লোডশেডিং ও প্রচণ্ড গরমে শিশুরা বেশি অসুস্থ হচ্ছে

রাজধানীর পূর্ব গোড়ানে বসবাসকারী স্কুল শিক্ষিকা নাসরিনের ৬ বছরের শিশু রামিতা তাবাসরুম রাফা গতকাল সকালে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতির সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপরই তার প্রচণ্ড জ্বর উঠেছে। তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারে পক্ষ থেকে তাকে জ্বরের ওষুধ খাওয়ানো হয়। জ্বরের সঙ্গে তার সমস্ত শরীরে ব্যথাও শুরু হয়েছে। রাফার মতো ঘরে ঘরে বহু শিশু ঠাণ্ডা ও জ্বরে অসুস্থ হচ্ছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন পর হঠাৎ করে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও প্রচণ্ড গরমে শিশুরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাফার মতো বহু শিশু এখন প্রতিদিন অসুস্থ হচ্ছে। অনেকেই বাসাবাড়িতে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার অনেকের হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এ নিয়ে ঘরে ঘরে শিশুদের মায়েরা টেনশনে আছেন। তাদের মধ্যে বাড়ছে অস্থিরতা।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে শুধু বহির্বিভাগে শিশু রোগীর উপচেপড়া ভিড়। দিনে গড়ে ৮শ’র বেশি শিশুর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর ভর্তি আছে ৬৭৩ জন শিশু। হাসপাতালে ভর্তির জন্য সিট খালি পাওয়া কষ্টকর।

শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত কয়েক দিন শিশু রোগী বেড়ে গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু ঠাণ্ডা, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত। হাসপাতালে বেড খালি না থাকলে ও বহির্বিভাগে শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখন প্রতিদিন শিশু রোগী বাড়ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। অভিযোগ রয়েছে, অনেক শিশু, নিউমোনিয়া ও জন্ডিসে আক্রান্ত বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। তবে বিশেষজ্ঞরা শিশুদের চিকিৎসার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, প্রচণ্ড গরম, লোডশেডিংয়ের মধ্যেও বাতাসের তীব্রতা নেই। বিদ্যুৎ না থাকলে শিশুরা গরমে ঘামতে থাকে। গরম ও ঠাণ্ডা লেগে তারা বেশি অসুস্থ হয়। এজন্য ঘরে বিকল্প হিসেবে শিশুদের হাত পাখা দিয়ে বাতাস করা বা ঘরের বাইরে বাতাস আছে এমন স্থানে নিয়ে বসানোর পরামর্শ দেন। তাপমাত্রার সমস্যার কারণে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, এ গরমে শিশু ও বয়স্করা বেশি অসুস্থ হচ্ছেন। লোডশেডিংয়ের সময় অনেক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বাতাসও ঘরে না থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। তাই শিশুদের পানি ও স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে তিনি পরামর্শ দেন।

শিশুর অভিভাবক বলেন, শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ঘরে ঘরে শিশু ও বয়স্করা গরমে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তাদের মতে, শিশুদের অসুস্থতার সুযোগে এখন ওষুধের দোকানে শিশুর জ্বরের ওষুধ নাপা সিরাপসহ অন্য ওষুধের দামও বাড়ছে বলে অভিযোগ করেন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ওষুধের দোকানে জ্বরের ওষুধের সংকটের কথা বলে দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। আবার অনেকেই বলছে দাম কিছুটা বাড়ছে।

এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, লোডশেডিংয়ের কারণে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়া প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীদের কিছুটা সমস্যা হবে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে অপারেশন থিয়েটারে কিছুটা সমস্যা হতে পারে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। তবে জেনারেটর চালিয়ে সাময়িক সমাধান করলেও ত্রুটি থাকতে পারে। বাড়তে চিকিৎসা খরচও।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, লোডশেডিংয়ের সমস্যা ও বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে উঠতে ভার্সিটির ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সবাইকে আরও সচেতন ও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ও সিসিইইতে যাতে রোগীদের কোন সমস্যা না হয় তার জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তার মতে, রোগীদের কোন সমস্যা হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

image

শিশুরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, রাজধানীর শিশু হাসপাতালে বাড়ছে চাপ, প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে রোগী -সংবাদ

আরও খবর
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সাধারণ মানুষের ব্যাপক দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে : প্রধানমন্ত্রী
দেশে করোনায় মৃত্যু আরও ৮
৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি
বিদ্যুৎ নিয়ে বিএনপি কোন মুখে বড় কথা বলে, প্রশ্ন কাদেরের
ফখরুল বললেন, এখন সরকার শর্ষে ফুল দেখবে
৯০ বার পেছালো তদন্ত প্রতিবেদন
নড়াইল : আজ খুলছে মির্জাপুর কলেজ, তবে স্বপন বিশ্বাস এখন ও অন্তরালে
গুঁড়িয়ে দেয়া হলো এমপি গোলাম মাওলা রনির অবৈধ বাসভবন
রায়পুরায় গুলি ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে নিহত ২, আহত ২০
সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থতার দায় স্বীকার মেয়র আরিফের

বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২ , ০৫ শ্রাবণ ১৪২৯ ২১ জিলহজ ১৪৪৩

লোডশেডিং ও প্রচণ্ড গরমে শিশুরা বেশি অসুস্থ হচ্ছে

বাকী বিল্লাহ

image

শিশুরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, রাজধানীর শিশু হাসপাতালে বাড়ছে চাপ, প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে রোগী -সংবাদ

রাজধানীর পূর্ব গোড়ানে বসবাসকারী স্কুল শিক্ষিকা নাসরিনের ৬ বছরের শিশু রামিতা তাবাসরুম রাফা গতকাল সকালে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতির সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপরই তার প্রচণ্ড জ্বর উঠেছে। তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারে পক্ষ থেকে তাকে জ্বরের ওষুধ খাওয়ানো হয়। জ্বরের সঙ্গে তার সমস্ত শরীরে ব্যথাও শুরু হয়েছে। রাফার মতো ঘরে ঘরে বহু শিশু ঠাণ্ডা ও জ্বরে অসুস্থ হচ্ছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন পর হঠাৎ করে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও প্রচণ্ড গরমে শিশুরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাফার মতো বহু শিশু এখন প্রতিদিন অসুস্থ হচ্ছে। অনেকেই বাসাবাড়িতে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার অনেকের হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এ নিয়ে ঘরে ঘরে শিশুদের মায়েরা টেনশনে আছেন। তাদের মধ্যে বাড়ছে অস্থিরতা।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে শুধু বহির্বিভাগে শিশু রোগীর উপচেপড়া ভিড়। দিনে গড়ে ৮শ’র বেশি শিশুর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর ভর্তি আছে ৬৭৩ জন শিশু। হাসপাতালে ভর্তির জন্য সিট খালি পাওয়া কষ্টকর।

শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত কয়েক দিন শিশু রোগী বেড়ে গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু ঠাণ্ডা, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত। হাসপাতালে বেড খালি না থাকলে ও বহির্বিভাগে শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখন প্রতিদিন শিশু রোগী বাড়ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। অভিযোগ রয়েছে, অনেক শিশু, নিউমোনিয়া ও জন্ডিসে আক্রান্ত বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। তবে বিশেষজ্ঞরা শিশুদের চিকিৎসার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, প্রচণ্ড গরম, লোডশেডিংয়ের মধ্যেও বাতাসের তীব্রতা নেই। বিদ্যুৎ না থাকলে শিশুরা গরমে ঘামতে থাকে। গরম ও ঠাণ্ডা লেগে তারা বেশি অসুস্থ হয়। এজন্য ঘরে বিকল্প হিসেবে শিশুদের হাত পাখা দিয়ে বাতাস করা বা ঘরের বাইরে বাতাস আছে এমন স্থানে নিয়ে বসানোর পরামর্শ দেন। তাপমাত্রার সমস্যার কারণে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, এ গরমে শিশু ও বয়স্করা বেশি অসুস্থ হচ্ছেন। লোডশেডিংয়ের সময় অনেক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বাতাসও ঘরে না থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। তাই শিশুদের পানি ও স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে তিনি পরামর্শ দেন।

শিশুর অভিভাবক বলেন, শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ঘরে ঘরে শিশু ও বয়স্করা গরমে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তাদের মতে, শিশুদের অসুস্থতার সুযোগে এখন ওষুধের দোকানে শিশুর জ্বরের ওষুধ নাপা সিরাপসহ অন্য ওষুধের দামও বাড়ছে বলে অভিযোগ করেন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ওষুধের দোকানে জ্বরের ওষুধের সংকটের কথা বলে দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। আবার অনেকেই বলছে দাম কিছুটা বাড়ছে।

এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, লোডশেডিংয়ের কারণে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়া প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীদের কিছুটা সমস্যা হবে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে অপারেশন থিয়েটারে কিছুটা সমস্যা হতে পারে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। তবে জেনারেটর চালিয়ে সাময়িক সমাধান করলেও ত্রুটি থাকতে পারে। বাড়তে চিকিৎসা খরচও।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, লোডশেডিংয়ের সমস্যা ও বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে উঠতে ভার্সিটির ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সবাইকে আরও সচেতন ও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ও সিসিইইতে যাতে রোগীদের কোন সমস্যা না হয় তার জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তার মতে, রোগীদের কোন সমস্যা হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।