লাঞ্ছনার শিকার অধ্যক্ষ সেলিম রেজার ফোনালাপ ফাঁস

আ.লীগ নেতার সংবাদ সম্মেলন

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজার ফোনালাপ ফাঁস করেছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। এমপি তাকে মারপিট করেননি বলে সংবাদ সম্মেলন করার দুই দিন পর মারধরের শিকার সেই অধ্যক্ষের ফোনালাপ ফাঁস হলো।

ফোনালাপে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে গত ৭ জুলাই রাতে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা দিতে শোনা যায় অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে। তবে এ ব্যাপারে তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। সেই সংবাদ সম্মেলনে এমপির পাশে বসেই তার হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাটি সরাসরি অস্বীকার করেন অধ্যক্ষ সেলিম রেজা। মারধরের প্রচারণার জন্য এমপি এবং অধ্যক্ষ সেলিম রেজা রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদকে দায়ী করেন। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের সংবাদ সম্মেলন করেন।

সেই সংবাদ সম্মেলনের দুই দিন পর গতকাল নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ। কলেজ অধ্যক্ষের কলরেকর্ড সবার সামনে উপস্থাপন করেছেন তিনি। যদিও কলরেকর্ডটি এর আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে মহানগরের লক্ষ্মীপুর মোড়ে আসাদুজ্জামান আসাদ নিজ কার্যলয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে গত ৭ জুলাইয়ের ঘটনার প্রায় ৯ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের একটি কলরেকর্ড সাংবাদিকদের দেয়া হয়। ফোনালাপে শোনা যায়, এক ব্যক্তিকে এমপির হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়টির বর্ণনা দিচ্ছেন অধ্যক্ষ সেলিম রেজা। তার সেই কথোপকথন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : এমপি কেন ডাকলো?

অধ্যক্ষ : এমপি ডাকেনি তো, ডেকেছে সেকেন্ড এমপি রাজু। রাজু ডেকেছে সকাল ৮টার সময়, প্রিন্সিপাল মহোদয়দের এমপি সালাম দিয়েছে। সব প্রিন্সিপালরা রাত ১০টার সময় আসবে, আপনি আসেন। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : আচ্ছা।

অধ্যক্ষ : সব প্রিন্সিপালকে এই কথা বলছে, অনেক প্রিন্সিপালরা বলছে কী ব্যাপার, বলছে আসেন বুঝতে পারবেন। সকল প্রিন্সিপালকে ডেকেছে রাজু।

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : পালপুরের প্রিন্সিপাল কী গিয়েছিল?

অধ্যক্ষ : না না। পালপুরের প্রিন্সিপাল যায়নি, ওই যে গালাগালি করার পর থেকে ও আর যায় না। করোনার আগে নিয়োগ নিয়ে গালাগালি করেছিল এবং আমাদের পিকনিকে সবার সামনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তারপর থেকে আসে না।

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : আপনাদের অ্যাসোসিয়েশনে থেকে লাভ কী?

অধ্যক্ষ : কিচ্ছু নাই; কিচ্ছু নাই, অধ্যক্ষ ফোরাম অ্যাসোসিয়েশন আমার প্রয়োজন নাই। আমার ১২ জন অধ্যক্ষ যদি এক জায়গায় হয় আপনি এটা অন্যায় বললেন, অন্যায় করলেন, কেউ লড়তে পারব?

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : তারপরে ডাকলো আপনি গেলেন?

অধ্যক্ষ : হ্যাঁ, গেলাম। আমি তো এমনি যাই না। যখন মিটিংয়ে ডাকে তখনই যাই। অন্য অধ্যক্ষরা সপ্তাহের মধ্যে তিন দিনই দেখা করে।

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : আচ্ছা।

অধ্যক্ষ : আমি আর ২৪ নগরের অধ্যক্ষ হাবিব ভাই, কোন মিটিং না হলে আমরা যাই না।

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : আচ্ছা।

অধ্যক্ষ : এটা তার রাগ। আর আমি যখন যাই তখন হাবিব ভাই ডেকে নেয়। বৃহস্পতিবার সেই দিন হাবিব ভাই ও আমি এক সঙ্গে গিয়েছি। হাবিবকে তো চেনেন?

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : হ্যাঁ চিনি।

অধ্যক্ষ : এই দুটা লোক ছাড়া সবাই ওর পা চাটা।

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : ওখানে যাওয়ার পরে?

অধ্যক্ষ : ওখানে যাওয়া পরে শিরোইলের মজিবর ছিল। শিরোইল স্কুল এমপিওভুক্ত হওয়ার কারণে ফুল নিয়ে গিয়েছিল। আমাদের লিডার ছিল, সাধারণ সম্পাদক রশিদ ভাই ছিল। তারপর ওরা বাহিরে আসলো। ওমর প্লাজার পূর্ব পাশে তখন রাজু আসলো, বলছে, এমপি স্যার উঠে যাবেন ঢুকেন ঢুকেন। ঢোকার পর বসতেই বলে, সেলিম তোমার কলেজে কী হয়েছে। আমি বলি, স্যার কিছু হয়নি। (অপ্রকাশযোগ্য ভাষা) তোর অফিসে বসে আমার নামে, আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে। তুই আমাকে না বলে ওই শিক্ষকদের বিচার না করে কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে, এরপর হকিস্টিক দিয়ে মারধর করতে থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্রও তুলে ধরেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী মহানগরীর থিম ওমর প্লাজায় রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ ওঠে। এরই মধ্যে এই ঘটনা অনুসন্ধানে তদন্তে কমিটি গঠন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল অডিও ফাঁসের পর একাধিকবার ফোন করা হলেও কলেজ অধ্যক্ষ রিসিভ করেননি।

রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২ , ০২ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৮ জিলহজ ১৪৪৩

লাঞ্ছনার শিকার অধ্যক্ষ সেলিম রেজার ফোনালাপ ফাঁস

আ.লীগ নেতার সংবাদ সম্মেলন

জেলা বার্র্তা পরিবেশক, রাজশাহী

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজার ফোনালাপ ফাঁস করেছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। এমপি তাকে মারপিট করেননি বলে সংবাদ সম্মেলন করার দুই দিন পর মারধরের শিকার সেই অধ্যক্ষের ফোনালাপ ফাঁস হলো।

ফোনালাপে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে গত ৭ জুলাই রাতে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা দিতে শোনা যায় অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে। তবে এ ব্যাপারে তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। সেই সংবাদ সম্মেলনে এমপির পাশে বসেই তার হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাটি সরাসরি অস্বীকার করেন অধ্যক্ষ সেলিম রেজা। মারধরের প্রচারণার জন্য এমপি এবং অধ্যক্ষ সেলিম রেজা রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদকে দায়ী করেন। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের সংবাদ সম্মেলন করেন।

সেই সংবাদ সম্মেলনের দুই দিন পর গতকাল নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ। কলেজ অধ্যক্ষের কলরেকর্ড সবার সামনে উপস্থাপন করেছেন তিনি। যদিও কলরেকর্ডটি এর আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে মহানগরের লক্ষ্মীপুর মোড়ে আসাদুজ্জামান আসাদ নিজ কার্যলয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে গত ৭ জুলাইয়ের ঘটনার প্রায় ৯ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের একটি কলরেকর্ড সাংবাদিকদের দেয়া হয়। ফোনালাপে শোনা যায়, এক ব্যক্তিকে এমপির হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়টির বর্ণনা দিচ্ছেন অধ্যক্ষ সেলিম রেজা। তার সেই কথোপকথন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : এমপি কেন ডাকলো?

অধ্যক্ষ : এমপি ডাকেনি তো, ডেকেছে সেকেন্ড এমপি রাজু। রাজু ডেকেছে সকাল ৮টার সময়, প্রিন্সিপাল মহোদয়দের এমপি সালাম দিয়েছে। সব প্রিন্সিপালরা রাত ১০টার সময় আসবে, আপনি আসেন। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : আচ্ছা।

অধ্যক্ষ : সব প্রিন্সিপালকে এই কথা বলছে, অনেক প্রিন্সিপালরা বলছে কী ব্যাপার, বলছে আসেন বুঝতে পারবেন। সকল প্রিন্সিপালকে ডেকেছে রাজু।

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : পালপুরের প্রিন্সিপাল কী গিয়েছিল?

অধ্যক্ষ : না না। পালপুরের প্রিন্সিপাল যায়নি, ওই যে গালাগালি করার পর থেকে ও আর যায় না। করোনার আগে নিয়োগ নিয়ে গালাগালি করেছিল এবং আমাদের পিকনিকে সবার সামনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তারপর থেকে আসে না।

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : আপনাদের অ্যাসোসিয়েশনে থেকে লাভ কী?

অধ্যক্ষ : কিচ্ছু নাই; কিচ্ছু নাই, অধ্যক্ষ ফোরাম অ্যাসোসিয়েশন আমার প্রয়োজন নাই। আমার ১২ জন অধ্যক্ষ যদি এক জায়গায় হয় আপনি এটা অন্যায় বললেন, অন্যায় করলেন, কেউ লড়তে পারব?

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : তারপরে ডাকলো আপনি গেলেন?

অধ্যক্ষ : হ্যাঁ, গেলাম। আমি তো এমনি যাই না। যখন মিটিংয়ে ডাকে তখনই যাই। অন্য অধ্যক্ষরা সপ্তাহের মধ্যে তিন দিনই দেখা করে।

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : আচ্ছা।

অধ্যক্ষ : আমি আর ২৪ নগরের অধ্যক্ষ হাবিব ভাই, কোন মিটিং না হলে আমরা যাই না।

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : আচ্ছা।

অধ্যক্ষ : এটা তার রাগ। আর আমি যখন যাই তখন হাবিব ভাই ডেকে নেয়। বৃহস্পতিবার সেই দিন হাবিব ভাই ও আমি এক সঙ্গে গিয়েছি। হাবিবকে তো চেনেন?

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : হ্যাঁ চিনি।

অধ্যক্ষ : এই দুটা লোক ছাড়া সবাই ওর পা চাটা।

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি : ওখানে যাওয়ার পরে?

অধ্যক্ষ : ওখানে যাওয়া পরে শিরোইলের মজিবর ছিল। শিরোইল স্কুল এমপিওভুক্ত হওয়ার কারণে ফুল নিয়ে গিয়েছিল। আমাদের লিডার ছিল, সাধারণ সম্পাদক রশিদ ভাই ছিল। তারপর ওরা বাহিরে আসলো। ওমর প্লাজার পূর্ব পাশে তখন রাজু আসলো, বলছে, এমপি স্যার উঠে যাবেন ঢুকেন ঢুকেন। ঢোকার পর বসতেই বলে, সেলিম তোমার কলেজে কী হয়েছে। আমি বলি, স্যার কিছু হয়নি। (অপ্রকাশযোগ্য ভাষা) তোর অফিসে বসে আমার নামে, আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে। তুই আমাকে না বলে ওই শিক্ষকদের বিচার না করে কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে, এরপর হকিস্টিক দিয়ে মারধর করতে থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্রও তুলে ধরেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী মহানগরীর থিম ওমর প্লাজায় রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ ওঠে। এরই মধ্যে এই ঘটনা অনুসন্ধানে তদন্তে কমিটি গঠন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল অডিও ফাঁসের পর একাধিকবার ফোন করা হলেও কলেজ অধ্যক্ষ রিসিভ করেননি।