গণমাধ্যমকে দোষ দিয়ে ক্ষমা চাইলেন সিইসি

বিএনপি আজ সংলাপে যাচ্ছে না

কেউ তলোয়ার নিয়ে এলে প্রতিপক্ষকে রাইফেল নিয়ে দাঁড়ানোর কথা কৌতুক করে বলা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তার অভিযোগ, গণমাধ্যম ‘বুঝে, না বুঝে’ ওই বক্তব্য প্রচার করে তার মর্যদা ক্ষুণœ করেছে। তবে সিইসি এ বক্তব্যের জন্য অনুতপ্ত। এ জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন।

হতাশা প্রকাশ করে সিইসি বলেন, তার মা-বাবা পত্রিকা পড়তেন। বেঁচে থাকলে হয়তো পেপার পড়ে বলতেন, ‘বাবু, এত খারাপ পরামর্শ দিলে কেন?’ তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠভাবে বলতে পারত, সিইসি হিউমার করে এমন কথা বলেছেন।’ গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলপ করছে ইসি। সংলাপের প্রথম দিনেই ১৭ জুলাই সকালে এক বক্তব্য দিয়ে বিকেলে তা পরিবর্তন করেন সিইসি। ওইদিন সকালে আমন্ত্রিত প্রথম দল হিসেবে ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেয় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (এনডিএম)। নেতাদের সঙ্গে আলোচনাকালে বক্তব্যে ভোটের মাঠে ‘তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল’ নিয়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন সিইসি।

সিইসির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আইনে আমাদের শটগান নিয়ে দাঁড়ানো পারমিট করে না।’ বিকেলে বাংলাদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে সংলাপে বক্তব্য পরিবর্তন করেন সিইসি। ‘তলোয়ার-রাইফেল’ নিয়ে যুদ্ধ না করে ভোটের মাঠে ‘জনসমর্থন ও ব্যালট’ যুদ্ধের কথা বলেন তিনি।

গতকাল ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনীর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ইসির সংলাপে অংশ নেয়। সংলাপে বক্তব্যের সময় ‘তলোয়ার নিয়ে এলে আপনারা রাইফেল নিয়ে দাঁড়াবেন’; সিইসিকে এ ধরনের বিতর্কিত বক্তব্য না দেয়ার পরামর্শ দেয় দলটি। সংলাপে সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এর জবাব দেন।

এনডিএমের সঙ্গে সংলাপে এ ধরনের একটি বক্তব্য আসার বিষয়টি উল্লেখ করে গতকাল সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমার এক ভাই বলেছেন, একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। পরশু আমি বলেছিলাম, কেউ তলোয়ার নিয়ে এলে আপনারা রাইফেল নিয়ে দাঁড়াবেন। এটা আপনাদের বুঝতে হবে, একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কথা কখনও মিন করে বলতে পারেন না। আমি হয়তো অল্প শিক্ষিত। অল্প শিক্ষিত হলেও তারা এ ধরনের কথা বলতে পারেন না।’

সিইসি আরও বলেন, ‘ববি হাজ্জাজ সাহেবের কথার পিঠে আমি হেসে বলেছি, তলোয়ার দেখালে আপনি একটি বন্দুক নিয়ে দাঁড়াবেন। এটা হচ্ছে কথার পিঠে কথা। এটা কখনও একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মিন করতে পারে না। আর যদি এটা আমি মিন করতে পারতাম, প্রথম দিন থেকেই সবাইকে বলতাম, আপনারা অস্ত্র সংগ্রহ করবেন। আপনারা অস্ত্র সংগ্রহ করে নিজেদের শক্তিশালী করুন। আর এ কথা কখনো প্রথম দিন থেকে বলেছি বলে মনে পড়ে না।’

সমাপনী বক্তব্যের এক পর্যায়ে সিইসি গণমাধ্যমকে সম্মান করেন বলেও জানান। স্বচ্ছতা রক্ষার জন্য বিগত নির্বাচনগুলোয় নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যমকে অবাধ সুযোগ দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

সূচি অনুযায়ী গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, দুপুর ১২টায় ইসলামী ঐক্যজোট, দুপুর আড়াইটায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং বিকেল ৪টায় বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) সঙ্গে ইসির সংলাপ।

বিএনপি আজ সংলাপে যাচ্ছে না

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত; মোট ১১ দিনে (শুক্র ও শনিবার বাদে) নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এরমধ্যে সাত দিন ৪টি করে দলের সঙ্গে, তিন দিন ৩টি করে এবং একদিন ২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

২০ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় গণতন্ত্রী পার্টি, দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (আমিনা) এবং বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে সংলাপের সময় নির্ধারণ করেছে ইসি।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ইসির সংলাপে যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। শেষ দিন ৩১ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিকেল ৩টায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মিত্র দলগুলো এই রাজনৈতিক সংলাপে অংশ নেবে বলে নিশ্চিত করেছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সংলাপে যাবে বলে জানা গেছে।

মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো এবং কয়েকটি বামদল এই সংলাপে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় সংলাপের সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) মনে করেন, শুধু এক পক্ষের (ক্ষমতাসীন) দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করলে এ নিয়ে বরং প্রশ্নই উঠবে। এই কমিশনের অধীনেই আগামী বছর ডিসেম্বরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে (দ্বাদশ সংসদ) সব দলের অংশগ্রহণ দেখতে চাইছে পশ্চিমা বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) আরও কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ‘নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক’ করার কথা বার বার বলছে।

বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২ , ০৫ শ্রাবণ ১৪২৯ ২১ জিলহজ ১৪৪৩

