যশোরের রাজারহাটে বিপুল চামড়ার সমাগম, কোটি টাকার হাতবদল

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার হাট যশোরের রাজারহাটে ঈদুল আজহার পর গতকাল ছিল সবচেয়ে বড় হাট। এদিন প্রথম হাটের তুলনায় বিপুল চামড়ার সমাগম ঘটে। ভালো মানের চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়েছে। হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতকাল কোটি টাকার চামড়ার হাতবদল হয়েছে।

তবে হাটে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ পরবর্তী বড় হাটে চামড়ার দাম না পেয়ে তারা হতাশ। সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। অনেকেই প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন নির্ধারিত দামের অর্ধেকে। আর ছাগলের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় সেগুলোর দাম পাওয়াই দুষ্কর। তবে আড়তদাররা বলছেন, গতকাল সরকার নির্ধারিত দামে ভালো মানের চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। তবে যেগুলো চামড়া নানা কারণে নষ্ট হয়েছে সেগুলো নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়নি। গতকাল চামড়ার সমাগমে খুশি ছিল সাবাই। আগামী হাটগুলোতেও চামড়ার সমাগম থাকবে বলে আশা তাদের।

এদিন সকালে যশোরসহ নড়াইল, সাতক্ষীরা ও মাগুরার বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চামড়া নিয়ে রাজারহাটে আসেন।

গোপালগঞ্জ থেকে আসা জয়ন্ত পোদ্দার বলেন, এবার ৫০০ পিস গরুর চামড়া কিনেছি। হাটে ২০০ পিস গরু ও ১০০টি ছাগলের চামড়া এনেছি। গরুর চামড়া ৭০০ টাকা দরে আর ছাগলের চামড়া ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। গরুর চামড়াপ্রতি খরচ বাদ দিয়ে ১০০ টাকা করে গচ্চা গেছে। এছাড়া গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে আমার। আশা করছি আগামী শনিবারের হাটে দাম ভালো পাওয়া যাবে। দাম না পেলে পুঁজি শেষ হয়ে যাবে। ফরিদপুরের ব্যবসায়ী বিপুল দাস বলেন, হাটে ৫০০ পিস গরুর চামড়া এনেছি। প্রতিটি চামড়া কিনেছি ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। লবণ, শ্রমিক খরচ ও পরিবহন বাবদ প্রতিটি চামড়ায় আরও ২০০ টাকা করে খরচ হয়েছে। হাটে বড় চামড়া বিক্রি করেছি ৯০০ টাকা, আর ছোটগুলো ৪০০ টাকা দরে। এর মধ্যে ২০টি চামড়া বিক্রি হয়নি। গড়ে চামড়া বিক্রি হয়েছে সাড়ে ২২ টাকা ফুট দরে। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত দামের অর্ধেক পেয়েছি। আরেক চামড়া ব্যবসায়ী ফুলচান দাস বলেন, আমরা এক হাজার পিস ছাগলের চামড়া কিনেছিলাম। চামড়ায় লবণ দেয়া ছিল। লবণের দাম বেশি ও শ্রমিক না পাওয়ায় প্রায় ১২০০ পিস চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ট্যানারিগুলো ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট চামড়া সর্বোচ্চ ৪৪ টাকা দর দিলেও এই চামড়াকে প্রয়োজনীয় লবণ দিয়ে উপযুক্ত করে তুলতে তাদের প্রতি বর্গফুটের দাম পড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। আর ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা না দেয়ার ইচ্ছে থাকলেও তারা বেশি চামড়া কিনতে পারেনি।

বৃহত্তর যশোর চামড়া হাটের সাবেক ইজারাদার ও চামড়া ব্যবসায়ী সিফাত বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত দামে ভালো মানের গরুর চামড়া কিনেছি। তবে নষ্ট হয়ে যাওয়া চামড়া কম দামে বিক্রি হবে এটা স্বাভাবিক। কেননা এবার বেশিরভাগ হাটে উঠা চামড়া নানা কারণে নষ্ট হয়ে গেছে।

