‘নিরপেক্ষ নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের সর্বাত্মক চেষ্টার প্রতিশ্রুতি ইসির

দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের দায় বর্তমান কমিশন নেবে না; তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ’ করতে এই কমিশন সর্বাত্মক চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে এক্ষেত্রে সব দল সহযোগিতা না করলে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের মাঠের ‘খেলোয়াড়’ হিসেবে বর্ণনা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা সহিংসতা বন্ধ করতে পারব না; আপনাদের (রাজনৈতিক দল) দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ খেলোয়াড় কিন্তু আপনারা। আপনারা মাঠে খেলবেন, আমরা রেফারি। আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে। ক্ষমতা কিন্তু কম না, ক্ষমতা প্রয়োগ করব।’ গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপ শুরুর প্রথম দিন সিইসি এসব কথা বলেন। সকালে ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে এ বৈঠক শুরু হয়। এই সময় চার নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আগামী বছর ডিসেম্বরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সহিংসতা বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দেন সিইসি। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় আছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি বলছে, তারা বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে যাবে না।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে কোন সংশয় না করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, তারা কোন আমোদ-ফূর্তি করতে আসেননি। আর সুষ্ঠু নির্বাচন করতে তার চেয়ে যোগ্য লোকের যদি খোঁজ পাওয়া যায়, তাহলে পদ ছাড়ার জন্য তাকে আহ্বানও জানাতে হবে না। তিনি নিজে থেকেই চলে যেতে রাজি থাকবেন। সিইসি বলেন, ‘কাজেই এই ভয় যেন বিএনপি বা অন্য কারও মধ্যে না থাকে। কঠিন একটি দায়িত্ব নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে এসেছি। কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমরা চাই সমঝোতার পথে দলগুলো এগিয়ে যাক, যাতে নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হয়। আমরা বেদনাহত হই, যখন বক্তব্যগুলো সাংঘর্ষিক হয়।’

সিইসি বলেন, ‘অনেক রাজনৈতিক দল বলে আমরা নাকি একটি নির্দিষ্ট দলের এজেন্ডা নিয়ে এসেছি। দলটা কারা সেটা আমি বলতে চাচ্ছি না। তবে আমরা বাক্স খুলে দেখেছি বাক্সের কোথাও এজেন্ডাটা নেই। আমরা এখনও অতটা অসৎ হয়ে পড়ি নাই। আমি সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি ভবিষ্যতে চোর হব না ডাকাত হব সেটা বলতে পারব না। কিন্তু এজ অব নাও ওইভাবে কোন রকমের পক্ষপাতিত্ব বা কারও এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার মানসিকতা এখনও আমাদের ভেতরে জন্ম নেয় নাই।’

তলোয়ার-রাইফেল নিয়ে বক্তব্য পাল্টালেন সিইসি

সকালে এনডিএমের সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেন, ‘মাঠে কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে একটা রাইফেল ও তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে।’

সিইসির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আইনে আমাদের শটগান নিয়ে দাঁড়ানো পারমিট করে না।’ পরে বাংলাদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন এক ধরনের যুদ্ধ। অনেকেই বলছেন আসেন যুদ্ধের মাঠে আসেন। সেখানে আসলে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করলে হবে না। আপনাদের আসলে জনসমর্থম নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে। আপনারা তলোয়ার, রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ করবেন না। আপনাদের জনসমর্থন যেগুলো আছে তারা আসবে। আপনারা ব্যালট নিয়ে যুদ্ধ করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘শক্তির ভাষায় কথা না বলে টেবিলে বসে যুক্তির ভাষায় কথা বলুন। গঠনমূলক আলোচনা করুন। সংকট থেকে যেতে পারে। অনাস্থা দূর হতে পারে; বা কমে আসতে পারে।’

বেলা ১২টায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), আড়াইটায় বাংলাদেশ কংগ্রেস এবং বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি।

৫০ বছরেও স্বাধীন ইসি গড়ে ওঠেনি : বাংলাদেশ কংগ্রেস

দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বাধীন-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গড়ে ওঠেনি বলে অভিযোগ তুলেছে সর্বশেষ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ কংগ্রেস। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে দলটি তাদের লিখিত প্রস্তাবে এমন অভিযোগ করে।

বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. ইয়ারুল ইসলাম তার লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, ‘স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন আজও গড়ে ওঠেনি। ফলে দেশের প্রতিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে। একাদশ সংসদ নির্বাচন নামে একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে এবং সাড়ে তিন বছর অনায়াসেই পার করে দিয়েছে। সাধারণ হিসাবে আর মাত্র দেড় বছর পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে যে পরিবেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংঘটিত হয়েছিল, তার সামান্যতম পরিবর্তন হয়নি।’ দলটির প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছেÑ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) অবস্থান ও পরিচালনায় গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে এবং ভোট প্রদানের পর প্রতীকসহ মুদ্রিত টোকেন প্রদান পদ্ধতি চালু করতে হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস আগে নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করবে এবং তফশিল ঘোষণার পর থেকে দেশের বিদ্যমান সরকার ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ বলে অভিহিত হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত যাবতীয় লোকবল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক মনোনীত একজন নির্বাচন কমিশনারের অধীনে এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বদলির ক্ষমতা এককভাবে আরেকজন নির্বাচন কমিশনারের অধীনে ন্যস্ত থাকবে।

যেকোন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অনুমোদিত বা নিবন্ধিত দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষণ সংস্থা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের অবাধ সুযোগ প্রদান করতে হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারীদের মতামত ও প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা প্রদান করা যাবে না।

নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে সিইসির বক্তব্য আত্মঘাতী : টিআইবি

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নির্বাচনকালীন সহিংসতা প্রসঙ্গে দেয়া বক্তব্যকে আত্মঘাতী ও অপরিণামদর্শী উল্লেখ করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের ‘তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়ানো’ বক্তব্যে বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করে টিআইবি বলে, ‘নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান সহিংসতাকে উসকে দেয়ার শামিল এমন বক্তব্য দিতে পারেন না।’

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ১১ দিনে (শুক্র ও শনিবার বাদে) নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এর মধ্যে সাত দিন ৪টি করে দলের সঙ্গে, তিন দিন ৩টি করে এবং একদিন ২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

আজ ৪ দলের সঙ্গে সংলাপ

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট), দুপুর আড়াইটায় খেলাফত মজলিস এবং বিকেল ৪টায় বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপ হবে।

আগামী ২০ জুলাই মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে এবং শেষ দিন সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে (দ্বাদশ সংসদ) সব দলের অংশগ্রহণ দেখতে চাইছে পশ্চিমা বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) আরও কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক’ করার কথা বার বার বলছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মিত্র দলগুলো এই রাজনৈতিক সংলাপে অংশ নেবে বলে নিশ্চিত করেছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সংলাপে যাবে বলে জানা গেছে। তবে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো এবং কয়েকটি বামদল এই সংলাপে যাচ্ছে না।

সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২ , ০৩ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৯ জিলহজ ১৪৪৩

‘নিরপেক্ষ নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের সর্বাত্মক চেষ্টার প্রতিশ্রুতি ইসির

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের দায় বর্তমান কমিশন নেবে না; তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ’ করতে এই কমিশন সর্বাত্মক চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে এক্ষেত্রে সব দল সহযোগিতা না করলে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের মাঠের ‘খেলোয়াড়’ হিসেবে বর্ণনা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা সহিংসতা বন্ধ করতে পারব না; আপনাদের (রাজনৈতিক দল) দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ খেলোয়াড় কিন্তু আপনারা। আপনারা মাঠে খেলবেন, আমরা রেফারি। আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে। ক্ষমতা কিন্তু কম না, ক্ষমতা প্রয়োগ করব।’ গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপ শুরুর প্রথম দিন সিইসি এসব কথা বলেন। সকালে ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে এ বৈঠক শুরু হয়। এই সময় চার নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আগামী বছর ডিসেম্বরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সহিংসতা বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দেন সিইসি। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় আছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি বলছে, তারা বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে যাবে না।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে কোন সংশয় না করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, তারা কোন আমোদ-ফূর্তি করতে আসেননি। আর সুষ্ঠু নির্বাচন করতে তার চেয়ে যোগ্য লোকের যদি খোঁজ পাওয়া যায়, তাহলে পদ ছাড়ার জন্য তাকে আহ্বানও জানাতে হবে না। তিনি নিজে থেকেই চলে যেতে রাজি থাকবেন। সিইসি বলেন, ‘কাজেই এই ভয় যেন বিএনপি বা অন্য কারও মধ্যে না থাকে। কঠিন একটি দায়িত্ব নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে এসেছি। কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমরা চাই সমঝোতার পথে দলগুলো এগিয়ে যাক, যাতে নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হয়। আমরা বেদনাহত হই, যখন বক্তব্যগুলো সাংঘর্ষিক হয়।’

সিইসি বলেন, ‘অনেক রাজনৈতিক দল বলে আমরা নাকি একটি নির্দিষ্ট দলের এজেন্ডা নিয়ে এসেছি। দলটা কারা সেটা আমি বলতে চাচ্ছি না। তবে আমরা বাক্স খুলে দেখেছি বাক্সের কোথাও এজেন্ডাটা নেই। আমরা এখনও অতটা অসৎ হয়ে পড়ি নাই। আমি সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি ভবিষ্যতে চোর হব না ডাকাত হব সেটা বলতে পারব না। কিন্তু এজ অব নাও ওইভাবে কোন রকমের পক্ষপাতিত্ব বা কারও এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার মানসিকতা এখনও আমাদের ভেতরে জন্ম নেয় নাই।’

