পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজায় অব্যবস্থাপনা

প্রতিদিন ২-৫ কিলোমিটার যানজট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজার অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিদিনই বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সেতুর দুই প্রান্তে ২-৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সেতুর প্রতিটি বুথে ধীরগতিতে টোল আদায়ের কারণে এক থেকে দেড় ঘণ্টা যানবাহনের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয় বলে বাস চালকরা জানান। এছাড়া সেতু টোলের লেন ছোট করে তৈরির কারণে যানবাহন চলাচলের সময় টোল বুথে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বাসের লুকিং গ্লাস ভেঙে যায় বলে জানান তারা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বাস ও ট্রাকের আঘাতে এ পর্যন্ত দুই প্রান্তের ৫-৬টি টোল বুথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানায় সেতু কর্তৃপক্ষ। তবে সোয়া ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুতে মাত্র ১২টি টোলবুথ পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য টোলপ্লাজাগুলো ডিজিটাল করার পরামর্শ তাদের।

এ বিষয়ে বুয়েটের অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. সামছুল হক সংবাদকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর মতো এত বড় অবকাঠামোর নির্মাণ করা হলেও পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতার কারণে টোলপ্লাজায় এই সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্বের কোথাও এখন আর ম্যানুয়েল টোল আদায় করা হয় না। বড় বড় মহাসড়ক ও সেতুতে সবখানে এখন ডিজিটাল টোল আদায় করা হয়। পদ্মা সেতুতে তাই করতে হবে। তা না হলে এই সমস্যা থেকেই যাবে। এছাড়া একই মহাসড়কে পর পর তিন-চারবার টোল আদায়ের যানবাহনের গতি অনেকটা স্লো হয়ে যায়।’ তাই সমন্বয়ের মাধ্যমে একসঙ্গে সব টোল আদায়ের পরামর্শ তার।

টোলপ্লাজায় যানজটে এক ঘণ্টা অপেক্ষায় ভোগান্তিতে যাত্রীরা

গত সোমবার সরেজমিন পদ্মা সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেতুর মাওয়া ও জাজিরা দুই প্রাপ্তের টোলপ্লাজার সামনে দীর্ঘ লাইন। যানবাহনের চাপের কারণে মাওয়া প্রাপ্তের প্রায় ৫ কিলোমিটার ও জাজিরা প্রান্তের ২ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে মাওয়া প্রান্তের টোলপ্লাজা থেকে শুরু হওয়া এই যানজট পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের সার্ভিস এরিয়া-১ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সেতু কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে টোলপ্লাজা অতিক্রম করতে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় বলে চালকরা জানান।

এ বিষয়ে সালাম নামের শরীয়তপুরের ইলিশ পরিবহনের এক চালক সংবাদকে বলেন, ‘এত বড় সেতুতে মাত্র ৬টি টোল বুথ দেয়া হয়েছে। গাড়ির চাপ আরও বাড়লে এই যানজট প্রায় ১০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যাবে। সেতুর টোলের রাস্তা এত ছোট যে, খুব ধীরে গাড়ি চালাতে হয়। এতে পিছনে যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়া প্রথম দিকে কিছু মহিলা টোল আদায় করত। তারা অনেক স্লো ছিল।’

মাওয়া প্রান্তে মিরন নামের এক প্রাইভেটকার চালক সংবাদকে বলেন, ‘সেতুর টোল বুথগুলো অনেক বড় কিন্তু গাড়ি যাওয়ার রাস্তা ছোট। তাই বড় বাসের লুকিং গ্লাসের সঙ্গে টোল বুথের প্রায় সংর্ঘষ হয়। তাই টোলপ্লাজায় প্রবেশের আগেই গাড়ির গতি কমিয়ে দেয় সেতুর লোকেরা। ছোট ছোট ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি নিন্ত্রয়ণ করার কারণে এভাবে যানজটের সৃষ্টি।’

