শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২, ৩১ আষাঢ ১৪২৯ ১৬ জিলহজ ১৪৪৩

দাবদাহে পানি শূন্যতা, হিট স্ট্রোকসহ নানা রোগের আশঙ্কা

তীব্র দাবদাহে পানি শূন্যতা, হিট স্ট্রোক ও কিডনি সমস্যাসহ নানা ধরনের রোগের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু তাই নায়, কর্মক্ষেত্রে কাজের স্থবিরতা দেখা দেয়। শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে লবণ বের হয়ে মাংসপেশির শক্তি হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। যতটুকু সম্ভব রোদে না যাওয়া ভালো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মাসুদা বেগম বলেন, তীব্র দাবদাহে পানি শূন্যতা ও হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া ডায়রিয়া, পেটের পীড়াও হতে পারে। তার মতে, এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। আর সহজ পাপ্য হিসেবে লেবুর শরবত পান করার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড় তৈলাক্ত ও চর্বিজাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এডিজি প্রফেসর ডা. মহিবুল্লাহ বলেন, প্রচন্ড তাপে শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে পানির পরিমাণ কমে যায়। এতে মানুষ অজ্ঞান (হিট স্ট্রোক) হয়ে যেতে পারে। তার মতে, এ গরমে রোদে না যাওয়াই ভালো। তরলজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। আর গরমে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করতে হবে।

আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, এ গরমে হিট স্ট্রোক হয়। অর্থাৎ হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। আর কিডনি রোগ বেড়ে যায়। কাজে দেখা দেয় স্থবিরতা। যারা গরমের মধ্যে কাজ করে তাদের শরীর থেকে পানি ও লবণ বের হয়ে মাংসপেশির শক্তি হারিয়ে ফেলে। বয়স্করা কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। তার মতে, গরমে পানি ও লবণজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। আর যতদূর সম্ভব রোদে না যাওয়ার প্রতি তিনি মত দেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তীব্র দাবদাহের মধ্যে কাজের তাগিদে অনেককে বাইরে যেতে হয়। তাদের লেবুর শরবত ও ওরস্যালাইন খেতে হবে। বার বার হাত-মুখ পানি দিতে ধুতে হবে। ভয়ের কোন কারণ নেই। তবে একটু সতর্ক থাকতে হবে।

মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, গরম বেশি হওয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিতে পারে। গরমের কারণে চলার পথে অনেকেই যত্রতত্র পাওয়া দূষিত পানি ও ধূলাবালি মিশ্রিত ফুটপাতের খোলা শরবত থেকে অসুস্থ হয়ে যান। ফুটপাতের ধূলাবালিযুক্ত খাবার না খাওয়ার জন্য এ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন। তার মতে, অনেক জায়গায় টিউবওয়েল ও পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় গরমে নোংরা পানিতে গোসল করে। ওই পানি মুখে নেয়। এতে রোগ ছড়াতে পারে। পৌরসভা ও জেলা, উপজেলা ও গ্রামগঞ্জে এ ধরনের সমস্যা বেশি হয়।

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোজাম্মেল হক জানান, গরমের কারণে শিশুদের ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, জ্বর বেশি হচ্ছে। নাক দিয়ে পানি পড়ে। এমনকি শিশুদের ডায়রিয়া রোগ দেখা দেয়। বেশিরভাগ শিশুই ভাইরাসজনিত সমস্যায় ভুগছেন। বাচ্চাদেরকে হঠাৎ করে এসি থেকে গরমে আবার গরম থেকে এসি রুমে যাওয়ায় অসুস্থ হচ্ছে। গরমের কারণে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃবিভাগে দিনে গড়ে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪০০ রোগী চিকিৎসা দেয়া হয়। ঈদের ছুটির কারণে শিশু রোগী কম হলেও সামনে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

মহাখালী ডায়রিয়া হাসপাতালের (আইসিডিডিআর,বি) প্রধান ডা. বাহারুল আলম গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে জানান, প্রচন্ড গরমে মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে দূষিত পানি পান করে। এটাই প্রধান সমস্যা। বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্যতাও কম। আর ঈদের কারণে এখনও অনেকেই ঢাকার বাইরে (গ্রামে) আছেন। এরপরও ডায়রিয়া হাসপাতালে ৪শ’র মতো রোগী আছে। গরমের সময় নিরাপদ পানি নিশ্চিত করলে সবার জন্য ভালো হবে।

শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২ , ৩১ আষাঢ ১৪২৯ ১৬ জিলহজ ১৪৪৩

দাবদাহে পানি শূন্যতা, হিট স্ট্রোকসহ নানা রোগের আশঙ্কা

বাকী বিল্লাহ

তীব্র দাবদাহে পানি শূন্যতা, হিট স্ট্রোক ও কিডনি সমস্যাসহ নানা ধরনের রোগের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু তাই নায়, কর্মক্ষেত্রে কাজের স্থবিরতা দেখা দেয়। শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে লবণ বের হয়ে মাংসপেশির শক্তি হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। যতটুকু সম্ভব রোদে না যাওয়া ভালো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মাসুদা বেগম বলেন, তীব্র দাবদাহে পানি শূন্যতা ও হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া ডায়রিয়া, পেটের পীড়াও হতে পারে। তার মতে, এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। আর সহজ পাপ্য হিসেবে লেবুর শরবত পান করার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড় তৈলাক্ত ও চর্বিজাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এডিজি প্রফেসর ডা. মহিবুল্লাহ বলেন, প্রচন্ড তাপে শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে পানির পরিমাণ কমে যায়। এতে মানুষ অজ্ঞান (হিট স্ট্রোক) হয়ে যেতে পারে। তার মতে, এ গরমে রোদে না যাওয়াই ভালো। তরলজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। আর গরমে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করতে হবে।

আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, এ গরমে হিট স্ট্রোক হয়। অর্থাৎ হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। আর কিডনি রোগ বেড়ে যায়। কাজে দেখা দেয় স্থবিরতা। যারা গরমের মধ্যে কাজ করে তাদের শরীর থেকে পানি ও লবণ বের হয়ে মাংসপেশির শক্তি হারিয়ে ফেলে। বয়স্করা কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। তার মতে, গরমে পানি ও লবণজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। আর যতদূর সম্ভব রোদে না যাওয়ার প্রতি তিনি মত দেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তীব্র দাবদাহের মধ্যে কাজের তাগিদে অনেককে বাইরে যেতে হয়। তাদের লেবুর শরবত ও ওরস্যালাইন খেতে হবে। বার বার হাত-মুখ পানি দিতে ধুতে হবে। ভয়ের কোন কারণ নেই। তবে একটু সতর্ক থাকতে হবে।

মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, গরম বেশি হওয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিতে পারে। গরমের কারণে চলার পথে অনেকেই যত্রতত্র পাওয়া দূষিত পানি ও ধূলাবালি মিশ্রিত ফুটপাতের খোলা শরবত থেকে অসুস্থ হয়ে যান। ফুটপাতের ধূলাবালিযুক্ত খাবার না খাওয়ার জন্য এ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন। তার মতে, অনেক জায়গায় টিউবওয়েল ও পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় গরমে নোংরা পানিতে গোসল করে। ওই পানি মুখে নেয়। এতে রোগ ছড়াতে পারে। পৌরসভা ও জেলা, উপজেলা ও গ্রামগঞ্জে এ ধরনের সমস্যা বেশি হয়।

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোজাম্মেল হক জানান, গরমের কারণে শিশুদের ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, জ্বর বেশি হচ্ছে। নাক দিয়ে পানি পড়ে। এমনকি শিশুদের ডায়রিয়া রোগ দেখা দেয়। বেশিরভাগ শিশুই ভাইরাসজনিত সমস্যায় ভুগছেন। বাচ্চাদেরকে হঠাৎ করে এসি থেকে গরমে আবার গরম থেকে এসি রুমে যাওয়ায় অসুস্থ হচ্ছে। গরমের কারণে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃবিভাগে দিনে গড়ে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪০০ রোগী চিকিৎসা দেয়া হয়। ঈদের ছুটির কারণে শিশু রোগী কম হলেও সামনে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

মহাখালী ডায়রিয়া হাসপাতালের (আইসিডিডিআর,বি) প্রধান ডা. বাহারুল আলম গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে জানান, প্রচন্ড গরমে মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে দূষিত পানি পান করে। এটাই প্রধান সমস্যা। বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্যতাও কম। আর ঈদের কারণে এখনও অনেকেই ঢাকার বাইরে (গ্রামে) আছেন। এরপরও ডায়রিয়া হাসপাতালে ৪শ’র মতো রোগী আছে। গরমের সময় নিরাপদ পানি নিশ্চিত করলে সবার জন্য ভালো হবে।