জাল ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড দিয়ে ইউরোপে মানবপাচার করা হচ্ছে

সংঘবদ্ধ চক্র প্রতারণার মাধ্যমে জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়ে জাল ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড দিয়ে ইউরোপে মানবপাচার করছে। আর ভুক্তভোগী বেকার যুবকদের জাল ভিসা ও নকল কার্ড নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এতে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা চক্রের খপ্পরে পড়ে টাকা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এমন বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর র‌্যাব সদস্যরা গোয়েন্দা কার্যক্রম ও ছায়াতদন্ত করে জালিয়াত চক্রের সন্ধানও পেয়েছে।

এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার রাতে র‌্যাব-৩ বিশেষ টিম রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে মানবপাচারকারি চক্রের প্রধান আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করেছে। তার কাছ থেকে ১৪টি পাসপোর্ট, ৬টি নকল বিএমইটি কার্ড, আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন লেজার, রেজিস্ট্রোর ও ডায়েরি উদ্ধার করছে।

প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, অভিযুক্ত আবুল কালাম সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। তার জনশক্তি রপ্তানির কোন লাইসেন্স নেই।

সে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর নামে বেকার যুবকদের কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের জাল ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড দিয়ে বিদেশ পাঠানোর চেষ্টা করে।

তারা বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে ধরা পড়ে ফিরে আসার পর আর মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যকে খুঁজে পায় না। তারা নতুন করে স্থান পাল্টে আবার প্রতারণা শুরু করেন।

গত তিন বছরে এই চক্র মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় অর্ধশত লোককে পাঠিয়েছে। তারাও বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অন্যদিকে এই চক্র তিন শতাধিক ব্যক্তিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এভাবে এ চক্র জাল ভিসা ও বিএমইটির নকল কার্ড সরবরাহ করে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এ চক্র ২০১৯ সাল থেকে মানবপাচার ও প্রতারণা শুরু করে। তারা টার্গেটকৃত যুবকদের ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে পাসপোর্ট, প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা নেয়। এরপর ভিসা, টিকেট, মেডিকেল ও বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে টার্গেটকৃত যুবকের কাছ থেকে আস্থা অর্জন করতে দু-একজনকে প্রথমে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠায়। এরপর কিছু যুবককে স্থায়ী ঠিকানা ও সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে বলে।

কিন্তু বেকার যুবকরা তাদের অজ্ঞতার কারণে নিবন্ধনকেই বিএমইটি ক্লিায়ারেন্স প্রাপ্তির চূড়ান্ত ধাপ বলে মনে করে। তারপরই ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে ফ্লাইটের জন্য পুনরায় টাকা দাবি করে।

এভাবে মানবপাচারকারি চক্র প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়। এ চক্রের পলাতক অন্য সদস্যদের ধরতে র‌্যাবের তৎপরতা অব্যহত আছে। র‌্যাব ছাড়াও সিআইডিসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানবপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করার চেষ্টা করলেও থামছে না মানবপাচার। অনেকেই সম্পত্তি বিক্রি করে দুবাই হয়ে ইউরোপে যাওয়ার তৎপরতা চালায়। আবার অনেকেই মানবপাচারকারি চক্রের খপ্পরে পড়ে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকাডুবে মারা যান। এভাবে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে বেকার যুবকরা সর্বস্বান্ত হয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। তবে এ ঘটনা নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পর অনেক মানবপাচারকারি গ্রেপ্তার হলেও থামছে না মানবপাচার।

মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই ২০২২ , ০৪ শ্রাবণ ১৪২৯ ২০ জিলহজ ১৪৪৩

জাল ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড দিয়ে ইউরোপে মানবপাচার করা হচ্ছে

বাকী বিল্লাহ

সংঘবদ্ধ চক্র প্রতারণার মাধ্যমে জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়ে জাল ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড দিয়ে ইউরোপে মানবপাচার করছে। আর ভুক্তভোগী বেকার যুবকদের জাল ভিসা ও নকল কার্ড নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এতে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা চক্রের খপ্পরে পড়ে টাকা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এমন বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর র‌্যাব সদস্যরা গোয়েন্দা কার্যক্রম ও ছায়াতদন্ত করে জালিয়াত চক্রের সন্ধানও পেয়েছে।

এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার রাতে র‌্যাব-৩ বিশেষ টিম রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে মানবপাচারকারি চক্রের প্রধান আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করেছে। তার কাছ থেকে ১৪টি পাসপোর্ট, ৬টি নকল বিএমইটি কার্ড, আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন লেজার, রেজিস্ট্রোর ও ডায়েরি উদ্ধার করছে।

প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, অভিযুক্ত আবুল কালাম সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। তার জনশক্তি রপ্তানির কোন লাইসেন্স নেই।

সে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর নামে বেকার যুবকদের কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের জাল ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড দিয়ে বিদেশ পাঠানোর চেষ্টা করে।

তারা বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে ধরা পড়ে ফিরে আসার পর আর মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যকে খুঁজে পায় না। তারা নতুন করে স্থান পাল্টে আবার প্রতারণা শুরু করেন।

গত তিন বছরে এই চক্র মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় অর্ধশত লোককে পাঠিয়েছে। তারাও বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অন্যদিকে এই চক্র তিন শতাধিক ব্যক্তিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এভাবে এ চক্র জাল ভিসা ও বিএমইটির নকল কার্ড সরবরাহ করে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এ চক্র ২০১৯ সাল থেকে মানবপাচার ও প্রতারণা শুরু করে। তারা টার্গেটকৃত যুবকদের ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে পাসপোর্ট, প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা নেয়। এরপর ভিসা, টিকেট, মেডিকেল ও বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে টার্গেটকৃত যুবকের কাছ থেকে আস্থা অর্জন করতে দু-একজনকে প্রথমে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠায়। এরপর কিছু যুবককে স্থায়ী ঠিকানা ও সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে বলে।

কিন্তু বেকার যুবকরা তাদের অজ্ঞতার কারণে নিবন্ধনকেই বিএমইটি ক্লিায়ারেন্স প্রাপ্তির চূড়ান্ত ধাপ বলে মনে করে। তারপরই ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে ফ্লাইটের জন্য পুনরায় টাকা দাবি করে।

এভাবে মানবপাচারকারি চক্র প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়। এ চক্রের পলাতক অন্য সদস্যদের ধরতে র‌্যাবের তৎপরতা অব্যহত আছে। র‌্যাব ছাড়াও সিআইডিসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানবপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করার চেষ্টা করলেও থামছে না মানবপাচার। অনেকেই সম্পত্তি বিক্রি করে দুবাই হয়ে ইউরোপে যাওয়ার তৎপরতা চালায়। আবার অনেকেই মানবপাচারকারি চক্রের খপ্পরে পড়ে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকাডুবে মারা যান। এভাবে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে বেকার যুবকরা সর্বস্বান্ত হয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। তবে এ ঘটনা নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পর অনেক মানবপাচারকারি গ্রেপ্তার হলেও থামছে না মানবপাচার।