আব্বাস নামের এক পিকআপ চালক সংবাদকে বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান হানিফ ফ্লাইওভারে শনিরআখড়া দিকে ৬ টা করে ১২ টা টোলঘর। ওহানে কোন সমস্যা হয় না। পদ্মা সেতুতে যত ঝামেলা। টোল ঘর বানাইছে কম। এহন খালি জ্যাম লাইগ্যা থাকে।’

২ কিলোমিটার যানজট জাজিরা প্রান্তে

একই অবস্থা জাজিরা প্রান্তে। প্রতিদিন বিকেল থেকে ভোররাত পর্যন্ত ২ কিলোমিটার যানজট থাকে জাজিরা টোলপ্লাজায়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান। স্থানীয় সূত্র জানায়, ঈদ শেষে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ প্রতিদিনেই বাড়ছে। তাই গাড়ির চাপে সেতুর টোলপ্লাজায় প্রতিদিনই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। রাত যত বাড়ে, যানজট তত দীর্ঘ হয়। ভোররাত পর্যন্ত টোলপ্লাজার সামনে থেকে সংযোগ সড়কের নাওডোবা জমাদ্দার মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটারজুড়ে যানবাহন আটকা থাকতে হয়। প্রতিটি যানবাহন এক ঘণ্টার ওপরে অপেক্ষা করার পর টোল প্রদান করে সেতুতে উঠতে হয় বলে যাত্রীরা জানান।

গত বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল থেকে বাসের ঢাকায় আমিনুল ইসলাম নামের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘ভাবছিলাম পদ্মা সেতু দিয়ে অনেক কম সময় ঢাকায় আসতে পারব। কিন্তু সেতুর টোলপ্লাজার জ্যামের কারণে এক ঘণ্টার বেশি সময় চলে যায়। গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বরিশালের গৌরনদী বাস স্টপেজে গাড়িতে উঠি। গৌরনদী থেকে ফরিদপুর ভাঙ্গা পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তাই গাড়ি কম গতিতে চলছে। তাই ভাঙ্গা পর্যন্ত আসতে সন্ধ্যা সাতটা পার হয়ে যায়। তারপর আধঘণ্টার মধ্যে পদ্মা সেতুতে চলে আছি। কিন্তু টোলপ্লাজায় প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। শেষ পর্যন্ত গুলিস্তান আসতে রাত ১০টা বেজে যায়।’ টোলপ্লাজায় যানজট না থাকলে আরও একে ঘণ্টা আগে ঢাকায় পৌঁছানো যেতে বলে জানান তিনি।

তবে টোল আদায়ে অব্যবস্থাপনা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন। গতকাল সরেজমিন পদ্মা সেতুর জাজিরা টোলপ্লাজা পরিদর্শনে গিয়ে মুঠোফোনে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ঈদের যানবাহনের চাপের কিছু যানজট তৈরি হয়েছে। কিন্তু টোল আদায়ের কোন ধীরগতি ছিল না।’ জাজিরা টোলপ্লাজায় গতকাল সন্ধ্যা ৬ টায় ৫-৭ গাড়ি অপেক্ষা করছে বলে জানান তিনি।

প্রতিটি গাড়ির টোল আদায়ে ৭-১০ সেকেন্ড সময় লাগে দাবি করে সেতু সচিব বলেন, ‘আমার সামনে একটি গাড়ি চলে গেলে এটির টোল দিতে ১০ সেকেন্ড সময় লেগেছে। একই অবস্থা মাওয়া প্রান্তে কোন যানজট নেই। তবে রাতে কিছু যানবাহনের চাপ থাকে।’ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অটো টোল আদায় পদ্ধতি চালু হলে এই সমস্যা থাকবে না বলে জানান তিনি।

