একদিনে সড়কে ঝরলো ২৪ প্রাণ

পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় সাত জেলায় ২৪ জন নিহত ও ৩৩ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে টাঙ্গাইলে একই পরিবারের ৩ জনসহ ৭, বগুড়ায় পিতাপুত্রসহ ৪, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও ময়মনসিংহ ৩ জন করে ৯ জন এবং গাজীপুরে ও ব্র্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ২ জন করে ৪ জন প্রাণ হারায়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে মির্জাপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মা, ছেলে ও মেয়েসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উপজেলার পাকুল্লা ও দুল্যা মনসুর এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাকুল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসচাপায় মা-ছেলে ও মেয়ে নিহত হন। এ দুর্ঘটনার পর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার পাকুল্লা এলাকায় রাস্তা পার হচ্ছিলেন মা, ছেলে ও মেয়ে। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা টাঙ্গাইলগামী একটি বাস তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই শিশু মেয়েটি নিহত হয়। এ সময় গুরুতর আহত হয় বাকি দুইজন। পরে তাদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতরা হলেন মির্জাপুর বাঁশতৈল এলাকার মাসুদের স্ত্রী পারভীন আক্তার (২৭) তার মেয়ে সাদিয়া (৯) ও ছেলে সুমন (৭)। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতারেল আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লুৎফর রহমান বলেন, পাকুল্লার সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। হাসপাতালে আসার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে ভোরে একই উপজেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দুল্যা মনসুর এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা বালুবোঝাই ট্রাককে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়। এ দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে ঢাকার দিকে যান চলাচল বন্ধ থাকে। যানজটে আটকা পড়ে কর্মস্থলগামী মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরে পুলিশ রেকারের সাহায্যে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এ ব্যাপারে গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি মোল্লা টুটুল বলেন, ঢাকাগামী থেমে থাকা বালুভর্তি একটি ট্রাককে পেছন দিক থেকে বিনিময় পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাসের ৩ জন মারা যায়। আহতদের উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৌনে ১০টার দিকে একজনের মৃত্যু হয়।

বগুড়া : বগুড়া-নওগাঁ সড়কে বগুড়ার কাহালু উপজেলার দরগাহাট এলাকায় গতকাল সকালে প্রাইভেটকার ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে পিতা পুত্রসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন। এরা হলেন আবদুর রহমান (৩৫), তমশের আলী মাস্টার (৭০), ফজলে রাব্বী টগর (৩২) ও সাগর (৩০)। এ ঘটনায় শাকিল (২৫) নামে আরও একজন আহত হয়। সে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বগুড়াগামী একটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে নওগাঁগামী একটি পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দরগাহাট ক্যালারপুকর নামক স্থানে এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারের ৩ যাত্রী মারা যান। এতে আহত হন আরও ২ জন।

খবর পেয়ে ফায়ার সর্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে। দুর্ঘটনায় প্রাইভেটকারের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আহতদের উদ্ধার করে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর আবদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি মারা যান। পুলিশ ও নওগাঁর ধামুইরহাট এলকার মহিলা ইউপি সদস্য (সংরক্ষিত) ফেরদৌসী রহমান জানান, প্রাইভেটকারে ৫ জন ছিলেন। এদের মধ্যে তমছের আলী অসুস্থ ছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য ছেলেসহ কয়েকজন ধামুরইরহাট থেকে বগুড়া আসছিলেন। তমশের আলীর জামাই আজিজার রহমান জানান, তার অসুস্থ শ^শুরের চিকিৎসার জন্য শ্যালক টগর এক বন্ধুর গাড়িতে করে ধামুরহাট থেকে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে আসছিলেন। গাড়িতে টগরের কয়েক বন্ধুু ছিল। পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। তমছের আলী ধামুরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সেখানকার এক কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন বলে তিনি জানান। কাহালু থানার ওসি আমবার হোসেন জানিয়েছেন, পিকআপ ভ্যান ও প্রাইভেটকার আটক করা হয়েছে।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে যাত্রীবাহী বাসচাপায় সিএনজির তিন যাত্রী নিহত হয়েছে। গতকাল বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন নবীগঞ্জ উপজেলার বেতাপুর গ্রামের মৃত আবুল মিয়ার স্ত্রী বকুল বেগম (৫০), আবুল মিয়ার ভাতিজা জাবেদুর রহমান (৩৮) ও একই উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের রব্বান মিয়া (৪৮)।

শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি পরিমল চন্দ্র দেব জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নবীগঞ্জে আউশকান্দিন এলাকায় ঢাকা থেকে সিলেটগামী মিতালী পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীতমুখী অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় অটোরিকশার যাত্রী বকুল বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান। নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অটোরিকশা চালক রব্বান মিয়াকে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া আহত যাত্রী বেতাপুর গ্রামের জাবেদুর রহমানকে গুরুতর অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেরপুর হাইওয়ে পুলিশের ওসি পরিমল দেব।

টঙ্গী (গাজীপুর) : গাজীপুর মহানগররের পুবাইলে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন শেরপুর জেলার মাঝপাড়া থানার গোলাম রাব্বানীর ছেলে মনিরুজ্জামান মনির (৩৮) ও নরসিংদী জেলার মনোহরদি থানার কেরানিনগর গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে ইব্রাহিম হোসেন (৩৩)। পুলিশ নিহতদের উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহম্মেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল ভোর চারটায় পূবাইলের কলেজ গেট এলাকায় ট্রাক-লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে লেগুনার যাত্রী মনিরুজ্জামান মনির নিহত হয়। আহত হয় ৭ যাত্রী। পূবাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গতকাল ভোরে কলেজ গেট এলাকায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী পাথর বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে নরসিংদীগামী যাত্রীবাহী লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন লেগুনার যাত্রী মনির। আহত অবস্থায় ৭ জন যাত্রীকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ঘটনার পর ট্রাক ফেলে চালক পালিয়ে যায়। অন্যদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় শুকুন্দিরবাগ এলাকায় দুই অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ইব্রাহিম হোসেন নামে এক যাত্রী নিহত হয়েছে।

ত্রিশাল : ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় স্বামী-স্ত্রী-সন্তানসহ তিনজন নিহত হয়েছে। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল পৌর শহরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামের ফকির বাড়ির মোস্তাফিজুর রহমান বাবলুর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০), নিহতের স্ত্রী রতœা বেগম (৩০) ও ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা।

জানা যায়, নিহত স্বামী জাহাঙ্গীর আলম স্ত্রী রতœা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর আল্টাসনোগ্রাফি করাতে এসেছিল। সড়ক পারাপারের সময় ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী, স্ত্রী ও সন্তান নিহত হয়। স্থানীয়রা জানায়, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী তাজ ও মাহী এন্টারপ্রাইজের একটি মালবাহী ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট ২০৩৫৮০) রাস্তা পারাপারের সময় তাদের চাপা দেয়। এ সময় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেট ফেটে বাচ্চা বের হয়। অলৌকিকভাবে সেই বাচ্চাটি এখনও বেঁচে আছে।

ত্রিশাল থানার ওসি মো. মাইন উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন মারা গেছেন। গাড়িচাপায় ভূমিষ্ট নবজাতক সুস্থ রয়েছে। চালক পলাতক রয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাইভেটকার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও পুলিশ সদস্যসহ ৪ জন আহত হয়েছে। গতকাল দুপুরে মহাসড়কে সদর উপজেলার উজানিসা এলাকায় এ র্দুঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন জেলার কসবা উপজেলার খাড়েরা মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত আবদু মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন (৫৫) ও সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউপির আবদুল মন্নাফের ছেলে সিএনজি চালক চান বাদশা।

আহতরা হলেন একই পরিবারের সিএনজি যাত্রী শাকিল আহমেদ (২৭), মাতা শিরিন আক্তার (৫০) ও স্ত্রী মিতু আক্তার (২৫)। এছাড়া এ ঘটনায় সিএনজির অন্য যাত্রী পুলিশ সদস্য হাসিবুল হাসান (২৫) আহত হয়। তিনি আখাউড়া উপজেলার ছতুরা শরীফ গ্রামের ফজলু ভূঁইয়ার ছেলে।

আহতরা জানান, সকালে কসবা উপজেলার খাড়েরা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসছিল। অটোরিকশাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উজানিসার এলাকায় আসার পর অন্যদিক থেকে একটি প্রাইভেটকার এসে সিএনজিটিকে মুখোমুখি চাপা দেয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক বিল্লাল হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিএনজি চালক চান বাদশাও মারা যান।

এ বিষয়ে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি সুখেন্দু বসু জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না থাকায় নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

image

ত্রিশাল : অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সড়ক পারাপারের সময় ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী, স্ত্রী ও একটি সন্তান নিহত হয়। এ সময় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেট ফেটে বাচ্চা বের হয়। অলৌকিকভাবে সেই বাচ্চাটি এখনও বেঁচে আছে

আরও খবর
ইসির ‘রুটিন’ সংলাপ শুরু আজ
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে টনপ্রতি ৬০৩ ডলার
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ কাজ শুরু শীঘ্রই
ট্রেনে কর্মস্থলগামী মানুষের ঢল, চরম ভোগান্তির অভিযোগ
লাঞ্ছনার শিকার অধ্যক্ষ সেলিম রেজার ফোনালাপ ফাঁস
ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে, পদক্ষেপ জোরদারের সুপারিশ

রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২ , ০২ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৮ জিলহজ ১৪৪৩

একদিনে সড়কে ঝরলো ২৪ প্রাণ

সংবাদ ডেস্ক

image

ত্রিশাল : অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সড়ক পারাপারের সময় ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী, স্ত্রী ও একটি সন্তান নিহত হয়। এ সময় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেট ফেটে বাচ্চা বের হয়। অলৌকিকভাবে সেই বাচ্চাটি এখনও বেঁচে আছে

পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় সাত জেলায় ২৪ জন নিহত ও ৩৩ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে টাঙ্গাইলে একই পরিবারের ৩ জনসহ ৭, বগুড়ায় পিতাপুত্রসহ ৪, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও ময়মনসিংহ ৩ জন করে ৯ জন এবং গাজীপুরে ও ব্র্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ২ জন করে ৪ জন প্রাণ হারায়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে মির্জাপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মা, ছেলে ও মেয়েসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উপজেলার পাকুল্লা ও দুল্যা মনসুর এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাকুল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসচাপায় মা-ছেলে ও মেয়ে নিহত হন। এ দুর্ঘটনার পর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার পাকুল্লা এলাকায় রাস্তা পার হচ্ছিলেন মা, ছেলে ও মেয়ে। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা টাঙ্গাইলগামী একটি বাস তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই শিশু মেয়েটি নিহত হয়। এ সময় গুরুতর আহত হয় বাকি দুইজন। পরে তাদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতরা হলেন মির্জাপুর বাঁশতৈল এলাকার মাসুদের স্ত্রী পারভীন আক্তার (২৭) তার মেয়ে সাদিয়া (৯) ও ছেলে সুমন (৭)। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতারেল আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লুৎফর রহমান বলেন, পাকুল্লার সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। হাসপাতালে আসার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে ভোরে একই উপজেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দুল্যা মনসুর এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা বালুবোঝাই ট্রাককে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়। এ দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে ঢাকার দিকে যান চলাচল বন্ধ থাকে। যানজটে আটকা পড়ে কর্মস্থলগামী মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরে পুলিশ রেকারের সাহায্যে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এ ব্যাপারে গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি মোল্লা টুটুল বলেন, ঢাকাগামী থেমে থাকা বালুভর্তি একটি ট্রাককে পেছন দিক থেকে বিনিময় পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাসের ৩ জন মারা যায়। আহতদের উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৌনে ১০টার দিকে একজনের মৃত্যু হয়।

বগুড়া : বগুড়া-নওগাঁ সড়কে বগুড়ার কাহালু উপজেলার দরগাহাট এলাকায় গতকাল সকালে প্রাইভেটকার ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে পিতা পুত্রসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন। এরা হলেন আবদুর রহমান (৩৫), তমশের আলী মাস্টার (৭০), ফজলে রাব্বী টগর (৩২) ও সাগর (৩০)। এ ঘটনায় শাকিল (২৫) নামে আরও একজন আহত হয়। সে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বগুড়াগামী একটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে নওগাঁগামী একটি পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দরগাহাট ক্যালারপুকর নামক স্থানে এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারের ৩ যাত্রী মারা যান। এতে আহত হন আরও ২ জন।

খবর পেয়ে ফায়ার সর্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে। দুর্ঘটনায় প্রাইভেটকারের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আহতদের উদ্ধার করে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর আবদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি মারা যান। পুলিশ ও নওগাঁর ধামুইরহাট এলকার মহিলা ইউপি সদস্য (সংরক্ষিত) ফেরদৌসী রহমান জানান, প্রাইভেটকারে ৫ জন ছিলেন। এদের মধ্যে তমছের আলী অসুস্থ ছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য ছেলেসহ কয়েকজন ধামুরইরহাট থেকে বগুড়া আসছিলেন। তমশের আলীর জামাই আজিজার রহমান জানান, তার অসুস্থ শ^শুরের চিকিৎসার জন্য শ্যালক টগর এক বন্ধুর গাড়িতে করে ধামুরহাট থেকে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে আসছিলেন। গাড়িতে টগরের কয়েক বন্ধুু ছিল। পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। তমছের আলী ধামুরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সেখানকার এক কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন বলে তিনি জানান। কাহালু থানার ওসি আমবার হোসেন জানিয়েছেন, পিকআপ ভ্যান ও প্রাইভেটকার আটক করা হয়েছে।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে যাত্রীবাহী বাসচাপায় সিএনজির তিন যাত্রী নিহত হয়েছে। গতকাল বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন নবীগঞ্জ উপজেলার বেতাপুর গ্রামের মৃত আবুল মিয়ার স্ত্রী বকুল বেগম (৫০), আবুল মিয়ার ভাতিজা জাবেদুর রহমান (৩৮) ও একই উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের রব্বান মিয়া (৪৮)।

শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি পরিমল চন্দ্র দেব জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নবীগঞ্জে আউশকান্দিন এলাকায় ঢাকা থেকে সিলেটগামী মিতালী পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীতমুখী অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় অটোরিকশার যাত্রী বকুল বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান। নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অটোরিকশা চালক রব্বান মিয়াকে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া আহত যাত্রী বেতাপুর গ্রামের জাবেদুর রহমানকে গুরুতর অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেরপুর হাইওয়ে পুলিশের ওসি পরিমল দেব।

টঙ্গী (গাজীপুর) : গাজীপুর মহানগররের পুবাইলে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন শেরপুর জেলার মাঝপাড়া থানার গোলাম রাব্বানীর ছেলে মনিরুজ্জামান মনির (৩৮) ও নরসিংদী জেলার মনোহরদি থানার কেরানিনগর গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে ইব্রাহিম হোসেন (৩৩)। পুলিশ নিহতদের উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহম্মেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল ভোর চারটায় পূবাইলের কলেজ গেট এলাকায় ট্রাক-লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে লেগুনার যাত্রী মনিরুজ্জামান মনির নিহত হয়। আহত হয় ৭ যাত্রী। পূবাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গতকাল ভোরে কলেজ গেট এলাকায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী পাথর বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে নরসিংদীগামী যাত্রীবাহী লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন লেগুনার যাত্রী মনির। আহত অবস্থায় ৭ জন যাত্রীকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ঘটনার পর ট্রাক ফেলে চালক পালিয়ে যায়। অন্যদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় শুকুন্দিরবাগ এলাকায় দুই অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ইব্রাহিম হোসেন নামে এক যাত্রী নিহত হয়েছে।

ত্রিশাল : ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় স্বামী-স্ত্রী-সন্তানসহ তিনজন নিহত হয়েছে। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল পৌর শহরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামের ফকির বাড়ির মোস্তাফিজুর রহমান বাবলুর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০), নিহতের স্ত্রী রতœা বেগম (৩০) ও ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা।

জানা যায়, নিহত স্বামী জাহাঙ্গীর আলম স্ত্রী রতœা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর আল্টাসনোগ্রাফি করাতে এসেছিল। সড়ক পারাপারের সময় ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী, স্ত্রী ও সন্তান নিহত হয়। স্থানীয়রা জানায়, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী তাজ ও মাহী এন্টারপ্রাইজের একটি মালবাহী ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট ২০৩৫৮০) রাস্তা পারাপারের সময় তাদের চাপা দেয়। এ সময় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেট ফেটে বাচ্চা বের হয়। অলৌকিকভাবে সেই বাচ্চাটি এখনও বেঁচে আছে।

ত্রিশাল থানার ওসি মো. মাইন উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন মারা গেছেন। গাড়িচাপায় ভূমিষ্ট নবজাতক সুস্থ রয়েছে। চালক পলাতক রয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাইভেটকার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও পুলিশ সদস্যসহ ৪ জন আহত হয়েছে। গতকাল দুপুরে মহাসড়কে সদর উপজেলার উজানিসা এলাকায় এ র্দুঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন জেলার কসবা উপজেলার খাড়েরা মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত আবদু মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন (৫৫) ও সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউপির আবদুল মন্নাফের ছেলে সিএনজি চালক চান বাদশা।

আহতরা হলেন একই পরিবারের সিএনজি যাত্রী শাকিল আহমেদ (২৭), মাতা শিরিন আক্তার (৫০) ও স্ত্রী মিতু আক্তার (২৫)। এছাড়া এ ঘটনায় সিএনজির অন্য যাত্রী পুলিশ সদস্য হাসিবুল হাসান (২৫) আহত হয়। তিনি আখাউড়া উপজেলার ছতুরা শরীফ গ্রামের ফজলু ভূঁইয়ার ছেলে।

আহতরা জানান, সকালে কসবা উপজেলার খাড়েরা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসছিল। অটোরিকশাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উজানিসার এলাকায় আসার পর অন্যদিক থেকে একটি প্রাইভেটকার এসে সিএনজিটিকে মুখোমুখি চাপা দেয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক বিল্লাল হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিএনজি চালক চান বাদশাও মারা যান।

এ বিষয়ে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি সুখেন্দু বসু জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না থাকায় নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।