সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থতার দায় স্বীকার মেয়র আরিফের

এবার প্রস্তুত ৮টি স্ট্রাইকিং টিম

সামান্য বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গিয়ে জলাবদ্ধতার পর অবশেষে টনক নড়লো সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা দিতে গতকাল দুপুরে নগর ভবনে ডাকেন জরুরি সংবাদ সম্মেলন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে নগর বাসীর দুর্ভোগে নিজেদের অনেকটা ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে মেয়র বলেন, ‘রাস্তাঘাটের কর্নারে বালু ফেলে (উন্নয়ন কাজের নামে) এগুলো সত্য।

গত ৩ দিন আমি নিজেই পরিদর্শন করে দেখেছি আমাদের দুর্বলতা কোথায়। আমি আগেই তা স্বীকার করে নিয়েছি।’ এজন্য তিনি ঠিকাদারদের দায়ী করে বলেন, করোনার কারণেও দুই বছর উন্নয়ন কাজ বন্ধ ছিল। ফলে যথাসময়ে অনেক কাজ হয়নি। ওগুলো খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষায় ৮টি স্ট্রাইকিং টিম প্রস্তুত থাকারও ঘোষণা দেন মেয়র।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে, তা স্বীকার করতে আমার কোন অসুবিধা নাই। এবারে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেছে। আমাদের ধারণা ছিল, দুই মাস আগে বৃষ্টি শুরু হবে। বঙ্গবীর রোডে যে জলাবদ্ধতা, তা আমাদের উন্নয়নকাজ চলাকালীন আগাম বৃষ্টি চলে আসায় সৃষ্টি হয়েছে। এবারের বন্যায় দলদলি বাগানের টিলা ধসে গেছে। যার ফলে পলি এসে আমাদের ড্রেন ভরে গেছে।

আমাদের যে ছড়া-খাল বা ড্রেনের গভীরতা ছিল, একটানা বর্ষা মৌসুমে আমরা এগুলোতে কাজ করতে পারিনি। কারণ বন্যা ছিল, বৃষ্টি ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নাগরিকদের একটু সচেতনতার অভাব আছে। বাড়িতে যত আবর্জনা আছে, কাপড় থেকে শুরু করে লেপ-তোষক সবই ড্রেনে ছেড়ে দিয়েছেন। সবমিলিয়ে ড্রেন বা ছড়ার যে নাব্যতা, সেটাও লোপ পেয়েছে। তারপরে আমাদের রাস্তাঘাট পরিষ্কার করি রাত ১২টার পরে। সেদিন যে বৃষ্টি হলো, রাত ১১টা থেকে। আমাদের কর্মীরা তখন কাজ শুরু করেনি। তখন পথচারীরা বা ব্যবসায়ী ভাইয়েরা যেসব পলিথিন-টলিথিন রাস্তায় ফেলেছিলেন, সব গিয়ে ড্রেনের ছিদ্রগুলো ব্লক করে দেয়। পানি তখন নামতে পারেনি। একদিকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে ব্লকের কারণে পানি ড্রেন দিয়ে নামতে পারেনি। জলাবদ্ধতা হওয়ার এটা অন্যতম কারণ।’

আরিফ আরও বলেন, ‘বন্যার পরপরই কোরবানির ঈদ চলে এলো। ফলে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আমাদের দুর্ভাগ্য, যদি পয়েন্টে পয়েন্টে বা আমাদের ড্রেনগুলোতে যে ময়লা জমছিল, সেগুলো যদি আমরা পরিষ্কার করে ফেলতাম, তাহলে শহরের অনেক জায়গায় পানি ওঠতো না বলে বিশ্বাস। আমরা আসলে এত বেশি বৃষ্টি হবে এটা চিন্তা করিনি।’

মেয়র আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আমরা তাৎক্ষণিক সচেষ্ট হই।

আবহাওয়া অফিসের আগাম সতর্কবার্তায় এই অতিপ্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে, সেদিক বিবেচনায় আমরা সিসিকে জরুরি সভার আয়োজন করেছি। আমাদের করণীয় নির্ধারণ করেছি এরইমধ্যে। দিন কিংবা রাত যেকোন সময় অতিবৃষ্টি শুরু হলে আমাদের ৮টি স্ট্রাইকিং টিম পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমিসহ সব কাউন্সিলর, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা মাঠে থাকবো ইনশা আল্লাহ!’

প্রসঙ্গত, এবার সিলেটে টানা তৃতীয় দফা বন্যা হয়ে গেছে। সর্বশেষ স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় গোটা দেশের মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এছাড়া সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরের বেশিরভাগ এলাকা। এতে নগরে সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হচ্ছে। সবশেষে গত শনিবার রাতে মাত্র দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে প্রশ্নের মুখে পড়েন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২ , ০৫ শ্রাবণ ১৪২৯ ২১ জিলহজ ১৪৪৩

সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থতার দায় স্বীকার মেয়র আরিফের

এবার প্রস্তুত ৮টি স্ট্রাইকিং টিম

বিশেষ প্রতিনিধি, সিলেট

সামান্য বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গিয়ে জলাবদ্ধতার পর অবশেষে টনক নড়লো সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা দিতে গতকাল দুপুরে নগর ভবনে ডাকেন জরুরি সংবাদ সম্মেলন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে নগর বাসীর দুর্ভোগে নিজেদের অনেকটা ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে মেয়র বলেন, ‘রাস্তাঘাটের কর্নারে বালু ফেলে (উন্নয়ন কাজের নামে) এগুলো সত্য।

গত ৩ দিন আমি নিজেই পরিদর্শন করে দেখেছি আমাদের দুর্বলতা কোথায়। আমি আগেই তা স্বীকার করে নিয়েছি।’ এজন্য তিনি ঠিকাদারদের দায়ী করে বলেন, করোনার কারণেও দুই বছর উন্নয়ন কাজ বন্ধ ছিল। ফলে যথাসময়ে অনেক কাজ হয়নি। ওগুলো খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষায় ৮টি স্ট্রাইকিং টিম প্রস্তুত থাকারও ঘোষণা দেন মেয়র।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে, তা স্বীকার করতে আমার কোন অসুবিধা নাই। এবারে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেছে। আমাদের ধারণা ছিল, দুই মাস আগে বৃষ্টি শুরু হবে। বঙ্গবীর রোডে যে জলাবদ্ধতা, তা আমাদের উন্নয়নকাজ চলাকালীন আগাম বৃষ্টি চলে আসায় সৃষ্টি হয়েছে। এবারের বন্যায় দলদলি বাগানের টিলা ধসে গেছে। যার ফলে পলি এসে আমাদের ড্রেন ভরে গেছে।

আমাদের যে ছড়া-খাল বা ড্রেনের গভীরতা ছিল, একটানা বর্ষা মৌসুমে আমরা এগুলোতে কাজ করতে পারিনি। কারণ বন্যা ছিল, বৃষ্টি ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নাগরিকদের একটু সচেতনতার অভাব আছে। বাড়িতে যত আবর্জনা আছে, কাপড় থেকে শুরু করে লেপ-তোষক সবই ড্রেনে ছেড়ে দিয়েছেন। সবমিলিয়ে ড্রেন বা ছড়ার যে নাব্যতা, সেটাও লোপ পেয়েছে। তারপরে আমাদের রাস্তাঘাট পরিষ্কার করি রাত ১২টার পরে। সেদিন যে বৃষ্টি হলো, রাত ১১টা থেকে। আমাদের কর্মীরা তখন কাজ শুরু করেনি। তখন পথচারীরা বা ব্যবসায়ী ভাইয়েরা যেসব পলিথিন-টলিথিন রাস্তায় ফেলেছিলেন, সব গিয়ে ড্রেনের ছিদ্রগুলো ব্লক করে দেয়। পানি তখন নামতে পারেনি। একদিকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে ব্লকের কারণে পানি ড্রেন দিয়ে নামতে পারেনি। জলাবদ্ধতা হওয়ার এটা অন্যতম কারণ।’

আরিফ আরও বলেন, ‘বন্যার পরপরই কোরবানির ঈদ চলে এলো। ফলে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আমাদের দুর্ভাগ্য, যদি পয়েন্টে পয়েন্টে বা আমাদের ড্রেনগুলোতে যে ময়লা জমছিল, সেগুলো যদি আমরা পরিষ্কার করে ফেলতাম, তাহলে শহরের অনেক জায়গায় পানি ওঠতো না বলে বিশ্বাস। আমরা আসলে এত বেশি বৃষ্টি হবে এটা চিন্তা করিনি।’

মেয়র আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আমরা তাৎক্ষণিক সচেষ্ট হই।

আবহাওয়া অফিসের আগাম সতর্কবার্তায় এই অতিপ্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে, সেদিক বিবেচনায় আমরা সিসিকে জরুরি সভার আয়োজন করেছি। আমাদের করণীয় নির্ধারণ করেছি এরইমধ্যে। দিন কিংবা রাত যেকোন সময় অতিবৃষ্টি শুরু হলে আমাদের ৮টি স্ট্রাইকিং টিম পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমিসহ সব কাউন্সিলর, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা মাঠে থাকবো ইনশা আল্লাহ!’

প্রসঙ্গত, এবার সিলেটে টানা তৃতীয় দফা বন্যা হয়ে গেছে। সর্বশেষ স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় গোটা দেশের মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এছাড়া সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরের বেশিরভাগ এলাকা। এতে নগরে সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হচ্ছে। সবশেষে গত শনিবার রাতে মাত্র দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে প্রশ্নের মুখে পড়েন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।