বিশ্বজিৎ হত্যা : ১০ বছর পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছাত্রলীগ নেতা আলাউদ্দিন গ্রেপ্তার

বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলাউদ্দিনকে ১০ বছর পর খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। গতকাল ভোরে বগুড়ার শিবগঞ্জে শশুরবাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ। বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় যাদের সাজা দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে আলাউদ্দিন অন্যতম। পলাতক আলাউদ্দিনকে ২০১৩ সালে আদালতে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিল আদালত।

শিবগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে, ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ‘আত্মগোপন’ করেন। পুলিশের নথিতে ‘পলাতক’ আলাউদ্দিন তার স্ত্রীসহ ৭ জুলাই ঈদের ছুটিতে মোকামতলা বন্দরে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ভোরে আলাউদ্দিনের শ্বশুরবাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শিবগঞ্জ থানার ওসি বলেন, বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার এজাহারে ৪ নম্বর আসামি ছিলেন মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। এ মামলার রায়ে আলাউদ্দিনের যাবজ্জীবন সাজা হয়। তার বিরুদ্ধে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় পঞ্চগড়ের আটোয়ারী থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এ কারণে গ্রেপ্তার আলাউদ্দিনকে আটোয়ারী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আলাউদ্দিন পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার ছোটধাপ গ্রামের হবিবুর রহমানের ছেলে।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, গতকাল রাতের বাসে তার কক্সবাজার জেলার টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেয়ার কথা ছিল। আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী নাহিদ ফেরদৌস টেকনাফে আলাদা দুটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের আগে থেকেই আলাউদ্দিন ও নাহিদার পরিচয় ছিল। ২০১৬ সালে তারা বিয়ে করেন। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন গা ঢাকা দেন। পরে পরিচয় গোপন করে প্রথমে তিনি গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। আলাউদ্দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং সেখানে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা করে। বাঁচার জন্য দৌড় দিলে তিনি শাঁখারীবাজারের রাস্তার মুখে পড়ে যান। রিকশাচালক রিপন তাকে রিকশায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক বিশ্বজিৎকে মৃত ঘোষণা করেন। বিশ্বজিৎকে কোপানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। দেশ-বিদেশে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সমালোচনার মুখে পড়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ।

বিশ্বজিৎ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর গ্রামের দাসপাড়া মহল্লার বাসিন্দা অনন্ত দাসের ছেলে। তাঁতী বাজারে একটি স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি দোকানে রওনা দিলে ছাত্র শিবির কর্মী মনে করে তাকে কোপাতে থাকে ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী নেতাকর্মীরা। পরে এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়। মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রায় সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে। হত্যা মামলাটি পরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এবিএম নিজামুল হক এ মামলায় রায় দেন। রায়ে ২১ আসামির মধ্যে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। নিম্ন আদালতে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অন্য দুজনকে খালাস দিয়ে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে যে দুজন আপিল করেন, তারা খালাস পেয়েছিলেন।

শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২ , ০১ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৭ জিলহজ ১৪৪৩

বিশ্বজিৎ হত্যা : ১০ বছর পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছাত্রলীগ নেতা আলাউদ্দিন গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলাউদ্দিনকে ১০ বছর পর খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। গতকাল ভোরে বগুড়ার শিবগঞ্জে শশুরবাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ। বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় যাদের সাজা দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে আলাউদ্দিন অন্যতম। পলাতক আলাউদ্দিনকে ২০১৩ সালে আদালতে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিল আদালত।

শিবগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে, ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ‘আত্মগোপন’ করেন। পুলিশের নথিতে ‘পলাতক’ আলাউদ্দিন তার স্ত্রীসহ ৭ জুলাই ঈদের ছুটিতে মোকামতলা বন্দরে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ভোরে আলাউদ্দিনের শ্বশুরবাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শিবগঞ্জ থানার ওসি বলেন, বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার এজাহারে ৪ নম্বর আসামি ছিলেন মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। এ মামলার রায়ে আলাউদ্দিনের যাবজ্জীবন সাজা হয়। তার বিরুদ্ধে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় পঞ্চগড়ের আটোয়ারী থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এ কারণে গ্রেপ্তার আলাউদ্দিনকে আটোয়ারী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আলাউদ্দিন পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার ছোটধাপ গ্রামের হবিবুর রহমানের ছেলে।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, গতকাল রাতের বাসে তার কক্সবাজার জেলার টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেয়ার কথা ছিল। আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী নাহিদ ফেরদৌস টেকনাফে আলাদা দুটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের আগে থেকেই আলাউদ্দিন ও নাহিদার পরিচয় ছিল। ২০১৬ সালে তারা বিয়ে করেন। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন গা ঢাকা দেন। পরে পরিচয় গোপন করে প্রথমে তিনি গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। আলাউদ্দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং সেখানে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা করে। বাঁচার জন্য দৌড় দিলে তিনি শাঁখারীবাজারের রাস্তার মুখে পড়ে যান। রিকশাচালক রিপন তাকে রিকশায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক বিশ্বজিৎকে মৃত ঘোষণা করেন। বিশ্বজিৎকে কোপানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। দেশ-বিদেশে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সমালোচনার মুখে পড়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ।

বিশ্বজিৎ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর গ্রামের দাসপাড়া মহল্লার বাসিন্দা অনন্ত দাসের ছেলে। তাঁতী বাজারে একটি স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি দোকানে রওনা দিলে ছাত্র শিবির কর্মী মনে করে তাকে কোপাতে থাকে ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী নেতাকর্মীরা। পরে এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়। মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রায় সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে। হত্যা মামলাটি পরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এবিএম নিজামুল হক এ মামলায় রায় দেন। রায়ে ২১ আসামির মধ্যে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। নিম্ন আদালতে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অন্য দুজনকে খালাস দিয়ে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে যে দুজন আপিল করেন, তারা খালাস পেয়েছিলেন।