ফেইসবুকে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ

নড়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি

ও দোকানে হামলা, অগ্নিসংযোগ

ফেইসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে নড়াইলের লোহাগড়ায় মন্দিরসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়ি ও দোকানে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকার বাজারের দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ফেইসবুকে পোস্ট দেয়া যুবকের বাবাকেও আটক করেছে পুলিশ।

লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নারাণ চন্দ্র পাল জানান, গত শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে মহানবীকে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগ এনে ঘটনার সূত্রপাত হয়। এরপর দিঘলিয়া বাজারে ও সাহাপাড়ায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়।

তিনি বলেন, উত্তেজিত জনতাকে প্রশাসনের প্রতি আস্থা রেখে শান্ত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কেউ বিতর্কিত পোস্ট দিলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে, এ বিষয়ে কোন ছাড় দেয়া হবে না।

স্থানীয়রা জানান, আকাশ সাহা নামে এক কলেজছাত্রের ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দিঘলিয়ায় শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার বিকেলে এলাকাবাসী আকাশকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করে।

পরে উত্তেজিত জনতা দিঘলিয়া বাজারের নিত্য দুলাল সাহা, অনুপ সাহা, অশোক সাহা, সনজিদ সাহার মুদি দোকান এবং গোবিন্দ কুন্ডু ও গৌতম কুন্ডুর মিষ্টির দোকান ভাঙচুর করে। এছাড়া সাহাপাড়ার গৌরসাহা, চায়না রানী সাহা, বিপ্লব সাহার বাড়িঘর ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তারা নাড়– গোপালের বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এরপর উত্তেজিত জনতা রাত ৯টার দিকে আখড়াবাড়ী সার্বজনীন পূজাম-পে আগুন ধরিয়ে দেয়। লোহাগড়া থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে র‌্যাব-৬-এর একটি দল এবং নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর রায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

লোহাগড়ার ইউএনও আজগার আলী বলেন, অভিযুক্ত আকাশ পলাতক থাকায় তার অবস্থান জানার জন্য তার বাবাকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

দিঘলিয়ার ঘটনায় যার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়েছে তার বাবাকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু হামলাকারীদের কাউকেই এখনও আটক করা হয়নি। তবে পুলিশ বলেছে ওই তরুণ যে ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননা করে পোস্ট দিয়েছে তার প্রমাণ এখনও তারা পায়নি।

সম্প্রতি নড়াইলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানোর পর এবার একই অজুহাতে ওই এলাকার দিঘলিয়ায় হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে আগুন এবং হামলার ঘটনা ঘটেছে।

রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২ , ০২ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৮ জিলহজ ১৪৪৩

ফেইসবুকে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ

নড়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি

ও দোকানে হামলা, অগ্নিসংযোগ

প্রতিনিধি, নড়াইল

image

নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীতে হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল -সংবাদ

ফেইসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে নড়াইলের লোহাগড়ায় মন্দিরসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়ি ও দোকানে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকার বাজারের দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ফেইসবুকে পোস্ট দেয়া যুবকের বাবাকেও আটক করেছে পুলিশ।

লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নারাণ চন্দ্র পাল জানান, গত শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে মহানবীকে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগ এনে ঘটনার সূত্রপাত হয়। এরপর দিঘলিয়া বাজারে ও সাহাপাড়ায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়।

তিনি বলেন, উত্তেজিত জনতাকে প্রশাসনের প্রতি আস্থা রেখে শান্ত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কেউ বিতর্কিত পোস্ট দিলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে, এ বিষয়ে কোন ছাড় দেয়া হবে না।

স্থানীয়রা জানান, আকাশ সাহা নামে এক কলেজছাত্রের ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দিঘলিয়ায় শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার বিকেলে এলাকাবাসী আকাশকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করে।

পরে উত্তেজিত জনতা দিঘলিয়া বাজারের নিত্য দুলাল সাহা, অনুপ সাহা, অশোক সাহা, সনজিদ সাহার মুদি দোকান এবং গোবিন্দ কুন্ডু ও গৌতম কুন্ডুর মিষ্টির দোকান ভাঙচুর করে। এছাড়া সাহাপাড়ার গৌরসাহা, চায়না রানী সাহা, বিপ্লব সাহার বাড়িঘর ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তারা নাড়– গোপালের বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এরপর উত্তেজিত জনতা রাত ৯টার দিকে আখড়াবাড়ী সার্বজনীন পূজাম-পে আগুন ধরিয়ে দেয়। লোহাগড়া থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে র‌্যাব-৬-এর একটি দল এবং নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর রায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

লোহাগড়ার ইউএনও আজগার আলী বলেন, অভিযুক্ত আকাশ পলাতক থাকায় তার অবস্থান জানার জন্য তার বাবাকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

দিঘলিয়ার ঘটনায় যার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়েছে তার বাবাকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু হামলাকারীদের কাউকেই এখনও আটক করা হয়নি। তবে পুলিশ বলেছে ওই তরুণ যে ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননা করে পোস্ট দিয়েছে তার প্রমাণ এখনও তারা পায়নি।

সম্প্রতি নড়াইলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানোর পর এবার একই অজুহাতে ওই এলাকার দিঘলিয়ায় হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে আগুন এবং হামলার ঘটনা ঘটেছে।