ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী সাঁওতাল নারী

মিথুশিলাক মুরমু

ভারতকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্তিক দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম দেশ ভারতে একজন সাঁওতাল নারী দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হবে, কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। গত ৩০ জুন ছিল মহান সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে জুনে দেখা স্বপ্নের সত্যতা যেন স্বল্প হলেও রূপায়িত হতে চলেছে। মহান নেতা সিধু-কানু দেখেছিলেন, সাঁওতালরা এক দিন রাজ্য চালাবে, রাষ্ট্র চালাবে; ঝাড়খ- রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন সাঁওতাল শ্রী হেমন্ত সরেন, আর পুরো ভারতের রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন শ্রীমতি দ্রৌপদী মুরমু।

জুন মাসের স্বপ্ন জুনেই উন্মোচিত হয়েছে। ২১ জুন মঙ্গলবার বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডির তরফ থেকে তাকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদী মুরমুর নাম ঘোষণা করা হয়। ঝাড়খ-ের প্রাক্তন রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুরমু নাম ঘোষণার পর অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন, ‘আমি যেমন বিস্মিত তেমনই খুশি। প্রত্যন্ত ময়ূরভঞ্জ জেলার একজন আদিবাসী মহিলা হিসাবে আমি দেশের শীর্ষ পদের প্রার্থী হওয়ার কথা ভাবিনি।’ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নাম ঘোষণার পরই তাঁকে জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দিচ্ছে ৬৪ বছর বয়সী শ্রীমতি মুরমুকে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে নাম ঘোষণার ৭ দিন পর ২৭ জুন খ্রিস্টাব্দে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ১৮ জুলাই রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে যশবন্ত সিনহার বিপরীতে।

শ্রীমতি দ্রৌপদী মুরমুর জীবন সংগ্রাম সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক, তার বেড়ে ওঠা ও রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ এবং সিঁড়ি বেয়ে শীর্ষে আরোহন নারী, পিছিয়েপড়া ও জনজাতির জন্য হিমালয় জয়ের সম মনে হতে পারে। জন্মেছেন দরিদ্র সাঁওতাল পরিবারে ওডিশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বৈদাপোসি গ্রামে। সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত গ্রামের বিদ্যালয়েই পড়াশোনা। ওই সময় থেকেই মাথায় ঘোরপাক করত পড়াশোনা করে এগুতে হবে অনেক দূর। পড়াশোনা করে চাকরি, পরিবারের হাল, সমাজের হাল ধরতে হবে।

পড়াশোনা শেষ করে ‘সাঁওতাল পরিবারের মেয়ে চাকরি করবে’ সুলভ অজস্র কটুবাক্য নীরবে মাথায় নিয়ে যোগ দিলেন চাকরিতে। ইতোমধ্যেই বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আধিকারিক শ্যামচরণ মুরমুর সঙ্গে। বাড়ির বউ চাকরি করবে, এতে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ঘোর আপত্তি। হেরে গেলেন দ্রৌপদী কিন্তু মন থেকে গ্রহণ করতে পারেননি। চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরকন্নার কাজ শুরু করলেন, এরই মধ্যে সংসারে পর পর দু দুটি পুত্রসন্তান ঘরকে আলোকিত করে; জন্ম নেয় আরেকটি কন্যাসন্তান। সন্তান-সন্ততিরা বড় হতেই সংসার গুছিয়ে পুনর্বার যোগ দিলেন স্কুলের চাকরিতে, এটি ছিল একেবারেই স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক হিসেবে।

১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ময়ূরভঞ্জের নোটিফায়েড এরিয়া কাউন্সিলের পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ভারতীয় জনতা পার্টি ব্যানারে। বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ওই বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মনোনীত হন। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে বিজেপি-বিজেডি জোটের হয়ে বিধান সভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তার চিন্তা, পরিকল্পনা, মানবকল্যাণমূলক কাজের সফলতা বিপুল জনপ্রিয়তায় প্রথমবার বিধায়ক হয়েই পরিবহন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এবার এলো আসল চ্যালেঞ্জ। এক সাঁওতাল নারী মন্ত্রিত্ব সামলাবেন। তাবড় আইএএস অফিসার, দপ্তরের কর্মীদের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে দিনরাত পড়াশোনা করে কিছুদিনের মধ্যেই কাজের গতিপ্রকৃতি বুঝে নিলেন। চার বছরে চারটি দপ্তরের মন্ত্রিত্ব সামলালেন।

