পদ্মা সেতুতে বাইক ঠেকাতে কঠোর প্রশাসন

যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হওয়ায় গত ২৭ জুন হতে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ ঘোষনা করে সেতু কর্তৃপক্ষ। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে গত ৭ জুলাই খালেদ মাহফুজ নামে এক তরুণ সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পদ্মা সেতু পারি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে আসলে তাকে সেখানে নিয়োজিত সেনা সদস্যরা আটক করে পদ্মা দক্ষিণ থানায় সোপর্দ করেন। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জড়িমানাসহ মুচলেখা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়।

এরপর থেকেই সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখতে সেতু কর্তৃপক্ষ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন।

গত শনিবার পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজায় অবস্থানকালে দেখা যায়, বিকাল ৬টার সময় গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ইয়াসিন নামে এক তরুণ পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার দিকে ঢুকতে গেলে সেখানে কর্মরত সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মী সানি তাকে থামিয়ে ফিরে যেতে বললে ওই তরুণ তার কথায় কর্ণপাত না করে টোল প্লাজার দিকে এগিয়ে আসলে সেখানে কর্মরত পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ সদস্য আক্তার হোসেন এসে তাদের মোটরসাইকেলটি আটক করেন। এবং তাদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে চাওয়া হয়, কেন তারা সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মীদের নিষেধ অমান্য করে টোল প্লাজার কাছে চলে আসলেন। মোটরসাইকেল চালক ইয়াসিন ও আরোহী টুটুল মোল্লা পুলিশের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কোন সদুত্তর না দেয়ায় তাদের মোটরসাইকেলের চাবি জব্দ করা হয় এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থার জন্য পুলিশ সদস্য আক্তার হোসেন তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানায়। পরে মোটরসাইকেলের মালিক ইয়াসিন পুলিশের কাছে তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় এবং ফেরিতে পারাপার হওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়।

এছাড়াও আরো কয়েকজন বাইকার টোল প্লাজা এলাকায় ঢুকতে আসলে তাদের নিষেধ করে ফিরিয়ে দিতে দেখা গিয়েছে।

পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও কেন মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে এসেছেন জানতে চাইলে মোটরসাইকেল চালক ইয়াসিন সংবাদকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ায় আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। কিন্তু দু-একটি দুর্ঘটনার জেরে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করায় আমরা যারা প্রয়োজনে ঢাকায় গণপরিবহনে চলাচল করে খরচ পোষাতে না পেরে মোটরসাইকেলের উপরেই নির্ভরশীল হয়েছি তারা পড়েছি মহাবিপাকে। কারণ পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে শিমুলিয়া মাঝিরঘাট নৌরুটে ফেরি চলাচলও বন্ধ আছে। অপেক্ষায় আছি কবে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হবে। তাই মাঝেমধ্যে এখানে সরাসরি এসে খোঁজ নেই। আজও খোঁজ নিতে এসেছি। কিন্তু এখানকার কর্মীরা আমাদের সঠিক তথ্য দিচ্ছিল না। এ কারণে টোল প্লাজার কাছে এগিয়ে এসে জানার চেষ্টা করলে পুলিশ আমাদের গাড়ির চাবি নিয়ে যায়। পরে তাদের বুঝিয়ে বলার পরে আমাদের ছেড়ে দিয়েছে। এখন দৌলদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে পার হয়ে ঢাকা যাবো।

এবিষয়ে পদ্মা দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় মোটরসাইকেল প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে টোল প্লাজা এলাকায় প্রবেশ করলে সাথে সাথে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও শাস্তি প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছেন সেতু কর্তৃপক্ষ। আমরা সে মতো তৎপর রয়েছি।

সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২ , ০৩ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৯ জিলহজ ১৪৪৩

পদ্মা সেতুতে বাইক ঠেকাতে কঠোর প্রশাসন

প্রতিনিধি, শরীয়তপুর(জাজিরা)

যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হওয়ায় গত ২৭ জুন হতে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ ঘোষনা করে সেতু কর্তৃপক্ষ। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে গত ৭ জুলাই খালেদ মাহফুজ নামে এক তরুণ সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পদ্মা সেতু পারি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে আসলে তাকে সেখানে নিয়োজিত সেনা সদস্যরা আটক করে পদ্মা দক্ষিণ থানায় সোপর্দ করেন। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জড়িমানাসহ মুচলেখা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়।

এরপর থেকেই সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখতে সেতু কর্তৃপক্ষ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন।

গত শনিবার পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজায় অবস্থানকালে দেখা যায়, বিকাল ৬টার সময় গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ইয়াসিন নামে এক তরুণ পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার দিকে ঢুকতে গেলে সেখানে কর্মরত সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মী সানি তাকে থামিয়ে ফিরে যেতে বললে ওই তরুণ তার কথায় কর্ণপাত না করে টোল প্লাজার দিকে এগিয়ে আসলে সেখানে কর্মরত পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ সদস্য আক্তার হোসেন এসে তাদের মোটরসাইকেলটি আটক করেন। এবং তাদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে চাওয়া হয়, কেন তারা সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মীদের নিষেধ অমান্য করে টোল প্লাজার কাছে চলে আসলেন। মোটরসাইকেল চালক ইয়াসিন ও আরোহী টুটুল মোল্লা পুলিশের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কোন সদুত্তর না দেয়ায় তাদের মোটরসাইকেলের চাবি জব্দ করা হয় এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থার জন্য পুলিশ সদস্য আক্তার হোসেন তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানায়। পরে মোটরসাইকেলের মালিক ইয়াসিন পুলিশের কাছে তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় এবং ফেরিতে পারাপার হওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়।

এছাড়াও আরো কয়েকজন বাইকার টোল প্লাজা এলাকায় ঢুকতে আসলে তাদের নিষেধ করে ফিরিয়ে দিতে দেখা গিয়েছে।

পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও কেন মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে এসেছেন জানতে চাইলে মোটরসাইকেল চালক ইয়াসিন সংবাদকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ায় আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। কিন্তু দু-একটি দুর্ঘটনার জেরে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করায় আমরা যারা প্রয়োজনে ঢাকায় গণপরিবহনে চলাচল করে খরচ পোষাতে না পেরে মোটরসাইকেলের উপরেই নির্ভরশীল হয়েছি তারা পড়েছি মহাবিপাকে। কারণ পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে শিমুলিয়া মাঝিরঘাট নৌরুটে ফেরি চলাচলও বন্ধ আছে। অপেক্ষায় আছি কবে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হবে। তাই মাঝেমধ্যে এখানে সরাসরি এসে খোঁজ নেই। আজও খোঁজ নিতে এসেছি। কিন্তু এখানকার কর্মীরা আমাদের সঠিক তথ্য দিচ্ছিল না। এ কারণে টোল প্লাজার কাছে এগিয়ে এসে জানার চেষ্টা করলে পুলিশ আমাদের গাড়ির চাবি নিয়ে যায়। পরে তাদের বুঝিয়ে বলার পরে আমাদের ছেড়ে দিয়েছে। এখন দৌলদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে পার হয়ে ঢাকা যাবো।

এবিষয়ে পদ্মা দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় মোটরসাইকেল প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে টোল প্লাজা এলাকায় প্রবেশ করলে সাথে সাথে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও শাস্তি প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছেন সেতু কর্তৃপক্ষ। আমরা সে মতো তৎপর রয়েছি।