আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা কি কঠিন

এসএম জাহাঙ্গীর আলম

আইনের মানের ওপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ। যেমন- তথ্য অধিকার আইন। রাষ্ট্রের ভিত্তি হলো সংবিধান। এটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। অন্য যে কোন আইন এ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে তা বাতিল হয়ে যায়। এ আইন দ্বারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ, বণ্টন ও প্রয়োগকারী নির্ধারণ করা হয়। এটি আবার দুই ধরনের হতে পারে, লিখিত আইন ও অলিখিত আইন। যেমন- বাংলাদেশের সংবিধান। বেসরকারি আইন এ আইন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রণীত নয় তবে সামাজিকভাবে স্বীকৃত হয়। এ আইন দ্বারা ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক রক্ষা এবং সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা হয়। যেমন কোন সংঘের আইন, চুক্তি ও দলিলসংক্রান্ত আইন।

আন্তর্জাতিক পরিম-লে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ ও বজায় রাখার জন্য যে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয় তাকে আন্তর্জাতিক আইন বলে। আদর্শ রাষ্ট্র সর্বদা আইনের শাসন নিশ্চিত করে। অর্থাৎ আইন অপরিহার্য। এই আইন এক দিনে বা একটি উৎস থেকে সৃষ্টি হয়নি। মানব সভ্যতার আদিম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত নানা সূত্র থেকে আইনের সৃষ্টি হয়েছে। তাই আইনের সৃষ্টির বিভিন্ন উৎস রয়েছে। আইনের স¦ীকৃত উৎসগুলো নিম্নœরূপপ্রথা আইনের অন্যতম উৎস হলো প্রথা। প্রাচীনকাল থেকে যেসব আচার ব্যবহার রীতিনীতি ও অভ্যাস সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত, সমর্থিত ও পালিত হচ্ছে তাই প্রথা। সমাজে অনেক ধরনের প্রথাই প্রচলিত থাকে। তার মধ্যে যেসব প্রথা যুক্তিসিদ্ধ ও জনহিতকর তা আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। আবার যেসব প্রথা সমাজ ও জনগণের জন্য অকল্যাণকর তা আইন করে বন্ধ করা হয়। গ্রেট ব্রিটেনে অনেক প্রথা সাংবিধানিক আইন হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্র সাধারণত জন কল্যাণে নিয়োজিত থাকে। ফলে সময়ের প্রেক্ষিতে মানুষের নানাবিধ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের গুরু দায়িত্ব। তাই আইন সভার সদস্যগণ জন কল্যাণে এবং নাগরিক অধিকার রক্ষার্থে নতুন নতুন অনেক বিষয়কে আইনে রূপান্তর করার জন্য তা বিল আকারে আইনসভায় উত্থাপন করে থাকে। বিষয়টি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত প্রাপ্ত হয়, তবে তা আইনে পরিণত হয়। সংবিধান এটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন।

সাধারণত নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদে সংবিধান অনুমোদন করেন। সংবিধান রাষ্ট্রের মূল দলিল। রাষ্ট্র পরিচালনা ও নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য-সংক্রান্ত নানা বিষয় সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ থাকে। এ নির্দেশনা প্রয়োগের সুবিধার্থে সংসদ সদস্যগণ- অন্যান্য আইন প্রণয়ন করে। অর্থাৎ সংবিধান আইনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বিচারকের রায় আইন তৈরি করা নেই, মানব জীবনের এমন কোন ঘটনা নিয়ে কোন নাগরিক যদি আদালতের দারস্থ হয় তবে বিচারক তার নিজস্ব প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দিয়ে রায় দিয়ে থাকে। এই রায়টি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হলে, রাষ্ট্র সেই রায়কে আইনে পরিণত করে। অর্থাৎ বিচারকের রায়ও আইনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ন্যায়বিচার বিচারকগণ সাধারণত দেশে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকেন। কিন্তু কিছু অবশ্যম্ভাবী সীমাবদ্ধতার কারণে এই আইন সব সময় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে বিচারকগণ তাদের বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে ন্যায়বিচার করে থাকেন। তাদের এই ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত পরবর্তী সময়ে আইন হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

