রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে এক তরুণের দ্ব্যর্থহীন সংগ্রাম

বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে এবং সহজ ডট কম দ্বারা যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে ৬ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। গত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) থেকে টানা ১১ দিন ধরে কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন তিনি। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

রনির ৬ দফা দাবিগুলো হলোÑ

১. টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজ ডট কম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। হয়রানির ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে।

৩. অনলাইন-অফলাইনে টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৫. ট্রেনের টিকেট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য দায়িত্বশীলদের কর্মকা- সার্বক্ষণিক মনিটর, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।

৬. ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

বরাবরের মতো রেলের টিকেট পাওয়া নিয়ে এবারের ঈদেও ছিল জনসাধারণের ব্যাপক ভোগান্তি। গত ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের আসন সংরক্ষণ (বুকিং) করার চেষ্টা করেন রনি। কিন্তু ভেরিফিকেশন কোড ছাড়াই তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হয়। অথচ তিনি পাননি কোন আসন বা টিকেটের রশিদ।

রনি সংবাদকে বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে সার্ভার কক্ষে অভিযোগ করলে তাকে বলা হয় ‘সিস্টেম ফল’ হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত না পেলে যোগাযোগ করতে বলা হয়। যদিও সে সময় কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার টিকেট ১২শ’ টাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ মহিউদ্দিন রনির। এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পায়নি সে।

এরপর দুইবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন কিন্তু সেখানেও প্রতিকার পাননি। বাধ্য হয়ে তিনি কমলাপুর রেল স্টেশন থানা পুলিশের বাধার মধ্যেও টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। পুলিশ এবং রেলের কিছু কর্মকর্তার নানান হয়রানি, মামলার হুমকি এবং নানা ঠাট্টার পরেও রনি শিল্পের মাধ্যমে, ফুল দিয়ে এবং মানুষকে সচেতন করার মধ্যদিয়ে তার অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। রনি বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল আমি নাকি সরকারবিরোধী কর্মকা- পরিচালনা করছি। আমার ছয় দফা দাবির মধ্যে কোনটি সরকারবিরোধী দাবি? এগুলোতো সরকার ও জনগণ নির্বিশেষে সবার দাবি।’

মহিউদ্দিন রনির সঙ্গে দেখা করে সংহতি জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক জিএস ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, যুব ইউনিয়ের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুমসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

এছাড়া গত শুক্রবার ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মো. ফয়েজউল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল যৌথ বিবৃতিতে রনির ৬ দফা দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রী হয়রানি, টিকেট কালোবাজারি, খাবারের মূল্য নির্ধারণে অন্যায্যতা, অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ রেলওয়ের সামগ্রিক অব্যবস্থাপনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব নিয়ে তেমন কোন প্রতিবাদ প্রতিরোধ না হলেও যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে বলা হয় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবির সঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আমরা সংহতি জানাচ্ছি। এই ন্যায্য দাবির অবস্থান কর্মসূচিতে রেলওয়ে এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা ও হুমকি প্রদর্শনের মতো ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসা শিক্ষার্থীদের খাবার ও অবস্থান কর্মসূচির আনুষাঙ্গিক খরচও বহন করছেন রনি নিজেই। খরচ চালানোর জন্য নিজের ক্যামেরাও বিক্রি করে দিয়েছেন রনি। সংবাদকে তিনি বলেন, ‘অনেকেই টাকা পাঠাতে চেয়েছে। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি আমার আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছি না। তাই সবাইকে টাকা পাঠাতে নিরুৎসাহিত করেছি। যদি একেবারেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় আমি সবাইকে জানাবো। প্রয়োজনে আমি আমার উকুলেলে, কাহন, গিটার, ডেক্সটপও বিক্রি করে দিবো।’

মহিউদ্দিন রনি জানান, ৬ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান করবেন। কালোবাজারিরা এখান থেকে সরে যেতে হুমকি দিলেও তিনি তার অবস্থানে অনড় থাকবেন।

প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়নসহ ৬ দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় আসেন এই শিক্ষার্থী।

সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২ , ০৩ শ্রাবণ ১৪২৯ ১৯ জিলহজ ১৪৪৩

