বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চলমান সংকট মোকাবিলায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যেসব পরামর্শ এসেছে, তার সবগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। সরকারি অফিসের কর্মঘণ্টা কামানোর সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি। বিদ্যুতের অপচয় কমাতে শপিংমল, বিপণিবিতান ও অন্যান্য দোকানপাট রাত ৮টার মধ্যে বন্ধে নজরদারি জোরদার হয়নি। রাতে রাজধানীর অনেক ভবনে আলোকসজ্জা দৃশ্যমান।
এদিকে নিয়ন্ত্রিত লোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে হিমশিম খাওয়া বিতরণ কোম্পানিগুলো বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত লোডশেডিং দিচ্ছে। ফলে গ্রাহক অসন্তুষ্টি বাড়ছে। গতকাল ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ রংপুরবাসী নেসকোর কার্যালয় ঘেরাও করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দেশের অনেক জেলা-উপজেলায় অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিংয়ে বিরক্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তবে ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির জ্বালানি খরচ ২০ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, কর্মকর্তাদের জন্য পেট্রোল, ওয়েল ও লুব্রিকেন্ট বাবদ বরাদ্দের ৮০ শতাংশের বেশি খরচ করা যাবে না। এ খাতে বেঁচে যাওয়া অর্থ অন্য কোন খাতে ব্যয় করা যাবে না। এছাড়া, বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ করা অর্থের ২৫ শতাংশ সাশ্রয় করতে হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
জ্বালানি সাশ্রয়ে অন্যান্য সিদ্ধান্তের পাশাপাশি সরকারি অফিসের সময় দুই ঘণ্টা কমিয়ে আনার বিষয়েও প্রস্তাব থাকলেও এখনও এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, অফিস সময় কমানোর সিদ্ধান্ত অবস্থা বুঝে নেয়া হবে। প্রয়োজন না হলে সব কাজ স্বাভাবিক গতিতেই চলবে।
এদিকে লোডশেডিং করে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হলেও রাজধানীসহ দেশের অনেক এলাকায় রুটিন (সময়সূচি) অনুযায়ী লোডশেডিং দিতে পারছে না বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো। বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিকবার লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ‘গত মঙ্গলবার থেকে প্রথম এক সপ্তাহ এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদি দেখা যায়, ঘাটতি পূরণ সম্ভব হচ্ছে না, তাহলে দিনে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং করার পরিকল্পনা আছে সরকারের।’
রাজধানীতে দুটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি- ডিপিডিসি ও ডেসকো লোড ম্যানেজম্যান্ট করতে হিমশিম খাচ্ছে। কোম্পানি দুটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, তারা চাহিদার বিপরীতে যতটুকু বিদ্যুৎ পাচ্ছেন, তা এক ঘণ্টার লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য কোন কোন এলাকায় দুই ঘণ্টা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশি বিপাকে পড়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। দেশের প্রায় ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি।
উপজেলা পর্যায়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, চাহিদার চেয়ে অনেক কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় তাদের এলাকায় লোডশেডিং বেশি করতে হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তত ৩০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ বিতরণ পরিস্থিতি নাজুক।
রংপুর থেকে লিয়াকত আলী বাদল জানান, রংপুরে আধা ঘণ্টা পর পর অসহনীয় লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি নেসকোর কার্যালয় ঘেরাও করেছে শতশত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্যুতের সমবণ্টনের দাবিতে গতকাল দুপুরে রংপুর নগরীর কলেজ রোড এলাকায় পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে নেসকোর প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে তারা।
এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) হোসেন আলী বলেন, তারা বাধা দিয়েছেন, যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়। তবে জনতা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করায় তার নীরব ছিলেন। এর আগে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত শিক্ষার্থী, সাধারণ নারী-পুরুষ, এমনকি গৃহবধূরাও নেসকো কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার জন্য প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে শুরু করলে পুলিশ পুরো এলাকা ঘেরাও করে রাখে। পরে সাধারণ মানুষ পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণ নেসকো কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। সেখানে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেনের কাছে দাবি সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করে তিনি বলেন, ‘রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিদিন ৯ থেকে সাড়ে ৯০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের বিদ্যুৎ রয়েছে। আমরা পাচ্ছি মাত্র সর্বোচ্চ সাড়ে ৫০০ মেগাওয়াট। এই ঘাটতি পূরণ কিভাবে সম্ভব? গতকাল দুপুরে রংপুর বিভাগে মাত্র পৌনে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া গেছে। ফলে আমরা ইচ্ছা করলেও লোডশেডিং ঠিক রাখতে পারছি না।’ এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
