ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ অর্থ সহায়তা কাটছাঁট করছে ইইউ

ব্যাপক মূল্যস্ফীতি ও নিজেদের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ অর্থ কাটছাঁট করছে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ।

গত মার্চে ইইউর নির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশন ইউক্রেনকে ৯০০ কোটি ইউরো (ইউরোর বর্তমান মূল্যমান অনুযায়ী ৯০০ কোটি ডলার) ঋণ দেয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। সেই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল, ঋণের এই অর্থ পরিশোধ করবে ইইউয়ের সদস্যরাষ্ট্রগুলো। ইইউ সদস্যরা কমিশনের সেই প্রস্তাবে সম্মতিও দিয়েছিল।

সেই সঙ্গে ইইউয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক থেকেও ১৫০ কোটি ইউরো ঋণ পাওয়ার কথা ছিল ইউক্রেনের। সেই ঋণ পরিশোধের দায়ও ছিল ইইউ সদস্যদের। কিন্তু শেষ খবর অনুযায়ী, ইইউ সদস্যদের আপত্তির কারণে আটকে গেছে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ঋণ। কোন সদস্য রাষ্ট্র এই ঋণ পরিশোধের দায় নিতে চাইছে না।

একই সঙ্গে কমে গেছে ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিশ্রুত অর্থ সহায়তাও, ৯০০ কোটি ডলার থেকে এই সহায়তা নেমে এসেছে ১০০ কোটি ডলারে। এক্ষেত্রেও কারণ একই। ঋণ পরিশোধের দায় নিতে ইইউর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর গড়িমসি।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত জার্মানির তৎপরতার কারণেই কমেছে এই সহায়তা। দেশটির সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ব্লুমবার্গকে জানান, জার্মানি এই মুহূর্তে ঋণ পরিশোধের দায় নিতে আগ্রহী নয়।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই মুহূর্তে ইউক্রেনের ঋণ পরিশোধের দায় নেয়ার মতো অবস্থা জার্মানির নেই। ইইউকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, ইউরোপীয় কমিশনের ঋণের পরিবর্তে ইউক্রেনকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে অফেরতযোগ্য আর্থিক সহায়তা দেয়া যায় কি নাÑসে চেষ্টা করা যেতে পারে। জার্মানি এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে।’

এমন এক সময়ে এই সংবাদ এলো, যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রীতিমতো ধুঁকছে। সবচেয়ে উদ্বেগে আছে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানি। এ উদ্বেগের কারণ— ইউরোপীয় দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও সঙ্গে তিক্ততা চরমে পর্যায়ে ওঠায় রাশিয়া যদি ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, সেক্ষেত্রে জার্মানির অর্থনীতি রীতিমতো পঙ্গু হয়ে যাবে।

গত মাসে জার্মানির অর্থমন্ত্রী রবার্ট হেবেক দেশটির দের স্পিগেল সাময়িকীকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রাশিয়া যদি স্থায়ীভাবে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে ব্যাপক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে জার্মানির শিল্প উৎপাদন। ফলে ব্যাপকভাবে বাড়বে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব। গত মাসে এই শঙ্কা জানিয়েছেন।

এই আশঙ্কা আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান। শুক্রবার এক দলীয় সভায় তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর নিষেধজ্ঞা জারির মাধ্যমে ইউরোপীয় অর্থনীতি আসলে তার ফুসফুসে গুলি করেছে; আর সেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এখন হাঁসফাঁস করছে বাতাসের জন্য।’

রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২ , ০২ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৮ জিলহজ ১৪৪৩

ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ অর্থ সহায়তা কাটছাঁট করছে ইইউ

image

ব্যাপক মূল্যস্ফীতি ও নিজেদের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ অর্থ কাটছাঁট করছে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ।

গত মার্চে ইইউর নির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশন ইউক্রেনকে ৯০০ কোটি ইউরো (ইউরোর বর্তমান মূল্যমান অনুযায়ী ৯০০ কোটি ডলার) ঋণ দেয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। সেই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল, ঋণের এই অর্থ পরিশোধ করবে ইইউয়ের সদস্যরাষ্ট্রগুলো। ইইউ সদস্যরা কমিশনের সেই প্রস্তাবে সম্মতিও দিয়েছিল।

সেই সঙ্গে ইইউয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক থেকেও ১৫০ কোটি ইউরো ঋণ পাওয়ার কথা ছিল ইউক্রেনের। সেই ঋণ পরিশোধের দায়ও ছিল ইইউ সদস্যদের। কিন্তু শেষ খবর অনুযায়ী, ইইউ সদস্যদের আপত্তির কারণে আটকে গেছে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ঋণ। কোন সদস্য রাষ্ট্র এই ঋণ পরিশোধের দায় নিতে চাইছে না।

একই সঙ্গে কমে গেছে ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিশ্রুত অর্থ সহায়তাও, ৯০০ কোটি ডলার থেকে এই সহায়তা নেমে এসেছে ১০০ কোটি ডলারে। এক্ষেত্রেও কারণ একই। ঋণ পরিশোধের দায় নিতে ইইউর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর গড়িমসি।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত জার্মানির তৎপরতার কারণেই কমেছে এই সহায়তা। দেশটির সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ব্লুমবার্গকে জানান, জার্মানি এই মুহূর্তে ঋণ পরিশোধের দায় নিতে আগ্রহী নয়।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই মুহূর্তে ইউক্রেনের ঋণ পরিশোধের দায় নেয়ার মতো অবস্থা জার্মানির নেই। ইইউকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, ইউরোপীয় কমিশনের ঋণের পরিবর্তে ইউক্রেনকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে অফেরতযোগ্য আর্থিক সহায়তা দেয়া যায় কি নাÑসে চেষ্টা করা যেতে পারে। জার্মানি এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে।’

এমন এক সময়ে এই সংবাদ এলো, যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রীতিমতো ধুঁকছে। সবচেয়ে উদ্বেগে আছে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানি। এ উদ্বেগের কারণ— ইউরোপীয় দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও সঙ্গে তিক্ততা চরমে পর্যায়ে ওঠায় রাশিয়া যদি ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, সেক্ষেত্রে জার্মানির অর্থনীতি রীতিমতো পঙ্গু হয়ে যাবে।

গত মাসে জার্মানির অর্থমন্ত্রী রবার্ট হেবেক দেশটির দের স্পিগেল সাময়িকীকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রাশিয়া যদি স্থায়ীভাবে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে ব্যাপক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে জার্মানির শিল্প উৎপাদন। ফলে ব্যাপকভাবে বাড়বে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব। গত মাসে এই শঙ্কা জানিয়েছেন।

এই আশঙ্কা আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান। শুক্রবার এক দলীয় সভায় তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর নিষেধজ্ঞা জারির মাধ্যমে ইউরোপীয় অর্থনীতি আসলে তার ফুসফুসে গুলি করেছে; আর সেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এখন হাঁসফাঁস করছে বাতাসের জন্য।’