পদ্মা সেতুর টোলে করছে চায়না ও কোরিয়া কোম্পানি

পদ্মা সেতুর টোল আদায়কারী ও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন (কেইসি) ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। আগামী পাঁচ বছরের জন্য এই দুটি প্রতিষ্ঠান টোল আদায়, সেতু ও সেতুর দুই প্রান্তে যানবাহন চলাচল ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পদ্ধতি চালু এবং সেতু ও নদীশাসনের কাজ রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এর জন্য ৫ বছরে তাদের দিতে হবে ৬৯৩ কোটি টাকা।

গত ১৭ মে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর টোলের হার নির্ধারণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে মোটরসাইকেলের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দুই দিন পর থেকে সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া সেতুতে কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা; পিকআপ জন্য ১২০০ টাকা; মাইক্রোবাসের জন্য ১৩০০ টাকা; ছোট বাসের (৩১ সিটের কম) জন্য ১৪০০ টাকা; মাঝারি বাসের (৩২ সিটের বেশি) জন্য ২০০০ টাকা; বড় বাস (৩ এক্সেল)’র ২৪০০ টাকা। ছোট ট্রাকের (৫ টন পর্যন্ত) জন্য ১৬০০ টাকা; মাঝারি ট্রাকের (৫-৮ টন পর্যন্ত) ২১০০ টাকা; মাঝারি ট্রাক (৮-১১ টন পর্যন্ত) ২৮০০ টাকা; ট্রাকের জন্য (৩ এক্সেল) ৫৫০০ টাকা; ট্রেইলারের জন্য (৪ এক্সেল) ৬০০০ টাকা। ট্রেইলার ৪ এক্সেলের ঊর্ধ্বে ৬০০০ হাজারের প্রতি এক্সেলে ১৫০০ টাকা যোগ করতে হবে।

এছাড়া গত ১ জুলাই থেকে বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের জন্য তিন জায়গায় টোল আদায় করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। যা যানবাহনের গতি অনেকটা কমে যায় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তাই এক জায়গায় সব টোল আদায়ের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২ , ০১ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৭ জিলহজ ১৪৪৩

পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজায় অব্যবস্থাপনা

প্রতিদিন ২-৫ কিলোমিটার যানজট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

পদ্ম সেতুর টোল আদায় ধীরলয়ে, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বৃহস্পতিবার রাতে তোলা ছবি -সংবাদ

পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজার অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিদিনই বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সেতুর দুই প্রান্তে ২-৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সেতুর প্রতিটি বুথে ধীরগতিতে টোল আদায়ের কারণে এক থেকে দেড় ঘণ্টা যানবাহনের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয় বলে বাস চালকরা জানান। এছাড়া সেতু টোলের লেন ছোট করে তৈরির কারণে যানবাহন চলাচলের সময় টোল বুথে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বাসের লুকিং গ্লাস ভেঙে যায় বলে জানান তারা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বাস ও ট্রাকের আঘাতে এ পর্যন্ত দুই প্রান্তের ৫-৬টি টোল বুথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানায় সেতু কর্তৃপক্ষ। তবে সোয়া ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুতে মাত্র ১২টি টোলবুথ পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য টোলপ্লাজাগুলো ডিজিটাল করার পরামর্শ তাদের।

এ বিষয়ে বুয়েটের অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. সামছুল হক সংবাদকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর মতো এত বড় অবকাঠামোর নির্মাণ করা হলেও পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতার কারণে টোলপ্লাজায় এই সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্বের কোথাও এখন আর ম্যানুয়েল টোল আদায় করা হয় না। বড় বড় মহাসড়ক ও সেতুতে সবখানে এখন ডিজিটাল টোল আদায় করা হয়। পদ্মা সেতুতে তাই করতে হবে। তা না হলে এই সমস্যা থেকেই যাবে। এছাড়া একই মহাসড়কে পর পর তিন-চারবার টোল আদায়ের যানবাহনের গতি অনেকটা স্লো হয়ে যায়।’ তাই সমন্বয়ের মাধ্যমে একসঙ্গে সব টোল আদায়ের পরামর্শ তার।