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে এক তরুণের দ্ব্যর্থহীন সংগ্রাম

প্রতিনিধি, ঢাবি

image

কমলাপুর রেলস্টেশনে ঢাবি ছাত্র রনির অবস্থান কর্মসূচি -সংবাদ

বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে এবং সহজ ডট কম দ্বারা যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে ৬ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। গত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) থেকে টানা ১১ দিন ধরে কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন তিনি। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

রনির ৬ দফা দাবিগুলো হলোÑ

১. টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজ ডট কম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। হয়রানির ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে।

৩. অনলাইন-অফলাইনে টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৫. ট্রেনের টিকেট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য দায়িত্বশীলদের কর্মকা- সার্বক্ষণিক মনিটর, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।

৬. ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

বরাবরের মতো রেলের টিকেট পাওয়া নিয়ে এবারের ঈদেও ছিল জনসাধারণের ব্যাপক ভোগান্তি। গত ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের আসন সংরক্ষণ (বুকিং) করার চেষ্টা করেন রনি। কিন্তু ভেরিফিকেশন কোড ছাড়াই তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হয়। অথচ তিনি পাননি কোন আসন বা টিকেটের রশিদ।

রনি সংবাদকে বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে সার্ভার কক্ষে অভিযোগ করলে তাকে বলা হয় ‘সিস্টেম ফল’ হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত না পেলে যোগাযোগ করতে বলা হয়। যদিও সে সময় কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার টিকেট ১২শ’ টাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ মহিউদ্দিন রনির। এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পায়নি সে।

এরপর দুইবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন কিন্তু সেখানেও প্রতিকার পাননি। বাধ্য হয়ে তিনি কমলাপুর রেল স্টেশন থানা পুলিশের বাধার মধ্যেও টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। পুলিশ এবং রেলের কিছু কর্মকর্তার নানান হয়রানি, মামলার হুমকি এবং নানা ঠাট্টার পরেও রনি শিল্পের মাধ্যমে, ফুল দিয়ে এবং মানুষকে সচেতন করার মধ্যদিয়ে তার অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। রনি বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল আমি নাকি সরকারবিরোধী কর্মকা- পরিচালনা করছি। আমার ছয় দফা দাবির মধ্যে কোনটি সরকারবিরোধী দাবি? এগুলোতো সরকার ও জনগণ নির্বিশেষে সবার দাবি।’

মহিউদ্দিন রনির সঙ্গে দেখা করে সংহতি জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক জিএস ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, যুব ইউনিয়ের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুমসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

এছাড়া গত শুক্রবার ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মো. ফয়েজউল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল যৌথ বিবৃতিতে রনির ৬ দফা দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রী হয়রানি, টিকেট কালোবাজারি, খাবারের মূল্য নির্ধারণে অন্যায্যতা, অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ রেলওয়ের সামগ্রিক অব্যবস্থাপনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব নিয়ে তেমন কোন প্রতিবাদ প্রতিরোধ না হলেও যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে বলা হয় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবির সঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আমরা সংহতি জানাচ্ছি। এই ন্যায্য দাবির অবস্থান কর্মসূচিতে রেলওয়ে এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা ও হুমকি প্রদর্শনের মতো ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসা শিক্ষার্থীদের খাবার ও অবস্থান কর্মসূচির আনুষাঙ্গিক খরচও বহন করছেন রনি নিজেই। খরচ চালানোর জন্য নিজের ক্যামেরাও বিক্রি করে দিয়েছেন রনি। সংবাদকে তিনি বলেন, ‘অনেকেই টাকা পাঠাতে চেয়েছে। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি আমার আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছি না। তাই সবাইকে টাকা পাঠাতে নিরুৎসাহিত করেছি। যদি একেবারেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় আমি সবাইকে জানাবো। প্রয়োজনে আমি আমার উকুলেলে, কাহন, গিটার, ডেক্সটপও বিক্রি করে দিবো।’

মহিউদ্দিন রনি জানান, ৬ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান করবেন। কালোবাজারিরা এখান থেকে সরে যেতে হুমকি দিলেও তিনি তার অবস্থানে অনড় থাকবেন।

প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়নসহ ৬ দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় আসেন এই শিক্ষার্থী।