ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিশ্ববাণিজ্য, গত বছরের চেয়ে ১৫% বেশি

করোনা সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিশ্ববাণিজ্য। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) মূল্যের হিসাবে বৈশ্বিক বাণিজ্য ৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলারের রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৫ শতাংশ বা প্রায় এক লাখ কোটি ডলার বেশি। চলতি বছরের বাকি সময়ে বাণিজ্য বাড়লেও দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে ধীর হতে থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সম্মেলনের (আঙ্কটাড) একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। দ্য ন্যাশনাল নিউজ।

গ্লোবাল ট্রেড আপডেট শীর্ষক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের সংস্থাটি জানিয়েছে, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে বিশ্বজুড়ে পণ্য ও পরিষেবা বাণিজ্য গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায়ও ২৫ কোটি ডলার বেশি ছিল। এ সময়ে পণ্যবাণিজ্য প্রায় ৬ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। যেখানে পরিষেবা বাণিজ্য বার্ষিক প্রায় ২২ শতাংশ বেড়ে এক লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

প্রথম প্রান্তিকে পণ্যবাণিজ্য উন্নয়নশীল ও উন্নত উভয় অর্থনীতিতেই এক বছর আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোর রপ্তানি যথাক্রমে ২৫ ও ১৪ শতাংশ বেড়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি ছিল। দেশগুলোর বাণিজ্যের এ পরিমাণ প্রাক-কোভিড পর্যায়ের তুলনায় প্রায় ৪২ শতাংশ ওপরে রয়েছে। আঙ্কটাড জানিয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। মূলত দাম বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বেশির ভাগ অর্থনীতিতে উচ্চমূল্যস্ফীতির চাপ, ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং ইউক্রেনের সংঘাতের প্রভাবের কারণে চলতি বছরের বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হচ্ছে। আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সংঘাত জ্বালানি ও অন্য পণ্যের মূল্যের ওপর ঊর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে। স্বল্পমেয়াদে অস্থিতিশীল বৈশ্বিক চাহিদার কারণে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ফলে পরিমাণের হিসাবে বৈশ্বিক বাণিজ্য কিছুটা কমে যেতে পারে।

এপ্রিলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২২ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। গত জানুয়ারিতেও সংস্থাটি ৪ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। গত মাসে বিশ্বব্যাংকও দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ পঞ্চম মাসে গড়িয়েছে এবং বিশ্ববাণিজ্যকে মন্থর করে দিয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অনুমান এপ্রিলের ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ করেছে।

বছরের প্রথম তিন মাসে বৈশ্বিক বাণিজ্য মহামারীর আগে ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি ছিল। তবে পরিমাণের হিসাবে বাণিজ্য মাত্র ৬ শতাংশ বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে মূলত এ পার্থক্য তৈরি হয়েছে। আঙ্কটাডের আশঙ্কা, বিশ্ববাণিজ্যের ইতিবাচক প্রবণতা শীঘ্রই শেষ হতে পারে।

সুদের হার বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বছরের বাকি সময়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাছাড়া দ্রব্যমূল্য ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বাণিজ্য প্রবৃদ্ধিকে অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।

সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২ , ০৩ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৯ জিলহজ ১৪৪৩

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিশ্ববাণিজ্য, গত বছরের চেয়ে ১৫% বেশি

সংবাদ ডেস্ক

করোনা সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিশ্ববাণিজ্য। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) মূল্যের হিসাবে বৈশ্বিক বাণিজ্য ৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলারের রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৫ শতাংশ বা প্রায় এক লাখ কোটি ডলার বেশি। চলতি বছরের বাকি সময়ে বাণিজ্য বাড়লেও দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে ধীর হতে থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সম্মেলনের (আঙ্কটাড) একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। দ্য ন্যাশনাল নিউজ।

গ্লোবাল ট্রেড আপডেট শীর্ষক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের সংস্থাটি জানিয়েছে, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে বিশ্বজুড়ে পণ্য ও পরিষেবা বাণিজ্য গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায়ও ২৫ কোটি ডলার বেশি ছিল। এ সময়ে পণ্যবাণিজ্য প্রায় ৬ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। যেখানে পরিষেবা বাণিজ্য বার্ষিক প্রায় ২২ শতাংশ বেড়ে এক লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

প্রথম প্রান্তিকে পণ্যবাণিজ্য উন্নয়নশীল ও উন্নত উভয় অর্থনীতিতেই এক বছর আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোর রপ্তানি যথাক্রমে ২৫ ও ১৪ শতাংশ বেড়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি ছিল। দেশগুলোর বাণিজ্যের এ পরিমাণ প্রাক-কোভিড পর্যায়ের তুলনায় প্রায় ৪২ শতাংশ ওপরে রয়েছে। আঙ্কটাড জানিয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। মূলত দাম বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বেশির ভাগ অর্থনীতিতে উচ্চমূল্যস্ফীতির চাপ, ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং ইউক্রেনের সংঘাতের প্রভাবের কারণে চলতি বছরের বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হচ্ছে। আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সংঘাত জ্বালানি ও অন্য পণ্যের মূল্যের ওপর ঊর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে। স্বল্পমেয়াদে অস্থিতিশীল বৈশ্বিক চাহিদার কারণে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ফলে পরিমাণের হিসাবে বৈশ্বিক বাণিজ্য কিছুটা কমে যেতে পারে।

এপ্রিলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২২ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। গত জানুয়ারিতেও সংস্থাটি ৪ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। গত মাসে বিশ্বব্যাংকও দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ পঞ্চম মাসে গড়িয়েছে এবং বিশ্ববাণিজ্যকে মন্থর করে দিয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অনুমান এপ্রিলের ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ করেছে।

বছরের প্রথম তিন মাসে বৈশ্বিক বাণিজ্য মহামারীর আগে ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি ছিল। তবে পরিমাণের হিসাবে বাণিজ্য মাত্র ৬ শতাংশ বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে মূলত এ পার্থক্য তৈরি হয়েছে। আঙ্কটাডের আশঙ্কা, বিশ্ববাণিজ্যের ইতিবাচক প্রবণতা শীঘ্রই শেষ হতে পারে।

সুদের হার বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বছরের বাকি সময়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাছাড়া দ্রব্যমূল্য ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বাণিজ্য প্রবৃদ্ধিকে অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।