টোলপ্লাজায় যানজটে এক ঘণ্টা অপেক্ষায় ভোগান্তিতে যাত্রীরা

গত সোমবার সরেজমিন পদ্মা সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেতুর মাওয়া ও জাজিরা দুই প্রাপ্তের টোলপ্লাজার সামনে দীর্ঘ লাইন। যানবাহনের চাপের কারণে মাওয়া প্রাপ্তের প্রায় ৫ কিলোমিটার ও জাজিরা প্রান্তের ২ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে মাওয়া প্রান্তের টোলপ্লাজা থেকে শুরু হওয়া এই যানজট পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের সার্ভিস এরিয়া-১ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সেতু কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে টোলপ্লাজা অতিক্রম করতে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় বলে চালকরা জানান।

এ বিষয়ে সালাম নামের শরীয়তপুরের ইলিশ পরিবহনের এক চালক সংবাদকে বলেন, ‘এত বড় সেতুতে মাত্র ৬টি টোল বুথ দেয়া হয়েছে। গাড়ির চাপ আরও বাড়লে এই যানজট প্রায় ১০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যাবে। সেতুর টোলের রাস্তা এত ছোট যে, খুব ধীরে গাড়ি চালাতে হয়। এতে পিছনে যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়া প্রথম দিকে কিছু মহিলা টোল আদায় করত। তারা অনেক স্লো ছিল।’

মাওয়া প্রান্তে মিরন নামের এক প্রাইভেটকার চালক সংবাদকে বলেন, ‘সেতুর টোল বুথগুলো অনেক বড় কিন্তু গাড়ি যাওয়ার রাস্তা ছোট। তাই বড় বাসের লুকিং গ্লাসের সঙ্গে টোল বুথের প্রায় সংর্ঘষ হয়। তাই টোলপ্লাজায় প্রবেশের আগেই গাড়ির গতি কমিয়ে দেয় সেতুর লোকেরা। ছোট ছোট ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি নিন্ত্রয়ণ করার কারণে এভাবে যানজটের সৃষ্টি।’

আব্বাস নামের এক পিকআপ চালক সংবাদকে বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান হানিফ ফ্লাইওভারে শনিরআখড়া দিকে ৬ টা করে ১২ টা টোলঘর। ওহানে কোন সমস্যা হয় না। পদ্মা সেতুতে যত ঝামেলা। টোল ঘর বানাইছে কম। এহন খালি জ্যাম লাইগ্যা থাকে।’

২ কিলোমিটার যানজট জাজিরা প্রান্তে

একই অবস্থা জাজিরা প্রান্তে। প্রতিদিন বিকেল থেকে ভোররাত পর্যন্ত ২ কিলোমিটার যানজট থাকে জাজিরা টোলপ্লাজায়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান। স্থানীয় সূত্র জানায়, ঈদ শেষে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ প্রতিদিনেই বাড়ছে। তাই গাড়ির চাপে সেতুর টোলপ্লাজায় প্রতিদিনই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। রাত যত বাড়ে, যানজট তত দীর্ঘ হয়। ভোররাত পর্যন্ত টোলপ্লাজার সামনে থেকে সংযোগ সড়কের নাওডোবা জমাদ্দার মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটারজুড়ে যানবাহন আটকা থাকতে হয়। প্রতিটি যানবাহন এক ঘণ্টার ওপরে অপেক্ষা করার পর টোল প্রদান করে সেতুতে উঠতে হয় বলে যাত্রীরা জানান।