চামড়া হাটের ইজারাদার শেখ হাসানুজ্জামান হাসু বলেন, সরকার নির্ধারিত দামেই ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন। ক্ষুদ্র বিক্রেতারা বেশি দামে চামড়া কিনলে লোকসানতো হবেই। তবে, কিছু ছাগলের চামড়া প্রসেসিংয়ের অভাবে নষ্ট হয়েছে। এদিন এক কোটি টাকার চামড়া কেনাবেচা হয়েছে।

ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল। তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে এবার চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। সরকার নির্ধারণ করা দামেই চামড়া ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। সকাল হতে ৪০-৪৩ টাকা ফুট দরে চামড়া বিক্রি হয়েছে। আশানুরূপ চামড়া উঠেছে হাটে। গতকাল কমপক্ষে ৫০ হাজার গরু ও ৫০ হাজার ছাগলের চামড়া উঠেছে।

বৃহত্তর যশোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মমিনুল মজিদ বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামেই ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন। ভালো মানের চামড়ার দাম বিক্রতারা পেয়েছেন। গতকাল হাটে বিপুল পরিমাণ চামড়া নিয়ে আসেন বিক্রেতারা।

রাজারহাটে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার পাশাপাশি ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ঝালকাঠী, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী ও নাটোরের বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করেন। এই হাটে কোরবানি ঈদের পর ১০ কোটি টাকার অধিক চামড়া বেচাকেনা হয়।

যশোরের দড়াটানা মাদ্রাসা, রেল স্টেশন মাদ্রাসা, পুলিশ লাইন মাদ্রাসাসহ একাধিক মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা গেছে, যারা কোরবারি দিয়েছেন তারা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মাদ্রাসাগুলোতে দান করে গেছেন। মাদ্রাসাগুলো চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে রেখেছেন। ভালো দাম পেলে তা পর্যায়ক্রমে বিক্রি করবেন।

রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২ , ০২ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৮ জিলহজ ১৪৪৩

যশোরের রাজারহাটে বিপুল চামড়ার সমাগম, কোটি টাকার হাতবদল

যশোর অফিস

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার হাট যশোরের রাজারহাটে ঈদুল আজহার পর গতকাল ছিল সবচেয়ে বড় হাট। এদিন প্রথম হাটের তুলনায় বিপুল চামড়ার সমাগম ঘটে। ভালো মানের চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়েছে। হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতকাল কোটি টাকার চামড়ার হাতবদল হয়েছে।

তবে হাটে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ পরবর্তী বড় হাটে চামড়ার দাম না পেয়ে তারা হতাশ। সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। অনেকেই প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন নির্ধারিত দামের অর্ধেকে। আর ছাগলের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় সেগুলোর দাম পাওয়াই দুষ্কর। তবে আড়তদাররা বলছেন, গতকাল সরকার নির্ধারিত দামে ভালো মানের চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। তবে যেগুলো চামড়া নানা কারণে নষ্ট হয়েছে সেগুলো নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়নি। গতকাল চামড়ার সমাগমে খুশি ছিল সাবাই। আগামী হাটগুলোতেও চামড়ার সমাগম থাকবে বলে আশা তাদের।

এদিন সকালে যশোরসহ নড়াইল, সাতক্ষীরা ও মাগুরার বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চামড়া নিয়ে রাজারহাটে আসেন।

