সবুজ কারখানার স্বীকৃতি পেল আরও দুটি প্রতিষ্ঠান

দেশে নতুন দুটি কারখানা পেয়েছে লিড সনদ। এ নিয়ে দেশে এখন মোট সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৫টিতে। এরমধ্যে প্লাটিনাম ৫০টি, গোল্ড ১০১টি, সিলভার ১০টি এবং চারটি কারখানা সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে। পরিবেশসম্মত সবুজ কারখানার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশের আরও দুই পোশাক কারখানা। কারখানা দুটি হচ্ছে, হ্যাবিটাস ফ্যাশন লিমিটেড এবং ফাইজা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন বা লিড সনদ পেয়েছে এ দুটি কারখানা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবি) এ সনদ দেয়। হ্যাবিটাস ফ্যাশন পেয়েছে লিডের প্লাটিনাম ক্যাটাগরি। আর ফাইজা ইন্ডাস্ট্রিজের ক্যাটাগরি গোল্ড।

লিড সনদের জন্য ৯টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরে হলে প্লাটিনাম, ৬০ থেকে ৭৯ হলে গোল্ড, ৫০ থেকে ৫৯ হলে সিলভার এবং ৪০ থেকে ৪৯ পয়েন্ট পেলে সার্টিফায়েড সনদ মেলে। হ্যাবিটাস ফ্যাশন ৯১ পয়েন্ট পেয়ে প্লাটিনাম সনদ পেয়েছে। আর ৬৪ পেয়ে গোল্ড ক্যাটাগরির সনদ পেয়েছে ফাইজা ইন্ডাস্ট্রিজ। এ নিয়ে দেশে এখন দেশে মোট সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৫টিতে। এর মধ্যে প্লাটিনাম ৫০টি, গোল্ড ১০১টি, সিলভার ১০টি এবং চারটি কারখানা সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে।

তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমএই জানিয়েছে, রপ্তানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সবুজ কারখানার সংখ্যা। এই কারখানাগুলো আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে অবদান রাখবে। সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘দেশে সবুজ কারখানার বিপ্লব ঘটিয়ে নতুন মাইলফলকে পৌঁছেছে। প্লাটিনাম কারখানার সংখ্যা হাফ সেঞ্চুরি করে ৫০ হয়েছে। সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে গোল্ড কারখানার সংখ্যা ১০১টিতে পৌঁছেছে। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশেল পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে।’

নতুন সনদ পাওয়া কারখানা দুটির মধ্যে হ্যাবিটাস ফ্যাশন মির্জাপুর ভাওয়ালের গোজারিয়াপাড়ায় অবস্থিত। আর ফাইজা ইন্ডাস্ট্রিজ গাজীপুরের জয়দেবপুরে।

বাণিজ্যিক ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িসহ অন্য স্থাপনার ক্ষেত্রেও এ সনদ দিয়ে থাকে ইউএসজিবি। বিশেষত, শিল্প কারখানার ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে পণ্য উৎপাদন পর্যন্ত ছোট-বড় সব পর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি কতটা মানা হলো, তার কঠিন তদারকি এবং চুলচেরা বিশ্নেষণ করে সর্বোচ্চ মানের কারখানাকে এ সনদ দেয়া হয়। সবুজ কারখানায় উৎপাদিত পোশাকের গায়ে একটি গ্রিন ট্যাগ সংযুক্ত থাকে। এর অর্থ পণ্যটি সবুজ কারখানায় উৎপাদিত।

সাধারণ ভোক্তার কাছে এর আলাদা কদর আছে। বিদেশি বড় বড় ব্র্যান্ড এবং ক্রেতার আস্থা বাড়ে এতে। ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতেও এগিয়ে থাকা যায়। এমনকি দেশের এবং পোশাকখাতের ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়ে।

১২ বছর আগে দেশে পরিবেশবান্ধব সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা ছিল মাত্র একটি। পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তার দেখানো পথ ধরেই দেশে একটার পর একটা পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে উঠছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন দেশের পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০১৪ সালে সবুজ কারখানা স্থাপন করা হয় তিনটি। ২০১৫ সালে হয় ১১টি। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে স্থাপন করা হয় যথাক্রমে ১৬, ১৮ এবং ২৪টি। ২০১৯ সালে আরও ২৮টি সবুজ পোশাক কারখানা স্থাপন করেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০২০ ও ২০২১ সালে ২৪টি করে আরও ৪৮টি কারখানা গড়ে উঠেছে দেশে।

বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিবিসি। তারা ‘লিড’নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। সনদটি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়।

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। সংস্থাটির অধীনে কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনাকেন্দ্র ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা যায়।

সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২ , ০৩ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৯ জিলহজ ১৪৪৩

সবুজ কারখানার স্বীকৃতি পেল আরও দুটি প্রতিষ্ঠান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

দেশে নতুন দুটি কারখানা পেয়েছে লিড সনদ। এ নিয়ে দেশে এখন মোট সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৫টিতে। এরমধ্যে প্লাটিনাম ৫০টি, গোল্ড ১০১টি, সিলভার ১০টি এবং চারটি কারখানা সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে। পরিবেশসম্মত সবুজ কারখানার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশের আরও দুই পোশাক কারখানা। কারখানা দুটি হচ্ছে, হ্যাবিটাস ফ্যাশন লিমিটেড এবং ফাইজা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন বা লিড সনদ পেয়েছে এ দুটি কারখানা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবি) এ সনদ দেয়। হ্যাবিটাস ফ্যাশন পেয়েছে লিডের প্লাটিনাম ক্যাটাগরি। আর ফাইজা ইন্ডাস্ট্রিজের ক্যাটাগরি গোল্ড।

লিড সনদের জন্য ৯টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরে হলে প্লাটিনাম, ৬০ থেকে ৭৯ হলে গোল্ড, ৫০ থেকে ৫৯ হলে সিলভার এবং ৪০ থেকে ৪৯ পয়েন্ট পেলে সার্টিফায়েড সনদ মেলে। হ্যাবিটাস ফ্যাশন ৯১ পয়েন্ট পেয়ে প্লাটিনাম সনদ পেয়েছে। আর ৬৪ পেয়ে গোল্ড ক্যাটাগরির সনদ পেয়েছে ফাইজা ইন্ডাস্ট্রিজ। এ নিয়ে দেশে এখন দেশে মোট সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৫টিতে। এর মধ্যে প্লাটিনাম ৫০টি, গোল্ড ১০১টি, সিলভার ১০টি এবং চারটি কারখানা সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে।

তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমএই জানিয়েছে, রপ্তানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সবুজ কারখানার সংখ্যা। এই কারখানাগুলো আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে অবদান রাখবে। সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘দেশে সবুজ কারখানার বিপ্লব ঘটিয়ে নতুন মাইলফলকে পৌঁছেছে। প্লাটিনাম কারখানার সংখ্যা হাফ সেঞ্চুরি করে ৫০ হয়েছে। সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে গোল্ড কারখানার সংখ্যা ১০১টিতে পৌঁছেছে। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশেল পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে।’

নতুন সনদ পাওয়া কারখানা দুটির মধ্যে হ্যাবিটাস ফ্যাশন মির্জাপুর ভাওয়ালের গোজারিয়াপাড়ায় অবস্থিত। আর ফাইজা ইন্ডাস্ট্রিজ গাজীপুরের জয়দেবপুরে।

বাণিজ্যিক ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িসহ অন্য স্থাপনার ক্ষেত্রেও এ সনদ দিয়ে থাকে ইউএসজিবি। বিশেষত, শিল্প কারখানার ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে পণ্য উৎপাদন পর্যন্ত ছোট-বড় সব পর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি কতটা মানা হলো, তার কঠিন তদারকি এবং চুলচেরা বিশ্নেষণ করে সর্বোচ্চ মানের কারখানাকে এ সনদ দেয়া হয়। সবুজ কারখানায় উৎপাদিত পোশাকের গায়ে একটি গ্রিন ট্যাগ সংযুক্ত থাকে। এর অর্থ পণ্যটি সবুজ কারখানায় উৎপাদিত।

সাধারণ ভোক্তার কাছে এর আলাদা কদর আছে। বিদেশি বড় বড় ব্র্যান্ড এবং ক্রেতার আস্থা বাড়ে এতে। ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতেও এগিয়ে থাকা যায়। এমনকি দেশের এবং পোশাকখাতের ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়ে।

১২ বছর আগে দেশে পরিবেশবান্ধব সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা ছিল মাত্র একটি। পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তার দেখানো পথ ধরেই দেশে একটার পর একটা পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে উঠছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন দেশের পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০১৪ সালে সবুজ কারখানা স্থাপন করা হয় তিনটি। ২০১৫ সালে হয় ১১টি। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে স্থাপন করা হয় যথাক্রমে ১৬, ১৮ এবং ২৪টি। ২০১৯ সালে আরও ২৮টি সবুজ পোশাক কারখানা স্থাপন করেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০২০ ও ২০২১ সালে ২৪টি করে আরও ৪৮টি কারখানা গড়ে উঠেছে দেশে।

বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিবিসি। তারা ‘লিড’নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। সনদটি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়।

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। সংস্থাটির অধীনে কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনাকেন্দ্র ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা যায়।