বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে মুন্সীগঞ্জের ৩ উপজেলার যাত্রীদের দুর্ভোগ

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে পরিবহন মালিকদের সেচ্ছাচারিতার কারণে মুন্সীগঞ্জের ৩ উপজেলার মানুষ এখন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ঢাকা-মাওয়া রুটে চলাচলকারী বেশীর ভাগ বাস কোম্পানীর পরিবহনগুলো এখন ঢাকা-ভাংগা ও ভাংগা-ঢাকা রুটে চলাচল করায় ঢাকা-মাওয়া আংশের কোন বাসস্ট্যান্ড থেকে তারা যাত্রী উঠাচ্ছে না এবং নামাচ্ছে না। এমনকি ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান-শ্রীনগর ও লৌহজং উপজেলার কোন যাত্রী তুলছে না। কেউ উঠে পড়লে ভাড়া গুনতে হচ্ছে ঢাকা-ভাংগা রুটের। বাধ্য হয়ে শ্রীনগরের ভাড়া ৬০ টাকা ও মাওয়ার ভাড়া ৭০ টাকার স্থলে ভাংগার ভাড়া ২৫০ টাকা দিয়ে গন্তব্যে পৌছাতেক হচ্ছে । উল্টো পথে ঢাকায় পৌছানোর সময় কোন বাসই বাসস্ট্যান্ডগুলোতে থামছে না। ফলে প্রতিদিন লাখো যাত্রী ভোগান্তিতে পড়ছে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে ও বিকালে সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলা, শ্রীনগর উপজেলার হাঁসাড়া, ষোলঘর, ছনবাড়ী, বেজগাও, মাশুর গাও, সমষপুর, লৌহজং উপজেলার মাওয়া প্রান্ত ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মিলে। যাদের বুকের উপর দিয়ে পদ্মা সেতু হলো তাদেরকেই এখন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি দ্রুত কর্তৃপক্ষের নজরে আসা উচিত এবং আইনগতভাবে ৩ উপজেলার যাত্রীদের যাতায়াতের ভাড়া এবং সমস্যার সমাধান করা উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয় সকল সচেতন মহল।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ঢাকা-মাওয়া রুটে চলাচলকারী বসুমতি, প্রচেষ্টা, স্বাধীন, অনন্দ, গুনগুন, গুধলী, শরীয়তপুর, ইলিশ, গ্রেট বিক্রমপুর সহ বেশ কয়েকটি পরিবহন এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার মাওয়া রুটে চলাচল করতো। নিমতলা, শ্রীনগর ও মাওয়ার যাত্রীদের এগুলোই ছিল পরিবহনের মাধ্যম। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এইসব বাসগুলো এখন আর নিমতলা,শ্রীনগর,মাওয়ার যাত্রী তুলছেনা। বাধ্য হয়ে বেশী ভাড়া গুনে নয়তো দোহার-ঢাকা, বালিগাও-ঢাকা, সিরাজদিখান-ঢাকা, বাড়ৈখালী-ঢাকা রুটের লোকাল বাসে করে দাঁড়িয়ে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। এর আগে এক্সপ্রেসওয়েতে মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিটে বাড়িতে পৌছানোর কারণে অনেকেই ঢাকা থেকে গ্রাম মুখী হয়েছিল। এই বাসগুলো টোল ও রুটের কারণে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে না পারায় সার্ভিস লেন ব্যবহার করছে। এই করানে এখন আড়াই থেকে ৩ ঘন্টায় গন্তব্যে পৌছতে হচ্ছে।

ভোগান্তির কারণে পদ্মা সেতুকে ঘিরে এই অঞ্চলের মানুষের তৈরি হওয়া স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাচ্ছে, ম্লান হতে শুরু করেছে সরকারের সফলতা। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে পরিবহন মালিকদের সেচ্ছাচারিতার কারণে ইতোমধ্যে সরকারের সফলতায় এই অঞ্চলের মানুষ কতটুকু উপকৃত হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বইছে ক্ষোভের ঝর। ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতা মোজাহিদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ঢাকা থেকে মাওয়ার পথে আসতে বাধ্য হয়ে উঠতে হয়েছে দোহারের নগর পরিবহনে। জীবনে প্রথম নগর পরিবহনে উঠলাম।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার রাশেদুল হাসান লিখেছেন, আমার গন্তব্য ঢাকা থেকে শ্রীনগর, কিন্তু কোন বাসই শ্রীনগরের যাত্রী উঠাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে ২৫০ টাকায় ভাংগার ভাড়া দিয়ে শ্রীনগর এসে নামলাম। শ্রীনগর বাজারের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী মোঃ হারুন বলেন, বেজগাও বাসস্ট্যান্ডে ১ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে অটোরিক্সা করে প্রায় ১০ কিলোমিটার এসে সিরাজদিখান টু ঢাকাগামী লোকাল লেনের বাসে উঠে ঢাকায় পৌছেছি।

আব্দুর রাজ্জাক নামের এক সরকারী কর্মচারী বলেন, আমাদের বাড়ি ঘর নিয়ে সরকার এক্সপ্রেসওয়ে ও রেল লাইন করেছে। আর আমরাই এখন এই রাস্তায় চলাচল করতে পারছি না। আমরা এখন নিজ ভূমে পরবাসী। যাত্রী কল্যাণ সমিতির নামে শুক্রবার সকালে শ্রীনগর প্রেস ক্লাবে সভা ডাকা হয়েছে। সভায় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে বলে আয়োজকরা জানান।

শ্রীনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান জিঠু বলেন, এই দুর্ভোগ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। বিষয়টি নিয়ে ৩ উপজেলার সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা উদ্যোগ নিলেই সমাধান সম্ভব।

শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২ , ০১ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৭ জিলহজ ১৪৪৩

বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে মুন্সীগঞ্জের ৩ উপজেলার যাত্রীদের দুর্ভোগ

প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে পরিবহন মালিকদের সেচ্ছাচারিতার কারণে মুন্সীগঞ্জের ৩ উপজেলার মানুষ এখন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ঢাকা-মাওয়া রুটে চলাচলকারী বেশীর ভাগ বাস কোম্পানীর পরিবহনগুলো এখন ঢাকা-ভাংগা ও ভাংগা-ঢাকা রুটে চলাচল করায় ঢাকা-মাওয়া আংশের কোন বাসস্ট্যান্ড থেকে তারা যাত্রী উঠাচ্ছে না এবং নামাচ্ছে না। এমনকি ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান-শ্রীনগর ও লৌহজং উপজেলার কোন যাত্রী তুলছে না। কেউ উঠে পড়লে ভাড়া গুনতে হচ্ছে ঢাকা-ভাংগা রুটের। বাধ্য হয়ে শ্রীনগরের ভাড়া ৬০ টাকা ও মাওয়ার ভাড়া ৭০ টাকার স্থলে ভাংগার ভাড়া ২৫০ টাকা দিয়ে গন্তব্যে পৌছাতেক হচ্ছে । উল্টো পথে ঢাকায় পৌছানোর সময় কোন বাসই বাসস্ট্যান্ডগুলোতে থামছে না। ফলে প্রতিদিন লাখো যাত্রী ভোগান্তিতে পড়ছে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে ও বিকালে সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলা, শ্রীনগর উপজেলার হাঁসাড়া, ষোলঘর, ছনবাড়ী, বেজগাও, মাশুর গাও, সমষপুর, লৌহজং উপজেলার মাওয়া প্রান্ত ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মিলে। যাদের বুকের উপর দিয়ে পদ্মা সেতু হলো তাদেরকেই এখন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি দ্রুত কর্তৃপক্ষের নজরে আসা উচিত এবং আইনগতভাবে ৩ উপজেলার যাত্রীদের যাতায়াতের ভাড়া এবং সমস্যার সমাধান করা উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয় সকল সচেতন মহল।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ঢাকা-মাওয়া রুটে চলাচলকারী বসুমতি, প্রচেষ্টা, স্বাধীন, অনন্দ, গুনগুন, গুধলী, শরীয়তপুর, ইলিশ, গ্রেট বিক্রমপুর সহ বেশ কয়েকটি পরিবহন এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার মাওয়া রুটে চলাচল করতো। নিমতলা, শ্রীনগর ও মাওয়ার যাত্রীদের এগুলোই ছিল পরিবহনের মাধ্যম। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এইসব বাসগুলো এখন আর নিমতলা,শ্রীনগর,মাওয়ার যাত্রী তুলছেনা। বাধ্য হয়ে বেশী ভাড়া গুনে নয়তো দোহার-ঢাকা, বালিগাও-ঢাকা, সিরাজদিখান-ঢাকা, বাড়ৈখালী-ঢাকা রুটের লোকাল বাসে করে দাঁড়িয়ে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। এর আগে এক্সপ্রেসওয়েতে মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিটে বাড়িতে পৌছানোর কারণে অনেকেই ঢাকা থেকে গ্রাম মুখী হয়েছিল। এই বাসগুলো টোল ও রুটের কারণে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে না পারায় সার্ভিস লেন ব্যবহার করছে। এই করানে এখন আড়াই থেকে ৩ ঘন্টায় গন্তব্যে পৌছতে হচ্ছে।

ভোগান্তির কারণে পদ্মা সেতুকে ঘিরে এই অঞ্চলের মানুষের তৈরি হওয়া স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাচ্ছে, ম্লান হতে শুরু করেছে সরকারের সফলতা। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে পরিবহন মালিকদের সেচ্ছাচারিতার কারণে ইতোমধ্যে সরকারের সফলতায় এই অঞ্চলের মানুষ কতটুকু উপকৃত হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বইছে ক্ষোভের ঝর। ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতা মোজাহিদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ঢাকা থেকে মাওয়ার পথে আসতে বাধ্য হয়ে উঠতে হয়েছে দোহারের নগর পরিবহনে। জীবনে প্রথম নগর পরিবহনে উঠলাম।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার রাশেদুল হাসান লিখেছেন, আমার গন্তব্য ঢাকা থেকে শ্রীনগর, কিন্তু কোন বাসই শ্রীনগরের যাত্রী উঠাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে ২৫০ টাকায় ভাংগার ভাড়া দিয়ে শ্রীনগর এসে নামলাম। শ্রীনগর বাজারের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী মোঃ হারুন বলেন, বেজগাও বাসস্ট্যান্ডে ১ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে অটোরিক্সা করে প্রায় ১০ কিলোমিটার এসে সিরাজদিখান টু ঢাকাগামী লোকাল লেনের বাসে উঠে ঢাকায় পৌছেছি।

আব্দুর রাজ্জাক নামের এক সরকারী কর্মচারী বলেন, আমাদের বাড়ি ঘর নিয়ে সরকার এক্সপ্রেসওয়ে ও রেল লাইন করেছে। আর আমরাই এখন এই রাস্তায় চলাচল করতে পারছি না। আমরা এখন নিজ ভূমে পরবাসী। যাত্রী কল্যাণ সমিতির নামে শুক্রবার সকালে শ্রীনগর প্রেস ক্লাবে সভা ডাকা হয়েছে। সভায় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে বলে আয়োজকরা জানান।

শ্রীনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান জিঠু বলেন, এই দুর্ভোগ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। বিষয়টি নিয়ে ৩ উপজেলার সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা উদ্যোগ নিলেই সমাধান সম্ভব।