গোপালগঞ্জ থেকে আসা জয়ন্ত পোদ্দার বলেন, এবার ৫০০ পিস গরুর চামড়া কিনেছি। হাটে ২০০ পিস গরু ও ১০০টি ছাগলের চামড়া এনেছি। গরুর চামড়া ৭০০ টাকা দরে আর ছাগলের চামড়া ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। গরুর চামড়াপ্রতি খরচ বাদ দিয়ে ১০০ টাকা করে গচ্চা গেছে। এছাড়া গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে আমার। আশা করছি আগামী শনিবারের হাটে দাম ভালো পাওয়া যাবে। দাম না পেলে পুঁজি শেষ হয়ে যাবে। ফরিদপুরের ব্যবসায়ী বিপুল দাস বলেন, হাটে ৫০০ পিস গরুর চামড়া এনেছি। প্রতিটি চামড়া কিনেছি ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। লবণ, শ্রমিক খরচ ও পরিবহন বাবদ প্রতিটি চামড়ায় আরও ২০০ টাকা করে খরচ হয়েছে। হাটে বড় চামড়া বিক্রি করেছি ৯০০ টাকা, আর ছোটগুলো ৪০০ টাকা দরে। এর মধ্যে ২০টি চামড়া বিক্রি হয়নি। গড়ে চামড়া বিক্রি হয়েছে সাড়ে ২২ টাকা ফুট দরে। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত দামের অর্ধেক পেয়েছি। আরেক চামড়া ব্যবসায়ী ফুলচান দাস বলেন, আমরা এক হাজার পিস ছাগলের চামড়া কিনেছিলাম। চামড়ায় লবণ দেয়া ছিল। লবণের দাম বেশি ও শ্রমিক না পাওয়ায় প্রায় ১২০০ পিস চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ট্যানারিগুলো ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট চামড়া সর্বোচ্চ ৪৪ টাকা দর দিলেও এই চামড়াকে প্রয়োজনীয় লবণ দিয়ে উপযুক্ত করে তুলতে তাদের প্রতি বর্গফুটের দাম পড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। আর ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা না দেয়ার ইচ্ছে থাকলেও তারা বেশি চামড়া কিনতে পারেনি।

বৃহত্তর যশোর চামড়া হাটের সাবেক ইজারাদার ও চামড়া ব্যবসায়ী সিফাত বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত দামে ভালো মানের গরুর চামড়া কিনেছি। তবে নষ্ট হয়ে যাওয়া চামড়া কম দামে বিক্রি হবে এটা স্বাভাবিক। কেননা এবার বেশিরভাগ হাটে উঠা চামড়া নানা কারণে নষ্ট হয়ে গেছে।

চামড়া হাটের ইজারাদার শেখ হাসানুজ্জামান হাসু বলেন, সরকার নির্ধারিত দামেই ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন। ক্ষুদ্র বিক্রেতারা বেশি দামে চামড়া কিনলে লোকসানতো হবেই। তবে, কিছু ছাগলের চামড়া প্রসেসিংয়ের অভাবে নষ্ট হয়েছে। এদিন এক কোটি টাকার চামড়া কেনাবেচা হয়েছে।

ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল। তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে এবার চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। সরকার নির্ধারণ করা দামেই চামড়া ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। সকাল হতে ৪০-৪৩ টাকা ফুট দরে চামড়া বিক্রি হয়েছে। আশানুরূপ চামড়া উঠেছে হাটে। গতকাল কমপক্ষে ৫০ হাজার গরু ও ৫০ হাজার ছাগলের চামড়া উঠেছে।

বৃহত্তর যশোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মমিনুল মজিদ বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামেই ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন। ভালো মানের চামড়ার দাম বিক্রতারা পেয়েছেন। গতকাল হাটে বিপুল পরিমাণ চামড়া নিয়ে আসেন বিক্রেতারা।

রাজারহাটে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার পাশাপাশি ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ঝালকাঠী, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী ও নাটোরের বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করেন। এই হাটে কোরবানি ঈদের পর ১০ কোটি টাকার অধিক চামড়া বেচাকেনা হয়।

যশোরের দড়াটানা মাদ্রাসা, রেল স্টেশন মাদ্রাসা, পুলিশ লাইন মাদ্রাসাসহ একাধিক মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা গেছে, যারা কোরবারি দিয়েছেন তারা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মাদ্রাসাগুলোতে দান করে গেছেন। মাদ্রাসাগুলো চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে রেখেছেন। ভালো দাম পেলে তা পর্যায়ক্রমে বিক্রি করবেন।