শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২, ৩১ আষাঢ ১৪২৯ ১৬ জিলহজ ১৪৪৩

এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে আসামির পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগ

রংপুরের সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানীর বিরুদ্ধে রংপুরের নারী ও নির্যাতন আদালতের আদেশে এক গৃহবধূকে যৌতুকের কারণে নির্যাতন গর্ভের সন্তান নষ্ট করাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলার তদন্ত করার নামে বাদীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় সেই টাকা ঘুষ নিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে উল্টো এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে বাদীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৫ মাস পর আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে টাকা ফেরত নিতে গেলে বাদীর বাবা ও ভাইকে অফিসে ডেকে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে অফিস থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিশেষ পিপি রফিক হাসনাইন অ্যাডভোকেট বাদীর কাছ সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানী কর্তৃক ১০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন ওই কর্মকর্তা ঘুষ নেয়ার কথা স্বীকার করে টাকা ফেরত নেয়ার জন্য স্বজনদের অফিসে ডেকে পাঠিয়ে নির্যাতন করে বের করে দিয়েছে।

মামলার অভিযোগ ও নির্যাতিতা গৃহবধূ আফসানা মিমি জানিয়েছেন তার বাবার নাম আফসার আলী, বাড়ি গাাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি উপজেলার জামালপুর গ্রামে। ৫ বছর আগে তার সঙ্গে একই উপজেলার বাঁশকাটা গ্রামের রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় সোনার গহনা আসবাবপত্রসহ নগদ অর্থ প্রদান করে তার পরিবার। এরপর তারা রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনের কাছে বুড়িরহাট রোডে বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন। বাদী গৃহবধূ আফসানা মিমি জানান বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তার স্বামী পুলিশ কনস্টেবল ইসমাইল হোসেন তার কাছে জানায় পুলিশের চাকরি নিতে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে বাবা-মাকে বলে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসতে। এ কথা বলে ৫ লাখ টাকার জন্য তাকে প্রায়শই নির্যাতন করতো। তার বাবা গরিব এত টাকা দিতে পারবে না জানালে ২০১৯ সালের ৭ মে তারিখে আফসানা মিমিকে তার স্বামী মারধর করে গুরতর আহত করে। অসুস্থ অবস্থায় হাসাপাতালে দুই দিন চিকিৎসার পর বাসায় ফিরে আসে। এরপর এলাকাবাসী ও স্বজনদের মধ্যস্থতায় তাদের এক খন্ড জমি বিক্রি করে স্বামী ইসমাইল হোসেনকে ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। এরপর থেকে তারা সুখেই সংসার করে আসছিলেন।

এক পর্যায়ে তার স্বামী পুলিশ কনস্টেবল ইসমাইল হোসেন এক নারী পুলিশ কনস্টেবলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি জানাজানি হলে তার স্বামী আবারো মোটরসাইকেল কিনে দেয়াসহ আরও ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আবারও টাকার জন্য তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। তারপরেও সে সংসার করে আসছিল। এর মধ্যে গৃহবধূ আফসানা মিমি গর্ভবতী হয়ে পড়ে।

৫ মাসের গর্ভবতী হওয়ার পর তার স্বামী আবারো ৫ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য তার ওপর চাপ সৃষ্টি করা শুরু করে। সে টাকা দেয়ার সক্ষমতা তার পরিবারের নেই জানালে তার স্বামী তার পেটে অনবরত লাথি মারে ও মারধর করে। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হলে রংপুর নগরীর বুড়িরহাট রোডে বেসরকারি হাসপাতাল রংপুর ক্লিনিকে নিয়ে আসে।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার এবশন হয় এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার স্বামী কোন খোঁজ-খবর না নেয়ায় সুস্থ হয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে। এ ঘটনায় চলতি বছরের ১৫ ফ্রেরুয়ারি তারিখে তার স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন আদালত-১ এ নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। বিজ্ঞ বিচারক আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য রংপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।