গত বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল থেকে বাসের ঢাকায় আমিনুল ইসলাম নামের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘ভাবছিলাম পদ্মা সেতু দিয়ে অনেক কম সময় ঢাকায় আসতে পারব। কিন্তু সেতুর টোলপ্লাজার জ্যামের কারণে এক ঘণ্টার বেশি সময় চলে যায়। গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বরিশালের গৌরনদী বাস স্টপেজে গাড়িতে উঠি। গৌরনদী থেকে ফরিদপুর ভাঙ্গা পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তাই গাড়ি কম গতিতে চলছে। তাই ভাঙ্গা পর্যন্ত আসতে সন্ধ্যা সাতটা পার হয়ে যায়। তারপর আধঘণ্টার মধ্যে পদ্মা সেতুতে চলে আছি। কিন্তু টোলপ্লাজায় প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। শেষ পর্যন্ত গুলিস্তান আসতে রাত ১০টা বেজে যায়।’ টোলপ্লাজায় যানজট না থাকলে আরও একে ঘণ্টা আগে ঢাকায় পৌঁছানো যেতে বলে জানান তিনি।

তবে টোল আদায়ে অব্যবস্থাপনা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন। গতকাল সরেজমিন পদ্মা সেতুর জাজিরা টোলপ্লাজা পরিদর্শনে গিয়ে মুঠোফোনে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ঈদের যানবাহনের চাপের কিছু যানজট তৈরি হয়েছে। কিন্তু টোল আদায়ের কোন ধীরগতি ছিল না।’ জাজিরা টোলপ্লাজায় গতকাল সন্ধ্যা ৬ টায় ৫-৭ গাড়ি অপেক্ষা করছে বলে জানান তিনি।

প্রতিটি গাড়ির টোল আদায়ে ৭-১০ সেকেন্ড সময় লাগে দাবি করে সেতু সচিব বলেন, ‘আমার সামনে একটি গাড়ি চলে গেলে এটির টোল দিতে ১০ সেকেন্ড সময় লেগেছে। একই অবস্থা মাওয়া প্রান্তে কোন যানজট নেই। তবে রাতে কিছু যানবাহনের চাপ থাকে।’ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অটো টোল আদায় পদ্ধতি চালু হলে এই সমস্যা থাকবে না বলে জানান তিনি।

পদ্মা সেতুর টোলে করছে চায়না ও কোরিয়া কোম্পানি

পদ্মা সেতুর টোল আদায়কারী ও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন (কেইসি) ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। আগামী পাঁচ বছরের জন্য এই দুটি প্রতিষ্ঠান টোল আদায়, সেতু ও সেতুর দুই প্রান্তে যানবাহন চলাচল ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পদ্ধতি চালু এবং সেতু ও নদীশাসনের কাজ রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এর জন্য ৫ বছরে তাদের দিতে হবে ৬৯৩ কোটি টাকা।

গত ১৭ মে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর টোলের হার নির্ধারণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে মোটরসাইকেলের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দুই দিন পর থেকে সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া সেতুতে কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা; পিকআপ জন্য ১২০০ টাকা; মাইক্রোবাসের জন্য ১৩০০ টাকা; ছোট বাসের (৩১ সিটের কম) জন্য ১৪০০ টাকা; মাঝারি বাসের (৩২ সিটের বেশি) জন্য ২০০০ টাকা; বড় বাস (৩ এক্সেল)’র ২৪০০ টাকা। ছোট ট্রাকের (৫ টন পর্যন্ত) জন্য ১৬০০ টাকা; মাঝারি ট্রাকের (৫-৮ টন পর্যন্ত) ২১০০ টাকা; মাঝারি ট্রাক (৮-১১ টন পর্যন্ত) ২৮০০ টাকা; ট্রাকের জন্য (৩ এক্সেল) ৫৫০০ টাকা; ট্রেইলারের জন্য (৪ এক্সেল) ৬০০০ টাকা। ট্রেইলার ৪ এক্সেলের ঊর্ধ্বে ৬০০০ হাজারের প্রতি এক্সেলে ১৫০০ টাকা যোগ করতে হবে।

এছাড়া গত ১ জুলাই থেকে বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের জন্য তিন জায়গায় টোল আদায় করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। যা যানবাহনের গতি অনেকটা কমে যায় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তাই এক জায়গায় সব টোল আদায়ের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।