প্রভুর ক্ষমার আশে
হাসান হাফিজ
বিঁধে আছি অধ্যাসে ও বিচ্ছেদ কাঁটায়
জীবন তোমার সঙ্গে সতত বিরহ ক্রীড়া
শৈশব তোমার সঙ্গে মান অভিমান
সাফল্য তোমার সঙ্গে দূরত্ব দেয়াল
কী নিয়ে তাহলে বাঁচা
অনর্থকই আয়ু ক্ষয়
নিষ্ফল রোদনে ভাঙে বুক
শূন্যতায় উপাসনা
আদিগন্ত উল্লোল-আঁধার
সুন্দরের চোখজোড়া কারা যেন
বেঁধে ফেলছে ধাতব রুমালে
পায়ে বেড়ি, নির্যাতনও চলেছে বিস্তর
নিচ্ছে তাকে সঘন রিমান্ডে
এই দীর্ঘ পরবাস
সঙ্গত কারণে তাই
সহ্য হয় না আর
প্রভু যদি ক্ষমা করে
ক্লান্তি পাপ ব্যর্থতা অহং,
তবে হয়তো টেনেটুনে বেঁচে বর্তে যাই...
মেঘ ও বর্ষা
মোহাম্মদ হোসাইন
ধরতে পারছি না
ফিরে যাচ্ছে সময়
ঘাই মেরে যাচ্ছে, ভুড়ভুড়ি দিয়ে মাথা তুলে
ফিরে যাচ্ছে...
বোঝা যায় অনেক জল খেয়েছে জীবন
বোঝা যায় অনেক ঘাট আঘাট করেছে
হয় এমন হয়... কারও না কারও জীবনে এমন হয়ই...
তারও হয়েছে...!
তাই, ধরতে পারছি না
হাত থেকে পড়ে যাচ্ছে আলো
হাত থেকে পিছলে যাচ্ছে রেখা ও রিবন
তুমি সময় নিচ্ছ
নির্নিমেষ চেয়ে আছে চাঁদ
জলের ভেতরে জলছবি নদী হয়ে আছে
সূর্যমুখী ফুল থেকে গন্ধ আসছে
মাটি ভেদ করে আসছে পূর্বপুরুষের ডাক...!
তবু, ধরতে পারছি না
বারবার ফিরে যাচ্ছে সময়
গাছের পাতা, চোখের মনি
সবুজ আলো ধরে রাখছে
তুমি চলে যাচ্ছ তুড়ি মেরে
তোমার হাত হাতের পাঁচটি আঙুল
ছুঁয়ে দিচ্ছে মাটি, বিব্রত পালক, জলের গ্রাফিতি...!
ধরতে পারছি না
ভুরভুরি দিয়ে চলে যাচ্ছে মাছ
ঠোঁট কাঁপছে তুমুল জোছনায়
ভেসে যাচ্ছে নিপুণ আহ্লাদ
মানুষের কান্না
মেঘ ও বর্ষা শব্দ ছিটাচ্ছে
বীজ বুনছে অতন্দ্র কবিতার...
