সেই শিশুকে আপাতত ৫ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ আদালতের

ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় মায়ের পেট ফেটে জন্ম নেয়া শিশুকে তাৎক্ষণিক এককালীন পাঁচ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে (বিআরটিএ) দুর্ঘটনাকবলিতদের জন্য গঠিত কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানকে ১৫ দিনের মধ্যে এই অর্থ শিশুর অভিভাবককে দিতে বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে, ওই শিশুর কল্যাণে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। আগামী ৩ মাসের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত। ওই শিশুর পরিবারকে কেন যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজ কল্যাণ সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ট্রাক মালিক মঞ্জুরুল ইসলামকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গতকাল হাইকোর্টের বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে গতকাল রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহাসিব হোসেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দীন।

আদেশের বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ মাহাসবি হোসেন বলেন, ‘১৫ দিনের ওই নবজাতকের আইনগত অভিভাবকের কাছে ৫ লাখ টাকা দিতে সড়ক পরিবহন আইনে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সমাজ কল্যাণ সচিব এই শিশুর দেখভালের জন্য একটি কমিটি গঠন করবেন।’

ওই কমিটি শিশুটির কল্যাণে কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা ৩ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিয়ে উচ্চ আদালতকে জানাবে। রুলে ওই শিশুর জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

ট্রাস্টি বোর্ড সম্পর্কে সড়ক পরিবহন আইনের ৫২ ধারায় বলা হয়েছে, কোন মোটরযান হইতে উদ্ভূত দুর্ঘটনার ফলে কোন ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা আঘাতপ্রাপ্ত হইয়া মৃত্যুবরণ করিলে, উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা, ক্ষেত্রমত, তাহার উত্তরাধিকারীদের পক্ষে মনোনীত ব্যক্তি ধারা ৫৩ এর অধীন গঠিত আর্থিক সহায়তা তহবিল হইতে ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, চিকিৎসার খরচ প্রাপ্য হইবেন।

এর আগে গত সোমবার জনস্বার্থে আইনজীবী কানিজ ফাতেমা তুনাজ্জিনার পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহাসিব হোসেন। রিটে দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ট্রাক মালিকের কাছ থেকে কী কী সহযোগিতা করা যায় তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

এতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে (বিআরটিএ) বিবাদী করা হয়েছে।

এর আগে গত রোববার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মাহাসিব হোসেন বিষয়টি হাইকোর্টে উপস্থাপন করেছিলেন। ওইদিন বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের বেঞ্চে বিষয়টি উত্থাপিত করা হয়।

গত শনিবার দুপুরের দিকে উপজেলার রাইমনি গ্রামের ফকির বাড়ির মোস্তাফিজুর রহমান বাবলুর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০) তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রতœা বেগম (৩০) ও মেয়ে সানজিদাকে (৬) নিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে ত্রিশালে আসেন।

পৌর শহরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে রাস্তা পারাপারের সময় ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই জাহাঙ্গীর আলম ও স্ত্রী রতœা বেগম মারা যান। মেয়ে সানজিদা আক্তার গুরুতর আহত হয়। এ সময় ট্রাকচাপায় রতœা বেগমের পেট ফেটে কন্যাশিশুর জন্ম হয়।

পরে আহত সানজিদা ও নবজাতককে নিয়ে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সানজিদাকে মৃত ঘোষণা করে নবজাতক শিশুটিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।

তবে যানজটের কারণে নবজাতককে চুরখাই কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে ময়মনসিংহ মহনগরীর চরপাড়া এলাকায় লাবিব হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই নবজাতক বর্তমানে ওই হাসপাতালেই আছে।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘শিশুটি জন্ডিসে আক্রান্ত। এজন্য তাকে ফটোথেরাপি দেয়া হচ্ছে। তার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর আমরা রাখছি।’

রতœা আক্তার রহিমার নবজাতক ও অন্য দুই সন্তানের সহায়তা হিসাব নম্বর সোনালী ব্যাংকের স৩৩২৪১০১০২৮৭২৮, ব্যাংক হিসাবটি ইউএনও এবং নবজাতক শিশুর দাদা ও দাদি পরিচালনা করবেন বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে ঘাতক ট্রাকচালক রাজু আহমেদ শিপনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত সোমবার রাতে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক সিনিয়র এএসপি আ ন ম ইমরান খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২ , ০৫ শ্রাবণ ১৪২৯ ২১ জিলহজ ১৪৪৩

