‘সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ না হলে নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়বে’

বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা ও প্রতিবাদ

সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে গতকাল বিকেলে সারাদেশে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ডাকে গণসমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। নিজ নিজ সংগঠনের পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনসমূহের হাজারো মানুষ এতে অংশ নেয়।

ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠানের পর এক বিক্ষোভ মিছিল সেøাগানসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ প্রদক্ষিণ করে। চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় চত্বরে সমাবেশ শেষে হাজারো জনতার মিছিল আন্দরকিল্লা, লালদীঘি হয়ে নিউমার্কেট চত্বরে এসে শেষ হয়। চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত আগামী ২২ অক্টোবর শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একই দাবিতে সারাদেশে গণঅনশনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। সমাবেশে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু নেতারা সারা দেশব্যাপী চলমান সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়ন এবং শিক্ষকদের ওপর হয়রানি বন্ধের জোর দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেছেন, ‘অন্যথায় আগামী সংসদ নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।’

ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের ইতোমধ্যে সাড়ে তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নে আজও সরকারের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এতে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হতাশ হয়ে সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এ আন্দোলনে নেমেছে। এছাড়া বিকল্পে আর কোন পথ তাদের সামনে খোলা নেই।’ নেতারা আরও বলেন, ‘বিগত মার্চ মাসে আড়াই লাখ লোকের গণস্বাক্ষরসংবলিত স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর অবগতির জন্য তার কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়া সত্ত্বেও আজও কোন সরকারি উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।’

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, বৈষম্য বিলোপ আইন ও দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইনের প্রণয়ন; জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন; অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রতির কথা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেন নেতারা। তারা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিগত সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে দলীয় নির্বাচনী ইশতেহার দলের প্রধান হিসেবে নিজেই ঘোষণা করেছিলেন। তাই তিনি স্বউদ্যোগে তার প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবেন।’

ঢাকার সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও মি. নির্মল রোজারিও, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, সাংবাদিক বাসুদেব ধর, অ্যাডভোকেট প্রিয়রঞ্জন দত্ত, রঞ্জন কর্মকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, অ্যাডভোকেট শ্যামল কুমার রায়, অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন ম-ল, রবীন্দ্র নাথ বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ্মাবতী দেবী, ঐক্য পরিষদ মহানগর দক্ষিণের সভাপতি লায়ন চিত্ত রঞ্জন দাস, ঐক্য পরিষদ মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার রায় শিশির, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মি. হেমন্ত কোড়াইয়া।

নিন্দা বাম জোটের

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়ায় সাম্প্রদায়িক হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে জোটের নেতারা এমন প্রতিক্রিয়া জানান। বিবৃতিদাতারা হলেনÑ বাম জোটের সমন্বয়ক ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ্ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্ক্সবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক।

বিবৃতিতে বাম জোটের নেতারা বলেন, ‘দেশে অব্যাহতভাবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে যাচ্ছে এবং সরকার এক্ষেত্রে দৃশ্যত প্রায় নিষ্ক্রিয়-নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। যা এ জাতীয় ঘটনা পুনঃপুনঃ সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে ইন্ধন যোগাচ্ছে।’

সিপিবির উদ্বেগ ও ক্ষোভ

নড়াইলের দিঘলিয়ায় সংগঠিত সাম্প্রদায়িক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষী সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। গতকাল এক বিবৃতিতে এই দাবি জানায়। পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও সরকারের উদাসীনতা, ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং এর পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান না করায় এ ধরনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। স্বার্থান্বেষীরা এসব ঘটনাকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে।’

বিবৃতিতে নেতারা অঞ্চলের ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সারাদেশের ধর্মীয়, জাতিগত সংখ্যালঘু সব মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সর্বত্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে যথাযথ ভূমিকা নেয়ার আহ্বান জানান।

আজ ঢাকায় সিপিবির বিক্ষোভ

নড়াইলসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, নির্যাতন রুখে দাঁড়ানো, হামলাকারী ও মদদদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ বিকেল ৫টায় ঢাকার পুরানাপল্টন মোড়ে সিপিবির উদ্যোগে সমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে। এতে সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন।

নরসিংদীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন

‘ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই এবং ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল নরসিংদীতে সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। নরসিংদী জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে নরসিংদী শহরে ভাগবত আশ্রম ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনের সড়কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ অহিভূষণ চক্রবর্তী।

সমাবেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার জন্য পৃথকভাবে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, নরসিংদীসহ সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুরের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে এ সব অপকর্ম বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জিত কুমার সাহা, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অনিল ঘোষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ফুটবলার সুভাষ সাহা, পূজা উদযাপন পরিষদ নেতা উত্তম মোদক, সমাজসেবক বিনয় সাহা, সুভাষ সাহা, প্রদীপ বিশ্বাস, দিনেশ দাস, কৃষ্ণকন্ত আচার্য্য, শান্তিরঞ্জন বিশ্বাস, ঝুটন দত্ত, সুভাষ দাস প্রমুখ।

সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কুমার সাহা।

রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২ , ০২ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৮ জিলহজ ১৪৪৩

‘সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ না হলে নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়বে’

বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা ও প্রতিবাদ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে গতকাল বিকেলে সারাদেশে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ডাকে গণসমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। নিজ নিজ সংগঠনের পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনসমূহের হাজারো মানুষ এতে অংশ নেয়।

ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠানের পর এক বিক্ষোভ মিছিল সেøাগানসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ প্রদক্ষিণ করে। চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় চত্বরে সমাবেশ শেষে হাজারো জনতার মিছিল আন্দরকিল্লা, লালদীঘি হয়ে নিউমার্কেট চত্বরে এসে শেষ হয়। চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত আগামী ২২ অক্টোবর শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একই দাবিতে সারাদেশে গণঅনশনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। সমাবেশে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু নেতারা সারা দেশব্যাপী চলমান সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়ন এবং শিক্ষকদের ওপর হয়রানি বন্ধের জোর দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেছেন, ‘অন্যথায় আগামী সংসদ নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।’

ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের ইতোমধ্যে সাড়ে তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নে আজও সরকারের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এতে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হতাশ হয়ে সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এ আন্দোলনে নেমেছে। এছাড়া বিকল্পে আর কোন পথ তাদের সামনে খোলা নেই।’ নেতারা আরও বলেন, ‘বিগত মার্চ মাসে আড়াই লাখ লোকের গণস্বাক্ষরসংবলিত স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর অবগতির জন্য তার কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়া সত্ত্বেও আজও কোন সরকারি উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।’

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, বৈষম্য বিলোপ আইন ও দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইনের প্রণয়ন; জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন; অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রতির কথা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেন নেতারা। তারা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিগত সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে দলীয় নির্বাচনী ইশতেহার দলের প্রধান হিসেবে নিজেই ঘোষণা করেছিলেন। তাই তিনি স্বউদ্যোগে তার প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবেন।’

ঢাকার সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও মি. নির্মল রোজারিও, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, সাংবাদিক বাসুদেব ধর, অ্যাডভোকেট প্রিয়রঞ্জন দত্ত, রঞ্জন কর্মকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, অ্যাডভোকেট শ্যামল কুমার রায়, অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন ম-ল, রবীন্দ্র নাথ বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ্মাবতী দেবী, ঐক্য পরিষদ মহানগর দক্ষিণের সভাপতি লায়ন চিত্ত রঞ্জন দাস, ঐক্য পরিষদ মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার রায় শিশির, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মি. হেমন্ত কোড়াইয়া।

নিন্দা বাম জোটের

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়ায় সাম্প্রদায়িক হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে জোটের নেতারা এমন প্রতিক্রিয়া জানান। বিবৃতিদাতারা হলেনÑ বাম জোটের সমন্বয়ক ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ্ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্ক্সবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক।

বিবৃতিতে বাম জোটের নেতারা বলেন, ‘দেশে অব্যাহতভাবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে যাচ্ছে এবং সরকার এক্ষেত্রে দৃশ্যত প্রায় নিষ্ক্রিয়-নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। যা এ জাতীয় ঘটনা পুনঃপুনঃ সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে ইন্ধন যোগাচ্ছে।’

সিপিবির উদ্বেগ ও ক্ষোভ

নড়াইলের দিঘলিয়ায় সংগঠিত সাম্প্রদায়িক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষী সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। গতকাল এক বিবৃতিতে এই দাবি জানায়। পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও সরকারের উদাসীনতা, ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং এর পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান না করায় এ ধরনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। স্বার্থান্বেষীরা এসব ঘটনাকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে।’

বিবৃতিতে নেতারা অঞ্চলের ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সারাদেশের ধর্মীয়, জাতিগত সংখ্যালঘু সব মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সর্বত্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে যথাযথ ভূমিকা নেয়ার আহ্বান জানান।

আজ ঢাকায় সিপিবির বিক্ষোভ

নড়াইলসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, নির্যাতন রুখে দাঁড়ানো, হামলাকারী ও মদদদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ বিকেল ৫টায় ঢাকার পুরানাপল্টন মোড়ে সিপিবির উদ্যোগে সমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে। এতে সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন।

নরসিংদীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন

‘ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই এবং ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল নরসিংদীতে সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। নরসিংদী জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে নরসিংদী শহরে ভাগবত আশ্রম ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনের সড়কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ অহিভূষণ চক্রবর্তী।

সমাবেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার জন্য পৃথকভাবে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, নরসিংদীসহ সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুরের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে এ সব অপকর্ম বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জিত কুমার সাহা, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অনিল ঘোষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ফুটবলার সুভাষ সাহা, পূজা উদযাপন পরিষদ নেতা উত্তম মোদক, সমাজসেবক বিনয় সাহা, সুভাষ সাহা, প্রদীপ বিশ্বাস, দিনেশ দাস, কৃষ্ণকন্ত আচার্য্য, শান্তিরঞ্জন বিশ্বাস, ঝুটন দত্ত, সুভাষ দাস প্রমুখ।

সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কুমার সাহা।