তেলচালিত চার রেন্টালের মেয়াদ ফের বাড়ানোর প্রস্তাব

বাগেরহাটের রামপাল, চট্টগ্রামের এস আলমের মতো বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আগামী সেপ্টেম্বরের দিকে উৎপাদনে আসবে বলা হচ্ছে, এর মধ্যে ৪টি ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আবার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সবগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্রই তেলচালিত।

‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ সিস্টেমে আগামী দুই বছর এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র অনুমোদন পেলেই এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি করবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাব অনুযায়ী, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রয়োজনে বিদ্যুৎ কিনলে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আর যখন বিদ্যুৎ নেয়া হবে না, তখন অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। অর্থাৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখলে অর্থ দিতে হবে না।

মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হলোÑ রাজশাহীর কাটাখালীতে নর্দান পাওয়ার সলিউশনের ৫০ মেগাওয়াট, ঢাকার কেরানীগঞ্জে পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারার ১০০ মেগাওয়াট, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরায় সিনহা পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ৫০ মেগাওয়াট এবং চট্টগ্রামের জুলদায় একম ইনফ্রাস্টাকচার সার্ভিসেসের ১০০ মেগাওয়াট। চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই ফার্নেস তেলভিতিত্তক (এইচএফও)।

২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতি পূরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে নির্মিত এই চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে নর্দান পাওয়ার সলিউশন লিমিটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১০ সালের ২৭ জুলাই পাঁচ বছরের জন্য অনুমোদন পায়। চুক্তির মেয়াদ শেষে আরও পাঁচ বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়, এ বছর ২১ মে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়।

পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা কেরানীগঞ্জ পাওয়ার লিমিটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে ২০১০ সালের ৮ জুলাই পাঁচ বছরের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর আরও পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানো হলে গত ২৬ মার্চ কেন্দ্রটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। সিনহা পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১০ সারের ১৫ জুলাই অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে আরও পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানো হলে এ বছর ১২ জানুয়ারি কেন্দ্রটির মেয়াদ শেষ হয়।

একম ইনফ্রাস্টাকচার সার্ভিসেস লিমিটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে ২০১০ সালের ৬ জুলাই পাঁচ বছরের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। পরে আরও পাঁচ বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। গত ২৫ মার্চ কেন্দ্রটির মেয়াদ শেষ হয়। দ্বিতীয় দফায় চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিকেরা সরকারকে অনুরোধ করছিল, তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যেহেতু সচল আছে তাই তাদের যেন প্রয়োজন হলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়। গত এপ্রিল-মে মাসে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে পিডিবি।

পরে পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি এসব কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন চুক্তি হলে, বিদ্যুতের দাম আগের চেয়ে কম পড়বে। এতে উভয় পক্ষই লাভবান হবে। ব্যয়বহুল রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আর কত বছর চলবে, সংবাদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতোমধ্যে ১০১৮.৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৩টি রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ডিজেলভিত্তিক (এইচএসডি) ৪০৫ মেগাওয়াটের ৬টি, ফার্নেস তেলভিত্তিক (এইচএফও) ১৬০ মেগাওয়টের ২টি এবং গ্যাসভিত্তিক ৪৫৩.৫ মেগাওয়াটের ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উপযোগিতা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’ এর আগেও মোট ৪৫৭ মেগাওয়াটের ফার্নেস তেলভিত্তিক ৫টি এবং মোট ২১৩ মেগাওয়াটেরর গ্যাসভিত্তিক ৫টি, অর্থাৎ মোট ৪৭০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রক্ষা, রিলাইঅ্যাবিলিটি বৃদ্ধি এবং মূল্য কম হওয়ায় কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট-ভিত্তিতে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছে।’

গত ৫ জুলাই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল সভায় ২০২২-২৩ হতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতি মেটানোর জন্য ডিজেল ও ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো প্রয়োজনে চালু রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ৪০ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টর ধরে যে ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দুই বছর বিদ্যুৎ কিনলে মোট ২৪৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। সভায় জানানো হয়, দেশে স্থাপিত গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার ৯৯৫ মেগাওয়াট। তবে পেট্রোবাংলা চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় ৫ হাজার ২৫০ মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ২০০৯ সালের ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের জন্য ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনে’ অনেকগুলো রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া কথা ছিল। যথাসময়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে না আসায় রেন্টাল রয়েই গেছে। সরকার এসব রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য মাত্রাতিরিক্ত ভর্তুকি দিচ্ছে। এর ফলে আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছে বিদ্যুৎ খাত। এ নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের মধ্যে সব রেন্টাল বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছিল সরকার। তবে এখনও রেন্টালের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

মেয়াদ বাড়ানো প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম সংবাদকে বলেন, ‘রেন্টাল-কুইক রেন্টালের এখন আর কোন দরকার নেই। সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে এসব কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়াচ্ছে। আর লোকসানের বোঝা এসে পড়ছে গ্রাহকের ঘাড়ে।’

সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২ , ০৩ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৯ জিলহজ ১৪৪৩

তেলচালিত চার রেন্টালের মেয়াদ ফের বাড়ানোর প্রস্তাব

ফয়েজ আহমেদ তুষার

বাগেরহাটের রামপাল, চট্টগ্রামের এস আলমের মতো বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আগামী সেপ্টেম্বরের দিকে উৎপাদনে আসবে বলা হচ্ছে, এর মধ্যে ৪টি ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আবার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সবগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্রই তেলচালিত।

‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ সিস্টেমে আগামী দুই বছর এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র অনুমোদন পেলেই এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি করবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাব অনুযায়ী, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রয়োজনে বিদ্যুৎ কিনলে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আর যখন বিদ্যুৎ নেয়া হবে না, তখন অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। অর্থাৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখলে অর্থ দিতে হবে না।

মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হলোÑ রাজশাহীর কাটাখালীতে নর্দান পাওয়ার সলিউশনের ৫০ মেগাওয়াট, ঢাকার কেরানীগঞ্জে পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারার ১০০ মেগাওয়াট, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরায় সিনহা পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ৫০ মেগাওয়াট এবং চট্টগ্রামের জুলদায় একম ইনফ্রাস্টাকচার সার্ভিসেসের ১০০ মেগাওয়াট। চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই ফার্নেস তেলভিতিত্তক (এইচএফও)।

২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতি পূরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে নির্মিত এই চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে নর্দান পাওয়ার সলিউশন লিমিটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১০ সালের ২৭ জুলাই পাঁচ বছরের জন্য অনুমোদন পায়। চুক্তির মেয়াদ শেষে আরও পাঁচ বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়, এ বছর ২১ মে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়।

পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা কেরানীগঞ্জ পাওয়ার লিমিটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে ২০১০ সালের ৮ জুলাই পাঁচ বছরের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর আরও পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানো হলে গত ২৬ মার্চ কেন্দ্রটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। সিনহা পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১০ সারের ১৫ জুলাই অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে আরও পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানো হলে এ বছর ১২ জানুয়ারি কেন্দ্রটির মেয়াদ শেষ হয়।

একম ইনফ্রাস্টাকচার সার্ভিসেস লিমিটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে ২০১০ সালের ৬ জুলাই পাঁচ বছরের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। পরে আরও পাঁচ বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। গত ২৫ মার্চ কেন্দ্রটির মেয়াদ শেষ হয়। দ্বিতীয় দফায় চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিকেরা সরকারকে অনুরোধ করছিল, তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যেহেতু সচল আছে তাই তাদের যেন প্রয়োজন হলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়। গত এপ্রিল-মে মাসে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে পিডিবি।

পরে পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি এসব কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন চুক্তি হলে, বিদ্যুতের দাম আগের চেয়ে কম পড়বে। এতে উভয় পক্ষই লাভবান হবে। ব্যয়বহুল রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আর কত বছর চলবে, সংবাদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতোমধ্যে ১০১৮.৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৩টি রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ডিজেলভিত্তিক (এইচএসডি) ৪০৫ মেগাওয়াটের ৬টি, ফার্নেস তেলভিত্তিক (এইচএফও) ১৬০ মেগাওয়টের ২টি এবং গ্যাসভিত্তিক ৪৫৩.৫ মেগাওয়াটের ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উপযোগিতা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’ এর আগেও মোট ৪৫৭ মেগাওয়াটের ফার্নেস তেলভিত্তিক ৫টি এবং মোট ২১৩ মেগাওয়াটেরর গ্যাসভিত্তিক ৫টি, অর্থাৎ মোট ৪৭০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রক্ষা, রিলাইঅ্যাবিলিটি বৃদ্ধি এবং মূল্য কম হওয়ায় কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট-ভিত্তিতে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছে।’

গত ৫ জুলাই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল সভায় ২০২২-২৩ হতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতি মেটানোর জন্য ডিজেল ও ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো প্রয়োজনে চালু রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ৪০ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টর ধরে যে ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দুই বছর বিদ্যুৎ কিনলে মোট ২৪৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। সভায় জানানো হয়, দেশে স্থাপিত গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার ৯৯৫ মেগাওয়াট। তবে পেট্রোবাংলা চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় ৫ হাজার ২৫০ মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ২০০৯ সালের ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের জন্য ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনে’ অনেকগুলো রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া কথা ছিল। যথাসময়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে না আসায় রেন্টাল রয়েই গেছে। সরকার এসব রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য মাত্রাতিরিক্ত ভর্তুকি দিচ্ছে। এর ফলে আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছে বিদ্যুৎ খাত। এ নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের মধ্যে সব রেন্টাল বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছিল সরকার। তবে এখনও রেন্টালের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

মেয়াদ বাড়ানো প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম সংবাদকে বলেন, ‘রেন্টাল-কুইক রেন্টালের এখন আর কোন দরকার নেই। সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে এসব কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়াচ্ছে। আর লোকসানের বোঝা এসে পড়ছে গ্রাহকের ঘাড়ে।’