আহ্বান
হাদিউল ইসলাম
বিরহী যক্ষের প্রবল বেদনা বুকে নিয়ে কবি
জানালায় বসে উত্তর আকাশে দেখে প্রিয় ছবি
অপ্রকাশ্য বজ্রপাতে সর্বনাশ, ঝড়োমেঘ হায়
ক্ষিপ্র নেড়ে যায় হারানো অলকা লতায় পাতায়
রামগিরি কাঁদে রামগিরি হাসে, স্মৃতিতে করুণ
চাবুকের গান বুকেতে তুফান উঠেছে বরুণ
যক্ষী কাছে নেই হারিয়েছে খেই কবিতার খাতা
কামার্ত ছবিতে ভরেছে দিগন্ত আর ঝরাপাতা
কবি লিখে ফুল বর্ষার দু’কোল ভুলের নামতা
ঝড়ে এলোমেলো রবীন্দ্র ভুবন বটবৃক্ষ ছাতা
লেপ কাঁথা আর চাদর বালিশ ডেকে মরে রোজ
পাখিদের গান ফুলের বাগান মানসিক ভোজ
চাষাভুষা জন তোমারি আপন অনার্যের ছেলে
আর্য মতো ডাকে তুমি রাধিকাকে অভিমান ফেলে
ফিরে এসো অয়ি, ও কবিতাময়ী বঙ্গের রূপসী
সোঁদাগন্ধ মাটি তোমারে ডাকিছে ভাতের রোদসী
বিষয়টা হাস্যকর
যাকির সাইদ
পৃথিবীর সকল মানুষের নাম মুছে দিন
তবেই মানুষ শুধু ‘মানুষ’ হিসেবে
পরিচিত হবে।
নাম তো শুধু অন্যের থেকে
আলাদা করে ডাকবার জন্য।
নাম মুছে গেলে কর্ম বড় হয়ে যায়
আমাদের অতীতের পিতারা
কীভাবে স্বজনদের ডাকতেন?
নামে আছে অহম
অথচ বাঁচতে চাই অহংকার নিয়ে।
তুমি যেদিন মন বাগানে পাপড়ি ছড়ালে
সেদিন থেকে ধর্মভেদ ভুলে তুমি মানুষ
এখন আমার কাছে সবাই মানুষ
বরষার নদী
আসমা চৌধুরী
নদী কি ঘুমায় মাঝরাতে?
বর্ষার নদী জেগে থাকে বন্দনার গানে
তালে তালে বেজে ওঠে খৈ ফোটা দিন
এত ছোটাছুটি, জল তার উড়ে যায় প্রন্তরে
বাতাস নতুন রেশম ওড়নায় সাজে,
চুলে তার অকারণ তারাফুল দোলে।
কে যেন পাল খোলে, চেনা গল্প কিনারায় এসে
ঝুপ করে মাছরাঙা ওড়ায়
ফ্রকের মতো ফুলে ওঠে, চঞ্চল মেয়েটি,
যেন কথকের নাচ
কারা যায়? আদুরে সময়? ঘোমটা খোলা নাইয়োরের দিন?
হলুদ পায়ের মল, আলতার আঙুলে মিহি কোন ভুল!
অনেক কাঙালপনা লেখা থাকে নিয়তির খামে।
একটু জলের ছল, পরশের শীতলতা, কুণ্ডুবাড়ির কাকা
আজও কার পথ চেয়ে থাকে?
অলাতচক্র
নভেরা হোসেন
ট্রেনলাইন একটানা বয়ে চলেছে
পিছনে শত-সহস্র সময়ের ভার
গোলাপি শাড়িতে ম্রিয়মাণ নারী
কুঁচকানো চামড়ায় সময়ের ছাপ
প্রতিটি মানুষ যেন জীবন্ত ফোয়ারা
ছলকে ওঠে চলকে ওঠে
আবার চুপসে যায়
শুকিয়ে কাঠ
চক্রাকারে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত
দুধের বালতি নিয়ে এক প্যাঁচে শাড়িতে নারী
দূরে শিশু মাটিতে গড়ায়
কাঁঠালের ছায়ায় ক্লান্ত পথিক
তীর গতিতে ছুটে চলেছে তূর্ণানিশিথা
সবাইকে পেছনে ফেলে
সেলুলয়েডে দেখা চোখ
বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে
অফুরান জীবন ট্রেনের জানালায়
এইখানে ট্রেন এসে থামলো
এখান থেকেই যাত্রা শুরু
এ্যাবরশান
আদ্যনাথ ঘোষ
উদ্বাস্তু মাটিও একদিন হয়ে পড়ে নিষিক্ত আগুন।
কিছু শব্দ-ঘ্রাণ নিয়ে আমলকী দুপুর
চিত্রালী বৃষ্টিতে মানুষ মানুষ বলে ডেকে যায় পাখি ঠোঁট প্রেমে।
তাই চোখের ভাষারা শৈশব হারায় আগুনের জলোচ্ছ্বাস খেয়ে।
অতঃপর চঞ্চলতা, পদাবলি রোদ, চিত্রকলা, উপাখ্যান-
একদিন উড়ে যাবে প্রসূতির এ্যাবরশানে।
ভিজে যাচ্ছি
জলিল আহমেদ
আমি খুবই ভিজে যাই বর্ষার বাতাসে
দরোজা ভেড়ানো আর জানালাটা থাইগ্লাসে আঁটা
সঙ্গরোধ দেয়ালটিকে বাড়ির গেটের সাথে লটকে দেয়া আছে
তবুয়ো ভিজিয়ে যায় স্পর্শ করা আকূল বাতাস...
কবে জানি বোধ বুনে চারাগাছে দিয়ে গেছি জল
মওসুমে ভরে দেয়া প্রকৃতির পাঠে চারাটিকে নেড়েচেড়ে দেয়া
আজ তাই তাকে ডাকি বোধিবৃক্ষ বলে।
যে বায়ু সাগর ছেনে উঠে যায় মেঘের আকাশে
যে বায়ু পাহাড় ঘেঁষে বুক বেঁধে ফিরে আসে ঘরে, বোধের অন্তরে...
আমি তারই পর্শ পেয়ে ভিজে যাই তিল তিল করে।
ওগো বৃষ্টি যাও
রওশন রুবী
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে
বৃষ্টি কি আজ ফাও?
বৃষ্টি নামে বৃষ্টি নামে
ওগো বৃষ্টি যাও, ওগো বৃষ্টি ধাও।
কার ছাতা নেই, কার পাতা নেই
ফিরছো কেন চেয়ে, ভিজছে দেখ-
আত্মমগ্ন মেঘনা পাড়ের মেয়ে।
ওগো বৃষ্টি যাও
উঠোন জুড়ে গাও, মাঠে মাঠে নাও
পাতার পরে পাতা ছুঁয়ে আমার দিকে চাও।
ওগো বৃষ্টি! ওগো বৃষ্টি! মিষ্টি-রঙা ওম!
পাশে এসে বসোই না জল-পোড়া-কুমকুম।
কার দিকে যাও? কার কথা কও?
কার আদলে হাত?
যেও না গো বাউল-বেলা, নীলরঙা-প্রপাত
ওগো বৃষ্টি সুয়ো-দুয়ো, ওগো বৃষ্টি ঝুম
শ্রাবণ-মজা বৃষ্টি আমার শৈশব-মায়া-চুম
ওগো বৃষ্টি! ওগো বৃষ্টি! মিষ্টি-রঙা ওম!
পাশে এসে বসোই না জল-পোড়া-কুমকুম।
অপেক্ষাক্লান্ত কয়েদী
সঙ্গীতা ইয়াসমিন
রায়প্রাপ্ত আসামীর
কোনো বক্তব্য থাকে না।
সমাজ, রাষ্ট্রযন্ত্র কিংবা মিডিয়া
কেউ শোনে না তার আর্তনাদ
প্রামাণ্য দলিলই শেষ কথা।
মানুষের আদালতে
একবার লেখা হলে রায়
নির্দোষ কলমও নির্বাসনদ- পায়।
কেউ কি জানে
ভেতরের নির্গত অশ্রুধারায়
কী লেখে কলম অনির্বচনীয় শব্দমালায়!
প্রকৃতির অদৃশ্য কাঠগড়ায়
অপেক্ষাক্লান্ত যে কয়েদী
কী এসে যায় তার কলমের ঋজুতায়।
বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই ২০২২ , ০৬ শ্রাবণ ১৪২৯ ২২ জিলহজ ১৪৪৩
প্রভুর ক্ষমার আশে
হাসান হাফিজ
বিঁধে আছি অধ্যাসে ও বিচ্ছেদ কাঁটায়
জীবন তোমার সঙ্গে সতত বিরহ ক্রীড়া
শৈশব তোমার সঙ্গে মান অভিমান
সাফল্য তোমার সঙ্গে দূরত্ব দেয়াল
কী নিয়ে তাহলে বাঁচা
অনর্থকই আয়ু ক্ষয়
নিষ্ফল রোদনে ভাঙে বুক
শূন্যতায় উপাসনা
আদিগন্ত উল্লোল-আঁধার
সুন্দরের চোখজোড়া কারা যেন
বেঁধে ফেলছে ধাতব রুমালে
পায়ে বেড়ি, নির্যাতনও চলেছে বিস্তর
নিচ্ছে তাকে সঘন রিমান্ডে
এই দীর্ঘ পরবাস
সঙ্গত কারণে তাই
সহ্য হয় না আর
প্রভু যদি ক্ষমা করে
ক্লান্তি পাপ ব্যর্থতা অহং,
তবে হয়তো টেনেটুনে বেঁচে বর্তে যাই...
মেঘ ও বর্ষা
মোহাম্মদ হোসাইন
ধরতে পারছি না
ফিরে যাচ্ছে সময়
ঘাই মেরে যাচ্ছে, ভুড়ভুড়ি দিয়ে মাথা তুলে
ফিরে যাচ্ছে...
বোঝা যায় অনেক জল খেয়েছে জীবন
বোঝা যায় অনেক ঘাট আঘাট করেছে
হয় এমন হয়... কারও না কারও জীবনে এমন হয়ই...
তারও হয়েছে...!
তাই, ধরতে পারছি না
হাত থেকে পড়ে যাচ্ছে আলো
হাত থেকে পিছলে যাচ্ছে রেখা ও রিবন
তুমি সময় নিচ্ছ
নির্নিমেষ চেয়ে আছে চাঁদ
জলের ভেতরে জলছবি নদী হয়ে আছে
সূর্যমুখী ফুল থেকে গন্ধ আসছে
মাটি ভেদ করে আসছে পূর্বপুরুষের ডাক...!
তবু, ধরতে পারছি না
বারবার ফিরে যাচ্ছে সময়
গাছের পাতা, চোখের মনি
সবুজ আলো ধরে রাখছে
তুমি চলে যাচ্ছ তুড়ি মেরে
তোমার হাত হাতের পাঁচটি আঙুল
ছুঁয়ে দিচ্ছে মাটি, বিব্রত পালক, জলের গ্রাফিতি...!
ধরতে পারছি না
ভুরভুরি দিয়ে চলে যাচ্ছে মাছ
ঠোঁট কাঁপছে তুমুল জোছনায়
ভেসে যাচ্ছে নিপুণ আহ্লাদ
মানুষের কান্না
মেঘ ও বর্ষা শব্দ ছিটাচ্ছে
বীজ বুনছে অতন্দ্র কবিতার...
আহ্বান
হাদিউল ইসলাম
বিরহী যক্ষের প্রবল বেদনা বুকে নিয়ে কবি
জানালায় বসে উত্তর আকাশে দেখে প্রিয় ছবি
অপ্রকাশ্য বজ্রপাতে সর্বনাশ, ঝড়োমেঘ হায়
ক্ষিপ্র নেড়ে যায় হারানো অলকা লতায় পাতায়
রামগিরি কাঁদে রামগিরি হাসে, স্মৃতিতে করুণ
চাবুকের গান বুকেতে তুফান উঠেছে বরুণ
যক্ষী কাছে নেই হারিয়েছে খেই কবিতার খাতা
কামার্ত ছবিতে ভরেছে দিগন্ত আর ঝরাপাতা
কবি লিখে ফুল বর্ষার দু’কোল ভুলের নামতা
ঝড়ে এলোমেলো রবীন্দ্র ভুবন বটবৃক্ষ ছাতা
লেপ কাঁথা আর চাদর বালিশ ডেকে মরে রোজ
পাখিদের গান ফুলের বাগান মানসিক ভোজ
চাষাভুষা জন তোমারি আপন অনার্যের ছেলে
আর্য মতো ডাকে তুমি রাধিকাকে অভিমান ফেলে
ফিরে এসো অয়ি, ও কবিতাময়ী বঙ্গের রূপসী
সোঁদাগন্ধ মাটি তোমারে ডাকিছে ভাতের রোদসী
বিষয়টা হাস্যকর
যাকির সাইদ
পৃথিবীর সকল মানুষের নাম মুছে দিন
তবেই মানুষ শুধু ‘মানুষ’ হিসেবে
পরিচিত হবে।
নাম তো শুধু অন্যের থেকে
আলাদা করে ডাকবার জন্য।
নাম মুছে গেলে কর্ম বড় হয়ে যায়
আমাদের অতীতের পিতারা
কীভাবে স্বজনদের ডাকতেন?
নামে আছে অহম
অথচ বাঁচতে চাই অহংকার নিয়ে।
তুমি যেদিন মন বাগানে পাপড়ি ছড়ালে
সেদিন থেকে ধর্মভেদ ভুলে তুমি মানুষ
এখন আমার কাছে সবাই মানুষ
বরষার নদী
আসমা চৌধুরী
নদী কি ঘুমায় মাঝরাতে?
বর্ষার নদী জেগে থাকে বন্দনার গানে
তালে তালে বেজে ওঠে খৈ ফোটা দিন
এত ছোটাছুটি, জল তার উড়ে যায় প্রন্তরে
বাতাস নতুন রেশম ওড়নায় সাজে,
চুলে তার অকারণ তারাফুল দোলে।
কে যেন পাল খোলে, চেনা গল্প কিনারায় এসে
ঝুপ করে মাছরাঙা ওড়ায়
ফ্রকের মতো ফুলে ওঠে, চঞ্চল মেয়েটি,
যেন কথকের নাচ
কারা যায়? আদুরে সময়? ঘোমটা খোলা নাইয়োরের দিন?
হলুদ পায়ের মল, আলতার আঙুলে মিহি কোন ভুল!
অনেক কাঙালপনা লেখা থাকে নিয়তির খামে।
একটু জলের ছল, পরশের শীতলতা, কুণ্ডুবাড়ির কাকা
আজও কার পথ চেয়ে থাকে?
অলাতচক্র
নভেরা হোসেন
ট্রেনলাইন একটানা বয়ে চলেছে
পিছনে শত-সহস্র সময়ের ভার
গোলাপি শাড়িতে ম্রিয়মাণ নারী
কুঁচকানো চামড়ায় সময়ের ছাপ
প্রতিটি মানুষ যেন জীবন্ত ফোয়ারা
ছলকে ওঠে চলকে ওঠে
আবার চুপসে যায়
শুকিয়ে কাঠ
চক্রাকারে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত
দুধের বালতি নিয়ে এক প্যাঁচে শাড়িতে নারী
দূরে শিশু মাটিতে গড়ায়
কাঁঠালের ছায়ায় ক্লান্ত পথিক
তীর গতিতে ছুটে চলেছে তূর্ণানিশিথা
সবাইকে পেছনে ফেলে
সেলুলয়েডে দেখা চোখ
বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে
অফুরান জীবন ট্রেনের জানালায়
এইখানে ট্রেন এসে থামলো
এখান থেকেই যাত্রা শুরু
এ্যাবরশান
আদ্যনাথ ঘোষ
উদ্বাস্তু মাটিও একদিন হয়ে পড়ে নিষিক্ত আগুন।
কিছু শব্দ-ঘ্রাণ নিয়ে আমলকী দুপুর
চিত্রালী বৃষ্টিতে মানুষ মানুষ বলে ডেকে যায় পাখি ঠোঁট প্রেমে।
তাই চোখের ভাষারা শৈশব হারায় আগুনের জলোচ্ছ্বাস খেয়ে।
অতঃপর চঞ্চলতা, পদাবলি রোদ, চিত্রকলা, উপাখ্যান-
একদিন উড়ে যাবে প্রসূতির এ্যাবরশানে।
ভিজে যাচ্ছি
জলিল আহমেদ
আমি খুবই ভিজে যাই বর্ষার বাতাসে
দরোজা ভেড়ানো আর জানালাটা থাইগ্লাসে আঁটা
সঙ্গরোধ দেয়ালটিকে বাড়ির গেটের সাথে লটকে দেয়া আছে
তবুয়ো ভিজিয়ে যায় স্পর্শ করা আকূল বাতাস...
কবে জানি বোধ বুনে চারাগাছে দিয়ে গেছি জল
মওসুমে ভরে দেয়া প্রকৃতির পাঠে চারাটিকে নেড়েচেড়ে দেয়া
আজ তাই তাকে ডাকি বোধিবৃক্ষ বলে।
যে বায়ু সাগর ছেনে উঠে যায় মেঘের আকাশে
যে বায়ু পাহাড় ঘেঁষে বুক বেঁধে ফিরে আসে ঘরে, বোধের অন্তরে...
আমি তারই পর্শ পেয়ে ভিজে যাই তিল তিল করে।
ওগো বৃষ্টি যাও
রওশন রুবী
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে
বৃষ্টি কি আজ ফাও?
বৃষ্টি নামে বৃষ্টি নামে
ওগো বৃষ্টি যাও, ওগো বৃষ্টি ধাও।
কার ছাতা নেই, কার পাতা নেই
ফিরছো কেন চেয়ে, ভিজছে দেখ-
আত্মমগ্ন মেঘনা পাড়ের মেয়ে।
ওগো বৃষ্টি যাও
উঠোন জুড়ে গাও, মাঠে মাঠে নাও
পাতার পরে পাতা ছুঁয়ে আমার দিকে চাও।
ওগো বৃষ্টি! ওগো বৃষ্টি! মিষ্টি-রঙা ওম!
পাশে এসে বসোই না জল-পোড়া-কুমকুম।
কার দিকে যাও? কার কথা কও?
কার আদলে হাত?
যেও না গো বাউল-বেলা, নীলরঙা-প্রপাত
ওগো বৃষ্টি সুয়ো-দুয়ো, ওগো বৃষ্টি ঝুম
শ্রাবণ-মজা বৃষ্টি আমার শৈশব-মায়া-চুম
ওগো বৃষ্টি! ওগো বৃষ্টি! মিষ্টি-রঙা ওম!
পাশে এসে বসোই না জল-পোড়া-কুমকুম।
অপেক্ষাক্লান্ত কয়েদী
সঙ্গীতা ইয়াসমিন
রায়প্রাপ্ত আসামীর
কোনো বক্তব্য থাকে না।
সমাজ, রাষ্ট্রযন্ত্র কিংবা মিডিয়া
কেউ শোনে না তার আর্তনাদ
প্রামাণ্য দলিলই শেষ কথা।
মানুষের আদালতে
একবার লেখা হলে রায়
নির্দোষ কলমও নির্বাসনদ- পায়।
কেউ কি জানে
ভেতরের নির্গত অশ্রুধারায়
কী লেখে কলম অনির্বচনীয় শব্দমালায়!
প্রকৃতির অদৃশ্য কাঠগড়ায়
অপেক্ষাক্লান্ত যে কয়েদী
কী এসে যায় তার কলমের ঋজুতায়।