সেই শিশুকে আপাতত ৫ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ আদালতের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় মায়ের পেট ফেটে জন্ম নেয়া শিশুকে তাৎক্ষণিক এককালীন পাঁচ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে (বিআরটিএ) দুর্ঘটনাকবলিতদের জন্য গঠিত কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানকে ১৫ দিনের মধ্যে এই অর্থ শিশুর অভিভাবককে দিতে বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে, ওই শিশুর কল্যাণে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। আগামী ৩ মাসের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত। ওই শিশুর পরিবারকে কেন যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজ কল্যাণ সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ট্রাক মালিক মঞ্জুরুল ইসলামকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গতকাল হাইকোর্টের বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে গতকাল রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহাসিব হোসেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দীন।

আদেশের বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ মাহাসবি হোসেন বলেন, ‘১৫ দিনের ওই নবজাতকের আইনগত অভিভাবকের কাছে ৫ লাখ টাকা দিতে সড়ক পরিবহন আইনে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সমাজ কল্যাণ সচিব এই শিশুর দেখভালের জন্য একটি কমিটি গঠন করবেন।’

ওই কমিটি শিশুটির কল্যাণে কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা ৩ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিয়ে উচ্চ আদালতকে জানাবে। রুলে ওই শিশুর জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

ট্রাস্টি বোর্ড সম্পর্কে সড়ক পরিবহন আইনের ৫২ ধারায় বলা হয়েছে, কোন মোটরযান হইতে উদ্ভূত দুর্ঘটনার ফলে কোন ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা আঘাতপ্রাপ্ত হইয়া মৃত্যুবরণ করিলে, উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা, ক্ষেত্রমত, তাহার উত্তরাধিকারীদের পক্ষে মনোনীত ব্যক্তি ধারা ৫৩ এর অধীন গঠিত আর্থিক সহায়তা তহবিল হইতে ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, চিকিৎসার খরচ প্রাপ্য হইবেন।

এর আগে গত সোমবার জনস্বার্থে আইনজীবী কানিজ ফাতেমা তুনাজ্জিনার পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহাসিব হোসেন। রিটে দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ট্রাক মালিকের কাছ থেকে কী কী সহযোগিতা করা যায় তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

এতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে (বিআরটিএ) বিবাদী করা হয়েছে।

এর আগে গত রোববার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মাহাসিব হোসেন বিষয়টি হাইকোর্টে উপস্থাপন করেছিলেন। ওইদিন বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের বেঞ্চে বিষয়টি উত্থাপিত করা হয়।

গত শনিবার দুপুরের দিকে উপজেলার রাইমনি গ্রামের ফকির বাড়ির মোস্তাফিজুর রহমান বাবলুর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০) তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রতœা বেগম (৩০) ও মেয়ে সানজিদাকে (৬) নিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে ত্রিশালে আসেন।

পৌর শহরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে রাস্তা পারাপারের সময় ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই জাহাঙ্গীর আলম ও স্ত্রী রতœা বেগম মারা যান। মেয়ে সানজিদা আক্তার গুরুতর আহত হয়। এ সময় ট্রাকচাপায় রতœা বেগমের পেট ফেটে কন্যাশিশুর জন্ম হয়।

পরে আহত সানজিদা ও নবজাতককে নিয়ে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সানজিদাকে মৃত ঘোষণা করে নবজাতক শিশুটিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।

তবে যানজটের কারণে নবজাতককে চুরখাই কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে ময়মনসিংহ মহনগরীর চরপাড়া এলাকায় লাবিব হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই নবজাতক বর্তমানে ওই হাসপাতালেই আছে।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘শিশুটি জন্ডিসে আক্রান্ত। এজন্য তাকে ফটোথেরাপি দেয়া হচ্ছে। তার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর আমরা রাখছি।’

রতœা আক্তার রহিমার নবজাতক ও অন্য দুই সন্তানের সহায়তা হিসাব নম্বর সোনালী ব্যাংকের স৩৩২৪১০১০২৮৭২৮, ব্যাংক হিসাবটি ইউএনও এবং নবজাতক শিশুর দাদা ও দাদি পরিচালনা করবেন বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে ঘাতক ট্রাকচালক রাজু আহমেদ শিপনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত সোমবার রাতে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক সিনিয়র এএসপি আ ন ম ইমরান খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।