শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২, ৩১ আষাঢ ১৪২৯ ১৬ জিলহজ ১৪৪৩

কোরবানির চামড়ার দাম বিপর্যয়

আর কে চৌধুরী

গত সাত বছরের মতো এ বছরও কোরবানির চামড়া বিক্রি হয়েছে পানির দরে। যারা কোরবানি দেন তাদের সিংহভাগ চামড়াগুলো দান করেন এতিমখানা রয়েছে এমন মাদ্রাসায়। বিশেষত দেশের মাদ্রাসাগুলোর আয়ের প্রধান উৎস কোরবানির চামড়া। চামড়া পানির দরে বিক্রি হওয়ায় মাদ্রাসাগুলোর গরিব ও এতিমরা ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চামড়ার দরে ধস পড়ার পেছনে আড়ত ও ট্যানারি মালিকদের কারসাজি দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

টানা কয়েক বছর বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ায় এবার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাননি। করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দাও এর আরেকটি কারণ। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় ঈদুল আজহার প্রথম দিন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের দেখা মেলেনি। পাশাপাশি চামড়ার দাম না থাকায় বিক্রির ব্যাপারেও কারও আগ্রহ দেখা যায়নি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে-এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় গতবারের চেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছে। এ বছর সারা দেশে মোট ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। দেশের আট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে। তবে ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রাম বিভাগে গরু ও মহিষ সবচেয়ে বেশি কোরবানি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫২১টি গবাদিপশু বেশি কোরবানি হয়েছে। গত বছর সারা দেশে মোট ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছিল।

কোরবানির ঈদের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়াশিল্পের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজধানী ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা নির্ধারণ করে। ঢাকার বাইরে চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। এ ছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ১৮ থেকে ২০ এবং বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। চলতি বছর গতবারের তুলনায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৭ ও খাসির চামড়ায় ৩ টাকা বাড়তি দাম নির্ধারণ করা হলেও কাজির গরুর অস্তিত্ব কিতাবেই ছিল, গোয়ালে নয়।

অর্থাৎ আড়তে চামড়া কেনা হয়েছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কমে, নামমাত্র মূল্যে। চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের একাংশের চামারসুলভ আচরণ চলছে যুগ যুগ ধরে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ না করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। চামড়ার দামে ধস ঠেকাতে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি ছিল প্রকৃষ্ট উপায়। কিন্তু চামড়া সিন্ডিকেট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ বছর চামড়ার দাম আরও বাড়বে, ধস নামবে না ইত্যাদি বলে কাঁচা চামড়া রপ্তানির প্রক্রিয়া থামিয়ে দেয়। ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ, সাভারে যে চামড়া শিল্প এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে পরিবেশবান্ধব পরিবেশ না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ব্র্যান্ড হাউজগুলো বাংলাদেশ থেকে চামড়া কিনছে না। চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে চীনের কাছে অনেক কম দামে। যে কারণে ধস নামুক না কেন, এর পেছনে চামড়া ব্যবসায়ী ট্যানারি মালিক ও সরকারের দায় অনস্বীকার্য। এ বিষয়ে জবাবদিহিতা প্রত্যাশিত।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]

শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২ , ৩১ আষাঢ ১৪২৯ ১৬ জিলহজ ১৪৪৩

কোরবানির চামড়ার দাম বিপর্যয়

আর কে চৌধুরী

গত সাত বছরের মতো এ বছরও কোরবানির চামড়া বিক্রি হয়েছে পানির দরে। যারা কোরবানি দেন তাদের সিংহভাগ চামড়াগুলো দান করেন এতিমখানা রয়েছে এমন মাদ্রাসায়। বিশেষত দেশের মাদ্রাসাগুলোর আয়ের প্রধান উৎস কোরবানির চামড়া। চামড়া পানির দরে বিক্রি হওয়ায় মাদ্রাসাগুলোর গরিব ও এতিমরা ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চামড়ার দরে ধস পড়ার পেছনে আড়ত ও ট্যানারি মালিকদের কারসাজি দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

টানা কয়েক বছর বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ায় এবার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাননি। করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দাও এর আরেকটি কারণ। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় ঈদুল আজহার প্রথম দিন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের দেখা মেলেনি। পাশাপাশি চামড়ার দাম না থাকায় বিক্রির ব্যাপারেও কারও আগ্রহ দেখা যায়নি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে-এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় গতবারের চেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছে। এ বছর সারা দেশে মোট ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। দেশের আট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে। তবে ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রাম বিভাগে গরু ও মহিষ সবচেয়ে বেশি কোরবানি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫২১টি গবাদিপশু বেশি কোরবানি হয়েছে। গত বছর সারা দেশে মোট ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছিল।

কোরবানির ঈদের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়াশিল্পের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজধানী ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা নির্ধারণ করে। ঢাকার বাইরে চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। এ ছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ১৮ থেকে ২০ এবং বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। চলতি বছর গতবারের তুলনায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৭ ও খাসির চামড়ায় ৩ টাকা বাড়তি দাম নির্ধারণ করা হলেও কাজির গরুর অস্তিত্ব কিতাবেই ছিল, গোয়ালে নয়।

অর্থাৎ আড়তে চামড়া কেনা হয়েছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কমে, নামমাত্র মূল্যে। চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের একাংশের চামারসুলভ আচরণ চলছে যুগ যুগ ধরে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ না করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। চামড়ার দামে ধস ঠেকাতে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি ছিল প্রকৃষ্ট উপায়। কিন্তু চামড়া সিন্ডিকেট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ বছর চামড়ার দাম আরও বাড়বে, ধস নামবে না ইত্যাদি বলে কাঁচা চামড়া রপ্তানির প্রক্রিয়া থামিয়ে দেয়। ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ, সাভারে যে চামড়া শিল্প এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে পরিবেশবান্ধব পরিবেশ না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ব্র্যান্ড হাউজগুলো বাংলাদেশ থেকে চামড়া কিনছে না। চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে চীনের কাছে অনেক কম দামে। যে কারণে ধস নামুক না কেন, এর পেছনে চামড়া ব্যবসায়ী ট্যানারি মালিক ও সরকারের দায় অনস্বীকার্য। এ বিষয়ে জবাবদিহিতা প্রত্যাশিত।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]