যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ইউএস ডলারের বিপরীতে ধারাবাহিকভাবে কমছে বাংলাদেশি টাকার মান। করোনা সংকটের আগে থেকে টাকার দাম কমতে শুরু করেছিল। এরপর টাকার মান এক টাকা বৃদ্ধির বিপরীতে কমছিল প্রায় দুই টাকা। অর্থাৎ উত্থান-পতনের মধ্যে বড় ফারাক লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। এর মধ্যে গত বুধবার একদিনেই কমেছে আরও ৫০ পয়সা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এভাবে টাকার অবমূল্যায়ন অর্থনীতির জন্য হুমকি। এই হুমকি মোকাবিলা করার জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো আরও জোরদার করার সুপারিশ করেছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বুধবার থেকে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলারের দাম ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা। এই রেট গত মঙ্গলবার ছিল ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। এই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, বাজারে তার চেয়ে ৩-?৪ টাকা বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকদের আরও বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতির কারণে গত এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত বছরের ৬ জুলাই প্রতি ডলারের জন্য ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। এক মাস আগে ৩০ মে লেগেছিল ৮৯ টাকা। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে আমেরিকান ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেলেও তা ডলারের সংকট মেটাতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এজন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে। এরপরও এই অবমূল্যায়ন ঠেকানো যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এটা আমাদের অর্থনীতির ওপর দুই দিক থেকে অভিঘাত ফেলবে। প্রথমত, অন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে বেশি টাকা খরচ করে আমদানি করতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, টাকার অবমূল্যায়নের কারণে স্থানীয় বাজারে মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে। অর্থাৎ দুটি মোকাবিলাই কঠিন।’
টাকার এই অবমূল্যায়নকে সরকার কিভাবে মোকাবিলা করে সেটিই দেখার বিষয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তবে এই কারেকশানের কারণে আমাদের দেশের রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বেড়েছে। এটি রপ্তানি খাতের জন্য ভালো। আর যারা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে, তারাও বেশি টাকা পাচ্ছে। এটাও তাদের বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করবে। এজন্য বিষয়টিকে দুই দিক থেকে দেখতে হবে। টাকার অবমূল্যায়ন করেও যদি বেশি ডলার দেশে আসে, তাহলে ভালো। কারণ তখন রেমিট্যান্সের ডলার দিয়েই আমদানির চাপ সহ্য করা সম্ভব হবে রিজার্ভে হাত না দিয়েও। তাই এই পরিস্থিতিতে সরকার কি পদক্ষেপ নেয়, সেটা খুব জরুরি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক গত বুধবার ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করলেও ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় এনেছে ৯৬-৯৭ টাকায়, আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করেছে ৯৬ থেকে ৯৭ টাকা দামে। এর আগে মে মাসে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছিল। আর এদিন খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার ৯৭ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক গত বুধবার ৯৬ টাকায় নগদ ডলার বিক্রি করেছে। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক ৯৭ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে। গত বছরের আগস্ট থেকে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। দুর্বল হচ্ছে টাকা। তার আগে এক বছরেরও বেশি সময় ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর।
মহামারী করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দেয়। আমদানির লাগাম টেনে ধরতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরও ডলারের বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও অবমূল্যায়ন ঠেকানো যাচ্ছে না।
ডলারের বিরুদ্ধে টাকার অবমূল্যায়ন কেন হলো জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ার পেছনে দুটি কারণ আছে। প্রথমত, সারা বিশ্বেই ডলার শক্তিশালী হয়েছে তার নিজের গ্রহণযোগ্যতার কারণে। বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ আন্তর্জাতিক লেনদেন হয় ইউএস ডলারে। এ জন্যও টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। দ্বিতীয়ত, যখন আমাদের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, অর্থাৎ রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেড়ে গেছে, তখনও টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে।’
তবে এই অবমূল্যায়নের বিপরীতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপকে সমর্থন করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এর জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলো ভালো। তবে এমন পদক্ষেপ আরও জোরদার করা দরকার। ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন সারা বিশ্বেই হয়েছে তবে মাত্রাটা ভিন্ন। কোন দেশে বেশি প্রভাব পড়েছে। কোন দেশে কম পড়েছে। কোন দেশ কিভাবে পরিস্থিতিটি মোকাবিলা করবে, সেটিই আসল কথা।’
বাজারে ডলারের চাহিদার জোগান দিতে ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবস মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার দর ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা দরে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়। গত বুধবার বিক্রি করা হয়েছে ৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ঈদের ছুটির আগে কয়েক দিনে বিক্রি করা হয়েছিল ৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১৩ দিনে (১ থেকে ১৩ জুলাই) ৫৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর ফলে রিজার্ভ দুই বছর পর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি (৭.৬২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো তুলে নেয়া হয়। অথচ তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে ইউএস ডলারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। রপ্তানি আয় বাড়লেও ডলারের সংকট মেটাতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত বেড়েছে ডলারের দাম।
রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২ , ০২ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৮ জিলহজ ১৪৪৩