তলোয়ার-রাইফেল

গণমাধ্যমকে দোষ দিয়ে ক্ষমা চাইলেন সিইসি

বিএনপি আজ সংলাপে যাচ্ছে না

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

কেউ তলোয়ার নিয়ে এলে প্রতিপক্ষকে রাইফেল নিয়ে দাঁড়ানোর কথা কৌতুক করে বলা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তার অভিযোগ, গণমাধ্যম ‘বুঝে, না বুঝে’ ওই বক্তব্য প্রচার করে তার মর্যদা ক্ষুণœ করেছে। তবে সিইসি এ বক্তব্যের জন্য অনুতপ্ত। এ জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন।

হতাশা প্রকাশ করে সিইসি বলেন, তার মা-বাবা পত্রিকা পড়তেন। বেঁচে থাকলে হয়তো পেপার পড়ে বলতেন, ‘বাবু, এত খারাপ পরামর্শ দিলে কেন?’ তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠভাবে বলতে পারত, সিইসি হিউমার করে এমন কথা বলেছেন।’ গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলপ করছে ইসি। সংলাপের প্রথম দিনেই ১৭ জুলাই সকালে এক বক্তব্য দিয়ে বিকেলে তা পরিবর্তন করেন সিইসি। ওইদিন সকালে আমন্ত্রিত প্রথম দল হিসেবে ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেয় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (এনডিএম)। নেতাদের সঙ্গে আলোচনাকালে বক্তব্যে ভোটের মাঠে ‘তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল’ নিয়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন সিইসি।

সিইসির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আইনে আমাদের শটগান নিয়ে দাঁড়ানো পারমিট করে না।’ বিকেলে বাংলাদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে সংলাপে বক্তব্য পরিবর্তন করেন সিইসি। ‘তলোয়ার-রাইফেল’ নিয়ে যুদ্ধ না করে ভোটের মাঠে ‘জনসমর্থন ও ব্যালট’ যুদ্ধের কথা বলেন তিনি।

গতকাল ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনীর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ইসির সংলাপে অংশ নেয়। সংলাপে বক্তব্যের সময় ‘তলোয়ার নিয়ে এলে আপনারা রাইফেল নিয়ে দাঁড়াবেন’; সিইসিকে এ ধরনের বিতর্কিত বক্তব্য না দেয়ার পরামর্শ দেয় দলটি। সংলাপে সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এর জবাব দেন।

এনডিএমের সঙ্গে সংলাপে এ ধরনের একটি বক্তব্য আসার বিষয়টি উল্লেখ করে গতকাল সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমার এক ভাই বলেছেন, একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। পরশু আমি বলেছিলাম, কেউ তলোয়ার নিয়ে এলে আপনারা রাইফেল নিয়ে দাঁড়াবেন। এটা আপনাদের বুঝতে হবে, একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কথা কখনও মিন করে বলতে পারেন না। আমি হয়তো অল্প শিক্ষিত। অল্প শিক্ষিত হলেও তারা এ ধরনের কথা বলতে পারেন না।’

সিইসি আরও বলেন, ‘ববি হাজ্জাজ সাহেবের কথার পিঠে আমি হেসে বলেছি, তলোয়ার দেখালে আপনি একটি বন্দুক নিয়ে দাঁড়াবেন। এটা হচ্ছে কথার পিঠে কথা। এটা কখনও একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মিন করতে পারে না। আর যদি এটা আমি মিন করতে পারতাম, প্রথম দিন থেকেই সবাইকে বলতাম, আপনারা অস্ত্র সংগ্রহ করবেন। আপনারা অস্ত্র সংগ্রহ করে নিজেদের শক্তিশালী করুন। আর এ কথা কখনো প্রথম দিন থেকে বলেছি বলে মনে পড়ে না।’

সমাপনী বক্তব্যের এক পর্যায়ে সিইসি গণমাধ্যমকে সম্মান করেন বলেও জানান। স্বচ্ছতা রক্ষার জন্য বিগত নির্বাচনগুলোয় নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যমকে অবাধ সুযোগ দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

সূচি অনুযায়ী গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, দুপুর ১২টায় ইসলামী ঐক্যজোট, দুপুর আড়াইটায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং বিকেল ৪টায় বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) সঙ্গে ইসির সংলাপ।

বিএনপি আজ সংলাপে যাচ্ছে না

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত; মোট ১১ দিনে (শুক্র ও শনিবার বাদে) নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এরমধ্যে সাত দিন ৪টি করে দলের সঙ্গে, তিন দিন ৩টি করে এবং একদিন ২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

২০ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় গণতন্ত্রী পার্টি, দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (আমিনা) এবং বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে সংলাপের সময় নির্ধারণ করেছে ইসি।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ইসির সংলাপে যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। শেষ দিন ৩১ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিকেল ৩টায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মিত্র দলগুলো এই রাজনৈতিক সংলাপে অংশ নেবে বলে নিশ্চিত করেছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সংলাপে যাবে বলে জানা গেছে।

মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো এবং কয়েকটি বামদল এই সংলাপে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় সংলাপের সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) মনে করেন, শুধু এক পক্ষের (ক্ষমতাসীন) দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করলে এ নিয়ে বরং প্রশ্নই উঠবে। এই কমিশনের অধীনেই আগামী বছর ডিসেম্বরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে (দ্বাদশ সংসদ) সব দলের অংশগ্রহণ দেখতে চাইছে পশ্চিমা বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) আরও কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ‘নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক’ করার কথা বার বার বলছে।