নড়াইল : আজ খুলছে মির্জাপুর কলেজ, তবে স্বপন বিশ্বাস এখন ও অন্তরালে

নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার একমাস পর আজ থেকে কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্ত্তী গতকাল বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রথমে ১৭ জুলাই কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হঠাৎ করে লোহাগড়ার দিঘলিয়া এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে ভাঙচুরের ঘটনায় নির্ধারিত দিন পিছিয়ে তা বুধবার করা হয়। এর আগে ১৮ জুন কলেজে সৃষ্ট ঘটনার পরদিন থেকে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ঈদুল আজহাসহ অন্য ছুটিও ছিল।

এদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এখনও অন্তরালে আছেন। বাড়িতে থাকছেন না। তবে তার মা বনলতা বিশ্বাস বলেন, আমার ছেলেকে জুতার মালা পরিয়ে যেভাবে অপমান-অপদস্ত করা হয়েছে, তাতে সবাই লজ্জিত। আমার ছেলে কলেজে গেলে স্বসম্মানে বরণ করে নিলেই সে কলেজে যোগদান করবে। এটাই আমাদের চাওয়া।

অন্যদিকে, মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত।

এ ব্যাপারে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অচিন চক্রবর্ত্তী বলেন, অধ্যক্ষ কলেজে যোগদান করবেন কিনা, গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তিনি কিছইু বলেননি। তবে আমরা আশাবাদী তিনি প্রথম দিনেই কলেজে আসবেন। তাকে বরণ করতে প্রস্তুত আমরা।

এ ব্যাপারে বিছালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আনিসুর রহমান বলেন, আমরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার স্যারকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করার জন্য প্রস্তুত আছি। আশা করছি, সুষ্ঠু সুন্দরভাবে কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা হবে।

তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেইসবুক আইডিতে ভারতের বিতর্কিত রাজনৈতিক নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লিখে- প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম। এ পোস্ট দেয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে আসেন রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও সে পোস্ট মুছেনি রাহুল।

শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধ জনতা ঘটনার দিন বিকেলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়ের গলায় জুতার মালা পরানো হয়। কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। ঘটনার সময় অন্তত ১০ জন ছাত্র-জনতা আহত হন।

এ ঘটনায় ১৭০ জনের নামে গত ২৭ জুন মামলা দায়েরের পর এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলায় সদর থানার ওসি শওকত কবির ও মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মুরসালিনকে নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজন রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে তা বলা যাচ্ছে না।

বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২ , ০৫ শ্রাবণ ১৪২৯ ২১ জিলহজ ১৪৪৩

নড়াইল : আজ খুলছে মির্জাপুর কলেজ, তবে স্বপন বিশ্বাস এখন ও অন্তরালে

ফরহাদ খান, নড়াইল

নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার একমাস পর আজ থেকে কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্ত্তী গতকাল বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রথমে ১৭ জুলাই কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হঠাৎ করে লোহাগড়ার দিঘলিয়া এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে ভাঙচুরের ঘটনায় নির্ধারিত দিন পিছিয়ে তা বুধবার করা হয়। এর আগে ১৮ জুন কলেজে সৃষ্ট ঘটনার পরদিন থেকে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ঈদুল আজহাসহ অন্য ছুটিও ছিল।

এদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এখনও অন্তরালে আছেন। বাড়িতে থাকছেন না। তবে তার মা বনলতা বিশ্বাস বলেন, আমার ছেলেকে জুতার মালা পরিয়ে যেভাবে অপমান-অপদস্ত করা হয়েছে, তাতে সবাই লজ্জিত। আমার ছেলে কলেজে গেলে স্বসম্মানে বরণ করে নিলেই সে কলেজে যোগদান করবে। এটাই আমাদের চাওয়া।

অন্যদিকে, মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত।

এ ব্যাপারে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অচিন চক্রবর্ত্তী বলেন, অধ্যক্ষ কলেজে যোগদান করবেন কিনা, গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তিনি কিছইু বলেননি। তবে আমরা আশাবাদী তিনি প্রথম দিনেই কলেজে আসবেন। তাকে বরণ করতে প্রস্তুত আমরা।

এ ব্যাপারে বিছালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আনিসুর রহমান বলেন, আমরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার স্যারকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করার জন্য প্রস্তুত আছি। আশা করছি, সুষ্ঠু সুন্দরভাবে কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা হবে।

তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেইসবুক আইডিতে ভারতের বিতর্কিত রাজনৈতিক নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লিখে- প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম। এ পোস্ট দেয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে আসেন রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও সে পোস্ট মুছেনি রাহুল।

শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধ জনতা ঘটনার দিন বিকেলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়ের গলায় জুতার মালা পরানো হয়। কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। ঘটনার সময় অন্তত ১০ জন ছাত্র-জনতা আহত হন।

এ ঘটনায় ১৭০ জনের নামে গত ২৭ জুন মামলা দায়েরের পর এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলায় সদর থানার ওসি শওকত কবির ও মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মুরসালিনকে নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজন রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে তা বলা যাচ্ছে না।