রংপুর প্রতিনিধি জানান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিং আর তীব্র গরমে নাকাল হয়ে পড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্লাসরুমে অতিরিক্ত গরমে অনেক শিক্ষক গাছ তলায় ক্লাস নিচ্ছেন। গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবন-৩ এর সামনে গাছতলায় বসে ক্লাস করছেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক এবং রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুরুজ্জামান খান বলেন, ‘নেসকো ২৪ ঘণ্টায় এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বললেও ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এটি চলছে।’
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে রুটিন ভেঙে একাধিকবার লোডশেডিংয়ের অভিযোগ আসছে। সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা নিজ নিজ দপ্তরে বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে নজরদারি শুরু করেছেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাতি, ফ্যান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এসি সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। নির্দেশনার ব্যতয় হলে শস্তির হুঁশিয়ারিও দেয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকারি দপ্তরগুলোতে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমানোর পাশাপাশি ব্যয় সাশ্রয় এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইতোমধ্যে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। নির্দেশনায় শিক্ষামন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়েরও ভূমিকা আছে। সবগুলো বাস্তবায়নে কিছু সময় তো লাগবেই।’
রংপুর : আধা ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং, অতিরিক্ত গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গাছতলায় ক্লাস -সংবাদ
আরও খবরশুক্রবার, ২২ জুলাই ২০২২ , ০৭ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
রংপুর : আধা ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং, অতিরিক্ত গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গাছতলায় ক্লাস -সংবাদ
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চলমান সংকট মোকাবিলায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যেসব পরামর্শ এসেছে, তার সবগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। সরকারি অফিসের কর্মঘণ্টা কামানোর সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি। বিদ্যুতের অপচয় কমাতে শপিংমল, বিপণিবিতান ও অন্যান্য দোকানপাট রাত ৮টার মধ্যে বন্ধে নজরদারি জোরদার হয়নি। রাতে রাজধানীর অনেক ভবনে আলোকসজ্জা দৃশ্যমান।
এদিকে নিয়ন্ত্রিত লোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে হিমশিম খাওয়া বিতরণ কোম্পানিগুলো বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত লোডশেডিং দিচ্ছে। ফলে গ্রাহক অসন্তুষ্টি বাড়ছে। গতকাল ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ রংপুরবাসী নেসকোর কার্যালয় ঘেরাও করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দেশের অনেক জেলা-উপজেলায় অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিংয়ে বিরক্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তবে ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির জ্বালানি খরচ ২০ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, কর্মকর্তাদের জন্য পেট্রোল, ওয়েল ও লুব্রিকেন্ট বাবদ বরাদ্দের ৮০ শতাংশের বেশি খরচ করা যাবে না। এ খাতে বেঁচে যাওয়া অর্থ অন্য কোন খাতে ব্যয় করা যাবে না। এছাড়া, বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ করা অর্থের ২৫ শতাংশ সাশ্রয় করতে হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
জ্বালানি সাশ্রয়ে অন্যান্য সিদ্ধান্তের পাশাপাশি সরকারি অফিসের সময় দুই ঘণ্টা কমিয়ে আনার বিষয়েও প্রস্তাব থাকলেও এখনও এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, অফিস সময় কমানোর সিদ্ধান্ত অবস্থা বুঝে নেয়া হবে। প্রয়োজন না হলে সব কাজ স্বাভাবিক গতিতেই চলবে।
