সাহায্য নয়, চাই স্থায়ী বাঁধ

যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব পরিবারের আকুতি

নামমাত্র আর্থিক সাহায্য নয়, চাই স্থায়ী বাঁধ। যাতে আমরা সন্তান ও পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারি। আর প্রতিশ্রুতি চাই না, চাই বাস্তবায়ন। রাক্ষুসে যমুনার তীরবর্তী ভাঙনের শিকার অসহায় মানুষ করুণ আর্তনাদের সুরে কথাগুলো বলেছেন। বর্ষা এলেই যমুনা নদীর তীরবর্তী টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও ভূঞাপুর উপজেলার বেশকয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের জীবনে নেমে আসে বিভীষিকা। তারা থাকেন চরম আতঙ্কে, কখন যেন বাড়িঘর চলে যায় আগ্রাসী যমুনার পেটে। ঠাঁই নিতে হয় খোলা আকাশের নিচে বা অন্যের জায়গায় আশ্রিত। এবারো সেই দৃশ্যের ব্যতিক্রম নয়।

ভাঙনরোধে সাময়িকভাবে ফেলা বালুর বস্তা কাজে দেয় না। এছাড়া ব্লক দিয়ে বাঁধানো নদীর পার টেইসই হয় না। দেবে গিয়ে আবার ভাঙন ধরে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের বেলটিয়া গ্রামের আছিয়া বেগম বলেন, নদী সব কিছু কাইরা নিছে। চাইর বার বাড়ি ভাঙছি। মর্জিনা বেগম বলেন, আমাগো এখন যাবার জায়গা নাই। আমরা ভাসমান। সরকার থিকা কিছুই পাই না।

আলীপুর গ্রামের মামুন মিয়া মাস্টার বলেন, আমাদের গ্রামের সিংহভাগই নদীতে চলে গেছে। গ্রামের দাখিল মাদ্রাসা, মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঈদগাহ মাঠ ও বাজার সবই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। ভাঙনের শিকার আজিজ মিয়া বলেন, আমাগো পাকা ঘরবাড়ি ও টয়লেট সব ছিল। বাইচা আছি এটাই কষ্টের। রফিকুল ইসলাম সিকদার বলেন, সরকার থেকে অনুদানের টাকা দেয়া হয়। যাদের বাড়ি ভাঙে নাই এমন লোকও সাহায্য পায়। ক্ষোভের কণ্ঠে স্থানীয় অনেকেই বলেন, আপনারাত প্রতিবারই লেইখা নিয়া যাইন। আমাগো কোন লাব অয় না তো। আমরা ছিলাম এলাকার বড় গিরস্থ। কিন্তু যমুনা নদীই আমাদের সর্বনাশ করে দিছে, আজ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব। অনেকেই অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরপৌলী, কাকুয়া, ধুলবাড়ী, পানাকুড়া, হুগড়ার কাজিবাজার, গন্দপপুর, চরগোপাল, কালিহাতী উপজেলার গড়িলাবাড়ি, বেলটিয়া, আলীপুর, শ্যামশৈল, বিনোদ লুহুরিয়া, ভৈরববাড়ী, বেনুকুর্শিয়া এবং ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারা, অর্জুনা নিকরাইল ও অলোয়া ইউনিয়নের বহু গ্রামের মানুষ প্রতিবছরই নদীভাঙনের শিকার হন। এছাড়া নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলায়ও হয় নদীভাঙন। ভুক্তভোগীরা জানান, নদীর পানির তীব্র ¯্রােত, নদী থেকে প্রভাবশালীদের অবৈধ বালু উত্তোলন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিই এর জন্য দায়ী।

গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, এই এলাকার মানুষকে বাঁচাতে হলে দ্রুত স্থায়ী বাঁধই নির্মাণ করতে হবে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) বঙ্গবন্ধু সেতুতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, সেতু তীরবর্তী আমাদের এরিয়ায় ব্লক দিয়ে বাঁধ করা হয়েছে। সেতুর ৬ কিলোমিটারের মধ্যে নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন হয় কি না এমন প্রশ্নে তিনি অস্বীকার করেছেন।

টাঙ্গাইল বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলার কয়েকটি উপজেলায় প্রতিবছরই অসংখ্য মানুষ নদীভাঙনের শিকার হন। টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর এবং ভূঞাপুরে নদীভাঙন রোধে গাইড বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্পের প্রপোজাল তৈরি করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে। করোনার কারণে গত দুই বছর অগ্রগতি হয়নি।

টাঙ্গাইল সদর আসনের এমপি ছানোয়ার হোসেন বলেন, শুধুমাত্র চরপৌলী গ্রামেই কয়েকশ’ ভিটে বাড়ি নদীতে চলে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের এবার ২০ লাখ টাকা সরকারি অনুদান দেয়া হয়েছে। নদীভাঙন রোধে বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সদর উপজেলার ১৫.৩ কিলোমিটার বাঁধের ব্যবস্থা হবে।

image

টাঙ্গাইল : যমুনা নদীর তীরবর্তী কালিহাতী উপজেলার ভাঙনকবলিত বেলটিয়া ও আলীপুর গ্রাম -সংবাদ

আরও খবর
২৬ হাজার পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর
‘সব মৃত্যুই কষ্টের, সুখের মৃত্যু তো নেই’
বিএনপি না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না : সিইসি
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আরও একটি ট্রেন সার্ভিস চালুর প্রস্তাব ভারতের
সেই শিশুর খরচ রাষ্ট্রকে বহন করতে আজ রিট আবেদনের শুনানি হতে পারে
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সিন্ডিকেট এমপি-মন্ত্রীদের নিয়ন্ত্রণে : বায়রা
বিএনপি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে চায় : কাদের
জাল ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড দিয়ে ইউরোপে মানবপাচার করা হচ্ছে
সীতাকুণ্ডে জঙ্গল সলিমপুরের ত্রাস ১৮ মামলার আসামি ইয়াসিন গ্রেপ্তার

মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই ২০২২ , ০৪ শ্রাবণ ১৪২৯ ২০ জিলহজ ১৪৪৩

সাহায্য নয়, চাই স্থায়ী বাঁধ

যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব পরিবারের আকুতি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

image

টাঙ্গাইল : যমুনা নদীর তীরবর্তী কালিহাতী উপজেলার ভাঙনকবলিত বেলটিয়া ও আলীপুর গ্রাম -সংবাদ

নামমাত্র আর্থিক সাহায্য নয়, চাই স্থায়ী বাঁধ। যাতে আমরা সন্তান ও পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারি। আর প্রতিশ্রুতি চাই না, চাই বাস্তবায়ন। রাক্ষুসে যমুনার তীরবর্তী ভাঙনের শিকার অসহায় মানুষ করুণ আর্তনাদের সুরে কথাগুলো বলেছেন। বর্ষা এলেই যমুনা নদীর তীরবর্তী টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও ভূঞাপুর উপজেলার বেশকয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের জীবনে নেমে আসে বিভীষিকা। তারা থাকেন চরম আতঙ্কে, কখন যেন বাড়িঘর চলে যায় আগ্রাসী যমুনার পেটে। ঠাঁই নিতে হয় খোলা আকাশের নিচে বা অন্যের জায়গায় আশ্রিত। এবারো সেই দৃশ্যের ব্যতিক্রম নয়।

ভাঙনরোধে সাময়িকভাবে ফেলা বালুর বস্তা কাজে দেয় না। এছাড়া ব্লক দিয়ে বাঁধানো নদীর পার টেইসই হয় না। দেবে গিয়ে আবার ভাঙন ধরে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের বেলটিয়া গ্রামের আছিয়া বেগম বলেন, নদী সব কিছু কাইরা নিছে। চাইর বার বাড়ি ভাঙছি। মর্জিনা বেগম বলেন, আমাগো এখন যাবার জায়গা নাই। আমরা ভাসমান। সরকার থিকা কিছুই পাই না।

আলীপুর গ্রামের মামুন মিয়া মাস্টার বলেন, আমাদের গ্রামের সিংহভাগই নদীতে চলে গেছে। গ্রামের দাখিল মাদ্রাসা, মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঈদগাহ মাঠ ও বাজার সবই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। ভাঙনের শিকার আজিজ মিয়া বলেন, আমাগো পাকা ঘরবাড়ি ও টয়লেট সব ছিল। বাইচা আছি এটাই কষ্টের। রফিকুল ইসলাম সিকদার বলেন, সরকার থেকে অনুদানের টাকা দেয়া হয়। যাদের বাড়ি ভাঙে নাই এমন লোকও সাহায্য পায়। ক্ষোভের কণ্ঠে স্থানীয় অনেকেই বলেন, আপনারাত প্রতিবারই লেইখা নিয়া যাইন। আমাগো কোন লাব অয় না তো। আমরা ছিলাম এলাকার বড় গিরস্থ। কিন্তু যমুনা নদীই আমাদের সর্বনাশ করে দিছে, আজ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব। অনেকেই অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরপৌলী, কাকুয়া, ধুলবাড়ী, পানাকুড়া, হুগড়ার কাজিবাজার, গন্দপপুর, চরগোপাল, কালিহাতী উপজেলার গড়িলাবাড়ি, বেলটিয়া, আলীপুর, শ্যামশৈল, বিনোদ লুহুরিয়া, ভৈরববাড়ী, বেনুকুর্শিয়া এবং ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারা, অর্জুনা নিকরাইল ও অলোয়া ইউনিয়নের বহু গ্রামের মানুষ প্রতিবছরই নদীভাঙনের শিকার হন। এছাড়া নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলায়ও হয় নদীভাঙন। ভুক্তভোগীরা জানান, নদীর পানির তীব্র ¯্রােত, নদী থেকে প্রভাবশালীদের অবৈধ বালু উত্তোলন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিই এর জন্য দায়ী।

গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, এই এলাকার মানুষকে বাঁচাতে হলে দ্রুত স্থায়ী বাঁধই নির্মাণ করতে হবে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) বঙ্গবন্ধু সেতুতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, সেতু তীরবর্তী আমাদের এরিয়ায় ব্লক দিয়ে বাঁধ করা হয়েছে। সেতুর ৬ কিলোমিটারের মধ্যে নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন হয় কি না এমন প্রশ্নে তিনি অস্বীকার করেছেন।

টাঙ্গাইল বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলার কয়েকটি উপজেলায় প্রতিবছরই অসংখ্য মানুষ নদীভাঙনের শিকার হন। টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর এবং ভূঞাপুরে নদীভাঙন রোধে গাইড বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্পের প্রপোজাল তৈরি করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে। করোনার কারণে গত দুই বছর অগ্রগতি হয়নি।

টাঙ্গাইল সদর আসনের এমপি ছানোয়ার হোসেন বলেন, শুধুমাত্র চরপৌলী গ্রামেই কয়েকশ’ ভিটে বাড়ি নদীতে চলে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের এবার ২০ লাখ টাকা সরকারি অনুদান দেয়া হয়েছে। নদীভাঙন রোধে বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সদর উপজেলার ১৫.৩ কিলোমিটার বাঁধের ব্যবস্থা হবে।