দেড় হাজার গণপরিবহনের ব্লুবুক ও কাগজপত্র চুরি করে চাঁদাবাজি

গত প্রায় আড়াই বছর ধরে সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র রাজধানীর বিভিন্ন গণপরিবহনে উঠে কৌশলে বাসের ব্লু বুকসহ অন্যান্য কাগজপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণপরিবহনের মালিকরা পদে পদে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ঘটনার পর থানায় লিখিত অভিযোগ করার পরও কাজ না হওয়ায় নানাভাবে মালিকপক্ষ বিআরটিএ থেকে ডুপ্লিকেট কপি সংগ্রহ করে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। আবার জালিয়াত চক্র টেলিফোনে মালিক ও গণপরিবহনের লোকজনের ফোন নম্বর নিয়ে টেলিফোনে ব্লু-বুকসহ কাগজপত্র ফেরত দেয়ার কথা বলে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এ নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। পুনরায় এসব কাগজপত্র সংগ্রহ করতে তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বছরের পর বছর এ ধরনের বহু অভিযোগ বা জিডি থানায় করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

সম্প্রতি পুুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অনুসন্ধানী টিম এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে তারা তদন্তে নামেন। তারা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে চক্রের সন্ধান পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে চক্রের ১০ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। সিআইডির অনুসন্ধানী টিম ঈদের পর অভিযান চালিয়ে চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গাড়ির ব্লুবুক ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গাড়ি থেকে চুরি করার নানা কৌশল সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, গাড়ির ব্লুবুক ও অন্যান্য রেজিস্ট্রেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র চুরি বা জালিয়াত চক্র নিয়ে যাওয়ায় তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ নিয়ে প্রথমে থানায় লিখিত অভিযোগ বা জিডি করতে হয়। এরপর জিডির সূত্র ধরে বিআরটিএ থেকে ডুপ্লিকেট কাগজপত্র উদ্ধার করে পুনরায় গাড়িতে রাখতে হয়। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা তার জানা নেই। তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের রমনা জোনের ডিসি সংবাদকে জানান, গণপরিবহন সাধারণত রাস্তায় চলাচলের সময় ট্রাফিক সাজেন্ট কাগজ দেখেন। তবে কোন পরিবহনের কাগজপত্র বা গাড়ির ব্লুবুক বা রেজিস্ট্রশনসহ অন্যান্য কাগজপত্র হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে থানায় জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করে তার কপিসহ বিআরটিতে আবেদন করলে ডুপ্লিকেট কপি দেয়। ওই কপি গাড়িতে থাকলে যানবাহন চলাচলের কোন সমস্যা হয় না। আর জিডির কপি গাড়িতে থাকলেও সাজেন্টকে দেখালে তা বিবেচনা করে গাড়ি চলাচলে অনুমতি পায়।

অন্যদিকে গণপরিবহনের একজন ড্রাইভার বলেন, কাগপত্র না থাকলে প্রায় সময় ট্রাফিক সাজেন্টের কাছে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আর চোর চক্র থেকে কাগজপত্র আনতে টাকা লাগে। তারা মোবাইলে ফোন করে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করে। হয়রানি থেকে বাঁচতে টাকা দিয়ে কাগজ আনা হয় বলে ড্রাইভার জানান।

গতকাল সিআইডির প্রধান কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, বাসের কাগজপত্র চুরি করে চাঁদা আদায় করেছে এই চক্রের সন্ধান পেয়েছে। ২০২০ সাল থেকে তাদের তৎপরতা শুরু। গত শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকে এ চক্রের মূল হোতা রাকিব ওরফে তুফানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন গণপরিবহনের ব্লুবুকসহ দেড় হাজার কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার ভয়াবহ কাহিনীর বর্ণনা দিয়েছে।

সিআইডির মতে, গণপরিবহনে উঠে গাড়ির কাগজপত্র চুরি করত রাকিব ওরফে তুফান। এরপর ফোন করে গাড়ির মালিকদের কাছে টাকা দাবি করত তারা। দাবি না মানলে কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দিত চক্রটি। গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা শহরে চলাচলরত মিরপুর লিংক, শিকড় পরিবহন, খাজাবাবা পরিবহন, প্রজাপতি পরিবহন এবং রবরব পরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহনের বাসে যাত্রীবেশে উঠে অভিনব কায়দায় বাসের ব্লুবুক ও রেজিস্ট্রেশন সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র চুরি করেছে। এরপর তারা গাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও চালকদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে প্রতিটি গাড়ির কাগজের জন্য ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে। মালিকরা প্রথমদিকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে চক্রটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ক্ষতি করার এবং চালকদের প্রাণনাশের হুমকি দিত। কাগজপত্র ছাড়া রাস্তায় বাস চালাতে না পারায় বাসের মালিকরা চক্রের সদস্যদের সঙ্গে তাদের দেয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতেন। ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতেন। চক্রটি কিছু কাগজপত্র ফেরত দিত এবং কিছু আটকে রাখত।

