রেলওয়ের টিকেট বিক্রয়ে ‘অব্যবস্থাপনা’ প্রমাণিত

ভোক্তা অধিকার ক্ষুণ্ণ করায় ২ লাখ টাকা জরিমানা সহজ ডটকমকে

‘রেলওয়ের টিকেট বিক্রয়ে অব্যবস্থাপনা’ অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একজন ভোক্তা হিসেবে মহিউদ্দিন রনির অধিকার ক্ষুণœ হয়েছে, তাই ট্রেনের টিকেট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি সহজ ডটকমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে সংস্থাটি।

জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ অভিযোগকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া রেলওয়ে টিকেট বিক্রয়ের পদ্ধতির স্বচ্ছতা ও কালোবাজরি হচ্ছে কি না একটি বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান।

গতকাল অধিদপ্তরের কার্যালয়ে দুই পক্ষের শুনানি শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক। এ সময় তিনি বলেন, ‘দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হওয়ায় সহজ ডটকমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ অভিযোগকারী মহিউদ্দিন রনিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।’

দুই সপ্তাহ আন্দোলনের পর

শুনানি হলো অভিযোগ

রেলের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গত দুই সপ্তাহ যাবত একা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। গত ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের টিকেট কেনার চেষ্টা করেন তিনি। তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হলেও ট্রেনের কোন আসন তিনি পাননি। পরে কমলাপুর রেলস্টেশনের সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে তাকে ‘সিস্টেম ফল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়। কিন্তু তখনই তার বুকিং করা ৬৮০ টাকার আসনটি স্টেশনের কম্পিউটার অপারেটর আরেক যাত্রীর কাছে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ করেন রনি। তিনি বলছেন, ওই ঘটনার বিষয়ে ১৪ ও ১৫ জুন দুইবার তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকে কোন সাড়া না পেয়ে ৭ জুলাই কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকেট কাউন্টারের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন। পরে গত রোববার মহিউদ্দিন রনির অভিযোগের বিষয়ে গতকাল সকাল ১০টায় শুনানির দিন ঠিক করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। যা গতকাল শুনানি হয়েছে।

রনির আন্দোলন ‘জাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছে’ মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘তার এই অভিযোগ এবং দৃঢ় আন্দোলন ভোক্তা অধিকারের ব্যাপারে সবার চোখ খুলে দিয়েছে। ভোক্তার হয়রানি দ্রুত নিরসন করতে হবে।’

শুনানি শেষে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অভিযোগকারী মহিউদ্দিন রনি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রয়ায় বলেন, ‘এই রায়ে আমি সন্তুষ্ট। আমার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রত্যেকটা নাগরিক আশ্বস্ত হতে পারবেন যে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তাদের অধিকার রক্ষা করবেই।’

রেলওয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করে শুধু সহজ ডটকমের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগÑ এমন প্রশ্নের জবাবে রনি বলেন, ‘আমি আমার অভিযোগ নিয়ে যখন রেলওয়ের কাছে গিয়েছি, তারা আমাকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন অনলাইন টিকেট কোন সিস্টেমে বিক্রি হয়, কাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকে। অনলাইন টিকেট বিক্রির ক্ষেত্রে সহজের হাতেই নিয়ন্ত্রণ থাকে। তাই আমার অভিযোগ সহজের বিরুদ্ধেই ছিল।’

রায়ে সন্তুষ্ট নয় টিকেট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জরিমানার রায়ে সন্তুষ্ট নয় রেলওয়ে টিকেট বিক্রয়কারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে সহজ ডটকমেরর আইনজীবী মির্জা রাগীব হাসনাত বলেন, ‘এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট নন, এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।’

আইনজীবী মির্জা রাগীব হাসনাত বলেন, ‘এখানে তিনটা এনটিটি আছে। সহজ, ভিনসেন্ট এবং সিনেসিস। তিনটি মিলেই ওয়েবসাইট অপারেট করে। ১৫ মিনিটের মধ্যে পেমেন্ট না করতে পারলে সেক্ষেত্রে ট্রেনের সিট ক্যানসেল হয়ে যাবে। অভিযোগকারী সেটি পারেননি। তাকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে টিকেটের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।’

আর সেই টিকেট বিক্রির ব্যাখ্যায় এই আইনজীবী বলেন, ‘তার চারটা টিকেটের মধ্যে একটা বিক্রি করা হয়েছে রেলওয়ের কাউন্টার থেকে। কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি হয়ে গেলে সহজের কিছু করার থাকে না।’

বিকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি

মহিউদ্দীন রনি অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের শুনানিতে রেলওয়ের ই-টিকেটিং পার্টনার সহজ ডটকম, ট্রানজেকশন পার্টনার বিকাশকে ডেকেছে সংস্থাটি। কিন্তু প্রাথমিকভাবে বিকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে জানায় সংস্থাটি।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অভিযোগ) মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সংবাদকে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তাদের শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। পিন কোড না দেয়ায় আগেই বিকাশ রনির টাকা কেটে নিয়েছে। এই অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি। তাই প্রাথমিকভাবে বিকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।’ তাই শুনানিতে রেলওয়ের ই-টিকেটিং পার্টনার সহজ ডট কম দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। নিয়মানুযায়ী আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে ভোক্তা অধিকার আইনের ৭৬(৪) ধারা অনুযায়ী জরিমানার ২৫ শতাংশ পাবেন অভিযোগকারী।’

কীসের ভিত্তিতে অভিযোগের প্রমাণ হলো এমন প্রশ্নের জবাবে ভোক্তা অধিকারের মহাপচিালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘রনি টিকেটের জন্য পেমেন্ট করেও টিকেট পায়নি। সে এর মধ্যে বসে না থেকে তাদের অফিসে গিয়েছে এবং সেখানে যাওয়ার পর সহজের কর্মকর্তা তাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। তার বুক করা সিটই অন্য কারো কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে। একজন ভোক্তা হিসেবে তার অধিকার ক্ষুণœ হয়েছে।’

৬ দফা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা রনির

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়ে ছয় দফা দাবিতে গত ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর টিকেট কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। তার দাবিগুলো হলো ১. টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজ ডটকম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। হয়রানির ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২. যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে। ৩. অনলাইনে কোটায় টিকেট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করতে হবে সেই সঙ্গে অনলাইন-অফলাইনে টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্ব সাধারণের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ৪. যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ৫. ট্রেনের টিকেট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকা- সার্বক্ষণিক মনিটর, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেলসেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে। ৬. ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

তার দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার পদযাত্রা করে রেলের মহাপরিচালককে স্মারকলিপি দিয়েছেন তিনি। দাবি মেনে নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনার পাশাপাশি রেল কর্তৃপক্ষকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। রনির ছয় দফা দাবির বিষয়টি বাংলাদেশ রেলওয়েকে আলাদাভাবে বিবেচনা করতে হবে মন্তব্য করে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘তার ছয় দফা দাবির ব্যাপারে আমাদের কিছু করণীয় নেই। সেগুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করবে’।

এই রায় পাওয়ার পরও রনি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন কি না জানতে চাইলে মহিউদ্দীন রনি বলেন, ‘আমি আমার আন্দোলন এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস পেতে চাই। আমার আর কারো ওপর কোন ভরসা নেই।’

বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই ২০২২ , ০৬ শ্রাবণ ১৪২৯ ২২ জিলহজ ১৪৪৩

রেলওয়ের টিকেট বিক্রয়ে ‘অব্যবস্থাপনা’ প্রমাণিত

ভোক্তা অধিকার ক্ষুণ্ণ করায় ২ লাখ টাকা জরিমানা সহজ ডটকমকে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

‘রেলওয়ের টিকেট বিক্রয়ে অব্যবস্থাপনা’ অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একজন ভোক্তা হিসেবে মহিউদ্দিন রনির অধিকার ক্ষুণœ হয়েছে, তাই ট্রেনের টিকেট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি সহজ ডটকমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে সংস্থাটি।

জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ অভিযোগকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া রেলওয়ে টিকেট বিক্রয়ের পদ্ধতির স্বচ্ছতা ও কালোবাজরি হচ্ছে কি না একটি বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান।

গতকাল অধিদপ্তরের কার্যালয়ে দুই পক্ষের শুনানি শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক। এ সময় তিনি বলেন, ‘দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হওয়ায় সহজ ডটকমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ অভিযোগকারী মহিউদ্দিন রনিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।’

দুই সপ্তাহ আন্দোলনের পর

শুনানি হলো অভিযোগ

রেলের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গত দুই সপ্তাহ যাবত একা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। গত ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের টিকেট কেনার চেষ্টা করেন তিনি। তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হলেও ট্রেনের কোন আসন তিনি পাননি। পরে কমলাপুর রেলস্টেশনের সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে তাকে ‘সিস্টেম ফল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়। কিন্তু তখনই তার বুকিং করা ৬৮০ টাকার আসনটি স্টেশনের কম্পিউটার অপারেটর আরেক যাত্রীর কাছে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ করেন রনি। তিনি বলছেন, ওই ঘটনার বিষয়ে ১৪ ও ১৫ জুন দুইবার তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকে কোন সাড়া না পেয়ে ৭ জুলাই কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকেট কাউন্টারের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন। পরে গত রোববার মহিউদ্দিন রনির অভিযোগের বিষয়ে গতকাল সকাল ১০টায় শুনানির দিন ঠিক করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। যা গতকাল শুনানি হয়েছে।

রনির আন্দোলন ‘জাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছে’ মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘তার এই অভিযোগ এবং দৃঢ় আন্দোলন ভোক্তা অধিকারের ব্যাপারে সবার চোখ খুলে দিয়েছে। ভোক্তার হয়রানি দ্রুত নিরসন করতে হবে।’

