ভরা বর্ষায় বৃষ্টি নেই! হাঁসফাঁস জীবন

গাইবান্ধায় গরমে জ্বর সর্দি-কাশি বাড়ছে

গত কয়েক দিনের টানা তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। বৃষ্টির দেখা নেই। আবহাওয়া গুমোট। বাতাসে আর্দ্রতা কমে গেছে। গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করছে। প্রচ- রোদের তাপে পুড়ছে গাইবান্ধাসহ পুরো উত্তরাঞ্চল। প্রতিদিনই সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কড়া রোদ, সঙ্গে প্রচ- গরম। ভ্যাপসা গরমে সর্দি, কাশি ও জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ।

অনলাইনভিত্তিক আবহাওয়া পূর্বাভাস থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার গাইবান্ধায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করেছে এবং রাতে তাপমাত্রার পারদ ছিলো ২৭ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এসময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিলো ৫৫ থেকে ৫৬ শতাংশের বেশি এবং গতিবেগ ঘন্টায় ১০ থেকে ১৪ কি.মি।

বাতাসের গতিবেগ কম এবং আর্দ্রতা বেশি থাকায় ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরম অনুভুত হচ্ছে মানুষের। প্রচ- তাপদাহের কারণে জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, হিট স্ট্রোকসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। ফলে মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

ঋতুবৈচিত্র্যে গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) ছিল আষাঢ়ের শেষ দিন। এ সময় বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও তার পরিবর্তে ভাপসা গরমে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। সূর্যের তাপ অনেকটাই বেশি। তপ্ত রোদের গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ, হাঁপিয়ে উঠেছে জনজীবন। গরমের তীব্রতায় ছোটবড় সবার হাঁসফাঁস অবস্থা।

বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই রৌদ্রতাপে অসহনীয় অবস্থায় পড়ছেন তাঁরা। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকে। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কমে গেছে। রোদের আঁচ থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই এখন হাত-মুখসহ শরীরের বেশিরভাগ অংশ কাপড়ে ঢেকে বের হচ্ছেন। কেউ ব্যবহার করছেন ছাতা। গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে মানুষ ঠাঁই নিচ্ছে গাছতলায় ও মাঠে। অনেকেই আশপাশের পুকুর, নদী ও খালবিলে ঝাঁপ দিয়ে শরীর ভিজিয়ে নিচ্ছেন।

এদিকে বিক্রি বেড়েছে ডাব, কোমলপানীয় আর আইসক্রিমের। শরবতের গ্লাসে, পানির বোতলে কিংবা শসার টুকরোতেও শান্তি খুঁজছেন বর্ষায় তাপদাহে নাকাল মানুষ। গ্রামগঞ্জেও বরফ দিয়ে তৈরি নানা রং আর স্বাদের শরবত বিক্রি হচ্ছে।

বিভিন্ন বয়সী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকালে সূর্যের আলো ফুটতেই গরম শুরু হয়। সময় যতই গড়ায় গরমের তীব্রতাও বাড়তে থাকে। তবে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অসহ্য গরম থাকে। বাতাস নেই। সন্ধ্যার পর অস্বস্তিকর গুমট হয়ে ওঠে পরিবেশ, রাতেও ভ্যাপসা গরম। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে। তাতে দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘুমানো যায় না। কেউ কেউ বলেছেন দিনে কয়েকবার করে গোসল করেও স্বস্তি পাচ্ছেন না। অনেকে আবার মেঝেতেও বিছানা পেতেছেন। নারী-শিশু-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির মাত্রা অন্যদের তুলনায় বেশি।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্্ সালাম জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবে দেশের আজ এই অবস্থা। উন্নত দেশগুলোর কার্বন নির্সরনের ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষতিতে পড়ছে। এজন্য আন্তজার্তিক ভাবে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় প্রদক্ষেপ নিতে হবে।

অন্যদিকে গরমের কারণে মৌসুমি রোগের প্রকোপও বেড়েছে। এর মধ্যে বমি, ডায়রিয়া ও জ্বরে ভুগছেন বেশিরভাগ মানুষ। এ সময় বেশি করে পানি পান, শরবতসহ ঠা-াজাতীয় পানীয়, বিশেষ করে লেবুর শরবত, ডাবের পানি বেশি বেশি করে পান করার পরামর্শ দেন চিকিৎসাসেবা সংশ্লিষ্টরা।

image

গাইবান্ধা : তীব্র গরমে একটু স্বস্তির জন্য পানিতে শিশুদের দাপাদাপি -সংবাদ

আরও খবর
পঞ্চগড়ে খরায় চৌচির মাঠ আমন আবাদ ব্যাহত
মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স
ক্রেতা সংকট চামড়া নিয়ে বিপাকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২ , ০২ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৮ জিলহজ ১৪৪৩