২০০৪-এর বিধানসভা নির্বাচনে জোট ভেঙে গেল। বিজেপির ভরাডুবি হলো, নবীন পত্তনায়ের বিজেডির কাছে। এই কঠিন সময়েও দ্রৌপদী মুরমু বিজেপির টিকেটেই আবারও বিধায়ক হলেন। কিন্তু হেরে গেলেন ২০০৯-এর বিধানসভায়। গ্রামে ফিরে আবার ডুবে গেলেন সমাজসেবার কাজে। কিছুদিনের মধ্যেই এক সকালে খবর পেলেন বড় ছেলে আর নেই। ভেঙে পড়লেন শোকে। সামলে ওঠার জন্য ডুবে গেলেন কাজের মধ্যে আরও বেশি করে। ২০১৪-এর এক অভিশপ্ত রাতে ছোট ছেলেটিও রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই মানসিক অবসাদে ডুবে গেলেন। স্ত্রীর স্নায়ুবিক শক্তি অসীম হলেও পুত্রশোক নিতে পারেনি স্বামী। কিছুদিনের মধ্যেই তিনিও পরলোকগমন করলেন। তার কয়েক দিন পর দ্রৌপদীর মা ও দাদা। একবছরে এতোগুলো মৃত্যু মেনে নিতে পারলেন না। শেষ অবলম্বন হিসেবে জড়িয়ে ধরলেন যোগ এবং আধ্যাত্মিকতাকে, সঙ্গে আর বেশি করে নিজেকে নিয়োজিত করলেন সমাজের কাজে। স্বামী-সন্তানহারা এক মা হয়ে উঠলেন অনেক অনেক আদিবাসী সন্তানের।

২০১৫ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় সরকার ঝাড়খ-ের রাজ্যপাল হিসেবে মনোনীত করেন, আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়খ-ের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল এবং ওড়িশা থেকে উঠে আসা প্রথম আদিবাসী রাজ্যপাল হিসেবে যোগ্যতার স্বাক্ষরতা রেখেছেন। ২০২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অত্যন্ত সুচারুরূপে দায়িত্ব সম্পন্ন করে অবসরে ফিরে যান।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বরাবরই চমক দিয়েছে ভারত। ড. জাকির হোসেন হলেন দেশটির প্রথম মুসলিম রাষ্ট্রপতি; শিখ জাতিগোষ্ঠী থেকে জ্ঞানী জৈল সিং হচ্ছেন প্রথম রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি কে. আর. নারায়ন হচ্ছেন অবহেলিত দলিত জনগোষ্ঠী থেকে প্রথম, তার হাত ধরেই বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামানাথ কোবিন্দ রাষ্ট্রীয় পদে সমাসীন হয়েছেন। এ পি জে আব্দুল কালাম হচ্ছেন প্রথম বিজ্ঞানী, যিনি রাষ্ট্রপতির পদ অলংকৃত করেছেন।

বাংলাদেশের ৭ লক্ষাধিক সাঁওতাল জনগোষ্ঠী ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী দ্রৌপদী মুরমুর নাম ঘোষণায় আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, আগামী ১৮ জুলাই নির্বাচনে ভোটের পাল্লা কোনদিকে ভারী হচ্ছে! রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ফয়সালা হবে লোকসভা ও রাজ্যসভার এমপি-এমএলএদের বিশেষ পদ্ধতির ভোটে। এবার এ রকম ভোটার এমপি আছেন ৭৭৬ জন, প্রদেশ ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলে এমএলএ আছেন ৪ হাজার ১২৩ জন। লোকসভায় জনজাতির জন্য সংরক্ষিত ৬৩ আসন রয়েছে। ভোটের যে সমীকরণ, তাতে বিজেপি প্রার্থীই জিতবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। শ্রীমতি দ্রৌপদী মুরমু রাষ্ট্রপতি পদে জিতলে ভারতসহ বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের সাঁওতালদের আত্মবিশ^াস, দেশকে দেবার মনোভাব বেড়ে যাবে।

[লেখক : কলামিস্ট]

রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২ , ০২ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৮ জিলহজ ১৪৪৩

ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী সাঁওতাল নারী

মিথুশিলাক মুরমু

ভারতকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্তিক দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম দেশ ভারতে একজন সাঁওতাল নারী দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হবে, কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। গত ৩০ জুন ছিল মহান সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে জুনে দেখা স্বপ্নের সত্যতা যেন স্বল্প হলেও রূপায়িত হতে চলেছে। মহান নেতা সিধু-কানু দেখেছিলেন, সাঁওতালরা এক দিন রাজ্য চালাবে, রাষ্ট্র চালাবে; ঝাড়খ- রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন সাঁওতাল শ্রী হেমন্ত সরেন, আর পুরো ভারতের রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন শ্রীমতি দ্রৌপদী মুরমু।

জুন মাসের স্বপ্ন জুনেই উন্মোচিত হয়েছে। ২১ জুন মঙ্গলবার বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডির তরফ থেকে তাকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদী মুরমুর নাম ঘোষণা করা হয়। ঝাড়খ-ের প্রাক্তন রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুরমু নাম ঘোষণার পর অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন, ‘আমি যেমন বিস্মিত তেমনই খুশি। প্রত্যন্ত ময়ূরভঞ্জ জেলার একজন আদিবাসী মহিলা হিসাবে আমি দেশের শীর্ষ পদের প্রার্থী হওয়ার কথা ভাবিনি।’ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নাম ঘোষণার পরই তাঁকে জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দিচ্ছে ৬৪ বছর বয়সী শ্রীমতি মুরমুকে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে নাম ঘোষণার ৭ দিন পর ২৭ জুন খ্রিস্টাব্দে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ১৮ জুলাই রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে যশবন্ত সিনহার বিপরীতে।

শ্রীমতি দ্রৌপদী মুরমুর জীবন সংগ্রাম সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক, তার বেড়ে ওঠা ও রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ এবং সিঁড়ি বেয়ে শীর্ষে আরোহন নারী, পিছিয়েপড়া ও জনজাতির জন্য হিমালয় জয়ের সম মনে হতে পারে। জন্মেছেন দরিদ্র সাঁওতাল পরিবারে ওডিশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বৈদাপোসি গ্রামে। সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত গ্রামের বিদ্যালয়েই পড়াশোনা। ওই সময় থেকেই মাথায় ঘোরপাক করত পড়াশোনা করে এগুতে হবে অনেক দূর। পড়াশোনা করে চাকরি, পরিবারের হাল, সমাজের হাল ধরতে হবে।

পড়াশোনা শেষ করে ‘সাঁওতাল পরিবারের মেয়ে চাকরি করবে’ সুলভ অজস্র কটুবাক্য নীরবে মাথায় নিয়ে যোগ দিলেন চাকরিতে। ইতোমধ্যেই বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আধিকারিক শ্যামচরণ মুরমুর সঙ্গে। বাড়ির বউ চাকরি করবে, এতে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ঘোর আপত্তি। হেরে গেলেন দ্রৌপদী কিন্তু মন থেকে গ্রহণ করতে পারেননি। চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরকন্নার কাজ শুরু করলেন, এরই মধ্যে সংসারে পর পর দু দুটি পুত্রসন্তান ঘরকে আলোকিত করে; জন্ম নেয় আরেকটি কন্যাসন্তান। সন্তান-সন্ততিরা বড় হতেই সংসার গুছিয়ে পুনর্বার যোগ দিলেন স্কুলের চাকরিতে, এটি ছিল একেবারেই স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক হিসেবে।

১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ময়ূরভঞ্জের নোটিফায়েড এরিয়া কাউন্সিলের পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ভারতীয় জনতা পার্টি ব্যানারে। বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ওই বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মনোনীত হন। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে বিজেপি-বিজেডি জোটের হয়ে বিধান সভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তার চিন্তা, পরিকল্পনা, মানবকল্যাণমূলক কাজের সফলতা বিপুল জনপ্রিয়তায় প্রথমবার বিধায়ক হয়েই পরিবহন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এবার এলো আসল চ্যালেঞ্জ। এক সাঁওতাল নারী মন্ত্রিত্ব সামলাবেন। তাবড় আইএএস অফিসার, দপ্তরের কর্মীদের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে দিনরাত পড়াশোনা করে কিছুদিনের মধ্যেই কাজের গতিপ্রকৃতি বুঝে নিলেন। চার বছরে চারটি দপ্তরের মন্ত্রিত্ব সামলালেন।

২০০৪-এর বিধানসভা নির্বাচনে জোট ভেঙে গেল। বিজেপির ভরাডুবি হলো, নবীন পত্তনায়ের বিজেডির কাছে। এই কঠিন সময়েও দ্রৌপদী মুরমু বিজেপির টিকেটেই আবারও বিধায়ক হলেন। কিন্তু হেরে গেলেন ২০০৯-এর বিধানসভায়। গ্রামে ফিরে আবার ডুবে গেলেন সমাজসেবার কাজে। কিছুদিনের মধ্যেই এক সকালে খবর পেলেন বড় ছেলে আর নেই। ভেঙে পড়লেন শোকে। সামলে ওঠার জন্য ডুবে গেলেন কাজের মধ্যে আরও বেশি করে। ২০১৪-এর এক অভিশপ্ত রাতে ছোট ছেলেটিও রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই মানসিক অবসাদে ডুবে গেলেন। স্ত্রীর স্নায়ুবিক শক্তি অসীম হলেও পুত্রশোক নিতে পারেনি স্বামী। কিছুদিনের মধ্যেই তিনিও পরলোকগমন করলেন। তার কয়েক দিন পর দ্রৌপদীর মা ও দাদা। একবছরে এতোগুলো মৃত্যু মেনে নিতে পারলেন না। শেষ অবলম্বন হিসেবে জড়িয়ে ধরলেন যোগ এবং আধ্যাত্মিকতাকে, সঙ্গে আর বেশি করে নিজেকে নিয়োজিত করলেন সমাজের কাজে। স্বামী-সন্তানহারা এক মা হয়ে উঠলেন অনেক অনেক আদিবাসী সন্তানের।

২০১৫ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় সরকার ঝাড়খ-ের রাজ্যপাল হিসেবে মনোনীত করেন, আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়খ-ের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল এবং ওড়িশা থেকে উঠে আসা প্রথম আদিবাসী রাজ্যপাল হিসেবে যোগ্যতার স্বাক্ষরতা রেখেছেন। ২০২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অত্যন্ত সুচারুরূপে দায়িত্ব সম্পন্ন করে অবসরে ফিরে যান।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বরাবরই চমক দিয়েছে ভারত। ড. জাকির হোসেন হলেন দেশটির প্রথম মুসলিম রাষ্ট্রপতি; শিখ জাতিগোষ্ঠী থেকে জ্ঞানী জৈল সিং হচ্ছেন প্রথম রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি কে. আর. নারায়ন হচ্ছেন অবহেলিত দলিত জনগোষ্ঠী থেকে প্রথম, তার হাত ধরেই বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামানাথ কোবিন্দ রাষ্ট্রীয় পদে সমাসীন হয়েছেন। এ পি জে আব্দুল কালাম হচ্ছেন প্রথম বিজ্ঞানী, যিনি রাষ্ট্রপতির পদ অলংকৃত করেছেন।

বাংলাদেশের ৭ লক্ষাধিক সাঁওতাল জনগোষ্ঠী ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী দ্রৌপদী মুরমুর নাম ঘোষণায় আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, আগামী ১৮ জুলাই নির্বাচনে ভোটের পাল্লা কোনদিকে ভারী হচ্ছে! রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ফয়সালা হবে লোকসভা ও রাজ্যসভার এমপি-এমএলএদের বিশেষ পদ্ধতির ভোটে। এবার এ রকম ভোটার এমপি আছেন ৭৭৬ জন, প্রদেশ ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলে এমএলএ আছেন ৪ হাজার ১২৩ জন। লোকসভায় জনজাতির জন্য সংরক্ষিত ৬৩ আসন রয়েছে। ভোটের যে সমীকরণ, তাতে বিজেপি প্রার্থীই জিতবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। শ্রীমতি দ্রৌপদী মুরমু রাষ্ট্রপতি পদে জিতলে ভারতসহ বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের সাঁওতালদের আত্মবিশ^াস, দেশকে দেবার মনোভাব বেড়ে যাবে।

[লেখক : কলামিস্ট]