আটকে রাখা কাগজপত্র ফেরত দেয়ার শর্তে মিরপুর লিংক, খাজাবাবা ও বিকল্প পরিবহনের মালিকদের মাসিক চাঁদা দিতে বাধ্য করে চক্রটি। কাগজপত্র না থাকায় ট্রাফিকের মামলা, কোর্ট-কাচারি, দৌড়াদৌড়ির ভয়ে মালিকরা বাধ্য হন চাঁদা দিতে। অনেক পরিবহন মালিক মাসিক চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় চক্রের মূল হোতা তুফান পরিচয় দিয়ে মালিকদের হুমকি দিত। সে তাদের বলত, ‘আমি তুফান, আমাকে ঢাকা শহরের অধিকাংশ পরিবহনের মালিক মাসিক চাঁদা দেয়। মাসিক চাঁদা না দিলে আমি গাড়ির কাগজ চুরি করতে থাকব। ঢাকা শহরের কোন পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গাড়ির মালিকরা ঢাকার বিভিন্ন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গত দুই-আড়াই বছরে দেড় শতাধিক জিডি হয়েছে থানায়। এতে কোন ফল না পাওয়ায় বাস মালিকরা বিষয়টি সিআইডিকে অবহিত করেন। ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, সিআইডি ঢাকা মেট্রো-পশ্চিমের একটি টিম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় কৌশলে শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে মূল হোতা রাকিব মিয়া ওরফে তুফান এবং তার তিন সহযোগী শুকুর আলী (২৮), হৃদয় হোসেন (২১) ও মো. শামিমকে (২৫) গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে অনেকগুলো বাসের চুরি হওয়া রেজিস্ট্রেশন সনদ, ফিটনেস সনদ ও ট্যাক্স টোকেন উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তুফানসহ গ্রেপ্তার হওয়া অন্যরা স্বীকার করে দীর্ঘদিন ধরে তারা নিজেদের পরিচয় গোপন করতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে মোবাইল চুরি করে। পরে তারা ওই মোবাইল দিয়ে ফোন করে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়।

এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ২০২০ সালে রাকিব ওরফে তুফান বাসের কাগজ চুরি করা শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরা না পড়তে গত ৫৬টি সিম পাল্টেছে তুফান। চক্রে আরও অন্তত পাঁচজন সদস্য রয়েছে, যাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে সিআইডি। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপির শাহ আলী থানায় মামলা হয়েছে।

সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২ , ০৩ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৯ জিলহজ ১৪৪৩

দেড় হাজার গণপরিবহনের ব্লুবুক ও কাগজপত্র চুরি করে চাঁদাবাজি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

গত প্রায় আড়াই বছর ধরে সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র রাজধানীর বিভিন্ন গণপরিবহনে উঠে কৌশলে বাসের ব্লু বুকসহ অন্যান্য কাগজপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণপরিবহনের মালিকরা পদে পদে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ঘটনার পর থানায় লিখিত অভিযোগ করার পরও কাজ না হওয়ায় নানাভাবে মালিকপক্ষ বিআরটিএ থেকে ডুপ্লিকেট কপি সংগ্রহ করে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। আবার জালিয়াত চক্র টেলিফোনে মালিক ও গণপরিবহনের লোকজনের ফোন নম্বর নিয়ে টেলিফোনে ব্লু-বুকসহ কাগজপত্র ফেরত দেয়ার কথা বলে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এ নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। পুনরায় এসব কাগজপত্র সংগ্রহ করতে তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বছরের পর বছর এ ধরনের বহু অভিযোগ বা জিডি থানায় করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

সম্প্রতি পুুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অনুসন্ধানী টিম এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে তারা তদন্তে নামেন। তারা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে চক্রের সন্ধান পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে চক্রের ১০ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। সিআইডির অনুসন্ধানী টিম ঈদের পর অভিযান চালিয়ে চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গাড়ির ব্লুবুক ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গাড়ি থেকে চুরি করার নানা কৌশল সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, গাড়ির ব্লুবুক ও অন্যান্য রেজিস্ট্রেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র চুরি বা জালিয়াত চক্র নিয়ে যাওয়ায় তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ নিয়ে প্রথমে থানায় লিখিত অভিযোগ বা জিডি করতে হয়। এরপর জিডির সূত্র ধরে বিআরটিএ থেকে ডুপ্লিকেট কাগজপত্র উদ্ধার করে পুনরায় গাড়িতে রাখতে হয়। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা তার জানা নেই। তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের রমনা জোনের ডিসি সংবাদকে জানান, গণপরিবহন সাধারণত রাস্তায় চলাচলের সময় ট্রাফিক সাজেন্ট কাগজ দেখেন। তবে কোন পরিবহনের কাগজপত্র বা গাড়ির ব্লুবুক বা রেজিস্ট্রশনসহ অন্যান্য কাগজপত্র হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে থানায় জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করে তার কপিসহ বিআরটিতে আবেদন করলে ডুপ্লিকেট কপি দেয়। ওই কপি গাড়িতে থাকলে যানবাহন চলাচলের কোন সমস্যা হয় না। আর জিডির কপি গাড়িতে থাকলেও সাজেন্টকে দেখালে তা বিবেচনা করে গাড়ি চলাচলে অনুমতি পায়।

