মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স

জিরোরাই ধরা পড়ছে হিরোরা আড়ালে

সরকার এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থা মাদকের বিরুদ্ধে বার বারই ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। মাদক বিরোধী অভিযানও সবসময় অব্যাহত আছে। গাঁজা, ইয়াবা, নেশা জাতীয় ইনকেশন, ফেনসিডিল এবং চোলাই মদসহ নানা রকম মাদক উদ্ধারও হচ্ছে। ‘মাদক ব্যবসায়ী’ পরিচয়ে অনেকে ধরাও পড়ছে। কিন্তু মাঠের বাস্তব চিত্রে দেখা যাচ্ছে, জিরো টলারেন্সের আওতায় মাদকসহ যারা ধরা পড়ছে, এরা মূলত ‘জিরো’। এই ব্যবসায় যারা মূল ‘হিরো’, তারা থেকে যাচ্ছেন পর্দার অন্তরালে।

ইদানীং মাদকের মধ্যে গাঁজার বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। অনেক সময় মণ হিসাবেও ধরা পড়ছে। সঙ্গে যারা ধরা পড়ছে তাদের অনেকেই কিশোর। এতে অনুমান করা যায়, এই অল্প বয়স্ক কিশোররা কিছুতেই লাখ লাখ টাকার এত বিপুল পরিমাণ গাঁজার মালিক হতে পারে না। এরা মূলত বাহক হিসেবে এসব মাদক বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করে থাকে। অথচ মাদকের এসব বড় বড় চালানের আসল মালিকরা ধরা পড়ছেন না বলে অনেকেরই ধারণা।

কিশোরগঞ্জে প্রধানত তিনটি এলাকা দিয়ে মাদ ঢোকে। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল থেকে নৌপথে, কক্সবাজার এলাকা থেকে রেল ও সড়ক পথে, আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে সড়ক পথে। গাঁজার বড় বড় চালান মূলত ধরা পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে। আর এই রুটের প্রধান ট্রানজিট বা জংশন এলাকা যেহেতু ভৈরব, ফলে ভৈরবের র‌্যাব এবং পুলিশের হাতেই বেশিরভাগ চালান ধরা পড়ে। আবার কিশোরগঞ্জের র‌্যাব ক্যাম্পের সদস্যরাও প্রায়শই গাঁজার বড় চালান ধরে থাকেন। তারা সড়ক পথের পাশাপাশি হাওরাঞ্চলের নৌপথের চালনগুলিও ধরে থাকেন।

কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাসে অন্তত অর্ধশতাধিক সফল অভিযান চালানো হয়। গত জুন মাসেও বিভিন্ন অভিযানে ৬ মণের বেশি গাঁজা, ১৬৯ লিটার চোলাই মদ, ৭৮ বোতল ফেনসিডিল এবং ১৫ সহ¯্রাধিক ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। ১৩৩ জন আসামী গ্রেপ্তার করে ৮৯টি মামলা রুজু করা হয়েছে।

কিন্তু প্রতি মাসেই এ ধরনের অভিযানে বিপুল পরিমাণ নানা জাতের মাদক ধরা পড়লেও মাদকের ভয়াল থাবার বিস্তার কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কিশোর-তরুণরা বিপদগামী হচ্ছে। অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। এখন বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কিশোর-তরুণদের আড্ডা বসে। পাড়ার বয়স্ক বা মুরুব্বিরাও তাদের কিছু বলতে সাহস করেন না। কারণ মাদকাসক্তদের কোন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তাৎক্ষণিক ধমক দিয়ে হয়ত তাদের আড্ডাটা ভেঙে দিলেন। পরবর্তীতে কখন কাকে ছুরিকাঘাত করে বসবে, বা কার পরিবারের সদস্যদের ছুরিকাঘাত করে বসবে, এর কোন ঠিক নেই। ফলে এলাকাবাসী প্রধানত আইন শৃংখলা বাহিনীর ওপরই বেশি ভরসা করতে চান। এটাই বর্তমান সমাজ বাস্তবতা। তবে আইন শৃংখলা কমিটির সভায় প্রায়শই এ ব্যাপারে আইন শৃংখলা বাহিনীর অভিযানের আকুতি জানানো হয়। বিশেষ করে মাঝে মাঝে বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যার পর ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে আপত্তিকর আড্ডারত কিশোর-তরুণদের থানায় তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, অভিভাবকদের ডেকে নিলে পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হবে বলে মনে করা হয়। বিভিন্ন সময় এ ধরনের ব্লক রেইডের সুফলও পাওয়া গেছে।

গত ১২ জুলাই জেলা আইন শৃংখলা কমিটির মাসিক সভায়ও ব্লক রেইডের দাবি উঠেছিল। সভায় উপস্থিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোস্তাক সরকারও ব্লক রেইডের সুফলের পক্ষে সায় দিয়েছিলেন এবং পুলিশ সুপারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন।

রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২ , ০২ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৮ জিলহজ ১৪৪৩

মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স

জিরোরাই ধরা পড়ছে হিরোরা আড়ালে

জেলা বার্তা পরিবেশক, কিশোরগঞ্জ

সরকার এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থা মাদকের বিরুদ্ধে বার বারই ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। মাদক বিরোধী অভিযানও সবসময় অব্যাহত আছে। গাঁজা, ইয়াবা, নেশা জাতীয় ইনকেশন, ফেনসিডিল এবং চোলাই মদসহ নানা রকম মাদক উদ্ধারও হচ্ছে। ‘মাদক ব্যবসায়ী’ পরিচয়ে অনেকে ধরাও পড়ছে। কিন্তু মাঠের বাস্তব চিত্রে দেখা যাচ্ছে, জিরো টলারেন্সের আওতায় মাদকসহ যারা ধরা পড়ছে, এরা মূলত ‘জিরো’। এই ব্যবসায় যারা মূল ‘হিরো’, তারা থেকে যাচ্ছেন পর্দার অন্তরালে।

ইদানীং মাদকের মধ্যে গাঁজার বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। অনেক সময় মণ হিসাবেও ধরা পড়ছে। সঙ্গে যারা ধরা পড়ছে তাদের অনেকেই কিশোর। এতে অনুমান করা যায়, এই অল্প বয়স্ক কিশোররা কিছুতেই লাখ লাখ টাকার এত বিপুল পরিমাণ গাঁজার মালিক হতে পারে না। এরা মূলত বাহক হিসেবে এসব মাদক বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করে থাকে। অথচ মাদকের এসব বড় বড় চালানের আসল মালিকরা ধরা পড়ছেন না বলে অনেকেরই ধারণা।

কিশোরগঞ্জে প্রধানত তিনটি এলাকা দিয়ে মাদ ঢোকে। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল থেকে নৌপথে, কক্সবাজার এলাকা থেকে রেল ও সড়ক পথে, আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে সড়ক পথে। গাঁজার বড় বড় চালান মূলত ধরা পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে। আর এই রুটের প্রধান ট্রানজিট বা জংশন এলাকা যেহেতু ভৈরব, ফলে ভৈরবের র‌্যাব এবং পুলিশের হাতেই বেশিরভাগ চালান ধরা পড়ে। আবার কিশোরগঞ্জের র‌্যাব ক্যাম্পের সদস্যরাও প্রায়শই গাঁজার বড় চালান ধরে থাকেন। তারা সড়ক পথের পাশাপাশি হাওরাঞ্চলের নৌপথের চালনগুলিও ধরে থাকেন।

কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাসে অন্তত অর্ধশতাধিক সফল অভিযান চালানো হয়। গত জুন মাসেও বিভিন্ন অভিযানে ৬ মণের বেশি গাঁজা, ১৬৯ লিটার চোলাই মদ, ৭৮ বোতল ফেনসিডিল এবং ১৫ সহ¯্রাধিক ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। ১৩৩ জন আসামী গ্রেপ্তার করে ৮৯টি মামলা রুজু করা হয়েছে।

কিন্তু প্রতি মাসেই এ ধরনের অভিযানে বিপুল পরিমাণ নানা জাতের মাদক ধরা পড়লেও মাদকের ভয়াল থাবার বিস্তার কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কিশোর-তরুণরা বিপদগামী হচ্ছে। অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। এখন বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কিশোর-তরুণদের আড্ডা বসে। পাড়ার বয়স্ক বা মুরুব্বিরাও তাদের কিছু বলতে সাহস করেন না। কারণ মাদকাসক্তদের কোন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তাৎক্ষণিক ধমক দিয়ে হয়ত তাদের আড্ডাটা ভেঙে দিলেন। পরবর্তীতে কখন কাকে ছুরিকাঘাত করে বসবে, বা কার পরিবারের সদস্যদের ছুরিকাঘাত করে বসবে, এর কোন ঠিক নেই। ফলে এলাকাবাসী প্রধানত আইন শৃংখলা বাহিনীর ওপরই বেশি ভরসা করতে চান। এটাই বর্তমান সমাজ বাস্তবতা। তবে আইন শৃংখলা কমিটির সভায় প্রায়শই এ ব্যাপারে আইন শৃংখলা বাহিনীর অভিযানের আকুতি জানানো হয়। বিশেষ করে মাঝে মাঝে বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যার পর ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে আপত্তিকর আড্ডারত কিশোর-তরুণদের থানায় তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, অভিভাবকদের ডেকে নিলে পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হবে বলে মনে করা হয়। বিভিন্ন সময় এ ধরনের ব্লক রেইডের সুফলও পাওয়া গেছে।

গত ১২ জুলাই জেলা আইন শৃংখলা কমিটির মাসিক সভায়ও ব্লক রেইডের দাবি উঠেছিল। সভায় উপস্থিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোস্তাক সরকারও ব্লক রেইডের সুফলের পক্ষে সায় দিয়েছিলেন এবং পুলিশ সুপারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন।