পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ কাজ শুরু শীঘ্রই

আজ আনুষ্ঠানিকভাবে রেলকে দায়িত্ব হস্তান্তর

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ২১ দিন পর সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। আজ সকাল ১০ টায় রেল সংযোগ কাজের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর নিচের অংশ রেলওয়ে কাছে বুঝিয়ে দিবে সেতু কর্তৃপক্ষ। বুঝে পাওয়ার এক সপ্তাহ পর পদ্মা রেল সংযোগের কাজ শুরু হবে। মূল সেতু ও ভায়াডাক্টসহ প্রায় ৭ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ সিঙ্গেল লাইন বসানো হবে। এটা শেষ করতে ছয় মাস সময় লাগবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

গতকাল মুঠোফোনে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘রোববার সকাল ১০টায় সেতু বিভাগ ও রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সেতুতে রেলওয়ে কাজ করার অনুমতি দেয়া হবে। কাজ করার অনুমতি পাওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে পরিকল্পনা করে চলতি মাসের শেষ দিকে কাজ শুরু হবে। রেল সংযোগের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।’ কাজ শুরু পর সেতুর নিচে রেললাইন বসাতে ছয় মাস সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

এর আগে গত শুক্রবার পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, ‘সেতু কর্তৃপক্ষের কাজ বুঝে পাওয়ার পর আগামী সপ্তাহ থেকে পদ্মা সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হতে পারে। এ কাজ শেষ করতে ৬ মাস সময় লাগবে।’ তাই ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে নতুন লাইনে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

রেলপথমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প সরকারের ১০টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। এটি ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মিত হবে। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা আছে। সময় মতো বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি অংশ ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত, দ্বিতীয় অংশ মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এবং তৃতীয় অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত।’ এর মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশে ৮০ শতাংশ, ঢাকা থেকে মাওয়া অংশে ৬০ শতাংশ ও ভাঙ্গা থেকে যশোর সেকশনে ৫১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।

পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে

এর আগে চলতি ডিসেম্বরে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮১ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন তা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া পুরো প্রকল্প ঢাকা-যশোর পর্যন্ত ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।

গত ১৫ মে ঢাকার কমলাপুর থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ সরেজমিন পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এ সময় রেলওয়ে মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার ও পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেনসহ প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরিদর্শনকালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় সেনাবাহিনীর কনসালট্যান্সি প্রকল্প অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সেতু কর্তৃপক্ষ রেলের অংশ বুঝিয়ে দিলে জুলাই মাসের শেষ দিকে সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হবে। পরবর্র্তী ৬ মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। তাই চলতি বছরের ডিসেম্বরের ওই অংশের রেললাইন বসানোর কাজ শেষ করা হবে। কিন্তু সিগনালিংসহ আনুসঙ্গিক অনেক কাজ বাকি থাকবে। তাই ২০২৩ সালে মার্চে অথবা জুনে ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষ করা পরিকল্পনা রয়েছে। ওই বছরের ২৬ মার্চ রেললাইন উদ্বোধনের কথা রয়েছে। যদি কোন কারণে তা সম্ভব না হয়, তবে জুন মাসে উদ্বোধন করা হবে। ওই সময় ওই অংশে রেলওয়ে অপারেশন শুরু হবে। তবে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘রেল প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের প্রথম দিকে। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজে কিছুটা ধীরগতি আসে। যে হারে কাজ করার কথা ছিল, সে হারে হয়নি। তবে এক দিনের জন্যও কাজ বন্ধ ছিল না।’

এক দফা সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ডিপিপি অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিলে প্রকল্পের ব্যয় আরও ৪ হাজার ২৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩৯ হাজার ২৫৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এছাড়া ২০২৪ সালে জুনে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো প্রস্তাব অনুমোদন দেয় একনেক সভা।

জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পের অর্থায়নে করছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ সহায়তা দিবে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ। বাকি ১৮ হাজার ২২১ কোটি ৪৪ টাকা ব্যয় হয়ে সরকারি ফান্ড থেকে। মূল প্রকল্পে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ছিল ৯ হাজার ৯৫৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ব্যয়বৃদ্ধির এই প্রকল্পটিতে সরকারি অর্থায়ন ১৮ হাজার ২২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া চীন সরকার জিটুজি পদ্ধতিতে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে। যা আগে ছিল ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের এপ্রিলে চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত ঋণচুক্তি হয়। এর দুই বছর আগে কমার্শিয়াল চুক্তি হয়েছিল। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করছে চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি।

ঢাকা-যশোর রুটে অত্যাধুনিক ২০ স্টেশন

কমলাপুর থেকে যশোর পর্যন্ত রুটে ২০টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ১৪টি স্টেশনই হবে নতুন। পুরোনো ছয়টি স্টেশনকে ঢেলে সাজানো হবে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে। কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের নিমতলায় নতুন দুটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এরপর নির্মাণ করা হবে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও মাওয়া স্টেশন। মাওয়া স্টেশনটি হবে তুলনামূলক বেশি নান্দনিক। প্রকল্প অনুযায়ী ‘দূর থেকে এটাকে দেখলে কোন উন্নতমানের শপিংমল মনে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

মাওয়া স্টেশনের পরে পদ্মা সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরায় নির্মিত হবে ‘পদ্মা স্টেশন’। ‘মাওয়া স্টেশন’ থেকে পদ্মা স্টেশনের দূরত্ব হবে ১৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ছয় কিলোমিটার পড়বে পদ্মা সেতুতে। তবে সেতুপাড়ের মানুষকে স্টেশনে যেতে দুই থেকে তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।

পদ্মা স্টেশনের পরে শরীয়তপুরে হবে ‘শিবচর স্টেশন’। এছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গায় উন্নত দেশের আদলে নির্মাণ করা হবে জংশন। ভাঙা থেকে একটি লুপ লাইন ফরিদপুর সদর ও অন্য একটি লুপ লাইন নাগরকান্দা পর্যন্ত যাবে। প্রকল্পের আওতায় নাগরকান্দায় স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এরপর গোপালগঞ্জের মকসুদপুর ও মহেশপুরে নির্মিত হবে দুটি রেলস্টেশন। এছাড়া নড়াইলের লোহাগড়া, নড়াইল সদরে একটি করে স্টেশন নির্মাণ করা হবে। যশোরের জামদিয়া ও পদ্মবিলে দুটি নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হবে বলে প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান।

আধুনিকায়ণ হবে ছয়টি স্টেশন

প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান ছয়টি রেলস্টেশন ঢেলে সাজানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। এছাড়া গেন্ডারিয়া ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন নান্দনিক করে গড়ে তোলা হবে। সংস্কার করা হবে তিনটি স্টেশন। সেগুলো হলোÑ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি, যশোরের সিংগাই ও রূপদিয়া স্টেশন। বিদ্যমান এসব স্টেশন নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলা হবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, কমলাপুর থেকে গেন্ডারিয়া তৃতীয় ডুয়েলগেজ লাইন, ভাঙ্গা জংশনে ওভারহেড স্টেশন, কমলাপুরের টিটিপাড়ায় আন্ডারপাস, নড়াইলের তুলারামপুরে নতুন আন্ডারপাস এবং ভাঙ্গা স্টেশনে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। যেসব স্টেশনে আন্ডারপাসের মাধ্যমে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে যাওয়া যাবে। মাওয়া, পদ্মবিল, কাশিয়ানি, রূপদিয়া স্টেশনগুলোতে অপারেশনাল সুবিধা বাড়ানো হবে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২ , ০২ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৮ জিলহজ ১৪৪৩

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ কাজ শুরু শীঘ্রই

আজ আনুষ্ঠানিকভাবে রেলকে দায়িত্ব হস্তান্তর

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

পদ্মা সেতুতে আগামী সপ্তাহ থেকে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হবে। তার আগে তৈরি করা হয়েছে সেতুর অবকাঠামো -ফাইল ছবি

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ২১ দিন পর সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। আজ সকাল ১০ টায় রেল সংযোগ কাজের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর নিচের অংশ রেলওয়ে কাছে বুঝিয়ে দিবে সেতু কর্তৃপক্ষ। বুঝে পাওয়ার এক সপ্তাহ পর পদ্মা রেল সংযোগের কাজ শুরু হবে। মূল সেতু ও ভায়াডাক্টসহ প্রায় ৭ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ সিঙ্গেল লাইন বসানো হবে। এটা শেষ করতে ছয় মাস সময় লাগবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

গতকাল মুঠোফোনে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘রোববার সকাল ১০টায় সেতু বিভাগ ও রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সেতুতে রেলওয়ে কাজ করার অনুমতি দেয়া হবে। কাজ করার অনুমতি পাওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে পরিকল্পনা করে চলতি মাসের শেষ দিকে কাজ শুরু হবে। রেল সংযোগের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।’ কাজ শুরু পর সেতুর নিচে রেললাইন বসাতে ছয় মাস সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

এর আগে গত শুক্রবার পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, ‘সেতু কর্তৃপক্ষের কাজ বুঝে পাওয়ার পর আগামী সপ্তাহ থেকে পদ্মা সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হতে পারে। এ কাজ শেষ করতে ৬ মাস সময় লাগবে।’ তাই ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে নতুন লাইনে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

রেলপথমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প সরকারের ১০টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। এটি ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মিত হবে। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা আছে। সময় মতো বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি অংশ ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত, দ্বিতীয় অংশ মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এবং তৃতীয় অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত।’ এর মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশে ৮০ শতাংশ, ঢাকা থেকে মাওয়া অংশে ৬০ শতাংশ ও ভাঙ্গা থেকে যশোর সেকশনে ৫১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।

পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে

এর আগে চলতি ডিসেম্বরে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮১ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন তা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া পুরো প্রকল্প ঢাকা-যশোর পর্যন্ত ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।

গত ১৫ মে ঢাকার কমলাপুর থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ সরেজমিন পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এ সময় রেলওয়ে মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার ও পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেনসহ প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরিদর্শনকালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় সেনাবাহিনীর কনসালট্যান্সি প্রকল্প অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সেতু কর্তৃপক্ষ রেলের অংশ বুঝিয়ে দিলে জুলাই মাসের শেষ দিকে সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হবে। পরবর্র্তী ৬ মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। তাই চলতি বছরের ডিসেম্বরের ওই অংশের রেললাইন বসানোর কাজ শেষ করা হবে। কিন্তু সিগনালিংসহ আনুসঙ্গিক অনেক কাজ বাকি থাকবে। তাই ২০২৩ সালে মার্চে অথবা জুনে ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষ করা পরিকল্পনা রয়েছে। ওই বছরের ২৬ মার্চ রেললাইন উদ্বোধনের কথা রয়েছে। যদি কোন কারণে তা সম্ভব না হয়, তবে জুন মাসে উদ্বোধন করা হবে। ওই সময় ওই অংশে রেলওয়ে অপারেশন শুরু হবে। তবে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘রেল প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের প্রথম দিকে। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজে কিছুটা ধীরগতি আসে। যে হারে কাজ করার কথা ছিল, সে হারে হয়নি। তবে এক দিনের জন্যও কাজ বন্ধ ছিল না।’

এক দফা সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ডিপিপি অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিলে প্রকল্পের ব্যয় আরও ৪ হাজার ২৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩৯ হাজার ২৫৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এছাড়া ২০২৪ সালে জুনে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো প্রস্তাব অনুমোদন দেয় একনেক সভা।

জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পের অর্থায়নে করছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ সহায়তা দিবে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ। বাকি ১৮ হাজার ২২১ কোটি ৪৪ টাকা ব্যয় হয়ে সরকারি ফান্ড থেকে। মূল প্রকল্পে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ছিল ৯ হাজার ৯৫৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ব্যয়বৃদ্ধির এই প্রকল্পটিতে সরকারি অর্থায়ন ১৮ হাজার ২২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া চীন সরকার জিটুজি পদ্ধতিতে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে। যা আগে ছিল ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের এপ্রিলে চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত ঋণচুক্তি হয়। এর দুই বছর আগে কমার্শিয়াল চুক্তি হয়েছিল। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করছে চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি।

ঢাকা-যশোর রুটে অত্যাধুনিক ২০ স্টেশন

কমলাপুর থেকে যশোর পর্যন্ত রুটে ২০টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ১৪টি স্টেশনই হবে নতুন। পুরোনো ছয়টি স্টেশনকে ঢেলে সাজানো হবে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে। কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের নিমতলায় নতুন দুটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এরপর নির্মাণ করা হবে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও মাওয়া স্টেশন। মাওয়া স্টেশনটি হবে তুলনামূলক বেশি নান্দনিক। প্রকল্প অনুযায়ী ‘দূর থেকে এটাকে দেখলে কোন উন্নতমানের শপিংমল মনে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

মাওয়া স্টেশনের পরে পদ্মা সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরায় নির্মিত হবে ‘পদ্মা স্টেশন’। ‘মাওয়া স্টেশন’ থেকে পদ্মা স্টেশনের দূরত্ব হবে ১৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ছয় কিলোমিটার পড়বে পদ্মা সেতুতে। তবে সেতুপাড়ের মানুষকে স্টেশনে যেতে দুই থেকে তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।

পদ্মা স্টেশনের পরে শরীয়তপুরে হবে ‘শিবচর স্টেশন’। এছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গায় উন্নত দেশের আদলে নির্মাণ করা হবে জংশন। ভাঙা থেকে একটি লুপ লাইন ফরিদপুর সদর ও অন্য একটি লুপ লাইন নাগরকান্দা পর্যন্ত যাবে। প্রকল্পের আওতায় নাগরকান্দায় স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এরপর গোপালগঞ্জের মকসুদপুর ও মহেশপুরে নির্মিত হবে দুটি রেলস্টেশন। এছাড়া নড়াইলের লোহাগড়া, নড়াইল সদরে একটি করে স্টেশন নির্মাণ করা হবে। যশোরের জামদিয়া ও পদ্মবিলে দুটি নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হবে বলে প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান।

আধুনিকায়ণ হবে ছয়টি স্টেশন

প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান ছয়টি রেলস্টেশন ঢেলে সাজানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। এছাড়া গেন্ডারিয়া ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন নান্দনিক করে গড়ে তোলা হবে। সংস্কার করা হবে তিনটি স্টেশন। সেগুলো হলোÑ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি, যশোরের সিংগাই ও রূপদিয়া স্টেশন। বিদ্যমান এসব স্টেশন নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলা হবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, কমলাপুর থেকে গেন্ডারিয়া তৃতীয় ডুয়েলগেজ লাইন, ভাঙ্গা জংশনে ওভারহেড স্টেশন, কমলাপুরের টিটিপাড়ায় আন্ডারপাস, নড়াইলের তুলারামপুরে নতুন আন্ডারপাস এবং ভাঙ্গা স্টেশনে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। যেসব স্টেশনে আন্ডারপাসের মাধ্যমে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে যাওয়া যাবে। মাওয়া, পদ্মবিল, কাশিয়ানি, রূপদিয়া স্টেশনগুলোতে অপারেশনাল সুবিধা বাড়ানো হবে রেলওয়ে সূত্র জানায়।