ভরা বর্ষায় বৃষ্টি নেই! হাঁসফাঁস জীবন

গাইবান্ধায় গরমে জ্বর সর্দি-কাশি বাড়ছে

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা

image

গাইবান্ধা : তীব্র গরমে একটু স্বস্তির জন্য পানিতে শিশুদের দাপাদাপি -সংবাদ

গত কয়েক দিনের টানা তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। বৃষ্টির দেখা নেই। আবহাওয়া গুমোট। বাতাসে আর্দ্রতা কমে গেছে। গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করছে। প্রচ- রোদের তাপে পুড়ছে গাইবান্ধাসহ পুরো উত্তরাঞ্চল। প্রতিদিনই সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কড়া রোদ, সঙ্গে প্রচ- গরম। ভ্যাপসা গরমে সর্দি, কাশি ও জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ।

অনলাইনভিত্তিক আবহাওয়া পূর্বাভাস থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার গাইবান্ধায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করেছে এবং রাতে তাপমাত্রার পারদ ছিলো ২৭ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এসময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিলো ৫৫ থেকে ৫৬ শতাংশের বেশি এবং গতিবেগ ঘন্টায় ১০ থেকে ১৪ কি.মি।

বাতাসের গতিবেগ কম এবং আর্দ্রতা বেশি থাকায় ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরম অনুভুত হচ্ছে মানুষের। প্রচ- তাপদাহের কারণে জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, হিট স্ট্রোকসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। ফলে মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

ঋতুবৈচিত্র্যে গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) ছিল আষাঢ়ের শেষ দিন। এ সময় বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও তার পরিবর্তে ভাপসা গরমে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। সূর্যের তাপ অনেকটাই বেশি। তপ্ত রোদের গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ, হাঁপিয়ে উঠেছে জনজীবন। গরমের তীব্রতায় ছোটবড় সবার হাঁসফাঁস অবস্থা।

বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই রৌদ্রতাপে অসহনীয় অবস্থায় পড়ছেন তাঁরা। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকে। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কমে গেছে। রোদের আঁচ থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই এখন হাত-মুখসহ শরীরের বেশিরভাগ অংশ কাপড়ে ঢেকে বের হচ্ছেন। কেউ ব্যবহার করছেন ছাতা। গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে মানুষ ঠাঁই নিচ্ছে গাছতলায় ও মাঠে। অনেকেই আশপাশের পুকুর, নদী ও খালবিলে ঝাঁপ দিয়ে শরীর ভিজিয়ে নিচ্ছেন।

এদিকে বিক্রি বেড়েছে ডাব, কোমলপানীয় আর আইসক্রিমের। শরবতের গ্লাসে, পানির বোতলে কিংবা শসার টুকরোতেও শান্তি খুঁজছেন বর্ষায় তাপদাহে নাকাল মানুষ। গ্রামগঞ্জেও বরফ দিয়ে তৈরি নানা রং আর স্বাদের শরবত বিক্রি হচ্ছে।

বিভিন্ন বয়সী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকালে সূর্যের আলো ফুটতেই গরম শুরু হয়। সময় যতই গড়ায় গরমের তীব্রতাও বাড়তে থাকে। তবে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অসহ্য গরম থাকে। বাতাস নেই। সন্ধ্যার পর অস্বস্তিকর গুমট হয়ে ওঠে পরিবেশ, রাতেও ভ্যাপসা গরম। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে। তাতে দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘুমানো যায় না। কেউ কেউ বলেছেন দিনে কয়েকবার করে গোসল করেও স্বস্তি পাচ্ছেন না। অনেকে আবার মেঝেতেও বিছানা পেতেছেন। নারী-শিশু-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির মাত্রা অন্যদের তুলনায় বেশি।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্্ সালাম জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবে দেশের আজ এই অবস্থা। উন্নত দেশগুলোর কার্বন নির্সরনের ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষতিতে পড়ছে। এজন্য আন্তজার্তিক ভাবে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় প্রদক্ষেপ নিতে হবে।

অন্যদিকে গরমের কারণে মৌসুমি রোগের প্রকোপও বেড়েছে। এর মধ্যে বমি, ডায়রিয়া ও জ্বরে ভুগছেন বেশিরভাগ মানুষ। এ সময় বেশি করে পানি পান, শরবতসহ ঠা-াজাতীয় পানীয়, বিশেষ করে লেবুর শরবত, ডাবের পানি বেশি বেশি করে পান করার পরামর্শ দেন চিকিৎসাসেবা সংশ্লিষ্টরা।