অন্যদিকে গণপরিবহনের একজন ড্রাইভার বলেন, কাগপত্র না থাকলে প্রায় সময় ট্রাফিক সাজেন্টের কাছে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আর চোর চক্র থেকে কাগজপত্র আনতে টাকা লাগে। তারা মোবাইলে ফোন করে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করে। হয়রানি থেকে বাঁচতে টাকা দিয়ে কাগজ আনা হয় বলে ড্রাইভার জানান।

গতকাল সিআইডির প্রধান কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, বাসের কাগজপত্র চুরি করে চাঁদা আদায় করেছে এই চক্রের সন্ধান পেয়েছে। ২০২০ সাল থেকে তাদের তৎপরতা শুরু। গত শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকে এ চক্রের মূল হোতা রাকিব ওরফে তুফানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন গণপরিবহনের ব্লুবুকসহ দেড় হাজার কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার ভয়াবহ কাহিনীর বর্ণনা দিয়েছে।

সিআইডির মতে, গণপরিবহনে উঠে গাড়ির কাগজপত্র চুরি করত রাকিব ওরফে তুফান। এরপর ফোন করে গাড়ির মালিকদের কাছে টাকা দাবি করত তারা। দাবি না মানলে কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দিত চক্রটি। গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা শহরে চলাচলরত মিরপুর লিংক, শিকড় পরিবহন, খাজাবাবা পরিবহন, প্রজাপতি পরিবহন এবং রবরব পরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহনের বাসে যাত্রীবেশে উঠে অভিনব কায়দায় বাসের ব্লুবুক ও রেজিস্ট্রেশন সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র চুরি করেছে। এরপর তারা গাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও চালকদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে প্রতিটি গাড়ির কাগজের জন্য ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে। মালিকরা প্রথমদিকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে চক্রটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ক্ষতি করার এবং চালকদের প্রাণনাশের হুমকি দিত। কাগজপত্র ছাড়া রাস্তায় বাস চালাতে না পারায় বাসের মালিকরা চক্রের সদস্যদের সঙ্গে তাদের দেয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতেন। ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতেন। চক্রটি কিছু কাগজপত্র ফেরত দিত এবং কিছু আটকে রাখত।

আটকে রাখা কাগজপত্র ফেরত দেয়ার শর্তে মিরপুর লিংক, খাজাবাবা ও বিকল্প পরিবহনের মালিকদের মাসিক চাঁদা দিতে বাধ্য করে চক্রটি। কাগজপত্র না থাকায় ট্রাফিকের মামলা, কোর্ট-কাচারি, দৌড়াদৌড়ির ভয়ে মালিকরা বাধ্য হন চাঁদা দিতে। অনেক পরিবহন মালিক মাসিক চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় চক্রের মূল হোতা তুফান পরিচয় দিয়ে মালিকদের হুমকি দিত। সে তাদের বলত, ‘আমি তুফান, আমাকে ঢাকা শহরের অধিকাংশ পরিবহনের মালিক মাসিক চাঁদা দেয়। মাসিক চাঁদা না দিলে আমি গাড়ির কাগজ চুরি করতে থাকব। ঢাকা শহরের কোন পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গাড়ির মালিকরা ঢাকার বিভিন্ন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গত দুই-আড়াই বছরে দেড় শতাধিক জিডি হয়েছে থানায়। এতে কোন ফল না পাওয়ায় বাস মালিকরা বিষয়টি সিআইডিকে অবহিত করেন। ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, সিআইডি ঢাকা মেট্রো-পশ্চিমের একটি টিম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় কৌশলে শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে মূল হোতা রাকিব মিয়া ওরফে তুফান এবং তার তিন সহযোগী শুকুর আলী (২৮), হৃদয় হোসেন (২১) ও মো. শামিমকে (২৫) গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে অনেকগুলো বাসের চুরি হওয়া রেজিস্ট্রেশন সনদ, ফিটনেস সনদ ও ট্যাক্স টোকেন উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তুফানসহ গ্রেপ্তার হওয়া অন্যরা স্বীকার করে দীর্ঘদিন ধরে তারা নিজেদের পরিচয় গোপন করতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে মোবাইল চুরি করে। পরে তারা ওই মোবাইল দিয়ে ফোন করে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়।

এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ২০২০ সালে রাকিব ওরফে তুফান বাসের কাগজ চুরি করা শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরা না পড়তে গত ৫৬টি সিম পাল্টেছে তুফান। চক্রে আরও অন্তত পাঁচজন সদস্য রয়েছে, যাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে সিআইডি। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপির শাহ আলী থানায় মামলা হয়েছে।