বাদী আফসানা মিমি জানান, আদালত কর্তৃক তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানীর সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করলে তিনি মামলার তদন্ত করতে তাকে সন্তুষ্ট করার কথা বলেন। এরপর অনেক কষ্টে ১০ হাজার টাকা জোগাড় করে তার অফিসে গেলে তিনি তার অফিস সহকারী সামিউলের কাছে দিতে বলেন। যথারিতী তাকে টাকা দেয়ার পর তিনি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে গড়িমসি শুরু করেন। আদালত ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ উপেক্ষা করেন। এর মধ্যে আসামি ইসমাইল হোসেনের কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। গত বুধবার আদালতে এসে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার বিষয়টি জানতে পারেন আফসানা মিমি। সেখানে তাকে নির্যাতন হাসপাতালে ভর্তি থাকা চিকিৎসকের মতামতসহ তার কোন বক্তব্যই গ্রহণ করেনি তদন্তকারী কর্মকর্তা শিখা রানী।

এ ব্যাপারে বিশেষ পিপি রফিক হাসনাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন প্রথমত, তিনি আদালতের আদেশ অনুযায়ী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেননি। দ্বিতীয়ত, বাদীর কোন বক্তব্য শোনেননি কাগজপত্র দেখেননি। তৃতীয়ত, তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার নামে ১০ হাজার টাকা বাদীর কাছ থেকে নেয়ার কথা তার কাছেই স্বীকার করে টাকা ফেরত নিতে স্বজনদের অফিসে ডেকেছেন। এরপর টাকা ফেরত না দিয়ে বাদীর বাবা ও ভাইকে মারধর করে আহত করেছেন। পুরো বিষয়টি দুঃখজনক, বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে বাদী গৃহবধূ আফসানা মিমি পুরো ঘটনা তদন্ত করে দায়ী সমাজসেবা কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলত শাস্তি, আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২ , ৩১ আষাঢ ১৪২৯ ১৬ জিলহজ ১৪৪৩

রংপুরে নারী নির্যাতন মামলা

এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে আসামির পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগ

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

রংপুরের সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানীর বিরুদ্ধে রংপুরের নারী ও নির্যাতন আদালতের আদেশে এক গৃহবধূকে যৌতুকের কারণে নির্যাতন গর্ভের সন্তান নষ্ট করাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলার তদন্ত করার নামে বাদীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় সেই টাকা ঘুষ নিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে উল্টো এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে বাদীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৫ মাস পর আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে টাকা ফেরত নিতে গেলে বাদীর বাবা ও ভাইকে অফিসে ডেকে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে অফিস থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিশেষ পিপি রফিক হাসনাইন অ্যাডভোকেট বাদীর কাছ সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানী কর্তৃক ১০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন ওই কর্মকর্তা ঘুষ নেয়ার কথা স্বীকার করে টাকা ফেরত নেয়ার জন্য স্বজনদের অফিসে ডেকে পাঠিয়ে নির্যাতন করে বের করে দিয়েছে।

মামলার অভিযোগ ও নির্যাতিতা গৃহবধূ আফসানা মিমি জানিয়েছেন তার বাবার নাম আফসার আলী, বাড়ি গাাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি উপজেলার জামালপুর গ্রামে। ৫ বছর আগে তার সঙ্গে একই উপজেলার বাঁশকাটা গ্রামের রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় সোনার গহনা আসবাবপত্রসহ নগদ অর্থ প্রদান করে তার পরিবার। এরপর তারা রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনের কাছে বুড়িরহাট রোডে বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন। বাদী গৃহবধূ আফসানা মিমি জানান বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তার স্বামী পুলিশ কনস্টেবল ইসমাইল হোসেন তার কাছে জানায় পুলিশের চাকরি নিতে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে বাবা-মাকে বলে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসতে। এ কথা বলে ৫ লাখ টাকার জন্য তাকে প্রায়শই নির্যাতন করতো। তার বাবা গরিব এত টাকা দিতে পারবে না জানালে ২০১৯ সালের ৭ মে তারিখে আফসানা মিমিকে তার স্বামী মারধর করে গুরতর আহত করে। অসুস্থ অবস্থায় হাসাপাতালে দুই দিন চিকিৎসার পর বাসায় ফিরে আসে। এরপর এলাকাবাসী ও স্বজনদের মধ্যস্থতায় তাদের এক খন্ড জমি বিক্রি করে স্বামী ইসমাইল হোসেনকে ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। এরপর থেকে তারা সুখেই সংসার করে আসছিলেন।

