সরকারি জায়গায় মার্কেট নির্মাণ রহস্যে ঘেরা ভূমি অফিসের কর্তারা

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার গোয়ালি মান্দ্রার সড়ক ও জনপদের জায়গা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে তিনতলা মার্কেট নির্মাণ চলছে। ইতিমধ্যে প্রথম তলার সাদের ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। লৌহজং উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি মো: ইলিয়াস সিকদার বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং সাংবাদিকদের জানান, দুইজন সার্ভেয়ার পাঠিয়েছি তারা জায়গা মেপে জানানোর কথা। উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের সহযোগিতায় সরকারি জায়গায় ভবন নির্মাণ হওয়ায় মৌছা মান্দ্রা বাজার ও আশ পাশের সাধারণ জনগণের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় হলদিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা আনোয়ারের সঙ্গে। তিনিও বিষয়টি এড়িয়েন যান তবে নক্সা দেখে তিনি ৩৯১ দাগ নাম্বারটি খাস খতিয়ানের বলে জানান। উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার সাইফুল ও নজরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেন। এই দুইজন সার্ভেয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে মেপে সরকারি জায়গা বের করার কথা থাকলেও তারা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ভবন তৈরীতে সহযোগিতা করেছেন বলেও অভিযোগ করেছে।

পরবর্তীতে তিনি বলেন, একজন লোক এসে তাকে জানিয়েছেন এই জায়গাটি মালিকানাধীন। সার্ভেয়ার দিয়ে মেপে দেখেন যদি সরকারি জায়গা হয় তবে আমরা আর কাজ করবো না। কিন্তু ভূমি অফিসার ঐ ব্যক্তির নাম ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার কিছুই রাখেন নি। উল্টো যে অবৈধভাবে সরকারি জায়গায় ভবন নির্মাণ করতেছে তাদের মোবাইল নাম্বার ও ঠিকানা চেয়েছেন।

লৌহজং উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি মো: ইলিয়াস সিকদার আরো জানান, আমি নিজে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়ে আসছি। পরবর্তীতে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কারণে ঐ দিকে আর সময় দিতে পারিনি। সেই সুযোগে হয়তবা বাকী কাজ করে ফেলেছে। যারা বিল্ডিং তৈরী করতেছে তাদেরকে ওখানে পাওয়া যায় না। কে বিল্ডিং তৈরী করছে তাও তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

ফাউন্ডেশন নিয়ে একতলা ছাদ হয়ে যায়। কেউ তা খবর রাখেন না। আবার খবর রাখলেও এর কোন সঠিক উত্তর মিলছে না। মৌছা মান্দ্রা মৌজার , আর এস, ১ নং খাস খতিয়ানের আর এস দাগ ৩৯১। যাহা খাস খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত। প্রায় ১৫ দিন বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করলে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

একদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত মাসের ২৫ তারিখে দেশের অন্যতম স্বপ্ন পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে প্রসাশন নিয়ে ব্যবস্থা, অন্যদিকে সরকারী ভূমি দখলে নিয়ে জ্বীনের বাদশাকেও হার মানায়, রাতের আধারে সরকারী জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ। কেউ মুখ খুলে বলছে না এই সড়কের পার্শ্বে কার এই ভবন? এমনও হতে পারে এই ভবন নির্মাণের পরে অধিগ্রহণভূক্ত দেখিয়ে সরকারের ফান্ড থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ারও পায়তারা হতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা বলছেন এই কাজের সঙ্গে বড় বড় রাঘোব বোয়াল রয়েছে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, শ্রীনগর থানার, কুকুটিয়া ইউনিয়নের হাড়িয়া মুন্সী গ্রামের মৃত্য আঃ হাকিম বেপারীর পুত্র ফরহাদ বেপারী। ফরহাদ বেপারী নিজে কাজের সামনে না এসে লোক দিয়ে আড়ালে বসেই ভবন নির্মাণ করে যাচ্ছেন। দূর থেকে কাজের তদারকি করছেন তিনি।

এ বিষয় লৌহজং উপজেলার সার্ভেয়ার নজরুলকে সহকারি কমিশনার ভূমি মো: ইলিয়াস সিকদার ডেকে আনলে তিনি সাংবাদিকদের সামনে বলেন, আমি যাইনি সার্ভেয়ার সাইফুল গিয়েছেন। সার্ভেয়ার নজরুল ও সাইফুল দুইজনই গিয়েছেন ঐ ভূতের বিল্ডিং পরিদর্শনে।

