পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ করুন

সন্তু লারমার প্রতি দুই নারী সংগঠনের আহ্বান

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ ও ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে পাহাড়ের দুটি নারী সংগঠন। গতকাল রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সামনের সড়কে মানববন্ধন করে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নীতি চাকমা। এ সময় সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক এন্টি চাকমাসহ অন্য নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনে জেলা ও উপজেলা থেকে বিভিন্ন স্তরের শতাধিক নেতাকর্মী মানববন্ধনে যোগদান করেন। এ সময় তারা সংঘাতবিরোধী বিভিন্ন সেøাগান দেন এবং সন্তু, তোমার খুনের রাজনীতি বন্ধ কর, ‘খুনি সন্তুর শান্তি চাই’, ‘সন্তু, ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ কর’, ‘সন্তু, আর কত রক্ত চাই তোমার?’, সন্তু, আর কত মায়ের বুক খালি করবে তুমি?’ ইত্যাদি সেøাগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নীতি চাকমা সন্তু লারমার কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘চারিদিকে এত ভূমি বেদখল হচ্ছে, মা-বোন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, লাঞ্ছিত অত্যাচারিত অপমাণিত হচ্ছে। এত নির্যাতন চলছে। তারপরও আপনি তার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত না করে কেন ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত জিইয়ে রেখেছেন, আমরা তার উত্তর চাইতে এসেছি।’

চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বললেও তার জন্য আন্দোলন না করায় সন্তু লারমার সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনের কথা বলেন, আবার সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার কথা বলেন, প্রয়োজনে রক্ত দেয়ার কথা বলেন। কিন্তু আপনার এসব কেবল কথার কথা, আপনি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করেন না, বরং আন্দোলনের বিরোধীতা করেন, যারা আন্দোলন করতে চায়, তাদের বাধা দেন, তাদের খুন করেন। গত ২৪ বছরে ইউপিডিএফের ৩৩৫ জন নেতাকর্মী ও সমর্থককে হত্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে কেবল সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস-এর হাতে ২৬২ জন খুন হয়েছেন। ‘আর কত জনকে হত্যা করলে, আর কত রক্ত ঝরলে, আর কত মায়ের কোল খালি হলে আপনি ক্ষান্ত হবেন?

নীতি চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, ‘আপনি (সন্তু লারমা) বিভিন্ন সময় ইউপিডিএফ-এর সঙ্গে সমঝোতা করেছেন। কিন্তু সমঝোতা লঙ্ঘন করেছেন। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে খাগড়াছড়ির নারাঙহিয়া সমঝোতা, ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম সমঝোতা এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির সমঝোতা জেএসএস লঙ্ঘন করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি সন্তু লারমাকে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ করে ২০১৮ সালের সমঝোতার শর্ত মেনে চলতে ও সরকাররের দালালি বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন ‘চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কর্মসূচি দিন। আমরা তাতে সমর্থন দেবো। ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে, নারী ধর্ষণের বিরুদ্ধে, অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ-এর সঙ্গে মিলে আন্দোলনের কর্মসূচি দিন, আমরা তাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে অংশগ্রহণ করবো।’

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস বন্ধের জন্য নব্য মুখোশদের আশ্রয়, প্রশ্রয় ও মদদ দেয়া বন্ধ করা, তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা এবং সন্তু লারমাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই ২০২২ , ০৬ শ্রাবণ ১৪২৯ ২২ জিলহজ ১৪৪৩

পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ করুন

সন্তু লারমার প্রতি দুই নারী সংগঠনের আহ্বান

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পার্বত্যাঞ্চল

image

পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধে ও সন্তু লারমার অপসারণের দাবিতে রাঙ্গামাটিতে মানববন্ধন করে দুই নারী সংগঠন -সংবাদ

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ ও ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে পাহাড়ের দুটি নারী সংগঠন। গতকাল রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সামনের সড়কে মানববন্ধন করে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নীতি চাকমা। এ সময় সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক এন্টি চাকমাসহ অন্য নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনে জেলা ও উপজেলা থেকে বিভিন্ন স্তরের শতাধিক নেতাকর্মী মানববন্ধনে যোগদান করেন। এ সময় তারা সংঘাতবিরোধী বিভিন্ন সেøাগান দেন এবং সন্তু, তোমার খুনের রাজনীতি বন্ধ কর, ‘খুনি সন্তুর শান্তি চাই’, ‘সন্তু, ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ কর’, ‘সন্তু, আর কত রক্ত চাই তোমার?’, সন্তু, আর কত মায়ের বুক খালি করবে তুমি?’ ইত্যাদি সেøাগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নীতি চাকমা সন্তু লারমার কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘চারিদিকে এত ভূমি বেদখল হচ্ছে, মা-বোন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, লাঞ্ছিত অত্যাচারিত অপমাণিত হচ্ছে। এত নির্যাতন চলছে। তারপরও আপনি তার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত না করে কেন ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত জিইয়ে রেখেছেন, আমরা তার উত্তর চাইতে এসেছি।’

চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বললেও তার জন্য আন্দোলন না করায় সন্তু লারমার সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনের কথা বলেন, আবার সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার কথা বলেন, প্রয়োজনে রক্ত দেয়ার কথা বলেন। কিন্তু আপনার এসব কেবল কথার কথা, আপনি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করেন না, বরং আন্দোলনের বিরোধীতা করেন, যারা আন্দোলন করতে চায়, তাদের বাধা দেন, তাদের খুন করেন। গত ২৪ বছরে ইউপিডিএফের ৩৩৫ জন নেতাকর্মী ও সমর্থককে হত্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে কেবল সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস-এর হাতে ২৬২ জন খুন হয়েছেন। ‘আর কত জনকে হত্যা করলে, আর কত রক্ত ঝরলে, আর কত মায়ের কোল খালি হলে আপনি ক্ষান্ত হবেন?

নীতি চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, ‘আপনি (সন্তু লারমা) বিভিন্ন সময় ইউপিডিএফ-এর সঙ্গে সমঝোতা করেছেন। কিন্তু সমঝোতা লঙ্ঘন করেছেন। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে খাগড়াছড়ির নারাঙহিয়া সমঝোতা, ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম সমঝোতা এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির সমঝোতা জেএসএস লঙ্ঘন করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি সন্তু লারমাকে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ করে ২০১৮ সালের সমঝোতার শর্ত মেনে চলতে ও সরকাররের দালালি বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন ‘চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কর্মসূচি দিন। আমরা তাতে সমর্থন দেবো। ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে, নারী ধর্ষণের বিরুদ্ধে, অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ-এর সঙ্গে মিলে আন্দোলনের কর্মসূচি দিন, আমরা তাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে অংশগ্রহণ করবো।’

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস বন্ধের জন্য নব্য মুখোশদের আশ্রয়, প্রশ্রয় ও মদদ দেয়া বন্ধ করা, তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা এবং সন্তু লারমাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।