এদিকে লোডশেডিং করে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হলেও রাজধানীসহ দেশের অনেক এলাকায় রুটিন (সময়সূচি) অনুযায়ী লোডশেডিং দিতে পারছে না বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো। বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিকবার লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ‘গত মঙ্গলবার থেকে প্রথম এক সপ্তাহ এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদি দেখা যায়, ঘাটতি পূরণ সম্ভব হচ্ছে না, তাহলে দিনে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং করার পরিকল্পনা আছে সরকারের।’
রাজধানীতে দুটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি- ডিপিডিসি ও ডেসকো লোড ম্যানেজম্যান্ট করতে হিমশিম খাচ্ছে। কোম্পানি দুটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, তারা চাহিদার বিপরীতে যতটুকু বিদ্যুৎ পাচ্ছেন, তা এক ঘণ্টার লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য কোন কোন এলাকায় দুই ঘণ্টা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশি বিপাকে পড়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। দেশের প্রায় ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি।
উপজেলা পর্যায়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, চাহিদার চেয়ে অনেক কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় তাদের এলাকায় লোডশেডিং বেশি করতে হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তত ৩০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ বিতরণ পরিস্থিতি নাজুক।
রংপুর থেকে লিয়াকত আলী বাদল জানান, রংপুরে আধা ঘণ্টা পর পর অসহনীয় লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি নেসকোর কার্যালয় ঘেরাও করেছে শতশত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্যুতের সমবণ্টনের দাবিতে গতকাল দুপুরে রংপুর নগরীর কলেজ রোড এলাকায় পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে নেসকোর প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে তারা।
এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) হোসেন আলী বলেন, তারা বাধা দিয়েছেন, যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়। তবে জনতা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করায় তার নীরব ছিলেন। এর আগে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত শিক্ষার্থী, সাধারণ নারী-পুরুষ, এমনকি গৃহবধূরাও নেসকো কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার জন্য প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে শুরু করলে পুলিশ পুরো এলাকা ঘেরাও করে রাখে। পরে সাধারণ মানুষ পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণ নেসকো কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। সেখানে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেনের কাছে দাবি সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করে তিনি বলেন, ‘রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিদিন ৯ থেকে সাড়ে ৯০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের বিদ্যুৎ রয়েছে। আমরা পাচ্ছি মাত্র সর্বোচ্চ সাড়ে ৫০০ মেগাওয়াট। এই ঘাটতি পূরণ কিভাবে সম্ভব? গতকাল দুপুরে রংপুর বিভাগে মাত্র পৌনে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া গেছে। ফলে আমরা ইচ্ছা করলেও লোডশেডিং ঠিক রাখতে পারছি না।’ এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
রংপুর প্রতিনিধি জানান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিং আর তীব্র গরমে নাকাল হয়ে পড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্লাসরুমে অতিরিক্ত গরমে অনেক শিক্ষক গাছ তলায় ক্লাস নিচ্ছেন। গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবন-৩ এর সামনে গাছতলায় বসে ক্লাস করছেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক এবং রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুরুজ্জামান খান বলেন, ‘নেসকো ২৪ ঘণ্টায় এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বললেও ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এটি চলছে।’
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে রুটিন ভেঙে একাধিকবার লোডশেডিংয়ের অভিযোগ আসছে। সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা নিজ নিজ দপ্তরে বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে নজরদারি শুরু করেছেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাতি, ফ্যান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এসি সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। নির্দেশনার ব্যতয় হলে শস্তির হুঁশিয়ারিও দেয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকারি দপ্তরগুলোতে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমানোর পাশাপাশি ব্যয় সাশ্রয় এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইতোমধ্যে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। নির্দেশনায় শিক্ষামন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়েরও ভূমিকা আছে। সবগুলো বাস্তবায়নে কিছু সময় তো লাগবেই।’