এ বিষয়ে স্থানিয় ইউপি সদস্য সোহেল মোবাইল ফোনে জানান, উপজেলা সার্ভেয়ার মাপঝোপ করেছে। আমাকেও স্থানিয় জনপ্রতিনিধি হিসেবেও ডাকতে পারতেন, ডাকে নাই। তবে এই ভবন বিষয় সার্ভেয়ার সাইফুলই সব বলতে পারবেন। কে এই ভবনের মালিক? তাও সাইফুলই ভালো জানবেন। সাইফুল নিজেই আসেন এবং সার্ভেয়ার হিসেবে তদারকি করছেন বলে জানানা ইউপি সদস্য সোহেল। তিনি আরো বলেন এই সরকারী ভুমির বিষয় আমার থেকে সাইফুলকে ফোন দিলেই তিনি আরো বেশী বলতে পারবেন, যদি অনুসন্ধান করেন।

সহকারি কমিশনার ভূমি বলেন, আমি কাজের বিষয় অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। কেউ বলতে পারেন না এই ভবন কে উঠাচ্ছে? এক সময় তিনি স্বীকার করেন এই ভবনের অংশ খাস খতিয়ান অন্তর্ভুক্ত।

লৌহজং উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার সাইফুল জানান, আপনারা যা পারেন লিখেন। এ বিষয়ে ভূমি অফিসে গিয়ে বক্তব্য নেন। অন্যান্য সাংবাদিকগণ ফোন দিলে তিনি জানান, বিষয়টি ঈদের আগেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছি। সম্পূর্ণ জায়গাটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নরেন্দ্র সংকর চক্রবর্তী জানান, বিষয়টি আমাদের নলেজে আসছে। দ্রুত জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত জানাবো। তার মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা কিভাবে উদ্ধার করা যায় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রকিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি ঈদের পূর্বেই জেনেছি। এ সপ্তাহের মধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধ ভবন উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২ , ০৫ শ্রাবণ ১৪২৯ ২১ জিলহজ ১৪৪৩

সরকারি জায়গায় মার্কেট নির্মাণ রহস্যে ঘেরা ভূমি অফিসের কর্তারা

প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ

image

মুন্সীগঞ্জ : সরকারি জায়গায় নির্মাণাধীন ব্যক্তিমালিকানাধীন মার্কেট -সংবাদ

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার গোয়ালি মান্দ্রার সড়ক ও জনপদের জায়গা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে তিনতলা মার্কেট নির্মাণ চলছে। ইতিমধ্যে প্রথম তলার সাদের ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। লৌহজং উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি মো: ইলিয়াস সিকদার বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং সাংবাদিকদের জানান, দুইজন সার্ভেয়ার পাঠিয়েছি তারা জায়গা মেপে জানানোর কথা। উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের সহযোগিতায় সরকারি জায়গায় ভবন নির্মাণ হওয়ায় মৌছা মান্দ্রা বাজার ও আশ পাশের সাধারণ জনগণের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় হলদিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা আনোয়ারের সঙ্গে। তিনিও বিষয়টি এড়িয়েন যান তবে নক্সা দেখে তিনি ৩৯১ দাগ নাম্বারটি খাস খতিয়ানের বলে জানান। উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার সাইফুল ও নজরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেন। এই দুইজন সার্ভেয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে মেপে সরকারি জায়গা বের করার কথা থাকলেও তারা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ভবন তৈরীতে সহযোগিতা করেছেন বলেও অভিযোগ করেছে।

পরবর্তীতে তিনি বলেন, একজন লোক এসে তাকে জানিয়েছেন এই জায়গাটি মালিকানাধীন। সার্ভেয়ার দিয়ে মেপে দেখেন যদি সরকারি জায়গা হয় তবে আমরা আর কাজ করবো না। কিন্তু ভূমি অফিসার ঐ ব্যক্তির নাম ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার কিছুই রাখেন নি। উল্টো যে অবৈধভাবে সরকারি জায়গায় ভবন নির্মাণ করতেছে তাদের মোবাইল নাম্বার ও ঠিকানা চেয়েছেন।

