
দ্বিতীয় পর্যায়ে থাকবে, রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টার, জেনারেল সার্জারি সেন্টার, অপথালমোলজি, ডেন্টিস্ট্রি সেন্টার ও ফিজিক্যাল মেডিসিন সেন্টার।
এছাড়া এ হাসপাতালে আরও বিভিন্ন ধরনের আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। থাকবে ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টার। প্রাপ্ত তথ্য মতে, হাসপাতালটির নির্মাণ ব্যয় ১৩শ’ কোটি টাকা। এরমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার দিয়েছে এক হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর পাশেই প্রায় ১২ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করেন। এরপর ২০১৬ সালে বিশেষায়িত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয়। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের সহায়তায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ হাসপাতালটি চালু হলে রোগীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে কমে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, এটা আসলে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল হাসপাতালের আদলে সার্ভিস হসপিটালের মতোই হবে। থাকবে বিদেশি উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ। এখানে সব ধরনের সুবিধা পাবে। এই টার্গেট নিয়ে বর্তমান সরকার হাসপাতালটি করেছেন। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষা। ভার্সিটি প্রস্তুত।
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ভিসি বলেন, যে উদ্দেশে এ বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হয়েছে। তা কার্যকর করতে হলে মেডিকেল সায়েন্সের লেটেস্ট ডেভেলপমেন্ট, সেন্টার বেস বিশেষায়িত চিকিৎসা কার্যক্রম চালু হলে উদ্দেশ সফল হবে।
এ জন্য ভার্সিটির সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপকদের দক্ষিণ কোরিয়ায় তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা রয়েছে। এমনকি অধ্যাপকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা ছিল। তাহলে হাসপাতালের চিকিৎসা মেডিকেল সায়েন্সের গুণগত মান বিশ্বমানের হবে।
বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই ২০২২ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৯ ১৫ জিলহজ ১৪৪৩
বাকী বিল্লাহ
আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের আদলে তৈরি এই হাসপাতালের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। এ হাসপাতালে সর্বক্ষণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে রোগীদের সেবা দেয়া হবে। এজন্য চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের অপেক্ষা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ সংবাদকে জানান, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ। এখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বিশেষায়িত হাসপাতালের উদ্বোধন করা হবে। সব প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত। হাসপাতালের বেড সংখ্যা ৭৫০।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শাহবাগে এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি চালু হলে রোগীদের আর বিদেশ যেতে হবে না। কিংবা বিদেশ যাওয়া কমবে। এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৫ হাজারেরও বেশি রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাবেন।
হাসপাতালের সেবার মান বিশ্বমানের করতে ইতোমধ্যে কয়েক দফায় হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও নার্সদের দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৬টি বিশেষায়িত সেন্টারের মাধ্যমে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম চলবে। হাসপাতালটিতে কার্যক্রম চালু হলে সেখানে প্রায় দুই বছরের জন্য ৫৬ জন কোরিয়ান কনসালটেন্ট থাকবে। দেশীয় জনবলকে প্রশিক্ষিত করতে তারা ভূমিকা রাখবেন। চিকিৎসা খাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা দেশীয় জনশক্তিকে দেশে ফিরিয়ে এনে এ হাসপাতালে দায়িত্ব দেয়া যায় কিনা তাও চিন্তা-ভাবনা আছে।
এ হাসপাতালে সাধারণ মানুষের সাশ্রয়ী মূল্যে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা দেয়া হবে। এ চিকিৎসা সেবা পেতে প্রথমে ৩০ টাকায় টিকেট সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য সর্বাধুনিক কেবিন থাকবে। থাকবে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাও। বিশেষায়িত সব ধরনের সেবা নিয়ে দেশে এই প্রথম সেন্টারভিত্তিক হাসপাতাল।
দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের অর্থায়নে এই হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছে। হাসপাতালটিতে ১০০ শয্যার আইসিইউ, ১০০ বেডের জরুরি বিভাগ, ১৪টি অপারেশন থিয়েটার, ৬টি ভিভিআইপি কেবিন, ভিআইপি কেবিন ২২টি, ডিলাক্স শয্যা থাকবে ২৫টি, সেন্টারভিত্তিক প্রতিটি ওয়ার্ডে ৮টি বেড থাকবে। আর হাসপাতালের গুণগত মান ধরে রাখতে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বেশিরভাগ আসবাবপত্র আনা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ হাসপাতালে প্রথম পর্যায়ে থাকবে, স্পেশালাইজড অটিজম সেন্টারসহ মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টোরোলজি সেন্টার, কার্ডিও ভাস্কুলার সেন্টার, কিডনি সেন্টার।
দ্বিতীয় পর্যায়ে থাকবে, রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টার, জেনারেল সার্জারি সেন্টার, অপথালমোলজি, ডেন্টিস্ট্রি সেন্টার ও ফিজিক্যাল মেডিসিন সেন্টার।
এছাড়া এ হাসপাতালে আরও বিভিন্ন ধরনের আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। থাকবে ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টার। প্রাপ্ত তথ্য মতে, হাসপাতালটির নির্মাণ ব্যয় ১৩শ’ কোটি টাকা। এরমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার দিয়েছে এক হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর পাশেই প্রায় ১২ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করেন। এরপর ২০১৬ সালে বিশেষায়িত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয়। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের সহায়তায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ হাসপাতালটি চালু হলে রোগীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে কমে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, এটা আসলে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল হাসপাতালের আদলে সার্ভিস হসপিটালের মতোই হবে। থাকবে বিদেশি উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ। এখানে সব ধরনের সুবিধা পাবে। এই টার্গেট নিয়ে বর্তমান সরকার হাসপাতালটি করেছেন। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষা। ভার্সিটি প্রস্তুত।
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ভিসি বলেন, যে উদ্দেশে এ বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হয়েছে। তা কার্যকর করতে হলে মেডিকেল সায়েন্সের লেটেস্ট ডেভেলপমেন্ট, সেন্টার বেস বিশেষায়িত চিকিৎসা কার্যক্রম চালু হলে উদ্দেশ সফল হবে।
এ জন্য ভার্সিটির সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপকদের দক্ষিণ কোরিয়ায় তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা রয়েছে। এমনকি অধ্যাপকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা ছিল। তাহলে হাসপাতালের চিকিৎসা মেডিকেল সায়েন্সের গুণগত মান বিশ্বমানের হবে।