এক পর্যায়ে তার স্বামী পুলিশ কনস্টেবল ইসমাইল হোসেন এক নারী পুলিশ কনস্টেবলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি জানাজানি হলে তার স্বামী আবারো মোটরসাইকেল কিনে দেয়াসহ আরও ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আবারও টাকার জন্য তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। তারপরেও সে সংসার করে আসছিল। এর মধ্যে গৃহবধূ আফসানা মিমি গর্ভবতী হয়ে পড়ে।

৫ মাসের গর্ভবতী হওয়ার পর তার স্বামী আবারো ৫ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য তার ওপর চাপ সৃষ্টি করা শুরু করে। সে টাকা দেয়ার সক্ষমতা তার পরিবারের নেই জানালে তার স্বামী তার পেটে অনবরত লাথি মারে ও মারধর করে। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হলে রংপুর নগরীর বুড়িরহাট রোডে বেসরকারি হাসপাতাল রংপুর ক্লিনিকে নিয়ে আসে।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার এবশন হয় এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার স্বামী কোন খোঁজ-খবর না নেয়ায় সুস্থ হয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে। এ ঘটনায় চলতি বছরের ১৫ ফ্রেরুয়ারি তারিখে তার স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন আদালত-১ এ নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। বিজ্ঞ বিচারক আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য রংপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।

বাদী আফসানা মিমি জানান, আদালত কর্তৃক তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানীর সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করলে তিনি মামলার তদন্ত করতে তাকে সন্তুষ্ট করার কথা বলেন। এরপর অনেক কষ্টে ১০ হাজার টাকা জোগাড় করে তার অফিসে গেলে তিনি তার অফিস সহকারী সামিউলের কাছে দিতে বলেন। যথারিতী তাকে টাকা দেয়ার পর তিনি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে গড়িমসি শুরু করেন। আদালত ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ উপেক্ষা করেন। এর মধ্যে আসামি ইসমাইল হোসেনের কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। গত বুধবার আদালতে এসে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার বিষয়টি জানতে পারেন আফসানা মিমি। সেখানে তাকে নির্যাতন হাসপাতালে ভর্তি থাকা চিকিৎসকের মতামতসহ তার কোন বক্তব্যই গ্রহণ করেনি তদন্তকারী কর্মকর্তা শিখা রানী।

এ ব্যাপারে বিশেষ পিপি রফিক হাসনাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন প্রথমত, তিনি আদালতের আদেশ অনুযায়ী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেননি। দ্বিতীয়ত, বাদীর কোন বক্তব্য শোনেননি কাগজপত্র দেখেননি। তৃতীয়ত, তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার নামে ১০ হাজার টাকা বাদীর কাছ থেকে নেয়ার কথা তার কাছেই স্বীকার করে টাকা ফেরত নিতে স্বজনদের অফিসে ডেকেছেন। এরপর টাকা ফেরত না দিয়ে বাদীর বাবা ও ভাইকে মারধর করে আহত করেছেন। পুরো বিষয়টি দুঃখজনক, বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে বাদী গৃহবধূ আফসানা মিমি পুরো ঘটনা তদন্ত করে দায়ী সমাজসেবা কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলত শাস্তি, আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।