ভারতের সংসদে শব্দসেন্সর, বিরোধীদের প্রতিবাদ, মুখ খুললেন স্পিকার

ভারতীয় সংসদের লোকসভা ও রাজ্যসভায় একগুচ্ছ শব্দকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এ নিয়ে বিরোধীদের শুক্রবারও দিনভর প্রতিবাদ-সমাবেশ অব্যাহত ছিল। ১৮ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের সংসদের বাদল অধিবেশন। তার আগে সংসদে ওইসব ‘অসাংবিধানিক’ শব্দ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষ করে ‘লজ্জাজনক’, ‘নির্যাতন’, ‘বিশ্বাসঘাতকতা’, ‘নাটক’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’, ‘অযোগ্য’, ‘ভ-ামি’র মতো বেশ কিছু শব্দ প্রয়োগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সরকারি দলের বক্তব্য ইতোপূর্বে যে সমস্ত শব্দ নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছে, তার মধ্যে অনেক শব্দই বিরোধীরা অতীতে নরেন্দ্র মোদির বিরোধিতা করতে গিয়ে ব্যবহার করেছেন। যা ‘সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক’ ছিল।

সংসদের অধিবেশনে ‘নৈরাজ্যবাদী’, ‘শকুনি’, ‘স্বৈরাচারী’, ‘খলিস্তানি’, ‘বিনাশপুরুষ’, ‘জয়চাঁদ’, ‘তানাশাহি’র মতো শব্দের প্রয়োগও নিষিদ্ধ করা হয়েছে এছাড়া সাংসদদের জন্য প্রকাশিত পুস্তিকায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ‘জুমলাবাজি’, ‘কোভিড স্প্রেডার’, ‘খুনসে ক্ষেতি’ (রক্ত দিয়ে চাষ), বাল বুদ্ধি, ‘স্নুপগেট’-এর মতো কিছু শব্দ। এছাড়া নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছে, ‘দোহরা চরিতা’, ‘নিকম্মা’, ‘ধিন্ধোরা পিটনা’, ‘বেহরি সরকার’ (অন্ধ সরকার), এর মতো শব্দ। এছাড়া রয়েছে, ‘দাঙ্গা’, ‘দালাল’, ‘দাদাগিরি’, ‘কুমিরের কান্না’র মতো শব্দ। এছাড়া আরও অনেক শব্দই রয়েছে নিষিদ্ধর তালিকায়।

গতকাল এই পরিস্থিতিতে মুখ খুললেন লোকসভার স্পিকার ওম বিডলা। লোকসভার স্পিকারের বক্তব্য, কোন শব্দের ওপর ‘নতুন করে সেন্সর জারি করেনি’ সরকার বরং আগে থেকেই যে শব্দগুলো ‘অসাংবিধানিক হিসেবে’ লিপিব্ধ ছিল, সেসবের একটা তালিকা প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। না বুঝে এই নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বিরোধীরা, পাল্টা অভিযোগ সরকারপক্ষের।

এই বক্তব্যর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন। বলেছেন, ‘সাংসদদের ওপর হাস্যকর নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তবে আমি ওইসব নিষিদ্ধ বা মৌলিক শব্দ ব্যবহার করব। সাসপেন্ড করলে করুন। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করব।’

বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংসদ কর্তৃক ‘অসাংবিধানিক শব্দে’ নিষেধাজ্ঞা জারি করা নিয়ে দিনভর বিরোধীদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে। শব্দ নিষিদ্ধ-বিতর্কে স্পিকার ওম বিড়লা আরও বলেন, ‘আগে অসাংবিধানিক শব্দের একটি করে বই প্রতিবছর প্রকাশ হতো। তাই কাগজ বাঁচাতে এবার আমরা সেগুলোকে অনলাইনে প্রকাশ করেছি। সেখানে নতুন করে কোন শব্দ নিষিদ্ধ করা হয়নি। এগুলো আগে থেকে নিষিদ্ধ শব্দের লিপিবদ্ধ তালিকাই।’

বিরোধীদের আক্রমণের জবাব দিয়ে স্পিকার বলেন, ‘১১০০ পৃষ্ঠার ওই নির্দেশিকা বিরোধীরা না পড়েই অবান্তর প্রতিবাদ করছে। যদি পুরোটা পড়তেন তাহলে বিভ্রান্তি ছড়াতেন না তারা। এর আগে ১৯৫৪...১৯৮৬, ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৪, ২০০৯, ২০১০...এরপর থেকে প্রতি বছর ওই বই প্রকাশ করা হতো।’

শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২ , ০১ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৭ জিলহজ ১৪৪৩