তলোয়ার-রাইফেল নিয়ে বক্তব্য পাল্টালেন সিইসি

সকালে এনডিএমের সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেন, ‘মাঠে কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে একটা রাইফেল ও তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে।’

সিইসির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আইনে আমাদের শটগান নিয়ে দাঁড়ানো পারমিট করে না।’ পরে বাংলাদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন এক ধরনের যুদ্ধ। অনেকেই বলছেন আসেন যুদ্ধের মাঠে আসেন। সেখানে আসলে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করলে হবে না। আপনাদের আসলে জনসমর্থম নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে। আপনারা তলোয়ার, রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ করবেন না। আপনাদের জনসমর্থন যেগুলো আছে তারা আসবে। আপনারা ব্যালট নিয়ে যুদ্ধ করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘শক্তির ভাষায় কথা না বলে টেবিলে বসে যুক্তির ভাষায় কথা বলুন। গঠনমূলক আলোচনা করুন। সংকট থেকে যেতে পারে। অনাস্থা দূর হতে পারে; বা কমে আসতে পারে।’

বেলা ১২টায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), আড়াইটায় বাংলাদেশ কংগ্রেস এবং বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি।

৫০ বছরেও স্বাধীন ইসি গড়ে ওঠেনি : বাংলাদেশ কংগ্রেস

দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বাধীন-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গড়ে ওঠেনি বলে অভিযোগ তুলেছে সর্বশেষ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ কংগ্রেস। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে দলটি তাদের লিখিত প্রস্তাবে এমন অভিযোগ করে।

বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. ইয়ারুল ইসলাম তার লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, ‘স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন আজও গড়ে ওঠেনি। ফলে দেশের প্রতিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে। একাদশ সংসদ নির্বাচন নামে একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে এবং সাড়ে তিন বছর অনায়াসেই পার করে দিয়েছে। সাধারণ হিসাবে আর মাত্র দেড় বছর পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে যে পরিবেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংঘটিত হয়েছিল, তার সামান্যতম পরিবর্তন হয়নি।’ দলটির প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছেÑ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) অবস্থান ও পরিচালনায় গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে এবং ভোট প্রদানের পর প্রতীকসহ মুদ্রিত টোকেন প্রদান পদ্ধতি চালু করতে হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস আগে নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করবে এবং তফশিল ঘোষণার পর থেকে দেশের বিদ্যমান সরকার ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ বলে অভিহিত হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত যাবতীয় লোকবল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক মনোনীত একজন নির্বাচন কমিশনারের অধীনে এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বদলির ক্ষমতা এককভাবে আরেকজন নির্বাচন কমিশনারের অধীনে ন্যস্ত থাকবে।

যেকোন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অনুমোদিত বা নিবন্ধিত দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষণ সংস্থা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের অবাধ সুযোগ প্রদান করতে হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারীদের মতামত ও প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা প্রদান করা যাবে না।

নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে সিইসির বক্তব্য আত্মঘাতী : টিআইবি

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নির্বাচনকালীন সহিংসতা প্রসঙ্গে দেয়া বক্তব্যকে আত্মঘাতী ও অপরিণামদর্শী উল্লেখ করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের ‘তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়ানো’ বক্তব্যে বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করে টিআইবি বলে, ‘নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান সহিংসতাকে উসকে দেয়ার শামিল এমন বক্তব্য দিতে পারেন না।’

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ১১ দিনে (শুক্র ও শনিবার বাদে) নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এর মধ্যে সাত দিন ৪টি করে দলের সঙ্গে, তিন দিন ৩টি করে এবং একদিন ২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

আজ ৪ দলের সঙ্গে সংলাপ

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট), দুপুর আড়াইটায় খেলাফত মজলিস এবং বিকেল ৪টায় বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপ হবে।

আগামী ২০ জুলাই মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে এবং শেষ দিন সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে (দ্বাদশ সংসদ) সব দলের অংশগ্রহণ দেখতে চাইছে পশ্চিমা বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) আরও কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক’ করার কথা বার বার বলছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মিত্র দলগুলো এই রাজনৈতিক সংলাপে অংশ নেবে বলে নিশ্চিত করেছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সংলাপে যাবে বলে জানা গেছে। তবে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো এবং কয়েকটি বামদল এই সংলাপে যাচ্ছে না।