শুক্রবার, ২২ জুলাই ২০২২, ০৭ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

ভোটে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন সিইসি

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে ‘পেশীশক্তি নিয়ন্ত্রণে’ম ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, ‘পেশিশক্তি যাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এজন্য সবার সহযোগিতা চাইব। নির্বাচন কমিশন একা করবে না। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এমনকি সেনাবাহিনীরও অংশগ্রহণ প্রয়োজন হতে পারে। আমরা সেই অর্থেও কাজ করব।’ তবে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ ইস্যু কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত জানিয়ে ওই দাবি আদায়ে ক্ষমতাসীন সরকারকে ‘চাপ দেয়ার’ পরামর্শ দিয়েছেন সিইসি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের পঞ্চম দিনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (কাঁঠাল) সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ পরামর্শ দেন।

সংলাপে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এ মুকিতের নেতৃত্বে দলটির ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি কমিশনের কাছে ১৩ দফা সুপারিশ রাখে।

নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘আপনারা যেসব কথা বলেছেন, অনেক দল এ কথাগুলো বলেছে। আপনাদের নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার, নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার- বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাবনা আছে। বিভিন্ন দল থেকেও এসেছে। এগুলো নিয়ে আমাদের তরফ থেকে কিছু করার থাকলে... এগুলো পলিটিক্যাল বিষয়। আপনাদের দাবিগুলো সরকারকে জানাবেন এবং আপনাদের দাবির চাপ বা প্রেসার কতটুকু- এগুলো সরকারকেও বুঝতে দিবেন। এগুলো পলিটিক্যাল ইস্যু, সাংবিধানিক সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে।’ নির্বাচন সংক্রান্ত আইনে কমিশনকে বেশ খানিকটা ক্ষমতা দেয়া হয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে যেন সম্ভাব্য সহিংসতা বা পেশিশক্তির প্রয়োগ কমাতে পারি।’ ইভিএম নিয়ে অনেকের সংশয় ও আস্থাহীনতার বিষয়ে ইসি ‘অবগত রয়েছে’ মন্তব্য করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা অন্ধভাবে ইভিএম নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে এর যে কিছু ভালো দিক আছে আর মন্দ দিকটা যে আপনারা বলছেন সেটা আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না।’ জাতির স্বার্থে অনিবার্যভাবে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রয়োজন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। আমরা যে দায়িত্ব নিয়েছি আইন ও সংবিধানের অধীনে সেই দায়িত্ব অনুযায়ী আমাদের নির্বাচন করতে হবে। কোন দল না এলে আমরা বাধ্য করতে পারব না। তবে বারবার আমরা আপনাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের (দলগুলোর) প্রস্তাবগুলো যুক্তিযুক্ত। এজন্য আপনাদেরও সবল ও সরব হতে হবে। আমরা আরও সবল হব। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হবে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক সংগঠন ক্যাবিনেট গঠন হবে। কাজেই আমরা মনে করি নির্বাচনটা হেলাফেলা নয়, নির্বাচনটা জনপ্রতিনিধিত্বমূলক এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করা উচিত। এজন্য একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন, যেখানে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে।’

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ১১ দিনে (শুক্র ও শনিবার বাদে) নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এ পর্যন্ত বিএনপি ও তার মিত্র দুটি দল সংলপ বর্জন করেছে। ইসলামীপন্থি ও বামপন্থি আরও কয়েকটি দল সংলাপে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।

সূচি অনুযায়ী গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মুকিত), দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এবং বিকেল ৪টায় গণফ্রন্টেল সঙ্গে সংলাপ ছিল।

তবে তরীকত ফেডারেশন ও জাসদ গতকাল সংলাপে অংশ নিতে পারবে না জানিয়ে ইসির কাছে পরবর্তীতে সময় চেয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইসি তরীকত ফেডারেশনকে ২৮ জুলাই এবং জাসদকে ২৪ জুলাই সময় দিয়েছে।

দুই দিন সরকারি ছুটির পর আগামী রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, দুপুর ১২টায় জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু), দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি এবং বিকেল ৪টায় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে।