ভারতের সংসদে শব্দসেন্সর, বিরোধীদের প্রতিবাদ, মুখ খুললেন স্পিকার

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

ভারতীয় সংসদের লোকসভা ও রাজ্যসভায় একগুচ্ছ শব্দকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এ নিয়ে বিরোধীদের শুক্রবারও দিনভর প্রতিবাদ-সমাবেশ অব্যাহত ছিল। ১৮ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের সংসদের বাদল অধিবেশন। তার আগে সংসদে ওইসব ‘অসাংবিধানিক’ শব্দ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষ করে ‘লজ্জাজনক’, ‘নির্যাতন’, ‘বিশ্বাসঘাতকতা’, ‘নাটক’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’, ‘অযোগ্য’, ‘ভ-ামি’র মতো বেশ কিছু শব্দ প্রয়োগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সরকারি দলের বক্তব্য ইতোপূর্বে যে সমস্ত শব্দ নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছে, তার মধ্যে অনেক শব্দই বিরোধীরা অতীতে নরেন্দ্র মোদির বিরোধিতা করতে গিয়ে ব্যবহার করেছেন। যা ‘সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক’ ছিল।

সংসদের অধিবেশনে ‘নৈরাজ্যবাদী’, ‘শকুনি’, ‘স্বৈরাচারী’, ‘খলিস্তানি’, ‘বিনাশপুরুষ’, ‘জয়চাঁদ’, ‘তানাশাহি’র মতো শব্দের প্রয়োগও নিষিদ্ধ করা হয়েছে এছাড়া সাংসদদের জন্য প্রকাশিত পুস্তিকায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ‘জুমলাবাজি’, ‘কোভিড স্প্রেডার’, ‘খুনসে ক্ষেতি’ (রক্ত দিয়ে চাষ), বাল বুদ্ধি, ‘স্নুপগেট’-এর মতো কিছু শব্দ। এছাড়া নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছে, ‘দোহরা চরিতা’, ‘নিকম্মা’, ‘ধিন্ধোরা পিটনা’, ‘বেহরি সরকার’ (অন্ধ সরকার), এর মতো শব্দ। এছাড়া রয়েছে, ‘দাঙ্গা’, ‘দালাল’, ‘দাদাগিরি’, ‘কুমিরের কান্না’র মতো শব্দ। এছাড়া আরও অনেক শব্দই রয়েছে নিষিদ্ধর তালিকায়।

গতকাল এই পরিস্থিতিতে মুখ খুললেন লোকসভার স্পিকার ওম বিডলা। লোকসভার স্পিকারের বক্তব্য, কোন শব্দের ওপর ‘নতুন করে সেন্সর জারি করেনি’ সরকার বরং আগে থেকেই যে শব্দগুলো ‘অসাংবিধানিক হিসেবে’ লিপিব্ধ ছিল, সেসবের একটা তালিকা প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। না বুঝে এই নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বিরোধীরা, পাল্টা অভিযোগ সরকারপক্ষের।

এই বক্তব্যর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন। বলেছেন, ‘সাংসদদের ওপর হাস্যকর নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তবে আমি ওইসব নিষিদ্ধ বা মৌলিক শব্দ ব্যবহার করব। সাসপেন্ড করলে করুন। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করব।’

বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংসদ কর্তৃক ‘অসাংবিধানিক শব্দে’ নিষেধাজ্ঞা জারি করা নিয়ে দিনভর বিরোধীদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে। শব্দ নিষিদ্ধ-বিতর্কে স্পিকার ওম বিড়লা আরও বলেন, ‘আগে অসাংবিধানিক শব্দের একটি করে বই প্রতিবছর প্রকাশ হতো। তাই কাগজ বাঁচাতে এবার আমরা সেগুলোকে অনলাইনে প্রকাশ করেছি। সেখানে নতুন করে কোন শব্দ নিষিদ্ধ করা হয়নি। এগুলো আগে থেকে নিষিদ্ধ শব্দের লিপিবদ্ধ তালিকাই।’

বিরোধীদের আক্রমণের জবাব দিয়ে স্পিকার বলেন, ‘১১০০ পৃষ্ঠার ওই নির্দেশিকা বিরোধীরা না পড়েই অবান্তর প্রতিবাদ করছে। যদি পুরোটা পড়তেন তাহলে বিভ্রান্তি ছড়াতেন না তারা। এর আগে ১৯৫৪...১৯৮৬, ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৪, ২০০৯, ২০১০...এরপর থেকে প্রতি বছর ওই বই প্রকাশ করা হতো।’