উপর্যুক্ত উৎস ছাড়াও আইনের আরও কয়েকটি উৎস রয়েছে। যেমন বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা, প্রশাসনিক ঘোষণা, সংবিধান, ন্যায়বোধ, জনমত ইত্যাদি। এর প্রয়োগ ক্ষেত্র যেমন ভিন্ন ভিন্ন তেমনি আইনের সৃষ্টিও বিভিন্ন উৎস থেকে। প্রথা, ধর্ম, সংবিধান, আইনসভা, বিখ্যাত গ্রন্থ ইত্যাদি আইনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। উৎস যাই হোক না কেন আইনের স্বীকৃতি লাভের পর তা স্থান-কাল পাত্র নির্বিশেষে তা সবার ওপর সমানভাবে প্রয়োগ করা হয়।

আইনের শাসনের অর্থ হচ্ছে আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিকের সমতা অর্থাৎ আইন সব নাগরিকের জন্য সমানভাবে প্রয়োগ হবে। নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজ থেকে অন্যায়, বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য দূর হয়। ফলে সমাজে স্থিতিশীলতা আসে এবং শান্তির বিরাজ করে। নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য অধিকার শুধু আইনের শাসনের মাধ্যমে বলবৎ করা যায়। আইনের শাসন না থাকলে সবল-দুর্বল, ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান প্রকট হতে থাকে। সমাজ থেকে মায়া, মমতা, সহমর্মিতা, ন্যায়বিচার, নীতি-আদর্শ হ্রাস পায়।

অতএব আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আইনের শাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। আইনের শাসন নিশ্চিত করার উপায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শাসক ও শাসিতের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। অন্যদিকে আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য শাসক ও শাসিতের উভয়েরই সমান ভূমিকা রয়েছে। যেমন- রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য শাসক নিম্নœরূপ ভূমিকা রাখতে পারে। যথাযথভাবে আইনের প্রয়োগ। যুক্তিসংগত ও যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন। বিদ্যমান আইন সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতন করা। যথাসময়ে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা। আইনের শাসন নিশ্চিত করণে নাগরিক কর্তব্য আইন রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত ও বাস্তবায়িত হলেও নাগরিকদেরও কর্তব্য রয়েছে। প্রত্যেক নাগরিকের বিবেক আইনের মতো কাজ করে।

তাই নাগরিকগণ যদি বিদ্যমান আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে কাজ করে তবেই শুধু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যেমন রাস্তায় কোন চুরি ছিনতাই হতে দেখলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি তার কাছে কোন তথ্য জানতে চায়, তবে তা জানিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাও নাগরিক কর্তব্য। সাক্ষী না দিয়ে যদি কেউ এড়িয়ে চলে তাহলে আইনের এত বেশি অবমাননা হবে যে কোন আইনেই নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। তাই যার যার অবস্থান থেকে আইন মান্য করে চললে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেমন জরুরি তেমনি আইন মান্য করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক আইনেই কিছু নির্দেশনা এবং তা অমান্য বা ভঙ্গ করলে শাস্তির ব্যবস্থা থাকে। তারপরও দেখা যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন ভঙ্গ হয়। তবে অধিকাংশ জনগণই আইন মেনে চলে এবং আইনকে শ্রদ্ধা করে।

আইন ছাড়া রাষ্ট্র ও সমাজ অচল। যৌক্তিক যুগোপযোগী আইন সবার ওপর প্রয়োগ করা সহজ। আইনের সমপ্রয়োগের ওপর রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে সুশাসনের প্রতিষ্ঠা করেছে। ফলে মৌলিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত হচ্ছে। আমি যে কথাটি বলতে চাই, তাহলো আমরা সাধারণ নাগরিকরা আইনের প্রতি কতটুকু শ্রদ্ধাশীল? স্বাভাবিক কারণেই এই প্রশ্নটি এসে যায়। অনেকে বলে থাকেন যে “আইনের রক্ষরাই আইনের ভক্ষক’। তাহয়তো ঠিক। কিন্তু আমরা আইন মেনে চলি? আইন মেনে চললেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠান সম্ভব।

[লেখক : পরিচালক,

বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড]

মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই ২০২২ , ০৪ শ্রাবণ ১৪২৯ ২০ জিলহজ ১৪৪৩

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা কি কঠিন

এসএম জাহাঙ্গীর আলম

আইনের মানের ওপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ। যেমন- তথ্য অধিকার আইন। রাষ্ট্রের ভিত্তি হলো সংবিধান। এটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। অন্য যে কোন আইন এ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে তা বাতিল হয়ে যায়। এ আইন দ্বারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ, বণ্টন ও প্রয়োগকারী নির্ধারণ করা হয়। এটি আবার দুই ধরনের হতে পারে, লিখিত আইন ও অলিখিত আইন। যেমন- বাংলাদেশের সংবিধান। বেসরকারি আইন এ আইন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রণীত নয় তবে সামাজিকভাবে স্বীকৃত হয়। এ আইন দ্বারা ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক রক্ষা এবং সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা হয়। যেমন কোন সংঘের আইন, চুক্তি ও দলিলসংক্রান্ত আইন।

আন্তর্জাতিক পরিম-লে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ ও বজায় রাখার জন্য যে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয় তাকে আন্তর্জাতিক আইন বলে। আদর্শ রাষ্ট্র সর্বদা আইনের শাসন নিশ্চিত করে। অর্থাৎ আইন অপরিহার্য। এই আইন এক দিনে বা একটি উৎস থেকে সৃষ্টি হয়নি। মানব সভ্যতার আদিম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত নানা সূত্র থেকে আইনের সৃষ্টি হয়েছে। তাই আইনের সৃষ্টির বিভিন্ন উৎস রয়েছে। আইনের স¦ীকৃত উৎসগুলো নিম্নœরূপপ্রথা আইনের অন্যতম উৎস হলো প্রথা। প্রাচীনকাল থেকে যেসব আচার ব্যবহার রীতিনীতি ও অভ্যাস সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত, সমর্থিত ও পালিত হচ্ছে তাই প্রথা। সমাজে অনেক ধরনের প্রথাই প্রচলিত থাকে। তার মধ্যে যেসব প্রথা যুক্তিসিদ্ধ ও জনহিতকর তা আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। আবার যেসব প্রথা সমাজ ও জনগণের জন্য অকল্যাণকর তা আইন করে বন্ধ করা হয়। গ্রেট ব্রিটেনে অনেক প্রথা সাংবিধানিক আইন হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্র সাধারণত জন কল্যাণে নিয়োজিত থাকে। ফলে সময়ের প্রেক্ষিতে মানুষের নানাবিধ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের গুরু দায়িত্ব। তাই আইন সভার সদস্যগণ জন কল্যাণে এবং নাগরিক অধিকার রক্ষার্থে নতুন নতুন অনেক বিষয়কে আইনে রূপান্তর করার জন্য তা বিল আকারে আইনসভায় উত্থাপন করে থাকে। বিষয়টি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত প্রাপ্ত হয়, তবে তা আইনে পরিণত হয়। সংবিধান এটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন।

সাধারণত নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদে সংবিধান অনুমোদন করেন। সংবিধান রাষ্ট্রের মূল দলিল। রাষ্ট্র পরিচালনা ও নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য-সংক্রান্ত নানা বিষয় সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ থাকে। এ নির্দেশনা প্রয়োগের সুবিধার্থে সংসদ সদস্যগণ- অন্যান্য আইন প্রণয়ন করে। অর্থাৎ সংবিধান আইনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বিচারকের রায় আইন তৈরি করা নেই, মানব জীবনের এমন কোন ঘটনা নিয়ে কোন নাগরিক যদি আদালতের দারস্থ হয় তবে বিচারক তার নিজস্ব প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দিয়ে রায় দিয়ে থাকে। এই রায়টি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হলে, রাষ্ট্র সেই রায়কে আইনে পরিণত করে। অর্থাৎ বিচারকের রায়ও আইনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ন্যায়বিচার বিচারকগণ সাধারণত দেশে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকেন। কিন্তু কিছু অবশ্যম্ভাবী সীমাবদ্ধতার কারণে এই আইন সব সময় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে বিচারকগণ তাদের বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে ন্যায়বিচার করে থাকেন। তাদের এই ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত পরবর্তী সময়ে আইন হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