লৌহজং উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি মো: ইলিয়াস সিকদার আরো জানান, আমি নিজে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়ে আসছি। পরবর্তীতে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কারণে ঐ দিকে আর সময় দিতে পারিনি। সেই সুযোগে হয়তবা বাকী কাজ করে ফেলেছে। যারা বিল্ডিং তৈরী করতেছে তাদেরকে ওখানে পাওয়া যায় না। কে বিল্ডিং তৈরী করছে তাও তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

ফাউন্ডেশন নিয়ে একতলা ছাদ হয়ে যায়। কেউ তা খবর রাখেন না। আবার খবর রাখলেও এর কোন সঠিক উত্তর মিলছে না। মৌছা মান্দ্রা মৌজার , আর এস, ১ নং খাস খতিয়ানের আর এস দাগ ৩৯১। যাহা খাস খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত। প্রায় ১৫ দিন বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করলে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

একদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত মাসের ২৫ তারিখে দেশের অন্যতম স্বপ্ন পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে প্রসাশন নিয়ে ব্যবস্থা, অন্যদিকে সরকারী ভূমি দখলে নিয়ে জ্বীনের বাদশাকেও হার মানায়, রাতের আধারে সরকারী জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ। কেউ মুখ খুলে বলছে না এই সড়কের পার্শ্বে কার এই ভবন? এমনও হতে পারে এই ভবন নির্মাণের পরে অধিগ্রহণভূক্ত দেখিয়ে সরকারের ফান্ড থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ারও পায়তারা হতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা বলছেন এই কাজের সঙ্গে বড় বড় রাঘোব বোয়াল রয়েছে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, শ্রীনগর থানার, কুকুটিয়া ইউনিয়নের হাড়িয়া মুন্সী গ্রামের মৃত্য আঃ হাকিম বেপারীর পুত্র ফরহাদ বেপারী। ফরহাদ বেপারী নিজে কাজের সামনে না এসে লোক দিয়ে আড়ালে বসেই ভবন নির্মাণ করে যাচ্ছেন। দূর থেকে কাজের তদারকি করছেন তিনি।

এ বিষয় লৌহজং উপজেলার সার্ভেয়ার নজরুলকে সহকারি কমিশনার ভূমি মো: ইলিয়াস সিকদার ডেকে আনলে তিনি সাংবাদিকদের সামনে বলেন, আমি যাইনি সার্ভেয়ার সাইফুল গিয়েছেন। সার্ভেয়ার নজরুল ও সাইফুল দুইজনই গিয়েছেন ঐ ভূতের বিল্ডিং পরিদর্শনে।

এ বিষয়ে স্থানিয় ইউপি সদস্য সোহেল মোবাইল ফোনে জানান, উপজেলা সার্ভেয়ার মাপঝোপ করেছে। আমাকেও স্থানিয় জনপ্রতিনিধি হিসেবেও ডাকতে পারতেন, ডাকে নাই। তবে এই ভবন বিষয় সার্ভেয়ার সাইফুলই সব বলতে পারবেন। কে এই ভবনের মালিক? তাও সাইফুলই ভালো জানবেন। সাইফুল নিজেই আসেন এবং সার্ভেয়ার হিসেবে তদারকি করছেন বলে জানানা ইউপি সদস্য সোহেল। তিনি আরো বলেন এই সরকারী ভুমির বিষয় আমার থেকে সাইফুলকে ফোন দিলেই তিনি আরো বেশী বলতে পারবেন, যদি অনুসন্ধান করেন।

সহকারি কমিশনার ভূমি বলেন, আমি কাজের বিষয় অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। কেউ বলতে পারেন না এই ভবন কে উঠাচ্ছে? এক সময় তিনি স্বীকার করেন এই ভবনের অংশ খাস খতিয়ান অন্তর্ভুক্ত।

লৌহজং উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার সাইফুল জানান, আপনারা যা পারেন লিখেন। এ বিষয়ে ভূমি অফিসে গিয়ে বক্তব্য নেন। অন্যান্য সাংবাদিকগণ ফোন দিলে তিনি জানান, বিষয়টি ঈদের আগেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছি। সম্পূর্ণ জায়গাটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নরেন্দ্র সংকর চক্রবর্তী জানান, বিষয়টি আমাদের নলেজে আসছে। দ্রুত জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত জানাবো। তার মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা কিভাবে উদ্ধার করা যায় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রকিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি ঈদের পূর্বেই জেনেছি। এ সপ্তাহের মধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধ ভবন উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।