রেজাউল করিম
যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ইউএস ডলারের বিপরীতে ধারাবাহিকভাবে কমছে বাংলাদেশি টাকার মান। করোনা সংকটের আগে থেকে টাকার দাম কমতে শুরু করেছিল। এরপর টাকার মান এক টাকা বৃদ্ধির বিপরীতে কমছিল প্রায় দুই টাকা। অর্থাৎ উত্থান-পতনের মধ্যে বড় ফারাক লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। এর মধ্যে গত বুধবার একদিনেই কমেছে আরও ৫০ পয়সা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এভাবে টাকার অবমূল্যায়ন অর্থনীতির জন্য হুমকি। এই হুমকি মোকাবিলা করার জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো আরও জোরদার করার সুপারিশ করেছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বুধবার থেকে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলারের দাম ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা। এই রেট গত মঙ্গলবার ছিল ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। এই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, বাজারে তার চেয়ে ৩-?৪ টাকা বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকদের আরও বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতির কারণে গত এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত বছরের ৬ জুলাই প্রতি ডলারের জন্য ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। এক মাস আগে ৩০ মে লেগেছিল ৮৯ টাকা। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে আমেরিকান ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেলেও তা ডলারের সংকট মেটাতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এজন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে। এরপরও এই অবমূল্যায়ন ঠেকানো যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এটা আমাদের অর্থনীতির ওপর দুই দিক থেকে অভিঘাত ফেলবে। প্রথমত, অন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে বেশি টাকা খরচ করে আমদানি করতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, টাকার অবমূল্যায়নের কারণে স্থানীয় বাজারে মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে। অর্থাৎ দুটি মোকাবিলাই কঠিন।’
টাকার এই অবমূল্যায়নকে সরকার কিভাবে মোকাবিলা করে সেটিই দেখার বিষয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তবে এই কারেকশানের কারণে আমাদের দেশের রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বেড়েছে। এটি রপ্তানি খাতের জন্য ভালো। আর যারা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে, তারাও বেশি টাকা পাচ্ছে। এটাও তাদের বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করবে। এজন্য বিষয়টিকে দুই দিক থেকে দেখতে হবে। টাকার অবমূল্যায়ন করেও যদি বেশি ডলার দেশে আসে, তাহলে ভালো। কারণ তখন রেমিট্যান্সের ডলার দিয়েই আমদানির চাপ সহ্য করা সম্ভব হবে রিজার্ভে হাত না দিয়েও। তাই এই পরিস্থিতিতে সরকার কি পদক্ষেপ নেয়, সেটা খুব জরুরি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক গত বুধবার ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করলেও ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় এনেছে ৯৬-৯৭ টাকায়, আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করেছে ৯৬ থেকে ৯৭ টাকা দামে। এর আগে মে মাসে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছিল। আর এদিন খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার ৯৭ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক গত বুধবার ৯৬ টাকায় নগদ ডলার বিক্রি করেছে। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক ৯৭ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে। গত বছরের আগস্ট থেকে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। দুর্বল হচ্ছে টাকা। তার আগে এক বছরেরও বেশি সময় ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর।
মহামারী করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দেয়। আমদানির লাগাম টেনে ধরতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরও ডলারের বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও অবমূল্যায়ন ঠেকানো যাচ্ছে না।
ডলারের বিরুদ্ধে টাকার অবমূল্যায়ন কেন হলো জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ার পেছনে দুটি কারণ আছে। প্রথমত, সারা বিশ্বেই ডলার শক্তিশালী হয়েছে তার নিজের গ্রহণযোগ্যতার কারণে। বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ আন্তর্জাতিক লেনদেন হয় ইউএস ডলারে। এ জন্যও টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। দ্বিতীয়ত, যখন আমাদের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, অর্থাৎ রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেড়ে গেছে, তখনও টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে।’
তবে এই অবমূল্যায়নের বিপরীতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপকে সমর্থন করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এর জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলো ভালো। তবে এমন পদক্ষেপ আরও জোরদার করা দরকার। ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন সারা বিশ্বেই হয়েছে তবে মাত্রাটা ভিন্ন। কোন দেশে বেশি প্রভাব পড়েছে। কোন দেশে কম পড়েছে। কোন দেশ কিভাবে পরিস্থিতিটি মোকাবিলা করবে, সেটিই আসল কথা।’
বাজারে ডলারের চাহিদার জোগান দিতে ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবস মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার দর ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা দরে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়। গত বুধবার বিক্রি করা হয়েছে ৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ঈদের ছুটির আগে কয়েক দিনে বিক্রি করা হয়েছিল ৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১৩ দিনে (১ থেকে ১৩ জুলাই) ৫৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর ফলে রিজার্ভ দুই বছর পর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি (৭.৬২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো তুলে নেয়া হয়। অথচ তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে ইউএস ডলারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। রপ্তানি আয় বাড়লেও ডলারের সংকট মেটাতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত বেড়েছে ডলারের দাম।