উপর্যুক্ত উৎস ছাড়াও আইনের আরও কয়েকটি উৎস রয়েছে। যেমন বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা, প্রশাসনিক ঘোষণা, সংবিধান, ন্যায়বোধ, জনমত ইত্যাদি। এর প্রয়োগ ক্ষেত্র যেমন ভিন্ন ভিন্ন তেমনি আইনের সৃষ্টিও বিভিন্ন উৎস থেকে। প্রথা, ধর্ম, সংবিধান, আইনসভা, বিখ্যাত গ্রন্থ ইত্যাদি আইনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। উৎস যাই হোক না কেন আইনের স্বীকৃতি লাভের পর তা স্থান-কাল পাত্র নির্বিশেষে তা সবার ওপর সমানভাবে প্রয়োগ করা হয়।

আইনের শাসনের অর্থ হচ্ছে আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিকের সমতা অর্থাৎ আইন সব নাগরিকের জন্য সমানভাবে প্রয়োগ হবে। নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজ থেকে অন্যায়, বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য দূর হয়। ফলে সমাজে স্থিতিশীলতা আসে এবং শান্তির বিরাজ করে। নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য অধিকার শুধু আইনের শাসনের মাধ্যমে বলবৎ করা যায়। আইনের শাসন না থাকলে সবল-দুর্বল, ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান প্রকট হতে থাকে। সমাজ থেকে মায়া, মমতা, সহমর্মিতা, ন্যায়বিচার, নীতি-আদর্শ হ্রাস পায়।

অতএব আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আইনের শাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। আইনের শাসন নিশ্চিত করার উপায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শাসক ও শাসিতের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। অন্যদিকে আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য শাসক ও শাসিতের উভয়েরই সমান ভূমিকা রয়েছে। যেমন- রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য শাসক নিম্নœরূপ ভূমিকা রাখতে পারে। যথাযথভাবে আইনের প্রয়োগ। যুক্তিসংগত ও যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন। বিদ্যমান আইন সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতন করা। যথাসময়ে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা। আইনের শাসন নিশ্চিত করণে নাগরিক কর্তব্য আইন রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত ও বাস্তবায়িত হলেও নাগরিকদেরও কর্তব্য রয়েছে। প্রত্যেক নাগরিকের বিবেক আইনের মতো কাজ করে।

তাই নাগরিকগণ যদি বিদ্যমান আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে কাজ করে তবেই শুধু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যেমন রাস্তায় কোন চুরি ছিনতাই হতে দেখলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি তার কাছে কোন তথ্য জানতে চায়, তবে তা জানিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাও নাগরিক কর্তব্য। সাক্ষী না দিয়ে যদি কেউ এড়িয়ে চলে তাহলে আইনের এত বেশি অবমাননা হবে যে কোন আইনেই নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। তাই যার যার অবস্থান থেকে আইন মান্য করে চললে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেমন জরুরি তেমনি আইন মান্য করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক আইনেই কিছু নির্দেশনা এবং তা অমান্য বা ভঙ্গ করলে শাস্তির ব্যবস্থা থাকে। তারপরও দেখা যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন ভঙ্গ হয়। তবে অধিকাংশ জনগণই আইন মেনে চলে এবং আইনকে শ্রদ্ধা করে।

আইন ছাড়া রাষ্ট্র ও সমাজ অচল। যৌক্তিক যুগোপযোগী আইন সবার ওপর প্রয়োগ করা সহজ। আইনের সমপ্রয়োগের ওপর রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে সুশাসনের প্রতিষ্ঠা করেছে। ফলে মৌলিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত হচ্ছে। আমি যে কথাটি বলতে চাই, তাহলো আমরা সাধারণ নাগরিকরা আইনের প্রতি কতটুকু শ্রদ্ধাশীল? স্বাভাবিক কারণেই এই প্রশ্নটি এসে যায়। অনেকে বলে থাকেন যে “আইনের রক্ষরাই আইনের ভক্ষক’। তাহয়তো ঠিক। কিন্তু আমরা আইন মেনে চলি? আইন মেনে চললেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠান সম্ভব।

[লেখক : পরিচালক,

বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড]