ঈদযাত্রার ১২ দিনে ১৯৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ৩২৪

পদ্মা সেতুতে ২১টি দুর্ঘটনা

ঈদযাত্রায় গত ১২ দিনে এক হাজার ৯৫৬ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩২৪ জন। আহত হয়েছেন এক হাজার ৬১২ জন। এর মধ্যে পদ্মা সেতুতে ২১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত ৫ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন সড়কে এসব দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংগঠন ‘সেভ দ্য রোড’। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ঈদযাত্রায় প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ মানুষের মধ্যে ৯৬ লাখ মানুষ সড়ক, রেল ও নৌ-পথে চরম ভোগান্তি সহ্য করে দুই থেকে চারগুণ পর্যন্ত বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করেছেন এবার। বাকি ২৯ লাখ মানুষ নিজস্ব বাহন বা অন্য কোন আরামদায়ক বাহনে যাতায়াত করলেও রেলের ছাদে চড়ে গন্তব্যে গেছেন অর্ধলাখ মানুষ।

তারা জানায়, এবার ছিল মোটরসাইকেলের ‘মুভমেন্ট পাস’। তাই মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির পথে যেতে পারেননি অনেককে। তারা অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, ভাড়ায়চালিত প্রাইভেটকার এমনকি কোরবানির পশু বহনকারী পিকআপ, ট্রাক দিয়ে বাড়ি গিয়েছেন। এসব বাহনে নির্মমভাবে কোরবানির পশুর মতো গাদাগাদি করেও বাড়িতে যেতে হয়েছে কয়েক লাখ মানুষকে।

এ সময়ে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি নিয়ম না মানা এবং হেলমেট ব্যবহারে অনীহার কারণে ৪১৮টি দুর্ঘটনায় ৫৫ জন নিহত এবং ৩৬৮ জন আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশ ঘটেছে বাইক লেন না থাকার কারণে। কেননা বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রাইভেটকার, ট্রাক, বাস-মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বাহন পেছন থেকে ধাক্কা দেয়ার ফলে। কোন রকম বিরতি না নিয়ে টানা ট্রাক চালানোর কারণে অসাবধানতা ও ঘুমন্ত চোখে ক্লান্তি থাকায় প্রসূতি মায়ের মতো ৮৮ জন নিহত হয়েছেন ৫০২টি দুর্ঘটনায়, আহত হয়েছেন ১৭৪ জন।

প্রতিবেদনে জানা যায়, অচল রাস্তাঘাট আর সড়কপথে নৈরাজ্যের কারণে ৫১১টি বাস দুর্ঘটনায় ১০২ জন নিহত এবং ৬৩৬ জন আহত হয়েছেন। পাড়া-মহল্লা-মহাসড়কে অসাবধানতার সঙ্গে চলাচলের কারণে লরি, পিকআপ, নসিমন, করিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশা, বাইসাইকেল ও সিএনজি দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫২৫টি এতে ৭৯ জন নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছেন ৪৩৪ জন। এর মধ্যে একটি দুর্ঘটনা দেশবাসীকে বেশি নাড়া দিয়েছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় স্বামী, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তাদের শিশু সন্তান নিহত হলেও বেঁচে আছে দুর্ঘটনার সময় জন্ম নেয়া নবজাতক।

এছাড়া ৫ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত নৌ-পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯৬টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৭ জন, আহত হয়েছেন ১২৭ জন। প্রায় অর্ধলাখ মানুষ রেলপথে চরম ভোগান্তি সহ্য করে চলাচলে যেমন ভোগান্তি সহ্য করেছেন, তেমনি ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে এবং রেল ক্রসিংয়ে ১২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১১ জন নিহত ও ২১২ জন আহত হয়েছেন।

সেভ দ্য রোডের গবেষণা সেলের তথ্যে পদ্মা সেতুতে গত ১২ দিনে ২১টি দুর্ঘটনার কথা উঠে এসেছে। এতে আহত হয়েছেন ২৭ জন। দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি তা রোধে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সেভ দ্য রোড। এছাড়া ২০০৭ সাল থেকে দুর্ঘটনামুক্ত পথের জন্য তারা ৭টি দাবি জানিয়ে আসছে।

সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২ , ০৩ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৯ জিলহজ ১৪৪৩

ঈদযাত্রার ১২ দিনে ১৯৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ৩২৪

পদ্মা সেতুতে ২১টি দুর্ঘটনা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঈদযাত্রায় গত ১২ দিনে এক হাজার ৯৫৬ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩২৪ জন। আহত হয়েছেন এক হাজার ৬১২ জন। এর মধ্যে পদ্মা সেতুতে ২১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত ৫ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন সড়কে এসব দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংগঠন ‘সেভ দ্য রোড’। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ঈদযাত্রায় প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ মানুষের মধ্যে ৯৬ লাখ মানুষ সড়ক, রেল ও নৌ-পথে চরম ভোগান্তি সহ্য করে দুই থেকে চারগুণ পর্যন্ত বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করেছেন এবার। বাকি ২৯ লাখ মানুষ নিজস্ব বাহন বা অন্য কোন আরামদায়ক বাহনে যাতায়াত করলেও রেলের ছাদে চড়ে গন্তব্যে গেছেন অর্ধলাখ মানুষ।

তারা জানায়, এবার ছিল মোটরসাইকেলের ‘মুভমেন্ট পাস’। তাই মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির পথে যেতে পারেননি অনেককে। তারা অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, ভাড়ায়চালিত প্রাইভেটকার এমনকি কোরবানির পশু বহনকারী পিকআপ, ট্রাক দিয়ে বাড়ি গিয়েছেন। এসব বাহনে নির্মমভাবে কোরবানির পশুর মতো গাদাগাদি করেও বাড়িতে যেতে হয়েছে কয়েক লাখ মানুষকে।

এ সময়ে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি নিয়ম না মানা এবং হেলমেট ব্যবহারে অনীহার কারণে ৪১৮টি দুর্ঘটনায় ৫৫ জন নিহত এবং ৩৬৮ জন আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশ ঘটেছে বাইক লেন না থাকার কারণে। কেননা বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রাইভেটকার, ট্রাক, বাস-মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বাহন পেছন থেকে ধাক্কা দেয়ার ফলে। কোন রকম বিরতি না নিয়ে টানা ট্রাক চালানোর কারণে অসাবধানতা ও ঘুমন্ত চোখে ক্লান্তি থাকায় প্রসূতি মায়ের মতো ৮৮ জন নিহত হয়েছেন ৫০২টি দুর্ঘটনায়, আহত হয়েছেন ১৭৪ জন।

প্রতিবেদনে জানা যায়, অচল রাস্তাঘাট আর সড়কপথে নৈরাজ্যের কারণে ৫১১টি বাস দুর্ঘটনায় ১০২ জন নিহত এবং ৬৩৬ জন আহত হয়েছেন। পাড়া-মহল্লা-মহাসড়কে অসাবধানতার সঙ্গে চলাচলের কারণে লরি, পিকআপ, নসিমন, করিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশা, বাইসাইকেল ও সিএনজি দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫২৫টি এতে ৭৯ জন নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছেন ৪৩৪ জন। এর মধ্যে একটি দুর্ঘটনা দেশবাসীকে বেশি নাড়া দিয়েছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় স্বামী, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তাদের শিশু সন্তান নিহত হলেও বেঁচে আছে দুর্ঘটনার সময় জন্ম নেয়া নবজাতক।

এছাড়া ৫ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত নৌ-পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯৬টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৭ জন, আহত হয়েছেন ১২৭ জন। প্রায় অর্ধলাখ মানুষ রেলপথে চরম ভোগান্তি সহ্য করে চলাচলে যেমন ভোগান্তি সহ্য করেছেন, তেমনি ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে এবং রেল ক্রসিংয়ে ১২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১১ জন নিহত ও ২১২ জন আহত হয়েছেন।

সেভ দ্য রোডের গবেষণা সেলের তথ্যে পদ্মা সেতুতে গত ১২ দিনে ২১টি দুর্ঘটনার কথা উঠে এসেছে। এতে আহত হয়েছেন ২৭ জন। দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি তা রোধে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সেভ দ্য রোড। এছাড়া ২০০৭ সাল থেকে দুর্ঘটনামুক্ত পথের জন্য তারা ৭টি দাবি জানিয়ে আসছে।