নড়াইলের ঘটনার পেছনে অন্যকিছু মাশরাফি

নড়াইলের লোহাগড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পেছনে অন্য কিছু আছে বলে বলেছেন মাশরাফি। তিনি তার ভেরিফাইড ফেইসবুক পেজে তাকে ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নানাভাবে বিপদে ফেলারও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি তার পোস্টে লিখেন ‘একটু বোঝার চেষ্টা করছি, আর কত দিক থেকে আক্রমণ হতে পারে।’

মাশরাফি বলেন, ‘ছেলেবেলা থেকে যে নড়াইলকে দেখে এসেছি, যে নড়াইলকে নিয়ে আমরা গর্ব করি, সেই নড়াইলের সঙ্গে এই নড়াইলকে আমি মেলাতে পারছি না। এই নড়াইলকে তো আমি চিনি না।’

‘সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের ওপর আক্রমণ করে তাদের বিপদে ফেলা, পাশাপাশি আমাকেও বিপদে ঠেলে দেয়া। আমি জানি, নড়াইলে রাজনীতি যাদের কাছে পেশা, তাদের কাছে আমি এখন নেশা...’

‘আমাকে ভোগানোর জন্য দয়া করে সাধারণ ও অসহায় মানুষদের আর ক্ষতি করবেন না। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন, লড়াই আমার সঙ্গে করুন’ মন্তব্য করে মাশরাফি তার প্রতিপক্ষদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা সব তো করলেন। এবার আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ, পেছন থেকে আঘাত করতে করতে আপনারা ক্লান্ত হয়ে যাবেন। তো আসুন, সামনে থেকে আঘাত করুন। আমার সঙ্গে সরাসরি লড়াই করুন। আমি সাধুবাদ জানাব।’

‘কিন্তু আমাকে ভোগানোর জন্য দয়া করে সাধারণ ও অসহায় মানুষদের আর ক্ষতি করবেন না। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন, লড়াই আমার সঙ্গে করুন।’

গত শনিবার ঘটনা পরদির্শন করতে গিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করে বলেন, ‘আমি লজ্জিত ভীষণভাবে লজ্জিত, আমাদের নড়াইলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে তা বিশ্বাসই হয় না। আমাদের সবার লজ্জা থাকা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের ক্ষতি যা হয়েছে তা সমাধান করা গেলেই সমাধান হবে না, এই পরিস্থিতিতে তাদের মানসিক ক্ষতটা কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লাগবে। মানসিকভাবে ভীতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা তাদের আশ্বস্ত করছি ও চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।’

এ সময় তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান ও আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতে ও ক্ষতিপূরণ প্রদানে ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি আশ্বাস প্রদান করেন।

মাশরাফি তার পোস্টে অুনরোধ করে বলেন, ‘অনুরোধ করছি, এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, এমন কাজ করা থেকে দয়া করে বিরত থাকুন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের ফাঁদে পড়ে নড়াইলের হাজার বছরের ঐতিহ্য আর সম্প্রীতির বন্ধনকে এক নিমেষে ম্লান করে দেবেন না।’

দীর্ঘ এ পোস্টে তিনি এ ঘটনার পর সবার সহনশীল আচরণ প্রত্যাশা করেন।

লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া এলাকার এক কলেজছাত্র গত শুক্রবার বিকেলে হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে কটূক্তি করে তার ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় স্থানীয় ক্ষুব্ধ লোকজন দিঘলিয়া বাজারে সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও দোকানপাটে হামলা চালায়। এ সময় একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগও করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ একপর্যায়ে ফাঁকা গুলি করে।

মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই ২০২২ , ০৪ শ্রাবণ ১৪২৯ ২০ জিলহজ ১৪৪৩

নড়াইলের ঘটনার পেছনে অন্যকিছু মাশরাফি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

নড়াইলের লোহাগড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পেছনে অন্য কিছু আছে বলে বলেছেন মাশরাফি। তিনি তার ভেরিফাইড ফেইসবুক পেজে তাকে ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নানাভাবে বিপদে ফেলারও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি তার পোস্টে লিখেন ‘একটু বোঝার চেষ্টা করছি, আর কত দিক থেকে আক্রমণ হতে পারে।’

মাশরাফি বলেন, ‘ছেলেবেলা থেকে যে নড়াইলকে দেখে এসেছি, যে নড়াইলকে নিয়ে আমরা গর্ব করি, সেই নড়াইলের সঙ্গে এই নড়াইলকে আমি মেলাতে পারছি না। এই নড়াইলকে তো আমি চিনি না।’

‘সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের ওপর আক্রমণ করে তাদের বিপদে ফেলা, পাশাপাশি আমাকেও বিপদে ঠেলে দেয়া। আমি জানি, নড়াইলে রাজনীতি যাদের কাছে পেশা, তাদের কাছে আমি এখন নেশা...’

‘আমাকে ভোগানোর জন্য দয়া করে সাধারণ ও অসহায় মানুষদের আর ক্ষতি করবেন না। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন, লড়াই আমার সঙ্গে করুন’ মন্তব্য করে মাশরাফি তার প্রতিপক্ষদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা সব তো করলেন। এবার আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ, পেছন থেকে আঘাত করতে করতে আপনারা ক্লান্ত হয়ে যাবেন। তো আসুন, সামনে থেকে আঘাত করুন। আমার সঙ্গে সরাসরি লড়াই করুন। আমি সাধুবাদ জানাব।’

‘কিন্তু আমাকে ভোগানোর জন্য দয়া করে সাধারণ ও অসহায় মানুষদের আর ক্ষতি করবেন না। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন, লড়াই আমার সঙ্গে করুন।’

গত শনিবার ঘটনা পরদির্শন করতে গিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করে বলেন, ‘আমি লজ্জিত ভীষণভাবে লজ্জিত, আমাদের নড়াইলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে তা বিশ্বাসই হয় না। আমাদের সবার লজ্জা থাকা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের ক্ষতি যা হয়েছে তা সমাধান করা গেলেই সমাধান হবে না, এই পরিস্থিতিতে তাদের মানসিক ক্ষতটা কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লাগবে। মানসিকভাবে ভীতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা তাদের আশ্বস্ত করছি ও চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।’

এ সময় তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান ও আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতে ও ক্ষতিপূরণ প্রদানে ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি আশ্বাস প্রদান করেন।

মাশরাফি তার পোস্টে অুনরোধ করে বলেন, ‘অনুরোধ করছি, এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, এমন কাজ করা থেকে দয়া করে বিরত থাকুন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের ফাঁদে পড়ে নড়াইলের হাজার বছরের ঐতিহ্য আর সম্প্রীতির বন্ধনকে এক নিমেষে ম্লান করে দেবেন না।’

দীর্ঘ এ পোস্টে তিনি এ ঘটনার পর সবার সহনশীল আচরণ প্রত্যাশা করেন।

লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া এলাকার এক কলেজছাত্র গত শুক্রবার বিকেলে হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে কটূক্তি করে তার ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় স্থানীয় ক্ষুব্ধ লোকজন দিঘলিয়া বাজারে সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও দোকানপাটে হামলা চালায়। এ সময় একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগও করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ একপর্যায়ে ফাঁকা গুলি করে।