ঈদের ছুটিতে শেবাচিমে ৩৭ রোগীর মৃত্যু

ঈদের সরকারি বন্ধের দিন কয়েকটি বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের ভরসা ছিল কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সরা। সিনিয়র ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের বেশির ভাগই না থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২ শিশু ও ১১ নবজাতকসহ ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঈদের বন্ধে ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল থেকে স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৮৩ জন এবং পালিয়ে গেছেন কয়েকজন রোগী। অথচ ছুটি ভোগকারী চিকিৎসকেরাই বেশির ভাগই বরিশাল নগরীর স্থায়ী বাসিন্দা।

হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্টার থেকে জানা যায়, গত ৭ জুলাই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ৩শ’ ৫১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদিন পূর্বে ভর্তি হওয়া এবং চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১শ’ ৫১ জন রোগী। স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়েছেন ৩২ জন। উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য বেসরকারি হাসপাতালে গেছেন ৩৮ জন। পালিয়ে গেছে ৩ জন। চিকিৎসাধীন ছিল ১ হাজার ৭৩ জন রোগী। ওই দিন ৪ নবজাতক এবং ৩ জন শিশুসহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

৮ জুলাই ২শ’ ৯৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। পূর্বেও ভর্তি হওয়া ২শ’ ২৫ জন রোগী ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়েছেন ৮৩ জন রোগী। অন্য বেসরকারি হাসপাতালে গেছেন ২৯ জন এবং পালিয়েছেন ১৩ জন রোগী। চিকিৎসাধীন ছিল ১ হাজার ৪৩ জন রোগী। এদিন ৮ জন নবজাতকসহ ১৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

ঈদের সরকারি বন্ধের প্রথম দিন ৯ জুলাই ৩শ’ ৪৬ জন রোগী ভর্তি হন। এদিন ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি গেছেন ২শ’ ৪৫ জন। স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়েছেন ১শ’ ১৬ জন। অন্য বেসরকারি হাসপাতালে গেছেন ২১ জন। চিকিৎসাধীন ছিল ১ হাজার ১২ জন রোগী। ওইদিন ৫ নবজাতক এবং ২ শিশুসহ ১৭ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

ঈদের দিন ১০ জুলাই নতুন ৩শ’ ৫ জন রোগী ভর্তি হয়। ছাড়পত্র নেয় ১শ’ ৩৭ জন রোগী। স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নেয় ১শ’ ৬২ জন। অন্য হাসপাতালে যায় ২৩ জন এবং পালিয়ে যায় ২ জন রোগী। ঈদের দিন ২ নবজাতকসহ ৬ জন রোগীর মৃত্যু হয় চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

ঈদের পরদিন ১১ জুলাই ৪শ’ ১৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। ছাড়পত্র নেন ১শ’ ৬৫ জন। স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নেন ১শ’ ৫ জন। অন্য বেসরকারি হাসপাতালে যান ৩১ জন এবং পালিয়ে যান ৩ জন রোগী। এদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ নবজাতকসহ ১৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে গড় মৃত্যুর হার স্বাভাবিক আছে। ঈদের বন্ধে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও প্রসূতি, শিশু বিভাগ এবং জরুরি বিভাগসহ পুরো হাসপাতাল হিন্দু ধর্মাবলম্বী চিকিৎকদের দিয়ে সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কোথাও কোন সমস্যা হয়নি। তিনি জানান, হাসপাতালে চিকিৎসকের মোট ২শ’ ২৫টি পদের বিপরীতে ১শ’ ৪৭ জন কর্মরত আছে। ঈদের স্বাভাবিক বন্ধে তেমন কেউ ছুটি নেননি। সব কিছু স্বাভাবিকভাবে চলেছে বলে তিনি দাবি করেন।

বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই ২০২২ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৯ ১৫ জিলহজ ১৪৪৩

ঈদের ছুটিতে শেবাচিমে ৩৭ রোগীর মৃত্যু

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

ঈদের সরকারি বন্ধের দিন কয়েকটি বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের ভরসা ছিল কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সরা। সিনিয়র ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের বেশির ভাগই না থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২ শিশু ও ১১ নবজাতকসহ ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঈদের বন্ধে ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল থেকে স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৮৩ জন এবং পালিয়ে গেছেন কয়েকজন রোগী। অথচ ছুটি ভোগকারী চিকিৎসকেরাই বেশির ভাগই বরিশাল নগরীর স্থায়ী বাসিন্দা।

হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্টার থেকে জানা যায়, গত ৭ জুলাই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ৩শ’ ৫১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদিন পূর্বে ভর্তি হওয়া এবং চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১শ’ ৫১ জন রোগী। স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়েছেন ৩২ জন। উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য বেসরকারি হাসপাতালে গেছেন ৩৮ জন। পালিয়ে গেছে ৩ জন। চিকিৎসাধীন ছিল ১ হাজার ৭৩ জন রোগী। ওই দিন ৪ নবজাতক এবং ৩ জন শিশুসহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

৮ জুলাই ২শ’ ৯৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। পূর্বেও ভর্তি হওয়া ২শ’ ২৫ জন রোগী ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়েছেন ৮৩ জন রোগী। অন্য বেসরকারি হাসপাতালে গেছেন ২৯ জন এবং পালিয়েছেন ১৩ জন রোগী। চিকিৎসাধীন ছিল ১ হাজার ৪৩ জন রোগী। এদিন ৮ জন নবজাতকসহ ১৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

ঈদের সরকারি বন্ধের প্রথম দিন ৯ জুলাই ৩শ’ ৪৬ জন রোগী ভর্তি হন। এদিন ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি গেছেন ২শ’ ৪৫ জন। স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়েছেন ১শ’ ১৬ জন। অন্য বেসরকারি হাসপাতালে গেছেন ২১ জন। চিকিৎসাধীন ছিল ১ হাজার ১২ জন রোগী। ওইদিন ৫ নবজাতক এবং ২ শিশুসহ ১৭ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

ঈদের দিন ১০ জুলাই নতুন ৩শ’ ৫ জন রোগী ভর্তি হয়। ছাড়পত্র নেয় ১শ’ ৩৭ জন রোগী। স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নেয় ১শ’ ৬২ জন। অন্য হাসপাতালে যায় ২৩ জন এবং পালিয়ে যায় ২ জন রোগী। ঈদের দিন ২ নবজাতকসহ ৬ জন রোগীর মৃত্যু হয় চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

ঈদের পরদিন ১১ জুলাই ৪শ’ ১৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। ছাড়পত্র নেন ১শ’ ৬৫ জন। স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নেন ১শ’ ৫ জন। অন্য বেসরকারি হাসপাতালে যান ৩১ জন এবং পালিয়ে যান ৩ জন রোগী। এদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ নবজাতকসহ ১৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে গড় মৃত্যুর হার স্বাভাবিক আছে। ঈদের বন্ধে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও প্রসূতি, শিশু বিভাগ এবং জরুরি বিভাগসহ পুরো হাসপাতাল হিন্দু ধর্মাবলম্বী চিকিৎকদের দিয়ে সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কোথাও কোন সমস্যা হয়নি। তিনি জানান, হাসপাতালে চিকিৎসকের মোট ২শ’ ২৫টি পদের বিপরীতে ১শ’ ৪৭ জন কর্মরত আছে। ঈদের স্বাভাবিক বন্ধে তেমন কেউ ছুটি নেননি। সব কিছু স্বাভাবিকভাবে চলেছে বলে তিনি দাবি করেন।