শুক্রবার, ২২ জুলাই ২০২২ , ০৭ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

ভোটে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন সিইসি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে ‘পেশীশক্তি নিয়ন্ত্রণে’ম ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, ‘পেশিশক্তি যাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এজন্য সবার সহযোগিতা চাইব। নির্বাচন কমিশন একা করবে না। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এমনকি সেনাবাহিনীরও অংশগ্রহণ প্রয়োজন হতে পারে। আমরা সেই অর্থেও কাজ করব।’ তবে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ ইস্যু কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত জানিয়ে ওই দাবি আদায়ে ক্ষমতাসীন সরকারকে ‘চাপ দেয়ার’ পরামর্শ দিয়েছেন সিইসি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের পঞ্চম দিনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (কাঁঠাল) সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ পরামর্শ দেন।

সংলাপে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এ মুকিতের নেতৃত্বে দলটির ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি কমিশনের কাছে ১৩ দফা সুপারিশ রাখে।

নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘আপনারা যেসব কথা বলেছেন, অনেক দল এ কথাগুলো বলেছে। আপনাদের নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার, নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার- বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাবনা আছে। বিভিন্ন দল থেকেও এসেছে। এগুলো নিয়ে আমাদের তরফ থেকে কিছু করার থাকলে... এগুলো পলিটিক্যাল বিষয়। আপনাদের দাবিগুলো সরকারকে জানাবেন এবং আপনাদের দাবির চাপ বা প্রেসার কতটুকু- এগুলো সরকারকেও বুঝতে দিবেন। এগুলো পলিটিক্যাল ইস্যু, সাংবিধানিক সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে।’ নির্বাচন সংক্রান্ত আইনে কমিশনকে বেশ খানিকটা ক্ষমতা দেয়া হয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে যেন সম্ভাব্য সহিংসতা বা পেশিশক্তির প্রয়োগ কমাতে পারি।’ ইভিএম নিয়ে অনেকের সংশয় ও আস্থাহীনতার বিষয়ে ইসি ‘অবগত রয়েছে’ মন্তব্য করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা অন্ধভাবে ইভিএম নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে এর যে কিছু ভালো দিক আছে আর মন্দ দিকটা যে আপনারা বলছেন সেটা আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না।’ জাতির স্বার্থে অনিবার্যভাবে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রয়োজন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। আমরা যে দায়িত্ব নিয়েছি আইন ও সংবিধানের অধীনে সেই দায়িত্ব অনুযায়ী আমাদের নির্বাচন করতে হবে। কোন দল না এলে আমরা বাধ্য করতে পারব না। তবে বারবার আমরা আপনাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের (দলগুলোর) প্রস্তাবগুলো যুক্তিযুক্ত। এজন্য আপনাদেরও সবল ও সরব হতে হবে। আমরা আরও সবল হব। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হবে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক সংগঠন ক্যাবিনেট গঠন হবে। কাজেই আমরা মনে করি নির্বাচনটা হেলাফেলা নয়, নির্বাচনটা জনপ্রতিনিধিত্বমূলক এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করা উচিত। এজন্য একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন, যেখানে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে।’

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ১১ দিনে (শুক্র ও শনিবার বাদে) নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এ পর্যন্ত বিএনপি ও তার মিত্র দুটি দল সংলপ বর্জন করেছে। ইসলামীপন্থি ও বামপন্থি আরও কয়েকটি দল সংলাপে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।

সূচি অনুযায়ী গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মুকিত), দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এবং বিকেল ৪টায় গণফ্রন্টেল সঙ্গে সংলাপ ছিল।

তবে তরীকত ফেডারেশন ও জাসদ গতকাল সংলাপে অংশ নিতে পারবে না জানিয়ে ইসির কাছে পরবর্তীতে সময় চেয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইসি তরীকত ফেডারেশনকে ২৮ জুলাই এবং জাসদকে ২৪ জুলাই সময় দিয়েছে।

দুই দিন সরকারি ছুটির পর আগামী রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, দুপুর ১২টায় জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু), দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি এবং বিকেল ৪টায় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে।