ঘর পেয়ে বদলে গেছে জীবন

আজ ২৮৭টি ঘর বিতরণ করা হচ্ছে

স্বামীহারা সাজেদা বেগম (৬০)। একযুগ আগে স্বামী মারা যায়। তার একমাত্র মেয়ে ফাতেমা বেগমকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কষ্ট করে থাকতেন। মেয়ের বিয়ে হলেও ছেলেটি নেশাগ্রস্ত হওয়ার কারণে তারও সংসার টেকে না। থাকার জায়গা না থাকার কারণে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়। তবে, গত বছর ময়মনসিংহের ভালুকার ভায়াবহ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১২০৪ নম্বর খতিয়ানে ঘরটি বরাদ্দ পাওয়ার পর মা-মেয়ের কষ্ট লাঘব হয়।

গতকাল সরেজমিন ওই আশ্রয়কেন্দ্র্রে গিয়ে দেখা মেলে সাজেদা বেগমের মেয়ে ফাতেমা বেগমের সঙ্গে। কথায় কথায় বোঝা গেল, এই ঘরটি যেন এই পরিবারের কাছে সোনার ডিম পাড়া হাঁস। দুই শতক জমির ওপরে নির্মীত এ ঘর যেন শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই দেয়নি, দিয়েছে আর্থিক স্বচ্ছলতা।

ফাতেমা বেগম জানান, ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর কত কষ্ট করেছি। অন্যের বাড়িতে কাজ করা থেকে কারখানায় কুলির কাজ করেছি। কিন্তু বৃদ্ধা মাকে নিয়ে একটু সুখের দেখাও পাইনি। তারপর বিয়ে হয়ে গেল। স্বামী নেশাগ্রস্ত হওয়ার কারণে তার সঙ্গে সংসার করতে পারিনি। কষ্ট যেন পিছু ছাড়তে চায় না। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মায়ের পাওয়া ঘরে এখন থাকছেন মায়ের সঙ্গে। ঘর পাওয়ায় অন্যের বাড়িতে কাজ না করে নিজেই সেখানে দোকান করছেন। ইউএনও’র অর্থ সহায়তায় নিজের অল্প টাকা পুঁজি দিয়ে করা দোকানে তার স্বচ্ছলতা ফিরেছে।

তিনি বলেন, ‘দিনে দুই তিন হাজার টাকা বিক্রি হয়। লাভ মোটামুটি ভালো। এ দিয়ে সংসার চলে যায়। মায়ের চিকিৎসার টাকাও দোকানের আয় থেকে চলে।’ তিনি জানান, নতুন ঘর পেয়ে উচ্ছ্বসিত আমার মা। তিনি ঘর পাওয়ার আনন্দে কেঁদে ফেলে দু’হাত তুলে দোয়া করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করেছেন।

একই জেলার সদর উপজেলার বয়রা আশ্রয়ণকেন্দ্রে ঘর পেয়েছেন জান্নাতুল ফেরদাউস। তিনি তার স্বামী সংসার নিয়ে থাকছেন সে ঘরে। শুধু থাকছেনই না। গরু, ছাগল ও হাঁস মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন। জান্নাতুল ফেরদাউস জানান, তার প্রায় ১০টি মুরগি ও ৫টি হাঁস রয়েছে। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। ১০ মাস হয়েছে ঘর পেয়েছে। তার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজে বের হলে তিনি এই গরু ও ছাগল পালন করেন। তার ইচ্ছে, তার গরু বড় হলে সে বাছুর বিক্রি ও দুধ বিক্রি করবেন। ইতোমধ্যে তিনি হাঁস ও মুরগি বিক্রি শুরু করেছেন। তার সংসার খুব ভালোভাবে চলছে। আত্মবিশ্বাসী জান্নাতুল ফেরদাউস জানালেন, তার এই ঘর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।

এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহে প্রায় ২৫০৩টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে এই প্রকল্পের আওতায় ভালুকার ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) হাসান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না; প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের বাসস্থান নিশ্চিতকল্পে সেমিপাকা একক গৃহ নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নিয়ে সমগ্র দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে মুজিববর্ষে জমিসহ সেমিপাকা ঘর দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। সেই লক্ষ্যে প্রতিটি গৃহ ২ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত, কবুলিয়ত ও রেজিস্ট্রেশন এবং জমিসহ সেমিপাকা গৃহ উপকারভোগী পরিবারের কাছে জমির দলিল, নামজারির খতিয়ান প্রদান করা হয়।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও ২৮৭টি ঘর বিতরণ করবেন। এর মাধ্যমে ময়মনসিংহের ৪টি উপজেলা গৃহহীনমুক্ত হবে।

জানা গেছে, আজ প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সকাল ১০টায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে সরাসরি ময়মনসিংহ সদর ও নান্দাইল উপজেলার চরভেলামারী আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর জমি ও গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রম শুভ উদ্ধোধন করবেন। প্রতিটি গৃহ ২ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত, কবুলিয়ত ও রেজিস্ট্রেশন এবং জমিসহ সেমিপাকা গৃহ উপকারভোগী পরিবারের কাছে জমির দলিল, নামজারির খতিয়ান প্রদান করা হবে। প্রতিটি গৃহ নির্মাণে ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমেদ কায়কাউস জানান, আজ ঘর উপহার দেয়ার এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া আরও ৮ হাজার ৬৬৭টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে।

ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৭০ পরিবারকে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই ২০২২ , ০৬ শ্রাবণ ১৪২৯ ২২ জিলহজ ১৪৪৩

ঘর পেয়ে বদলে গেছে জীবন

আজ ২৮৭টি ঘর বিতরণ করা হচ্ছে

শাফিউল ইমরান, ময়মনসিংহ থেকে

image

ময়মনসিংহের ভালুকায় আশ্রয়কেন্দ্রের ঘর পেয়ে স্বামীহারা সাজেদা বেগম গৃহকর্মে ব্যস্ত -সংবাদ

স্বামীহারা সাজেদা বেগম (৬০)। একযুগ আগে স্বামী মারা যায়। তার একমাত্র মেয়ে ফাতেমা বেগমকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কষ্ট করে থাকতেন। মেয়ের বিয়ে হলেও ছেলেটি নেশাগ্রস্ত হওয়ার কারণে তারও সংসার টেকে না। থাকার জায়গা না থাকার কারণে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়। তবে, গত বছর ময়মনসিংহের ভালুকার ভায়াবহ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১২০৪ নম্বর খতিয়ানে ঘরটি বরাদ্দ পাওয়ার পর মা-মেয়ের কষ্ট লাঘব হয়।

গতকাল সরেজমিন ওই আশ্রয়কেন্দ্র্রে গিয়ে দেখা মেলে সাজেদা বেগমের মেয়ে ফাতেমা বেগমের সঙ্গে। কথায় কথায় বোঝা গেল, এই ঘরটি যেন এই পরিবারের কাছে সোনার ডিম পাড়া হাঁস। দুই শতক জমির ওপরে নির্মীত এ ঘর যেন শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই দেয়নি, দিয়েছে আর্থিক স্বচ্ছলতা।

ফাতেমা বেগম জানান, ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর কত কষ্ট করেছি। অন্যের বাড়িতে কাজ করা থেকে কারখানায় কুলির কাজ করেছি। কিন্তু বৃদ্ধা মাকে নিয়ে একটু সুখের দেখাও পাইনি। তারপর বিয়ে হয়ে গেল। স্বামী নেশাগ্রস্ত হওয়ার কারণে তার সঙ্গে সংসার করতে পারিনি। কষ্ট যেন পিছু ছাড়তে চায় না। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মায়ের পাওয়া ঘরে এখন থাকছেন মায়ের সঙ্গে। ঘর পাওয়ায় অন্যের বাড়িতে কাজ না করে নিজেই সেখানে দোকান করছেন। ইউএনও’র অর্থ সহায়তায় নিজের অল্প টাকা পুঁজি দিয়ে করা দোকানে তার স্বচ্ছলতা ফিরেছে।

তিনি বলেন, ‘দিনে দুই তিন হাজার টাকা বিক্রি হয়। লাভ মোটামুটি ভালো। এ দিয়ে সংসার চলে যায়। মায়ের চিকিৎসার টাকাও দোকানের আয় থেকে চলে।’ তিনি জানান, নতুন ঘর পেয়ে উচ্ছ্বসিত আমার মা। তিনি ঘর পাওয়ার আনন্দে কেঁদে ফেলে দু’হাত তুলে দোয়া করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করেছেন।

একই জেলার সদর উপজেলার বয়রা আশ্রয়ণকেন্দ্রে ঘর পেয়েছেন জান্নাতুল ফেরদাউস। তিনি তার স্বামী সংসার নিয়ে থাকছেন সে ঘরে। শুধু থাকছেনই না। গরু, ছাগল ও হাঁস মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন। জান্নাতুল ফেরদাউস জানান, তার প্রায় ১০টি মুরগি ও ৫টি হাঁস রয়েছে। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। ১০ মাস হয়েছে ঘর পেয়েছে। তার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজে বের হলে তিনি এই গরু ও ছাগল পালন করেন। তার ইচ্ছে, তার গরু বড় হলে সে বাছুর বিক্রি ও দুধ বিক্রি করবেন। ইতোমধ্যে তিনি হাঁস ও মুরগি বিক্রি শুরু করেছেন। তার সংসার খুব ভালোভাবে চলছে। আত্মবিশ্বাসী জান্নাতুল ফেরদাউস জানালেন, তার এই ঘর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।

এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহে প্রায় ২৫০৩টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে এই প্রকল্পের আওতায় ভালুকার ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) হাসান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না; প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের বাসস্থান নিশ্চিতকল্পে সেমিপাকা একক গৃহ নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নিয়ে সমগ্র দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে মুজিববর্ষে জমিসহ সেমিপাকা ঘর দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। সেই লক্ষ্যে প্রতিটি গৃহ ২ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত, কবুলিয়ত ও রেজিস্ট্রেশন এবং জমিসহ সেমিপাকা গৃহ উপকারভোগী পরিবারের কাছে জমির দলিল, নামজারির খতিয়ান প্রদান করা হয়।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও ২৮৭টি ঘর বিতরণ করবেন। এর মাধ্যমে ময়মনসিংহের ৪টি উপজেলা গৃহহীনমুক্ত হবে।

জানা গেছে, আজ প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সকাল ১০টায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে সরাসরি ময়মনসিংহ সদর ও নান্দাইল উপজেলার চরভেলামারী আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর জমি ও গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রম শুভ উদ্ধোধন করবেন। প্রতিটি গৃহ ২ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত, কবুলিয়ত ও রেজিস্ট্রেশন এবং জমিসহ সেমিপাকা গৃহ উপকারভোগী পরিবারের কাছে জমির দলিল, নামজারির খতিয়ান প্রদান করা হবে। প্রতিটি গৃহ নির্মাণে ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমেদ কায়কাউস জানান, আজ ঘর উপহার দেয়ার এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া আরও ৮ হাজার ৬৬৭টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে।

ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৭০ পরিবারকে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।