শুনানি শেষে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অভিযোগকারী মহিউদ্দিন রনি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রয়ায় বলেন, ‘এই রায়ে আমি সন্তুষ্ট। আমার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রত্যেকটা নাগরিক আশ্বস্ত হতে পারবেন যে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তাদের অধিকার রক্ষা করবেই।’

রেলওয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করে শুধু সহজ ডটকমের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগÑ এমন প্রশ্নের জবাবে রনি বলেন, ‘আমি আমার অভিযোগ নিয়ে যখন রেলওয়ের কাছে গিয়েছি, তারা আমাকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন অনলাইন টিকেট কোন সিস্টেমে বিক্রি হয়, কাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকে। অনলাইন টিকেট বিক্রির ক্ষেত্রে সহজের হাতেই নিয়ন্ত্রণ থাকে। তাই আমার অভিযোগ সহজের বিরুদ্ধেই ছিল।’

রায়ে সন্তুষ্ট নয় টিকেট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জরিমানার রায়ে সন্তুষ্ট নয় রেলওয়ে টিকেট বিক্রয়কারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে সহজ ডটকমেরর আইনজীবী মির্জা রাগীব হাসনাত বলেন, ‘এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট নন, এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।’

আইনজীবী মির্জা রাগীব হাসনাত বলেন, ‘এখানে তিনটা এনটিটি আছে। সহজ, ভিনসেন্ট এবং সিনেসিস। তিনটি মিলেই ওয়েবসাইট অপারেট করে। ১৫ মিনিটের মধ্যে পেমেন্ট না করতে পারলে সেক্ষেত্রে ট্রেনের সিট ক্যানসেল হয়ে যাবে। অভিযোগকারী সেটি পারেননি। তাকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে টিকেটের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।’

আর সেই টিকেট বিক্রির ব্যাখ্যায় এই আইনজীবী বলেন, ‘তার চারটা টিকেটের মধ্যে একটা বিক্রি করা হয়েছে রেলওয়ের কাউন্টার থেকে। কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি হয়ে গেলে সহজের কিছু করার থাকে না।’

বিকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি

মহিউদ্দীন রনি অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের শুনানিতে রেলওয়ের ই-টিকেটিং পার্টনার সহজ ডটকম, ট্রানজেকশন পার্টনার বিকাশকে ডেকেছে সংস্থাটি। কিন্তু প্রাথমিকভাবে বিকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে জানায় সংস্থাটি।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অভিযোগ) মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সংবাদকে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তাদের শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। পিন কোড না দেয়ায় আগেই বিকাশ রনির টাকা কেটে নিয়েছে। এই অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি। তাই প্রাথমিকভাবে বিকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।’ তাই শুনানিতে রেলওয়ের ই-টিকেটিং পার্টনার সহজ ডট কম দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। নিয়মানুযায়ী আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে ভোক্তা অধিকার আইনের ৭৬(৪) ধারা অনুযায়ী জরিমানার ২৫ শতাংশ পাবেন অভিযোগকারী।’

কীসের ভিত্তিতে অভিযোগের প্রমাণ হলো এমন প্রশ্নের জবাবে ভোক্তা অধিকারের মহাপচিালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘রনি টিকেটের জন্য পেমেন্ট করেও টিকেট পায়নি। সে এর মধ্যে বসে না থেকে তাদের অফিসে গিয়েছে এবং সেখানে যাওয়ার পর সহজের কর্মকর্তা তাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। তার বুক করা সিটই অন্য কারো কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে। একজন ভোক্তা হিসেবে তার অধিকার ক্ষুণœ হয়েছে।’

৬ দফা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা রনির

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়ে ছয় দফা দাবিতে গত ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর টিকেট কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। তার দাবিগুলো হলো ১. টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজ ডটকম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। হয়রানির ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২. যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে। ৩. অনলাইনে কোটায় টিকেট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করতে হবে সেই সঙ্গে অনলাইন-অফলাইনে টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্ব সাধারণের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ৪. যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ৫. ট্রেনের টিকেট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকা- সার্বক্ষণিক মনিটর, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেলসেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে। ৬. ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

তার দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার পদযাত্রা করে রেলের মহাপরিচালককে স্মারকলিপি দিয়েছেন তিনি। দাবি মেনে নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনার পাশাপাশি রেল কর্তৃপক্ষকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। রনির ছয় দফা দাবির বিষয়টি বাংলাদেশ রেলওয়েকে আলাদাভাবে বিবেচনা করতে হবে মন্তব্য করে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘তার ছয় দফা দাবির ব্যাপারে আমাদের কিছু করণীয় নেই। সেগুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করবে’।

এই রায় পাওয়ার পরও রনি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন কি না জানতে চাইলে মহিউদ্দীন রনি বলেন, ‘আমি আমার আন্দোলন এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস পেতে চাই। আমার আর কারো ওপর কোন ভরসা নেই।’